আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-১৩

0
243

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#১৩তম_পর্ব

মানহা এখনো জেগে আছে । তাকে ঘুমিয়ে দেওয়ার কতো চেষ্টা করছে জাহিন কিন্তু তার কানে কোনো কথা যাচ্ছে না। সে তবুও একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে ।
– মানহা তুমি যদি না ঘুমোও তাহলে তোমাকে কিন্তু তোমার দাদুর কাছে রেখে আসবো।
মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো এমন সময় । বিরক্তি নিয়ে মোবাইলটা পকেটে থেকে বের করলাম । এতো রাতে আবার কে কল দিবে!
প্রিয়ন্তী আবার এতো রাতে কল দিচ্ছে কেন!
-হ্যালো।
– বাসায় পৌঁছে গেছেন?
– হ্যাঁ । একটু আগেই আসছি ।
– বাপি কে কল দিছে?
– তোমার ম্যাম।
প্রিয়ন্তীর কথা শুনতেই আমার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে প্রিয়ন্তীর সাথে কথা বলতে লাগলো।
– হাই ম্যাম
– তুমি এখনো ঘুমাও নি কেন?
– আমি তো আব্বুর সাথে গল্প করছিলাম ।
– আমার সাথে তো তুমি এতক্ষণ গল্প করো না। যাও তোমার সাথে আমার আড়ি।
– কেন?
– তুমি আমার সাথে গল্প করো না তাই। তুমি তো আমার সাথে থাকলে আমার আগেই ঘুমিয়ে যাও।

জাহিন পাশে দাঁড়িয়ে শুধু দেখছে । মনে হচ্ছে মানহা তার বয়সের কারো সাথে কথা বলছে । দুইটা পিচ্চি নিজেদের মাঝে কথা বলছে ।
– আচ্ছা ঠিক আছে এসব বাদ দাও। তো কি নিয়ে বাবা মেয়ে এতো গল্প করছো শুনি।
– তোমায় নিয়ে ।
জাহিন এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার কথা বললো- মানহা মোবাইল আমায় দাও। অনেক কথা বলছো আর কথা বলতে হবে না।
জাহিন মানহার হাত থেকে মেবাইলটা নিয়ে নিলো।
– কি হলো
– কি হবে?
– মেবাইলটা নিলেন কেন?
– যত্তসব উল্টো পাল্টে কথা বলছে তাই।
– আপনি ওকে মোবাইল দিন আমি ওর সাথে কথা বলবো।
– ও ঘুমিয়ে গেছে ।
– এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছে?
মানহা পাশে থেকে চিৎকার করে বলছে – ম্যাম বাপি মিথ্যা কথা বলছে আমি ঘুমাইনি।
– বাচ্চা কে সামনে রেখে মিথ্যা বলছেন ।
– অনেক রাত হয়েছে আজ আর কথা বলতে হবে না। ও ঘুমাবে আপনিও ঘুমান।
– না আমি ওর সাথে কথা বলবো।
– বলছি না রাত অনেক হয়েছে এখন কথা বলা যাবে না।
– আপনি আমায় বকছেন কেন?
কন্ঠ ভেজা ভেজা হয়ে গেছে এই বুঝি কেঁদে দিবে।
– এই দেখুন আমার সাথে এমন ঢং চলবে না ঠিক আছে? এই নিন কথা বলুন তবুও ঢং করতে হবে না।
মানহাকে মোবাইল দিলো জাহিন।
– তোমরা কি নিয়ে গল্প করছো?
– কেন তোমায় নিয়ে।
– আমায় নিয়ে কি গল্প করছো শুনি।
– বাপিকে সবাই তোমাকে বাসায় নিয়ে আসতে বলছে। কিন্তু বাপি তোমায় নিয়ে আসবে না।
– কেন?
– জানিনা। আমি বাপিকে কতবার বললাম তবুও বাপি তোমাকে বাসায় নিয়ে আসবে না।
– তোমার বাপি একটা পাঁজি ।
– না। আমার বাপি অনেক ভালো।
– থাক বাপির হয়ে আর গান গাইতে হবে না। ঘুমাও তুমি ।
– আচ্ছা ম্যাম।
– উম্মা
– উম্মা।

প্রিয়ন্তী কল কেটে দিলো ।
জাহিন মানহার দিকে তাকিয়ে আছে ।
– কি হলো এটা?
– কি?
– সব শেষে এটা কি ছিলো?
– এটা তো গুড নাইট পাপ্পি। তুমি তো কোনোদিন দাও না কিন্তু ম্যাম আমায় রোজ দেয়।

– আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ঘুমাও।
মানহাকে ঘুমিয়ে দিয়ে জাহিন কিছুক্ষণ কিসব চিন্তা করে ঘুমিয়ে গেলো।

আরও দুই দিন কেটে গেলো। বাসার সবার সাথে সুন্দর সময়গুলো খুব তাড়াতাড়ি কেটে যাচ্ছে জাহিনের। এখানে জাহিনের সেই নিঃসঙ্গতা অনুভব হয় না। নেহা কে বার বার মনে পড়ে না। তার কোনো অতীত তাকে কোনো রকমের ব্যাথা দিতে পারে না। অতীত মানুষ কে তখনই কষ্ট দেয় যখন মানুষ অতীত নিয়ে ভাবে। অতীত নিয়ে মানুষ তখনই ভাবে যখন তার চারপাশে লোকজন শূন্য থাকে আর তার কোনো কাজ থাকে না। কিন্তু এখানে বাসায় সারাদিন সবার সাথে গল্পে আড্ডায় মেতে থাকে।
রাতে শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছে হঠাৎ কল আসলো বসের নাম্বার থেকে ।
– হ্যালো।
– ম্যাম কেমন আছেন?
– এই তো ভালোই । আপনি কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ ।
– তো আপনার কি ভাইয়ের বিয়ে এখনো শেষ হয়নি?
– আমি খুব তাড়াতাড়ি আসবো ম্যাম।
– যত দ্রুত পারেন। অনেক কাজ পেন্ডিং আছে । আপনি আসলে তবেই সেগুলো শেষ হবে ।
– আচ্ছা ম্যাম।

সকাল বেলা খাবার টেবিলে জাহিন বললো- আব্বু বিয়ে তো শেষ হয়ে গেছে ।
– হুম ।
– মানহা আর আমি আজ চলে যাবো।
জাহিনের কথায় সবাই অবাক হয়ে গেছে । অনেককেই ভেবেছিলাে জাহিন আর হয়তো যাবে না।
জাহিনের আম্মু বললো- তুই আজকেই যাবি কেন? আর কিছুদিন থেকে যা।
– তাতেই অনেক দিন অফিসে ছুটি কাটালাম। তাছাড়া সবার সাথে তো দেখা হলো কথা হলো। গতকাল ম্যাম কল করছিলো অফিসে অনেক কাজ জমে গেছে আর মানহার ও স্কুল বন্ধ যাচ্ছে অনেক দিন। পরে আবার দেখা যাবে ও অনেক পিছিয়ে গেছে ।
– আজ মানহার ম্যামের আব্বু আমাদের বাসায় আসার কথা তোর সাথে কথা বলার জন্য ।
– মানে! উনি আমাদের বাসায় আসবে কেন?
– বললাম তো তোর সাথে কথা বলতে আসবে ।
– আমার সাথে কথা বলার কি আছে?
– সেটা উনি ভালো বলতে পারবেন।

জাহিন খাওয়া শেষ না করেই উঠে চলে গেলো। রুমে এসেই প্রিয়ন্তী কে কল দিলো।
– হ্যালো
– আপনি এতো সকালে।
– হুম । আপনার বাবা নাকি আজ আমাদের বাসায় আসবে?
– হুম ।
– কিন্তু কেন?
– জানিনা।
– আমি সত্যি বুঝতে পারছি না কি চলছে আর সবাই কি চাচ্ছে ।৷ সবার সমস্যা টা কোথায়?
– আপনি বুঝতে পারছেন না নাকি বুঝতে চাচ্ছেন না? সবাই কি চাচ্ছে সেটা আপনি ভালো করেই জানেন। কিন্তু সবাই যেটা চাচ্ছে আপনি সেটা চাচ্ছেন না কেন? সমস্যা সবার নয় সমস্যা শুধু আপনার ।
জাহিন নিজেকে শান্ত করলো।
– আচ্ছা আপনি আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?
– কখন?
– একটু পরেই?
– আচ্ছা ।
– আর হ্যাঁ আপনার বাবা কে আমাদের বাসায় আসতে নিষেধ করবেন।
– আচ্ছা ।

জাহিন রেডি হয়ে বের হচ্ছে ।
– বাপি কোথায় যাচ্ছো তুমি?
– তুমি একটু তোমার দাদুর কাছে থাকো আমি বাইরে যাচ্ছি টিকেট নিতে। আমরা আজ বাসায় যাবো তো তাই।
বাসায় যাওয়ার কথা শুনে মানহার মুখটা মলিন হয়ে গেলো। মানহা কেন জাহিন নিজেও বাসায় যেতে চাচ্ছে না। এমন লোকজন পূর্ণ একটা বাড়ি ছেড়ে কেউ চাইবে না জনমানবশূন্য ঐ বাসায় যেতে। কিন্তু কিছুই করার নেই যেতে তো হবেই।

বাসা থেকে বের হতে যাবে তখন আব্বুর সাথে দেখা। তার ও একই প্রশ্ন ।
– যেতেই হবে? থেকে গেলে হয় না?
– আমি সেখানে একটা অফিসে বড় একটা দায়িত্ব আছি আমি যদি এভাবে এখানে এসে থাকি তবে তাদের অনেক বড় একাটা ক্ষতি হয়ে যাবে।
– তোর ওখানে গিয়ে জব করার দরকার কি তুই তো আমাদের ব্যাবসার দেখাশোনা করলেও পারিস।
– এগুলো দেখাশোনার জন্য তো তোমরা আছোই। আমি এখন আসি নয়তো আবার দেরি হয়ে যাবে।

জাহিন কাউকে বলেনি যে সে প্রিয়ন্তীর সাথে দেখা করতে যাবে। এমনকি মানহাকে ও না। হতে পারে আজকেই প্রিয়ন্তীর সাথে তাদের শেষ যোগাযোগ ।

To be continue….