আমার খাঁচায় তুমি বন্দি পর্ব-০৪

0
4133

#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:৪

রাহি ভয়ে ভয়ে রিফাতের কেবিনের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে আর মনে মনে বলছে..
রাহি: আল্লাহ আজকে আমাকে বাচাই দাও।
রাহি মনে একটু সাহস নিয়ে যেই কেবিনের দরজা খুলতে যাবে তখনি পিছন থেকে রিতা ডাক দেয় রাহি বলে।
রাহি: কি হয়ছে?
রিতা: স্যার এখন তার কেবিনে কাউকে যেতে মানা করছে। স্যারের মোড এখন ভাল নেই, মনে হয় প্রচুর রেগে আছে।
রাহি: যাক বাবা বাঁচা গেলে।
রিতা: হুমম, আজ তো বেচেঁ গেলি কিন্তু স্যারের সামনে
তো তোকে যেতেই হবে একদিন।
রাহি মুখটা গম্ভীর করে বলে..
রাহি: হুমম।তাও ঠিক রে।
রিতা: জি ম্যাডাম।
রাহি: আচ্ছা বাদ দে তো তখনকারটা তখন দেখা যাবে। এখন তো বিপদের হাত থেকে বাঁচলাম।
রিতা: আচ্ছা যা এখন নিজের কাজে যা।
রাহি : হুমমম।
রাহি রিতার সাথে কথা বলে নিজের কেবিনে যাচ্ছে এমন সময় তার ম্যানেজার তাকে ডাকে…
রাহি: জি স্যার কিছু বলবেন?
ম্যানেজার : এই যে কিছু ফাইল।এগুলো ঠিক করে রিফাত স্যারকে দেখাবে দুই দিনের মধ্যে।
রাহি: দুই দিনের মধ্যেই সবগুলো ঠিক করতে হবে। [ অবাক হয়ে বলে]
ম্যানেজার : হ্যাঁ।
রাহি: আচ্ছা স্যার।
এরপর রাহি নিজের কেবিনে গিয়ে ঠাস করে চেয়ারে বসে পড়ে। আর বলতে থাকে…
রাহি: আমি এই গুলো দুইদিনে কিভাবে শেষ করবো আল্লাহ গো। এই ম্যানেজার মানুষ নাকি রোবট।
রিতা পিছন থেকে বলে….
রিতা: এতো কথা না বলে কাজে লেগে পর। না হলে ফাইলে কিছু ভুল হলে রিফাত স্যার অনেক রাগ করবে তোর ওপর।
রাহি: তুই কি আমাকে কিছু সময় পর ভয় দেখাতে আসি নাকি।
রিতা : আরে না শুধু সাবধান করতে আসলাম।
রাহি: ভাল করছিস। এখন যা আমি কাজ করবো।
রিতা: আচ্ছা।
রিতা চলে যাবার পর রাহি কাজ করতে থাকে।
দুপুরবেলা….
রাহি:রিতা চল ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার খেয়ে আসি।
রিতা: চল।
রাহি আর রিতা দুজনে খাবার খেতে যায়। তখন রিফাত সেখানে যায়।
রাহি: আল্লাহ গো ডাকাত আসছে রে।
রিতা: কই ডাকাত আসছে।
রাহি: ওই দেখ রিফাত ডাকাত আসছে।
রিতা:চুপ।
রিফাত কিছু সময় পর সেখান থেকে চলে আসে। এতো সময় রাহি নিজের মুখ ঢেকে রেখেছিলো রিফাত জেনো না দেখে তাই।
রিফাত চলে আসার পর রাহি আর রিতা খাবার খেয়ে চলে আসে। কেবিনে এসে রাহি আবার কাজে লেগে পরে।
ছুটির পর….
রাহি আর রিতা একটু কথা বলে অফিস থেকে বের হয়।
রিতা তার বাসার দিকে চলে যায় আর রাহি রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছে। অনেক সময় পার হবার পর ও রিকশা না পাওয়ায় রাহি রাস্তার পাশ দিয়ে হাটা শুরু করে। কিছুদূর আসার পর দেখে কয়েকটা ছেলে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে।তাই রাহি চুপচাপ তাদের পাশ কাটিয়ে চলে আসছে। তখন একটি ছেলে রাহিকে বাজে মন্তব্য করে যা শুনে রাহির রাগ ওঠে যায় আর রাগে রাহির পাশে পড়া থাকা ইট হাতে নিয়ে তাদের দিকে ছুড়ে মাড়ে
তা দেখে ছেলেরা দৌড় দেয়।
এমন সময় রিফাত তার গাড়ি নিয়ে রাস্তা দিয়ে আসছিলো। রাহির ছুড়ে মারা ইট রিফাতের গাড়ির কাঁচের ওপর পড়ে আর কাঁচ ভেঙ্গে যায়। রিফাত জোরে গাড়ি ব্রেক করে গাড়ির সামনের দিকে তাকায় আর সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে গাড়ির সামনের কাচ ভেঙ্গে গেছে।
রিফাতের তা দেখে প্রচুর রাগ ওঠে আর রাগে গাড়ি থেকে বের হয়।
রাহি গাড়ি থেকে রিফাতকে বাহির হতে দেখে ভয়ে শেষ।
রিফাত রাহিকে দেখে আরো রেগে যায়।
রিফাত: তুই এখানে। আর আমার গাড়ির কাচ কেনো ভাঙ্গলি।
রাহি ভয়ে ভয়ে বলে…
রাহি : আসলে ইচ্ছে করে দেয়নি। হয়েছে কি যে ওই…
রাহিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রিফাত রাগি গলায় বলে…
রিফাত: চুপপ। আর একটা কথা ও বলবি না। কালকের ওই ঘটনার জন্য এমন করেছিস তাই না।
রাহি: আমি কালকের ঘটনার জন্য এমন করে নি। কালকের জন্য তো আমি আপনার গাড়ির ওপর ময়লা দিয়েছিলাম।
কথাটা বলেই রাহি নিজের জিভে কামড় দেয়।
রাহির কথা শুনে রিফাতের মাথায় আরো রাগ ওঠে যায়।
রাগি চোখে তাকিয়ে এক পা -দু পা করে রাহির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। রাহি রিফাতের রাগ দেখে কোনো কিছু না ভেবে দৌড় দেয়।
রিফাত তা দেখে জোরে চিল্লিয়ে বলে…
রিফাত: তোকে আর একদিন আমার সামনে পাই ঠাস করে গালে দুটো চড় মারবো ফাজিল মেয়ে।
এই বলে রাগে ফুসতে থাকে।
রাহি অনেকক্ষণ দৌড়ানোর পর হাপিয়ে যায়। তাই দৌড়ানো বাদ দিয়ে রাস্তার পাশে দাড়ায় আর জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।
কিছু সময় পর রাহি শান্ত হয় আর একা একাই বলতে থাকে
রাহি: হে আল্লাহ। তুমি এইটা কি করিলা। আমার কাল কি হবে। এই রিফাত সয়তান তো আমাকে মেরেই ফেলবো কাল।আমি কি করবো এখন। ও মা গো…..
রাহি মন খারাপ করে বাসায় যায়।
রাহির বাবা: কি হয়ছে রাহি। এমন মন খারাপ কেনো।
রাহি: কিছু না বাবা। অফিস থেকে আসছি তাই খারাপ লাগতাছে।
রাহির বাবা: আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে রেস্ট নাও।
রাহি তার বাবার কথা শুনে নিজের রুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে একটু রেস্ট নেয় তারপর অফিসের ফাইল গুলো সব ঠিক করে ঘুমিয়ে যায়।
পরের দিন….
সকালে রাহি ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসের জন্য বের হয়।
অফিসে পৌছানোর পর রাহি রিতার সাথে কিছু কথা বলে নিজের কেবিনে গিয়ে বসে আছে এমন সময় অফিসের পিয়ন এসে বলে যে
পিয়ন: রাহি ম্যাম আপনাকে রিফাত স্যার ফাইল নিয়ে তার কেবিনে যেতে বলেছে।
পিয়নের কথা শুনে রাহি আল্লাহ গো বলে চিৎকার দেয়।
রাহি রিফাতের কেবিনে যাবার আগে কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে ভয়ে। নিজের কেবিনে কিছু সময় পায়চারি করার পর মনে সাহস নিয়ে ফাইল গুলো হাতে নিয়ে রিফাতের কেবিনের দিকে যায়। রিফাতের কেবিনের দরজা খুলে রাহি দেখে রিফাত চেয়ারে বসে উল্টো দিকে মুখ করে বসে আছে। তা দেখে রাহি মনে মনে বলে…
রাহি :আল্লাহ আজ আমার সাথে সেই ছবির কাহিনির ঘটনার মতো করে দাও।যেনো সে এই দিকে না ঘুরে কথা বলে আর আমি আজ বেঁচে যায়। নানা কথা চিন্তা করে রাহি রিফাতের উদ্দেশ্যে বলে…
রাহি:স্যার ভিতরে আসতে পারি।
রিফাত: জি আসুন।
রাহি ভিতরে গিয়ে রিফাতের টেবিলে অনেক নুতুন নতুন জিনিস। কিন্তু তার মাঝে একটা পুরোনো কলমদানি রাখা এইটা দেখে রাহি একটু অবাক হয়।
রাহি চুপচাপ দাড়িয়ে আছে তখন রিফাত সেই ভাবে বসেই রাহিকে বলে
রিফাত: ফাইল গুলো দেন।
রাহি রিফাতের দিকে ফাইল গুলো দেয়।
কিছু সময় পর রিফাত রাগে ফাইল গুলো ছুড়ে ফ্লোরে ফেলে দেয় আর বসা থেকে দাড়িয়ে যায়।
রিফাত: এসব কি করেছেন। ফাইল গুলো ঠিক করতে পারেন না যতসব। এসব কাজ যদি না পারেন তো জব করতে আসেন কেনো।
এই বলে রাহির দিকে মুখ ঘুরে তাকায়। আর রাহি কে দেখে আরো রেগে চোখ বড় করে তাকায়।
রিফাত: ও,আপনি এখানে। তাই তো এমন কাজ করছেন। ফাইল গুলো ও ঠিক করে করতে পারেন না। আরে আমি তো ভুলেই গেছি। আপনি তো কোনো কাজ পারেন না, আপনি তো শুধু মানুষের সাথে ঝগড়া করতে পারেন, তাদের জিনিস নষ্ট করতে পারেন। ভাল কাজ তো আপনার দারা কখনো হবে না কারন আপনি একটা ফাজিল মেয়ে।আপনাকে এই জব কেনো দিছে ম্যানেজার। আপনার মতো মেয়ের আমার কোম্পানি তে কোনো দরকার নেই। তাই গেট লস্ট। এখান থেকে বিদায় হন ফাজিল মেয়ে।
রিফাতের কথা শুনে রাহি শুধু কান্না করছিলো নিচের দিকে তাকিয়ে।
রাহি কেবিন থেকে বের হচ্ছে না দেখে রিফাত আরো জোরে চিৎকার করে বলে…
রিফাত: আমি যেতে বলেছি কথাটা কি কানে যায় না নাকি।
রিফাতের কথা শুনে রাহি কান্না করতে করতে বের হবে এমন সময় রাহির হাত লেগে টেবিলের সেই পুরোনো কলমদানিটা টেবিল থেকে নিচে পরে যায় আর তা দেখে রিফাত রাহির কাছে এসে সাথে সাথে গালে চড় দেয় আর…..
চলবে।