আবদ্ধ আমি পর্ব-০৯

0
480

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#৯ম_পর্ব

নিদ্র কাঁদো-কাঁদো দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে।তারপর হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে সেখান থেকে চলে‌ যায়।নিধি আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আসল ভালোবাসাকে চিনলে না তুমি।এর জন্য কাঁদতে হবে তোমাকে।”
আমি নিধির দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলি,
–“আমার বিশ্বাস এর জন্য আমাকে কাঁদতে হবে না।আমার স্বামী যদি আমাকে ভালো নাও বাসে তবুও আমি‌ কখনো কাঁদবো না।আর আমি অন্যদের মতো না একজনকে রেখে আরেকজনকে বিয়ে করবো।”

আমার কথা শুনে নিধি বেশ রেগে আমার দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।আমি ‌মনের সুখে পাউরুটি আর জেলি খেতে থাকি।সত্ত্যি বলতে আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না।অনেকে বলবে আমি ভুল করছি কিন্তু আমার মনে হয় না আমি ভুল করছি।

খাওয়া শেষ করে লম্বা একটা হাই তুলি আমি।বুঝতে পারি না এই ‌অবেলায় ঘুম ধরছে কেন?চারদিকে গাছপালা থাকার কারনে সুর্যের আলো এসে পৌঁছায় না আমাদের তাবু অবদি।তবে আন্দাজ করতে পারছি বাহিরে এখন বিকেল।

আমি গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।আশেপাশে তাকিয়ে নিদ্র কিংবা নিধি কাউকে দেখতে পাই না আমি।হঠাৎ মনটা ভেবে ওঠে আহান ভাইয়ের কথা।কি করছেন তিনি এখন?তিনি কি আমাকে খুঁজতে ব্যাস্ত নাকি আমার কথা ভুলে গেছেন।ভুলে যেতেও পারেন কেননা তিনি তো আবার ভালোবাসেন বিশেষ একজনকে।যে কিনা কোনো মানুষ নয় মানুষের ভিতরে থাকা একজন।মানুষের ভিতরে তো কেবল আত্মাই থাকে।তারমানে তিনি ভালোবাসেন কোনো ভুতকে।অথবা এটাও হতে পারে তিনি যাকে ভালোবাসতেন সে মরে ভুত হয়ে গেছে।তাকে ভুলতে পারছে না আহান ভাই।ধুর আর ভাবতে পারি না এই বিষয় নিয়ে।

হঠাৎ আমার সামনে এসে দাঁড়ায় নিদ্র ও নিধি।দুজনের চোখ লাল টকটকে হয়ে আছে।তাদের অবস্থা দেখে ভিতরে ভিতরে ভয় পেলে উপরে উপরে এমন ভাব ধরে রাখি যা দেখে বোঝা যায় আমার কিছুই হয়নি।কারন একজন বিশাল মনিষী বলেছেন,কারো সামনে ভয় পেতে নেই,ভয় পেলে সে তোমাকে আরও বেশি ভয় দেখাবে।

নিদ্র এবার আমার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,
–“আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে ভালোবাসোনা।আর জোড় করে অন্য জিনিস পেলেও ভালোবাসাটা পাওয়া যায় না।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি..”

তার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি মুচকি হেসে বলি,
–“আমাকে আহান ভাইয়ের কাছে রেখে আসবেন।তারপর আমাকে ভুলে অন্য কাউকে নিয়ে সংসার করবেন এইতো..”

আমার কথা শুনে নিদ্র ও নিধি দুজনে হালকা হাসি হাসে।তাদের হাসির কারনটা বুঝতে পারি না আমি।নিদ্র তার মুখের হাসিটা বজায় রেখে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“তোমার ধারণা একদম ভুল”

‘ভুল’ কথাটা শুনে ঝট করে তার দিকে তাকাই‌ আমি।আমি‌ কিছু বলার আগেই নিদ্র পুনরায় বলতে শুরু করে,
–“হ্যাঁ ধারণা সম্পুর্ন ভুল।আমি তোমাকে জোড় করেই বিয়ে করবো।আমাকে তুমি ভালো না বাসবে,আমি একাই তোমাকে ভালোবেসে যাব।তবুও তোমাকে আমি বিয়ে করবোই।আর বিয়েটা আজকে রাতেই হবে,বুঝলে।”

নিদ্রের কথা শুনে মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে কেউ‌ আমাকে আকাশ থেকে ফেলে দিল।আমি অবাকের চুড়ান্ত পর্যায় অতিক্রম করে তার দিকে তাকাই।তার মুখে বিরাজ করছে চওড়া হাসি।সে নিধির দিকে তাকিয়ে তাগদা দিয়ে বলে,
–“তাবু তোল তারাতারি।এখনি রওনা হব।”

এই বলে সে আর নিধি মিলে কিছুক্ষন আগে সেট করা তাবু গুলা তুলতে শুরু করে।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি তাদের দুজনের দিকে।তার মানে কি নিদ্র ‌এখনি আমাকে বিয়ে করবে নাকি।কিছু মাথায় ঢুকছে না।হায় আল্লাহ কি হবে আর ভাবতে পারছি না।

নিদ্র আর নিধি তাবু তুলে গাড়িতে রাখে তারপর বাকি জিনিস গুলোও গাড়িতে তুলে নেয়।তারপর নিদ্র বেশ কড়া গলায় বলে,
–“তারাতারি উঠে বসো।”
আমাকে নির্দেশ দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে নিদ্র ও নিধি।আমি কিছুক্ষন বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে পুনরায় গাড়িতে উঠে পড়ি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে।তার পাশে রহস্যময়ী মুখ করে বসে আছে নিদ্র।

নিদ্র গাড়ি চালাতে চালাতে আমার দিকে না তাকিয়ে আ‌মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“তোমার জন্য একটু কষ্ট হচ্ছে আমার।ইস,কত কষ্ট হবে তোমার।কি বলিস নিধি?”
নিধি মাথা দুলিয়ে বলে,
–“হুম,একটু কষ্ট হচ্ছে”

আ‌মি তাদের কথার মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারি না।ঢ্যাপঢ্যাপ করে তাকিয়ে থাকি শুধু।আমার জন্য তাদের কষ্ট হচ্ছে কেন?নতুন কোনো বাজে প্লান করলো নাকি তারা।এদিকে পশ্চিম আকাশে সুর্য্যি মামা ডুবতে শুরু করেছে।ইতিমধ্যে অনেক মসজিদে দেয়া শুরু করেছে মাগরিবের আজান।আমি নিদ্রের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলি,
–“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

নিদ্র আমার দিকে না তাকিয়ে রহস্যময়ী গলায় উত্তর দেয়,
–“কাজি অফিস”
আমি আর কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে থাকি।একপর্যায়ে চোখে ঘুম চলে আসে আমার।আমি কিছুক্ষন কষ্ট করে চোখ খোলা রাখলেও অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি।আমি ঘুমিয়ে পড়লেও গাড়ি থামে না।গাড়ি চলতে থাকে তার আপন গতিতে।

কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানিনা,তবে ঘুম থেকে উঠে দেখি গাড়ি চলতেছে না।আমি অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি নিদ্র ও নিধি দুজনের কেউ নেই সামনে।আমি এবার বেশ আগ্রহ নিয়ে উঠে বসি।জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখি নিদ্র আর নিধি আছে কিনা?প্রথমে তাদের দেখতে পাই না।তারপর আমি আস্তে করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি।চারদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করি জায়গাটা কোথায়।চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকিয়ে দেখি আশেপাশে নিধি কিংবা নিদ্র আছে কিনা।

হঠাৎ আমার চোখ গিয়ে থামে একটা সাইনবোর্ডের দিকে।সাইনবোর্ডটা দেখে খুশিতে প্রায় চিল্লিয়ে উঠি আমি।আরে এটাতো আমাদের কলেজের সাইনবোর্ড।তারমানে এখান থেকে আর দশ মিনিটের পথ হাটলেই আহান ভাইয়ের বাসা।আমি দেরি না করে তোড়জোড় করে হাটতে শুরু করি।সাথে খেয়াল রাখি কেউ আমার পিছু নিয়েছে কিনা।

৫মিনিটের মতো হাটার পর খেয়াল করি নিদ্রের গাড়িটা আমার দিকে আসছে।বুঝতে পারিনা আমাকে দেখতে পেল নাকি তারা।আমি রাস্তার পাশের একটা ঝোপে লুকিয়ে পড়ি।খুব আস্তে গাড়ি চালাচ্ছে নিদ্র।কিছুক্ষন পর গাড়িটা আমার পাশ কাটিয়ে চলে যায়।তার কিছুক্ষন পর আমি পুনরায় হাটতে শুরু করি।খেয়াল রাখি গাড়িটা ঘুরে আসছে নাতো।

একপর্যায়ে আমি পৌঁছে যাই আহান ভাইদের বাসার সামনে।খুশিতে চোখে জল চলে আসে।আমি তারাহুরো করে কলিংবেল চাপতে থাকি।দরজা খুলে দেয় বাসার কাজের বুয়া।দরজার বাহিরে লেডিস হিল দেখে একটু অবাক হই আমি।আমি তারাতারি করে আহান ভাইয়ের রুমের দিকে রওনা হই।রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে তাকাতেই চমকে উঠি আমি।হাত পা থরথর করে কাঁপতে শুরু করে।চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি কণা।এটা কি আনন্দ অশ্রু নাকি দুঃখের…

চলবে..ইনশাআল্লাহ