আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-১১

0
205

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#১১তম_পর্ব

সকাল বেলা রকির ডাকে ঘুম ভাংলো। বিয়ের বর এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে আমায় ডাকতে আসছে ব্যাপার কি!
– ভাইয়া ওঠো না তাড়াতাড়ি।
– উঠছি তো। এতো সকাল বেলা আমার রুমে কি জন্য?
– ভাইয়া খুব বড় বিপদে পড়ে গেছি।
– আজ তোর বিয়ে অথচ তুই বলছিস বিপদে আছিস। এটা কোনো কথা হলো! তুই আজ পুরো ফুরফুরে মেজাজে থাকবি।
– ঠিক বিপদ না বিপদের থেকেও বড়টা। আমি তো পুরাই দোটানায় ঝুলে আছি।

রকির চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে জাহিন।
রকির কাঁধে হাত রেখে সে রকিকে আস্বস্ত করার চেষ্টা করছে।
– কি হয়েছে রকি?
– তুমি তো অনেক দিন হয় চলে গেছো।
– হুম ।
– এর মাঝে আমার জীবনের সাথে একটা মেয়ের জীবন জড়িয়ে যায়।
– তারপর?
– কিছুদিন আগে আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
– বিচ্ছেদ করেছিলো কে?
– ও।
– তারপর!
– যেদিন থেকে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তার কয়েকদিন পর থেকে ও আমায় কল করতো।
– এটা তো খুব বাজে বিষয় ।
– বাজে কি না জানি না তবে ওকে আমি প্রচুর ভালোবাসতাম যার জন্য ওর প্রতি একটা ফিলিংস এখনো মনের মাঝে আছে । তাই ওর সাথে কথা বলতে ভালোই লাগতো।
– হুম । তারপর!
– কাল রাতে কল করে প্রচন্ড কান্না করছে । আমার কাছে আবার ফিরতে চাচ্ছে ।
– তুই কি বললি?
– আমি এখনো সেভাবে কিছু বলি নি। তবে কাল রাতে অনেক কান্না করছে । সারারাত ঘুমাতে পারিনি। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
– তুই কি চাচ্ছিস সেটা ক্লিয়ার করে বল আগে আমায়।
– আমি জানিনা। ও বলছে যদি আমি ওকে বিরনা করি তবে সুইসাইড করবে । আর আমি ওকে ভালো করেই চিনি ও খুব জেদি মেয়ে যেটা বলবে সেটা করেই ছাড়বে।
– সেটা না হয় আমি বুঝলাম কিন্তু যখন ছাড়া থাকতেই পারবে না তখন বিচ্ছেদ কেন করেছিল? আর যে একবার তোকে ছেড়ে গেছে সে যে আবার ছেড়ে যাবে না তার কি গ্যারান্টি আছে?
– ভাইয়া মানুষই তো ভুল করে আবার সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই তো বাকী জীবন আর ঐ ভুলটা করে না তাই না।
– এটা ঠিক বলছিস। কিন্তু তোর আজ বিয়ে এখানে তো করার মতো কিছুই নেই।
– ভাইয়া প্লিজ তুমি কিছু করো। আমি তো দেখেছি তুমি তোমার বন্ধুদের কিভাবে সাহায্য করতে আমায় ও একটু সাহায্য করো।
– কি করতে বলছিস তুই এখন আমায়?
– তুমি তো জানোই ভালোবাসার মানুষটি কে ছাড়া থাকা কতটা কষ্টকর।
– হুম । আমি এটাও জানি ভালোবাসার মানুষটিকে চোখের সামনে অন্য মানুষের হাত ধরে হাঁটতে দেখাটা আরও কতটা যন্ত্রণাদায়ক আর যখন সেই ভালোবাসার মানুষ টা রঙ বদলায় তখন নিজের কাছে নিজেকে কতটা ছোট লাগে।
– ভাইয়া আমি রিমিকেই বিয়ে করবো কিভাবে করবো সেটা জানি না। তবে আমি রিমি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না। তুমি কি করবা সেটা তুমি ভালো জানো। যদি তুমি কিছু না করো তবে আমি পালিয়ে যাবো।
– এটা কেমন কথা! যে মেয়েটার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে সে মেয়েটার কথা একবার চিন্তা কর। সামাজ তাকে কত কথা শোনাবে।
– ওকে বিয়ে করার পর যদি মনে ওর জন্য ফিলিংস না জাগে তখন যে আমরা দুজন সুখে থাকতে পারবো না তখন তোমার সমাজ আমাদের কিভাবে সুখী করবে বলো তুমি ।

জাহিন নিরব হয়ে গেলো। রকির কথায় যুক্তি আছে । মানুষ দিন শেষে হাজার কষ্ট নিয়ে তার ভালোবাসা মানুষটির বুকেই একটু আশ্রয় খোঁজে । যে ভালোবাসার জন্য জাহিন এতোদিন সবাইকে ছেড়ে দূরে থাকলো সেই ভালোবাসাকে আপন করা থেকে যদি ছোট ভাইকে বাঁধা দেয় তবে ছোট ভাইয়ের চোখে স্বার্থপর হয়ে যাবে। অন্যদিকে দুই পরিবার মাঝখানে রকি নয় এখন যেন মাঝখানে জাহিন দোটানায় ঝুলে আছে ।
রকি কে রুমে পাঠিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হলাম । ফ্রেশ হয়ে প্রিয়ন্তীর নাম্বারে কল করলাম মানহার সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু কয়েকবার কেটে গেলো কেউ রিসিভ করলো না।
বের হয়ে আব্বুর রুমে আসলাম । বাসার যেকোনো সিদ্ধান্ত এই রুমেই নেওয়া হয়। কারণ আব্বুর সিদ্ধান্তের উপর কেউ কখনো কোনো কথা বলেনি। রুমের বাইরে থেকেই রুমে কারো কথার শব্দে দাঁড়িয়ে গেলাম। নক করতেই কথা বন্ধ হয়ে গেলো। আমি ভিতরে চলে আসলাম ।
চাচ্চু আর আব্বু দুজনেই দাঁড়িয়ে কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় আছে । আমায় রুমে আসতে দেখে চাচ্চু আমার কাছে আসলো- আমরা তোর কাছেই যেতে চাচ্ছি।
– কেন কি হয়েছে?
– একটু আগে মেয়ের বাড়ি থেকে মেয়ের বড় ভাই কল করছিলো।
– কি বললো?
– মেয়েকে গতকাল রাত থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।
– পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি?
– মানে মেয়ে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে ।
মনে মনে জাহিন ঠিক কতটা খুশি হয়েছে সেটা বোঝানো যাবে না। কারণ জাহিন এতক্ষণ এটাই ভেবেছে একবার তার জন্য পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়েছে আবার যদি রকি ও একই কাজ করে তবে আব্বু চাচ্চুর অবস্থা খুবই খারাপ হবে ।
– জাহিন তুই একটু রকি কে বোঝাবি ও যাতে ভেঙে না পড়ে ।
– আচ্ছা ঠিক আছে । ঐ মেয়ে পালিয়ে গেছে তো কি হয়েছে রকির বিয়ে আজকেই হবে আমি দিবো। তোমরা শুধু বাসায় অপেক্ষা কর আমরা রকির বউ নিয়েই বাসায় ফিরবো।
– এর মাঝে আবার মেয়ে কোথায় পাবি?
– সেটা আমি বুঝে নিবো।

এই জন্য প্রিয়ন্তী আমার কল উঠাচ্ছে না। জাহিন রকির রুমে আসলো। রকি তখনও পালানোর প্ল্যান করছে । ব্যাগের মাঝে কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে।
– পালানোর প্রস্তুতি চলছে?
– হুম। যদি তুমি কিছু করতে না পারো তবে আমায় এটাই করতে হবে ।
– সেটার আর দরকার হবে না ।
– মানে?
– মানে আবার কি? তোর যার সাথে বিয়ে ঠিক ছিলো সে তোর থেকেও সাহসী সে গতকাল রাতেই প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে । তুই সত্যি ভাগ্যবান রে। চাচ্চু কে বলে আসছি আজ তোর বিয়ে দিয়েই ছাড়বো। তোর প্রেমিকা কে বিকেলে পার্কে আসতে বল আমরাও আসবো তারপর কোনো কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করিয়ে দিবো তোদের।
– সত্যি ভাইয়া?
রকি জাহিন কে জড়িয়ে ধরলো। প্রিয় মানুষ কে আপন করে পাওয়ার আনন্দটা কতটা গভীর ।
– আমায় একটা কথা বল তোদের জেনারেশনের কি সবার মাথা থেকে সোসাইটি কি বলবে সে চিন্তা হারিয়ে গেছে?
– ভাইয়া সোসাইটি আমাদের শুধু হতাশ করা ছাড়া আর কিছুই পারে না। তাই নিজের সুখের চিন্তা সবার আগে এরপর সমাজ। আমি নিজেই যদি ভালো না থাকি তবে সমাজ উচ্ছন্নে গেলেও আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু যখন আমি ব্যাক্তি জীবনে ভালো থাকবো তখনই সমাজের উন্নতির দিকে লক্ষ দিতে পারবো। নিজের ভালো থাকার জন্য ভালোবাসার মানুষটি কে পাসে রাখা খুবই জরুরি ।
– হুম ।

বিয়ের বাড়িতে কতটা হৈচৈ হতো কিন্তু এখন সব কিছুই নিরবতা পালন করছে । দুপুরের দিকে আরও কয়েকবার প্রিয়ন্তীর নাম্বারে কল করার পর সে কল রিসিভ করলো।
– সকাল থেকে কল করছি আপনি রিসিভ করছেন না কেন?
– রিসিভ করে বলার মতো কিছু নেই আমার তাই।
– এভাবে কেন বলছেন? তাছাড়া ভুল তো আপনি করেন নি তাই না। তাছাড়া যে যেখানে সুখ খুঁজে পায় সে তো সেখানেই যাবে। এটাই তো নিয়ম। সবার সুখের কথা চিন্তা করে মানসিক যন্ত্রণায় থেকে অসময়ে মনের মৃত্যুর থেকে নিজের পছন্দের মানুষের সাথে দুদিন হেঁসে খেলে বাঁচাটাই উচিত ।
– আপনি কথাগুলো যতটা সহজে বলতে পারছেন আমি ততটা সহজে মানতে পারছি না।
– আচ্ছা বাদ দিন এসব আজ তিনটের দিকে সুরুভী উদ্যানে আসতে পারবেন?
– কেন?
– আসলেই বুঝতে পারবপন কেন? মানহাকে নিয়ে তিনটের দিকে চলে আসবেন কেমন।
– বাসার অবস্থা খুবই খারাপ । জানিনা পারবো কি না তবুও চেষ্টা করবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে ।

চারদিকে কোথাও কেউ ভালো নেই সবাই একটু ভালো থাকার জন্য কত কিছুই না করছে । কেউ মানসিক শান্তি পাচ্ছে না কেউবা পেয়েও হারাচ্ছে আবার কেউ হারিয়ে পাগলের মতো খুঁজছে। কেউ তার অবস্থানে সুখী হতে পারছে না।

To be continue…..