আমার খাঁচায় তুমি বন্দি পর্ব-১৪

0
2817

#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:১৪

সিয়াম রাহির হাত ধরে রাহির কাছে যেতে থাকে। রাহি নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিস্তু সিয়াম আরো জোরে ডান হাত চেপে ধরে।
রাহি: হাত ছাড়েন বলছি।
সিয়াম : এমন করে না ভাবী। একটু কাছে আসলে কি হয়?
রাহি রাগে ঠাস করে চড় দিয়ে দেয় সিয়ামের গালে।

রাহি চড় দেওয়ায় রাহির দিকে রাগি চোখে তাকায় সিয়াম।
রাহি রাগি কন্ঠে আঙ্গল দেখিয়ে বলে….
রাহি: আর কখনো আমার সাথে এমন করতে আসলে হাত ভেঙ্গে ফেলবো মনে থাকে যেনো তোর।
এই বলে রাহি ওপরে নিজের রুমের দিকে যায়।
তখনি রিফাতের সাথে দেখা হয়।
রিফাত: কি হয়ছে রাহি তুমি রেগে আছো কেনো?
রাহি: কই না তো
রিফাত: তোমার হাতে কি হয়ছে।
রাহি: আরে চুড়ি পরে ছিলাম তাই এমন লাল হয়ে গেছে।
রিফাত: সত্যি কিছু হয়নি….
রাহি: কিছুই হয়নি।
রাহি এই বলে রুমের ভিতর চলে যায়।
রিফাত নিজেই মনে মনে বলছে…
রিফাত: রাহি তুমি মিথ্যে কেনো বললে। সিয়াম তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করছে তাও আমাকে বললে না।
রাহি রুমের ভিতর গিয়ে বিছানায় বসে পরে আর মনে মনে বলে….
রাহি: স্যরি রিফাত,আমি তোমাকে কিছুই বললাম না। আমি জানি তোমাকে সিয়ামের করা ব্যাবহারের কথা বললে ওকে মারবে। এতো তোমাদের মধ্যের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে।
এরপর সারাদিন সিয়াম রাহির সামনে আসে নি।
রাতে খারার সময় সবাই খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছে এমন সময় সিয়াম বলে….
সিয়াম: রাহি ভাবী পানির গ্লাসটা একটু দেন তো।
রাহির দিতে ইচ্ছে করছে না। তাও দিতে যায় আর তখনি সিয়াম রাহির হাত আবার বাজে ভাবে ধরে।
রিফাত তা দেখতে পায় আর তার রাগ হয় আর নিজের পাশে থাকা গরম ডাল ধাক্কা দিয়ে সিয়ামের পায়ের ওপর ফেলে দেয়।
সিয়াম আহ্ করে ওঠে।
রিফাত: স্যরি সিয়াম আমি খেয়াল করি নাই।
সিয়াম: আচ্ছা সমস্যা নেই। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
এরপর সিয়াম নিজের রুমে চলে যায়।
রাতে সবার খাওয়া শেষে রাহি সব কিছু গুছিয়ে নিজের রুমে যাচ্ছে এমন সময় পিছন থেকে সিয়াম রাহির হাত ধরে টান দেয়।
রাহি ভয় পেয়ে যায় হঠাৎ এমন হবার কারনে। রাহি পিছনে তাকিয়ে দেখে সিয়াম হাত ধরে টান দিছে।
রাহি: তোর সাহস হয় কি করে আমার হাত ধরে টান দেবার।
সিয়াম: অধিকারই তো চায় তোমার হাত ধরে কাছে আসার।
রাহি: দেখ তরে বারবার করে বলতাছি আমার ধারের কাছে আসবি না।
সিয়াম: আমি তো আসবোই।
রাহি: তোর জানের ভয় নাই বুঝি। রিফাত যদি জানে তোরে একেবারে ঘুন করে ফেলবে।
সিয়াম: আচ্ছা বলে দেখো।
রাহি সিয়ামের হাত ঝামটা দিয়ে ফেলে নিজের রুমে চলে যায়।
রিফাত: এতো দেড়ি হলো যে…
রাহি: একটু কাজ বেশি ছিলো।
রিফাত: রাহি আমার কাছে আসো তো।
রাহি রিফাতের কাছে যায়।
রিফাত রাহির হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে…
রিফাত: দেখো রাহি তুমি আর আমি দুজন দুজনের পরিপূরক। তোমার সুখে-দুঃখে আমি সবসময় তোমার পাশে আছি। তুমি তোমার মনের সব কথা আমাকে কোনো ভয় না পেয়ে বলতে পারো। আমার কাছ থেকে কখনো কিছু আড়াল করো না আর আমাকে মিথ্যা ও বইলো না কখনো।
রাহি: আচ্ছা।
রিফাত: হুমম।
রাহি: ঘুমায় যাও।
রিফাত শুয়ে পরে রাহি ও রিফাতের পাশে শুয়ে পরে আর শুয়ে শুয়ে ভাবে
রাহি: রিফাতকে বলবো না কিন্তু সিয়াম কে তো শায়েস্তা আমি করবো আর কাল থেকে শুরু হবে।
পরের দিন সকাল বেলা…
রাহি সকালে চা নিয়ে সিয়ামের রুমে যায়।
সিয়াম ঘুমিয়ে আছে তাই রাহি সিয়ামকে ডাকে।
রাহি: এইযে ওঠেন।
রাহির ডাকে সিয়াম ঘুম থেকে ওঠে আর রাহিকে দেখে অবাক।
সিয়াম: তুমি আমার রুমে।
রাহি: কাল ভেবে দেখলাম রিফাত তো সবসময় বাসায় থাকে না তাই তোমার সাথে না হয় একটু সময় কাটাবো দোষ তো নেই।
সিয়াম রাহির কথা শুনে খুশি হয়ে যায়।
রাহি সিয়ামকে খুশি হতে দেখে মনে মনে বলে…
রাহি: যতো খুশি হবার হয়ে নে তারপর তোর কি হবে কে জানে।
এসব ভেবে রাহি সিয়ামকে চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়।
রাহি: এই নাও চা খাও। খেয়ে বলবে কেমন হয়ছে
সিয়াম রাহির হাত থেকে চায়ের কাপ নেয়।
রাহি মনে মনে বলে
রাহি: খা,দেখ কতো মজা করে বানাইছি।
সিয়াম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে শেষ। না পারছে গিলতে, না পারছে ফেলতে।
সিয়ামের এমন অবস্থা দেখে রাহির অনেক হাসি পাই। কিন্তু না হেসে সিয়ামকে বলে…
রাহি: কেমন হয়ছে বলতাছো না কেনো?
সিয়াম কষ্ট করে মুখের টুকু গিলে নিয়ে বলে
সিয়াম: অনেক ভাল হয়ছে এমন মজার চা আমি কোথাও খায়নি।
রাহি: আমি নিজের বানাইছি।
সিয়াম: আচ্ছা।
রাহি: বাকি চা তাড়াতাড়ি শেষ করো না হলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।
সিয়াম অনেক কষ্ট করে চা খায়।
রাহি: চা তো শেষ এখন আমি আসি।পরে কথা হবে।
এই বলে রাহি চায়ের কাপ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
রাহি বের হবার সাথে সাথে সিয়াম দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করতে থাকে।
রাহি কিচেনে এসে জোরে হেসে দেয় আর বলতে থাকে
রাহি: নিমপাতা,করলার রস,লেবু,লবনের চা বলে অনেক মজা। হা…হা…হা….
-হাসি বন্ধ করে রিফাত ভাইয়র জন্য চা নিয়ে যাও ভাবী।
রাহি: হুমম যাবো রে বুলি।
বুলি: তাড়াতাড়ি যাও।
এরপর রাহি তাড়াতাড়ি রিফাতের জন্য চা করে রুমে যায়।
রাহি: জানু ঘুম থেকে ওঠো।
রাহির ডাকা ডাকিতে রিফাত ঘুম থেকে ওঠে।
রিফাত: আজ দেড়ি হলো কেনো?
রাহি: এমনি।
রিফাত: তোমার সাথে অামার কথা হলো প্রতিদিন সকালে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে ওঠাবে।
রাহি: তাই তো করি ।
রিফাত:হুমম।
রাহি: নাও চা খাও।
রিফাত: রাহি আজ আমি একটা কাজে এক জায়গায় যাবো আসতে দেড়ি হতে পারে।
রাহি: আচ্ছা।
এরপর সকালের নাস্তা করে রিফাত রেড়ি হয়ে তার কাজের জন্য বের হয়ে যায়।
রাহি বাসার টুকটাক কাজ করে বুলির সাথে কিছু সময় বসে কথা বলে।
বুলি: ভাবী একটা কথা কই
রাহি: হুমম বল।
বুলি: ভাবী রিফাত ভাই অনেক ভালা তবে রাগ একটু বেশি। কিন্তু আপনার সাথে বিয়ের পর ভাই তো রাগই করে না।
রাহি: তাই নাকি….
বুলি: ভাইয়ের মা-বাবা নাই তাই অনেক সময় কষ্ট পাই তবে কাউরে বুঝতে দেয় না। জানেন ভাবী রিফাত ভাই মিথ্যা কথা শুনতে পারে না। ভাবী ভাইয়ের কাছে কখনো মিথ্যা বইলেন না আর কিছু লুকায়েন না।
রাহি: আচ্ছা।
বুলি: ভাবী আমি এহন যাই আমার কাজ আছে।
এই বলে বুলি চলে যায় আর রাহি ও নিজের রুমে চলে যায়।
রাহি রুমে বসে কাজ করছে তখনি সিয়াম রুমে আসে।
রাহি তাকিয়ে দেখে সিয়াম।
রাহি: তুমি এখানে কি করো।
সিয়াম: রিফাত তো বাসায় নেই আসো একটু কাছে আসো।
এই বলে সিয়াম রাহিকে জরিয়ে ধরে। রাহি অনেক জোরাজুরি করে ছুটার জন্য এক সময় সিয়ামের থেকে ছুটতে পারে।
তারপর রাহি……
চলবে….