আমার অনুভুতি তুমি পর্ব-০১

0
865

#আমার_অনুভুতি_তুমি
#পর্বঃ১
#নুসাইবা_ইসলাম

আমার ছেলের সাথে তোমার মেয়ের বিয়ে যায় না রফিক, আমার ছেলে আরো ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে। (সফিক সাহেব)

ভাইজান কি বলছেন আপনি এসব? আপনি ই তো ইশা মায়ের সাথে সূর্য এর বিয়ে ঠিক করেছিলেন! আশ্চর্য হয়ে রফিক সাহেব তার বড় ভাইকে প্রশ্ন করলেন.

যখন করেছিলাম তখন আমার ছেলে ছোট ছিলো রফিক এখন সে বড় হয়েছে তার নিজস্ব মতামত রয়েছে। যাইহোক তোমার মেয়েকে সূর্য এর আশায় রেখো না বিয়ে দিয়ে দিয়ো আজ তাহলে উঠি। (সফিক সাহেব)

এতোক্ষন বাবা আর বড় কাকার মাঝের কথা দরজার আড়াল থেকে শুনছিলো ইশা। চোখ বেয়ে তার পানি পড়ছে, এটা তো হওয়ার ই ছিলো সে জানতো। কারণ তার বড় কাকা প্রচন্ড লোভি একজন ব্যাক্তি এইযে বলছে না ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে তার ভালো মানে অনেক বড়লোক বাড়ির মেয়ে ডিজার্ভ। আচ্ছা সূর্য ভাই ও কি একমত কাকার কথায়? আমার জন্য কি তার মনে বিন্দু মায়া যাগে নাই.! নিজের ভাবনায় ডুবে ছিলো তখন তার বাবা তাকে ডাক দিলো।

ইশা মা এদিকে একটু শুনে যা তো। ( রফিক সাহেব)

চোখের পানি মুছে সে বাবার কাছে এগিয়ে গেলো।

কি হয়েছে বাবা তোমার কিছু বলবে? (ইশা)

আরে তেমন কিছু না শোন আজ কলেজ থেকে ফিরার দরকার নাই তোর মামা আছে না সে তোকে যেতে বলেছে। তোর মা ও অই বাড়িতেই গেছে। (রফিক সাহেব)

আচ্ছা বাবা তুমি যাবে না? আমি আর আম্মা একা একা ওখানে কি করবো? (ইশা)

আজ তোর লামিয়া আপুকে দেখতে আসবে পাগলি যা ভালো লাগবে। আর আমি একা থাকতে পারবো চিন্তা করিস না। ( রফিক সাহেব)

বাবার কথায় আমি রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম কলেজের উদ্দেশ্য, আমি ইশা রহমান। আমি এবার ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ি, মা -বাবার একমাত্র মেয়ে। আমার বাবা একজন আর্মী ছিলেন কিন্তু বিগত একবছর ধরে তার হার্টে সমস্যার কারণে রিটায়ার্ড হয়েছেন। আমার মা রাফিয়া বেগন একজন স্কুল টিচার। সূর্য ভাই হলো আমার বড় কাকার ছোট ছেলে, খুব ছোট বেলায় না কি বড় কাকাই বলছিলেন সূর্য সেটেল হলে আমাকে তার পুত্রবধূ করবেন কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তার মত ও পালটে গেলো। সূর্য ভাই যখন ওয়েল সেটেল্ড তখন সে আর আমাকে বউ বানাবে না তাই আমার বাবাকে অইভাবে বলে গেলেন। এতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না কারণ আমি এসব নিয়ে ভাবি নাই।

ক্লাস শেষ করে মামার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম আমি। আমরা মধ্যবিত্ত হলে কি হবে আমার মামা কিন্ত উচ্চবিত্তদের পর্যায়ে পড়ে। আমার মামার ২ ছেলে একমেয়ে, ইফরাত ভাইয়া,আরাফাত ভাইয়া আর লামিয়া আপু। আমি শুধু আরাফাত ভাইয়া আর লামিয়া আপুকেই চিনি আর ইফরাত ভাইয়াকে কখোনো দেখিনাই। আমি ছোট থাকতে নাকি আমি ওনার পাগল ছিলাম অনেক উনি ছাড়া কিছু বুঝতাম না। যখন আমার বয়স ৬ তখন ভাইয়াকে লন্ডন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। জানিনা কেন। মামার বাসায় গিয়ে দেখি কতো আয়োজন করা হয়েছে, আমাকে দেখে মামি এগিয়ে আসলো!

কিরে এতো দেড়ি করলি কেন? তোর আপু ক্ষেপে গেছে তোর উপর যা গিয়ে দেখা করে আয়। (মামি)

আচ্ছা যাচ্ছি আম্মু কই দেখছি না কেন? (ইশা)

তোর আম্মু তো রান্না করে, আমি গেলাম উপরে যা তুই। ( মামি)

আমি এবার দৌড়ে উপরে উঠতে লাগলাম আর সিড়ির সাথে পা লেগে পড়ে যেতে নিয়ে জোড়ে চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। আমার চিৎকার শুনে সবাই চলে আসলো, কিন্তু আমি এখোনো ব্যাথা পাই নাই কেন।

আমি না পড়ে গেলাম এখোনো ব্যাথা পাচ্ছিনা কেন আল্লাহ? তাহলে কি মড়েই গেলাম না কি? (ইশা)

এই অসভ্য বাদড় চোখ খুল তুই কিসব বলতাছোস? (আম্মু)

আম্মুর আওয়াজ পেয়ে আমি এক চোখ খুলে দেখি ওমাহ আমাকে কে জেনো সিনেমার হিরোর মতো ধরে রেখেছে। ওনার দিকে তাকিয়ে আমি ক্রাশ খেয়ে গেলাম আল্লাহ।

এই মেয়ে এইভাবে তাকাই আছো কেন সোজা হয়ে দাড়াবা না আমি ফেলে দিবো স্টুপিড। ( ছেলেটি)

এতোক্ষন যা ভালো ভাবছিলাম এরে নিয়ে ধমক খেয়ে সব শেষ কি খারাপ লোক। গাল ফুলিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দেখি সবাই আমাদের দিকে তাকাই আছে। আম্মু তো চোখ বড় বড় করে তাকাই আছে মনে আমাকে সেই চোখ দিয়ে শেষ করে দিবে, আমি আমতা আমতা করে আবারো দৌড় লাগালাম আপুর ঘড়ের দিকে।

এই আবার দৌড় দিছোস আরেকবার পড়লে কে বাচাবে, এই মেয়েকে নিয়ে আমি আর পারি না ভাবি। ( আম্মু)

আরে রাফিয়া ইশু তো বাচ্চা মানুষ বড় হলে ঠিক হতে যাবে। (মামি)

আম্মু ওরে তোমার কোন দিক দিয়ে বাচ্চা মনে হয়? ষাড়ের মতো মাইয়া তারে আবার বাচ্চা বলে। (ছেলেটি)

ইফরাত ইশুরে নিয়ে এসব বললে মেরে ফাটিয়ে দিবো,ও কিন্তু সবার ছোট ভুলে যাস না। (মামি)

কিভাবে ভুলবো আমি তাকে? ভুলার মতো না কি ওই আটার বস্তা মা গো আমার হাত শেষ। (ইফরাত)

আমি সেই যে লামিয়া আপুর রুমে এসে বসছি আর নামি নাই। এদিকে লামিয়া আপুকে কি সুন্দর লাগছে তা দেখে আমি একদম ফিদা হয়ে গেছি।

আপু মা শা আল্লাহ তোমাকে কি সুন্দর লাগছে। আজকে দেখে তো দুলাভাই একদম ক্লিন বোল্ড হয়ে যাবে। ( ইশা)

যা দুষ্টু এইভাবে কেউ বলে? তুই ইফরাত ভাইয়ার দিকে ওমন ভাবে তাকাই ছিলি কেন? ( লামিয়া আপু)

ইফরাত ভাইয়া মানেএএ? অইটা ইফরাত ভাইয়া, ছিহ ইশু কাকে নিয়া কি ভাবছোস তুই। মনে মনে এই কথা গুলো আওরাচ্ছিলাম তখন লামিয়া আপু ধাক্কা দিলো।

কি হইছে ধাক্কাও কেন? ( ইশু)

মনে মনে কি ভাবো আর হাসো তুমি? কি ব্যাপার কারো প্রেমে পড়ছোস না কি রে ইশু? ( লামিয়া আপু)

দূর আমি আর প্রেম হাও ফানি, ভাবসিলাক তো ইফরাত ভাইয়া আমাকে ধমক কেম দিলো? আমি কি তাকে কিছু বলছি? ( ইশু)

তুই যেইভাবে পড়তে নিছিলি একবার ভাবছোস পড়লে তোর অবস্থা কি হতো? (লামিয়া আপু)

আচ্ছা বাদ দাও, ড্রেস দেও রো সারাদিন ক্লাস করে ঘেমে এখন খারাপ লাগছে শাওয়ার নিবো আমি। (ইশু)

আচ্ছা যা তুই ওয়াসরুমে দেখ প্লাজু আর গেঞ্জি আছে,পড়ে আয় দেন ড্রেস বার করে রাখছি আমি। ( লামিয়া আপু)

আমার কিউটি পাই আপু,আমি গেলাম তুমি থাকো। (ইশু)

শাওয়ার নিয়ে বের হলাম চুল মুছতে মুছতে তখন আমার সামনের ব্যাক্তিরে দেখে আমি স্পিচলেস? উনিও হা হয়ে আমার দিকে তাকাই আছে। আমাএ হৃদস্পন্দন ক্রমাগত বেড়েই চলছে আমি যেই চিৎকার দিবো তখন উনি মেবি বুঝতে পারছে দ্রত বেগে এসে আমার মুখ চেপে ধরলো।

এই ষ্টুপিড এভাবে চেচাস কেন তুই হ্যাঁ? যখন তখন? (ইফরাত ভাইয়া)

আমি কিভাবে বলবো উনি আমার মুখ তো নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে। তাই চোখ বড় বড় করে তাকাই আছি।

কি হলো বলোস না কেন কিছু? কথা নাই কেন এখন। আর এগুলা কি পড়ছোস ছিহঃ ছিহঃ এতো খারাপ রুচি কেন? আজ না বাসায় মেহমান আসবে। তারপর যখন বুঝতে পারলো তখন সে হাত সরিয়ে দুড়ে গিয় দাড়ালো।

আপনি এখানে কি করছেন? আপু কোথায় হ্যাঁ.. আর আমার ব্যাপারে এতো কথা কেন বলেন। ( ইশু)

ইফরাত কিছু বলতে নিবে তখন লামিয়া চলে আসছে।

ভাইয়া তোমাকে নিচে ডাকছে তারা চলে আসছে। (লামিয়া)

ইফরাত একবার ইশুর দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। লামিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ব্লাস করছে। বেড থেকে ড্রেস নিয়ে সে এবার রেডি হয়ে গেলো। আর লামিয়া কে নিয়ে নিচে গেলো। লামিয়া কে দেখতে আসা লোকদের দেখে তো ইশা অবাক হা হয়ে তাকিয়ে আছে।

চলবে…??