আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-১২

0
239

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#১২তম_পর্ব

দুপুরের পর আমি সুরুভী উদ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। রকি তার প্রেমিকা কে নিতে গেছে। হঠাৎই পাশে থেকে কেউ একজন বললো- বাবা কেমন আছো?
পাশে ফিরে তাকালাম । মানহার নানু নেহার আব্বু। এতোদিনে তার সাথে আমার একবার ও কথা হয়নি। কথা বলার যে চেষ্টা করি নি তা নয় কিন্তু তিনি কখনোই কথা বলেনি আমার সাথে । শেষ বার চেষ্টা করেছিলাম যখন নেহা বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিলে। সেদিন কথা বলেছিল তার কাছে কান্না করে বলেছিলাম প্লিজ আপনার মেয়েকে একটু বোঝান আমার জন্য না হোক আমার বাচ্চা মেয়েটার জন্য এমনটা না করতে আবার ফিরে আসতে। আমি তাকে কোনো দিন কিছু বলবো না এই বিষয় নিয়ে তবুও ফিরতে বলুন ।
সেদিন উনি আমাকে শান্তনা স্বরুপ কিন্তু কঠোর কথা শুনিয়ে দিয়েছে।
মন থেকে তার জন্য বিন্দু পরিমাণ সম্মান না আসলেও শুধু মাত্র ফরমালিটিস মেইনটেইন এর জন্য জাহিন তাকে সালাম দিলো।
– কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের সকলের দোয়ায় অনেক ভালো আছি।
– কবে আসছে?
– এই তে কিছু দিন হলো। আপনার মেয়ে একবার ও বাসায় আসেনি?
– এসেছিলো কিছু দিন আগে জামাইকে নিয়ে ।
জাহিন মুচকি হাসি দিয়ে বললো – ওহ আচ্ছা জামাইকে নিয়ে এসেছিলো বুঝি তো জামাই পছন্দ হইছে তো?
– ওরা নাকি ছয় মাস পরে আমেরিকা চলে যাবে।
– ওহ আচ্ছা । তাহলে তো খুব ভালোই জামাই পেয়েছেন। আপনার মেয়েকে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে । যাই হোক আমি আসি আমার কাজ আছে ।
– শুনলাম আমার নাতনী ও আসছে কই ও?
– আপনার নাতনী? কে সে? সরি আমি আপনার নাতনী কে চিনি না।
ততক্ষণে মানহা আর প্রিয়ন্তী চলে এসেছে । আমায় দেখে মানহা দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে কোলে নিতেই আমার কপালে চুমু দিলো।
– বাপি কেমন আছো?
– ভালো আম্মু । তুমি কেমন আছো?
– আমিও ভালো আছি।

নেহার আব্বু মানহা কে কোলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়েছে। কিন্তু জাহিন মানহা কে প্রিয়ন্তীর কোলে দিয়ে ওকে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়াতে বললো।
– ওকে কোলে দিলে কি হতো?
– আপনার মেয়ের শরীরে তো আপনারই রক্ত তাই না। আর ও আপনাদের রক্ত কে ঘৃণা করে । যাই হোক আপনার মেয়ে বিদেশে যাচ্ছে আপনি তো অনেক খুশি। জানেন আমার মেয়েটা গতকাল থেকে আমার কাছে ছিলো না। এইমাত্র বুকে পেয়ে আমি যে পরিমাণ সুখ অনুভব করছি আপনার মেয়ে পুরো পৃথিবী ঘুরেও সেটা পাবে না। যার চাহিদা যত কম তার সুখ তত বেশি। আপনার মেয়ের চাহিদা যে হারে বাড়তে শুরু করছে হয়তো দেখা যাবে এই স্বামী দিয়েও তার বেশিদিন সংসার যাচ্ছে না। কথাগুলো বলতে খারাপ লাগলেও বলতে হচ্ছে । যে নারী এক পুরুষে স্হায়ী নয় সে নারী কোনো পুরুষেই স্হায়ী হতে পারবে না। আর হ্যাঁ মানহার সাথে ভুল ক্রমেও যদি কখনো একা দেখা হয়ে যায় তবে আশা করি নিজের পরিচয় টা দিবেন না। কারণ আমি বিশুদ্ধ মানুষের সাথে চলতে শেখাচ্ছি তাকে দুষিত মানুষের কোনো গতি তার বোধগম্য হবে না।

জাহিন মানহাদের কাছে চলে আসলো। নেহার আব্বু তখন ও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো। জাহিন একবার তাকিয়ে ভাবতে লাগলো নেহার আব্বু তো এমনটা নয় সে তো কাউকে ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। তাহলে সে একটা কথাও বললো না কেন? তাহলে সে কি বদলে গেলো এতো তাড়াতাড়ি?
জাহিনের ভাবনায় ছেদ পড়লো রকির উপস্থিতিতে।
– ভাইয়া আমরা চলে আসছি।
– আশেপাশে কোথায় কাজী অফিস আছে?
প্রিয়ন্তী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো- কাজী অফিস দিয়ে কি করবেন আপনারা?
– সেটা না হয় সেখানে গিয়েই দেখতে পারবেন।

রকির আরও দুজন বন্ধু আসলো এরপর সকলে মিলে কাজী অফিসে গেলাম
রকির বিয়ের কাজ শেষ এখন শুধু ওকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে । বাসায় চাচ্চু কে কল করে বললাম চাচীকে নতুন বউ বরন করতে ।
বাসায় আব্বু আর চাচ্চু জানে রকির আজ কার সাথে বিয়ে হচ্ছে আর কেন হচ্ছে ।
রকি কে বাসায় নিয়ে আসলাম । আমাদের সাথে প্রিয়ন্তী ও ছিলো । বাসায় কি কি সব নিয়ম মেনে বউকে বাসার ভিতরে নিয়ে আসলো।

প্রিয়ন্তী আর আমি দুজন মিলে বাসর সাজিয়ে দিচ্ছি ।
– এই প্রথম কোনো বড় ভাইকে দেখলাম ছোট ভাইয়ার বাসর সাজিয়ে দিতে।
– সম্পর্কে ভাই হলেও বন্ধুর মতোই ছিলাম আমরা। আর কোন সংবিধানে লেখা আছে ছোট ভাইয়ের বাসর বড় ভাই সাজিয়ে দিতে পারবে না?
– সেটা হয়তো কোথাও লেখা নাই। তবুও কখনো দেখি নি তো তাই বললাম ।

গল্পগুজব করে খাওয়া করতে প্রায় দশটা বেজে গেছে । এরমাঝে প্রিয়ন্তীর বাসা থেকে অনেক বার কল করছে । মাত্র তাদের বাসায় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেছে তাই সকলেই চিন্তায় আছে ।
এরমাঝে আব্বু প্রিয়ন্তীর বাসায় কথা বলেছে প্রিয়ন্তীকে আমাদের বাসায় আজকে থেকে যাওয়ার জন্য । কিন্তু প্রিয়ন্তীর বাবা কিছুতেই সেটা মানবে না। তাই বাধ্য হয়ে আব্বু বলে দিয়েছে যত রাতেই হোক প্রিয়ন্তী কে বাসায় পৌঁছে দিবে।

খাওয়া শেষে আব্বু আমায় ডেকে প্রিয়ন্তী কে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসতে বললো।

প্রিয়ন্তী কে বাইকের পিছনে নিয়ে যাচ্ছি । হঠাৎ রিংটোনের শব্দ কানে আসলো। বাইক থামিয়ে ফোনটা বের করলাম । অফিসের বস কল করছে।
– আসসালামু আলাইকুম ম্যাম
– আপনার তো আজকাল কোনো খবরই পাওয়া যাচ্ছে না।
– কেন ম্যাম?
– একবার ও তো কল ও দিলেন না।
– বিয়ে নিয়ে একটু ব্যাস্ত ছিলাম।
– নিজেও বিয়ে করে ফেললেন নাকি।
– কি যে বলেন ম্যাম। আমি এখন বাইকে আছি তো বাসায় গিয়ে কল করি আপনাকে?
– আচ্ছা ।

কল কেটে দেওয়ার পরপরই এতক্ষণ চুপ করে বসে থাকা প্রিয়ন্তীর প্রথম প্রশ্ন।
– মেয়ে মনে হলো, কে মেয়েটা?
– আমার অফিসের বস।
– বস এতো রাতে ফোন দেয়! বাহ। বসের বয়স কতো?
– আপনার থেকে কয়েক বছরের বড় হবে
– তারমানে আপনার বয়সের?
– হবে হয়তো ।
– এইজন্যই দেয়।
– হঠাৎ আপনার কি হলো এভাবে কথা বলছেন কেন?
– আমার আবার কি হবে। আপনার বাবা আমায় জিজ্ঞেস করছিলো আপনাকে আমার কেমন লাগে ।
– কি? কখন জিজ্ঞেস করছে?
– খাওয়ার আগে ।
– আর কিছু বলছে?
– না, শুধু এতটুকুই বলছে।
জাহিন মনে মনে বললো- আব্বুরও মাথাটা গেছে মনে হচ্ছে ।
– কিছু বলছেন আপনি?
– তেমন কিছু না। আপনি প্লিজ আব্বুর কথায় কিছু মনে করবেন না।
– হুম ।

সেদিন রাতে প্রিয়ন্তী কে বাসায় নামিয়ে দিয়ে বাসায় এসে বাসায় অনেক রাগারাগি করছে জাহিন। বাসায় সবাই জানে জাহিনের রাগ একটু বেশি। তাই যখন জাহিন রেগে যেতো তখন সকলেই চুপ হয়ে যেতো।
জাহিন যখন রুমে আসলো তার একটু পরেই মানহা রুমে চলে আসলো।
– বাপি তুমি এতো চিৎকার করে কথা বললে কেন সবার সাথে?
– তুমি এখনো ঘুমাওনি কেন? যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
– আমি আজ তোমার সাথে ঘুমাবো।
জাহিন নিজেকে কিছুটা কন্টোল করে মানহা কে কাছে টেনে নিয়ে শুইয়ে দিলো।
-বাপি বললে না যে তুমি চিৎকার করে কথা বললে কেন সবার সাথে?
– কিছু না মা। ওরা সবাই মিলে তোমার ম্যাম কে এই বাসায় নিয়ে আসতে চায়।
– তাহলে তো ভালোই হবে আমি সারাদিন ম্যামের সাথে খেলতে পারবো। তুমি তাড়াতাড়ি ম্যামকে নিয়ে আসবে কেমন।

অবুঝ শিশুর অবুঝ আবদার কিন্তু বাসার বড়রা কি করে এমন আবদার করে সেটাই জাহিনের মাথায় আসে না।

To be continue….