আমার খাঁচায় তুমি বন্দি পর্ব-০৩

0
4296

#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:৩

রাহি রিফাত কে দেখে ভয় পেয়ে যায় আর রিফাতের হাতের দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার দেয়।
রাহি কান্না করতে করতে রিফাতকে বলে…
রাহি: প্লিজ এমন করবেন না। আমি আপনার দুটি পায়ে পড়ি।আমাকে ছেড়ে দেন।
কিছু সময় আগে….
রিফাত রাগ করে নিচে চলে যায় আর লোহা গরম করে তা নিয়ে উপরে আসে।
রাহি রিফাতের হাতে গরম লোহা দেখে জোরে চিৎকার করে।
রিফাত: তোকে বলেছিলাম আমাকে রাগাবি না তাও তুই আমাকে রাগাস। তুই কেনো বুঝিস না আমার রাগ হলে কি করি বুঝি না। আমার রাগ যে তোর জন্য খারাপ তুই বুঝিস না কেনো।
রাহি রিফাতের কথা শুনছে আর কান্না করছে।
রিফাত: তুই কেনো বুঝিস না আমি তোকে আমার কাছে রাখতে চাই আমার খাঁচায় তোকে বন্দি করে রাখতে চাই।তবু কেনো তুই বারবার আমার থেকে দূরে যেতে চাস।
রাহি: আপনি খুব খারাপ। আপনার মতো মানুষের সাথে বাস করার থেকে মরে যাওয়া অনেক ভাল।
রিফাত রাগে…..
রিফাত : একদম মরার কথা বলবি না। আর আমার থেকে দূরে যাবার খুব শখ না তোর। দুরে যাবি কি করে এই পা দিয়েই তো তাই না। আচ্ছা যদি হাটতে না পারিস যাবি কি করে বলতো।
রিফাতের কথা শুনে রাহির বুক ধুক করে ওঠে ভয়ে। সে আরো কান্না করে দেয়।
রাহি: দয়া করে আমার সাথে এমন করবেন না।
রিফাত : বেশি কিছু করবো না তো। দেখি তোর পা দুটো দেয়।
রাহি: আমাকে ছেড়ে দেন। আমি আর কোথাও যাবো না বললাম তো।
রিফাত রাহির কথা না শুনে রাহির পা দুটো টেনে নিজের দিকে আনে। রাহি ছুটার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। রিফাত গরম লোহাটা নিয়ে রাহির পায়ে ধরবে এমন সময় রুমে একজন আসে আর বলে ভাই থামেন।
রিফাত তার কথায় থেমে যায়।
রিফাত: তুই এখানে কি করিস বুলি।
[বুলি রিফাতের বাড়ির কাজের লোক রহমানের মেয়ে।রিফাত ওকে অনেক আদর করে। ]
বুলি: এসব কি করছেন ভাই। ভাবি কষ্ট পাবে তো।
রিফাত: তুই তো সব জানিস। কেনো আমি এমন করি। ওই আমার সাথে এমন কেনো করেছিলো?কি দোষ করেছিলাম আমি।
বুলি: আচ্ছা ভাইয়া রাগ কইরেন না। ভাবির ভুল হয়ে গেছে আর কখনো সে ভুল করবে না। মাফ করে দেন।
বুলির কথা শুনে রিফাত হাতের লোহাটা ফেলে দেয় আর সেখান থেকে চলে আসে।
রিফাত চলে আসার পর বুলি রাহির কাছে যায় আর বলে
বুলি:ভাবি ওঠো।
বুলি রাহিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।রাহি ফ্রেশ হয়ে আসার পর বুলি তাকে বিছানায় এনে বসায় আর বলে
বুলি: ভাবি তুমি আমার ভাইয়ের সাথে এমন করেছিলে কেনো। তোমার কারনে আজ ভাই সেই আবার আগের থেকে কঠিন হয়ে গেছে। কেনো কষ্ট দিলে আমার ভাই কে?
রাহি: দেখ বুলি আমার তোর সাথে এসব বিষয়ে কিছু বলতে মন চাইছে না। দয়া করে আমাকে একটু একা থাকতে দেয়।
রাহির কথা শুনে বুলি সেখান থেকে চলে যায়।
অন্যদিকে…
রিফাত তার পছন্দের সেই গাছটার নিচে দাড়িয়ে আছে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে…
রিফাত: কেনো আমার জীবনে এসে এমন করলে রাহি। কেনো কেনো? কি দোষ ছিলো আমার? আমি কি সত্যিই এতোটা খারাপ।
এদিকে রাহি বিছানায় বসে ভাবছে নিজের আজকের পরিনতির কারন সে নিজেই দায়ী। রিফাতের দোষ সে কি করে দিবে। রিফাতের কাছেই সে তো সবচেয়ে বড় দোষী। রিফাতের এমন হওয়ার পিছনে তো সেই আসল কারন।
এইসব ভেবে বড় একটা শ্বাস নেয়। মনে মনে ভাবে অতীতের সেই দিনগুলোর কথা। সেই দিনটার কথা যে দিনটা হয়তো না আসলে জীবন এমন হতো না..
এসব ভাবতে ভাবতে অতীতে ডুব দেয়….

অতীত……

রাহি তোর জব না করলে হয় না মা।
রাহি: বাবা….। আমি পড়ালেখা করে কি বাসায় বসে থাকবো নাকি। আর জবটা ও ভাল, বেতন ও ভাল।
রাহির বাবা: আচ্ছা তোর যা ইচ্ছা কর।
রাহি: আচ্ছা বাবা আমি গেলাম। না হলে দেড়ি হয়ে যাবে।
রাহি তার বাবার সাথে কথা বলে অফিসের জন্য বের হয়ে যায়।
রাহি গাড়ির জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে আছে এমন সময় সামনে দিয়ে একটা গাড়ি যায় আর রাস্তার পাশে জমা পানি ছিটকে রাহির জামায় গিয়ে পড়ে।তা দেখে রাহির রাগ হয় আর জোরে বলে….
ওই বড়লোকের অন্ধ পোলা চোখে দেখোস না। অন্যের গায়ে পানি দেস।
রাহির কথা শুনে গাড়ি থামায় আর গাড়ি থেকে নেমে আসে সুন্দর হ্যান্ডসাম একটা ছেলে।গায়ে সাদা শার্ট,কালো প্যান্ট। এক কথায় মাশআল্লাহ্।
ছেলেটি রাহির কাছে এসে বলে
ছেলে: স্যরি, আমি দেখতে পারিনি। আমি খুবই দুঃখিত।
রাহি: আরে স্যরি তোর কাছেই রাখ। গায়ে পানি দেবার আগে দেখে চালাতে পারিস না গাড়ি।
ছেলে: আরে আপনি তুই করে কথা কেনো বলছেন। বললাম তো ভুল হয়ে গেছে আমি খেয়াল করি নি।
রাহি: আজ আমার জবের ১ম দিন। আর তোর জন্য আমার জামা-কাপড় কি হয়ে গেলো।
ছেলে: এই মেয়ে বারবার স্যরি বলছি ভালো লাগে না বুঝি। আমি সহজে কাউকে স্যরি বলি না তার মধ্যে তোকে বলছি তাও তোর ভাল লাগে না ফাজিল মেয়ে।
এই বলে ছেলেটি গাড়িতে ওঠে চলে যায়।
রাহি রাগে জোরে শব্দ করে বলে তোকে যদি আবার দেখি না তোর খবর আছে।
রাহি সামনের এক দোকানে থেকে পানি কিনে জামা মুছে তাড়াতাড়ি রিকশা নিয়ে তার অফিসে যায়।
অফিসে যাবার পর ম্যানেজারের কাছ থেকে জবের বিষয়ের সব কিছু বুঝে রাহি নিজের কেবিনে বসে আছে।
তখন একটা মেয়ে এসে রাহির দিকে হাত বাড়িয়ে বলে
মেয়েটি: হাই,আমি রিতা আক্তার।এইখানে জব করি। তোমার পাশের কেবিন আমার।
রাহি: হাই, আমি রাহি মাহাবুব । আজ জবে আমার ১ম দিন।
রিতা: তোমার পুরো পরিচয় দাও।
রাহি: আমি রাহি।বাবা মায়ের বড় মেয়ে, ছোট আর এক বোন আছে।অর্নাস শেষ করে জবে আসা।
রিতা: ও, তোমার সাথে আমার অনেক মিল।আমার ও একটা ছোট বোন আছে। আচ্ছা আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি।
রাহি: অবশ্যই।
রিতা: তো তুই করে কথা বলা যাবে।
রাহি: ওকে।
রিতা: আচ্ছা কাজ কর। পর আসবো আবার।
রাহি: ওকে।
অফিস ছুটির পর….
রিতা: তো আজ কেমন কাটলো তোর।
রাহি: বাহ্ ভালোই লাগছে।
রিতা: কাল তো স্যারের সাথে তোর দেখা হবে। শুন স্যার কিন্তু রাগি আছে।সাবধানে কথা বলিস আর একটু সাবধানে থাকিস অফিসে। স্যার কোনো কাজে ভুল হলে অনেক রাগ করে।
রাহি: আচ্ছা।
রিতা: ওকে বাই।কাল দেখা হবে।
রাহি: ওকে।
পরের দিন সকাল বেলা….
রাহি অফিসের গেটের সামনে দিয়ে ভিতরে যাচ্ছে এমন সময় দেখে সেই কালকের গাড়িটা সেখানে থামানো। রাহির কালকের কথা মনে পড়ে যায় তাই সে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কি না। রাহি দেখে কেউ নেই তাই তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে গিয়ে পাশে থাকা ডাস্টবিনের সব ময়লা সেই গাড়ির ওপর ঢেলে দেয়।তারপর হাসতে হাসতে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যায়।
রাহি নিজের কেবিনে বসে কাজ করছে এমন সময় বাহিরে কারো চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পাই। বাহিরে কি হয়ছে তা দেখার জন্য রাহি কেবিন থেকে বের হয় আর দেখে সেই ছেলেটি দুজন দারোয়ানের সাথে রাগারাগি করছে।যে তার গাড়ির ওপর ময়লা কোথা থেকে এলো।
রাহি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে এমন সময় রিতা ওর কাছে আসে।
রাহি: এই অন্ধ ফাজিল ছেলে এতো চেঁচামেচি করছে কেনো। এই ছেলেকে এখান থেকে বাহির করে দেয় না কেনো।
রিতা: ওই চুপ। কি বলছিস এই সব। তুই জানিস ওনি কে?
রাহি:কে?
রিতা: ওনি হলেন রিফাত চৌধুরী।আর এইটা ওনার কোম্পানি। ওনি এখানকার সবচেয়ে বড় বিজনেসম্যান। আর আমাদের স্যার।
রাহি:আহ্।
রিতা:হ্যাঁ।
রাহি:আমি মরে যাবো রে।
রিতা: কি হয়েছে?
রাহি রিতাকে কালকের আর আজকের ঘটনা সব বলে দেয়।
রিতা : আল্লাহ জানে তোর কি হবে। এতো কিছু করছিস। স্যার এমনি রেগে আছে। আর তোকে দেখলে কি করবে কে জানে। আল্লাহ বাঁচাও ওরে।
রাহি:এমনি ভয় পেয়ে আছি। তুই আর ভয় দেখাস না।
রিতা: আচ্ছা।তুই থাক আমি গেলাম। একটু পর স্যারের কেবিনে যাস। স্যারের সাথে দেখা করতে।
রিতার কথা শুনে রাহি ছলছল চোখে ওর দিকে তাকায়।
কিছু সময় পর….
রাহি রিফাতের কেবিনের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে আর……
চলবে….