আমার খাঁচায় তুমি বন্দি পর্ব-০৫

0
4191

#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:৫

কলমদানিটা নিচে পরে যাওয়ার কারনে রিফাত রাহির গালে জোরে চড় মারে আর তাড়াতাড়ি কলমদানিটা নিচে থেকে তুলে নেয়।[ কলমদানিটা বেতের তৈরি ছিলো।]
রিফাতের হঠাৎ চড়ে রাহি চোখের জল নিয়ে রিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে কি করবে বুঝতে পারছে না।
রিফাত কলমদানিটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে দেখে রাহি এখনো দাড়িয়েই আছে সেখানে। তাই রাগে বলে
রিফাত:জাস্ট গেট লস্ট ডেমেট।
রাহির অনেক রাগ হয় তাই রাগে জোরে চিল্লিয়ে বলে
রাহি: ওই আপনি চুপ করেন। এক তো এতো সময় আমাকে কথা শুনাইসেন তারপর আবার আমার গালে চড় মারছেন। আপনাকে সাহস দিলো কে আমাকে চড় মারার। আপনার কোম্পানিতে চাকরি করছি বলে যা ইচ্ছে হয় তা বলবেন আবার গায়ে হাত তুলবেন। এতো সাহস আপনাকে কে দিছে ফাজিল ছেলে।
রাহির কথা শুনে রিফাত আরো রেগে যায় আর বলে….
রিফাত: আমাকে কারো সাহস দিতে হয় না আর তুই এইখান থেকে বিদায় হয় তাড়াতাড়ি না হলে আরেকটা চড় দিবো। তোকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না ফাজিল মেয়ে। আমার অতি পছন্দের জিনিস তুই ফেলে দিয়েছিলই,আমার মনে করছে তোকে মেরে ফেলি।
রিফাতের মেরে ফেলার কথা শুনে রাহির আরো রাগ ওঠে। তাই রাগে বলে…
রাহি:মগের মুলোগ পাইছিস না যে আমার মেরে ফেলবি। তোরে আমি মেরে ফেলবো আর তোর এখানে চাকরি তুই কর যা। তোর এমন চাকরির কপালে ঝাটার বাড়ি।
এই বলে রাহি টেবিলে থাকা রিফাতের ল্যাপটপ টা হাতে নিয়ে জোরে ফ্লোরে ফেলে দেয়। আর বলে এইটা আমি যে কয়দিন কাজ করছি তার বিনিময়ে ভাঙ্গালাম আর আমাকে যে কথা শুনাইছিস তার জন্য দেখিস কাল থেকে কি করি আমি।
রিফাত রাগে দাত কিটমিট করে রাহির দিকে এগিয়ে আসছে। তাই দেখে রাহি ভো দৌড় দিয়ে রিফাতের কেবিন থেকে বের হয়ে আসে।
রিফাত রাগে টেবিলের ওপর রাখা পানির গ্লাসটা ভেঙ্গে ফেলে।
রাহি রাহিরে এসে পিয়ন কে বলে…
রাহি: পিয়ন দাদা রিফাত ফাজিলের কেবিনে ঝড় হইছে। তাই সব পরিষ্কার করে নিয়ে আসো যাও।
পিয়ন: এসব কি বলছেন। স্যার শুনলে চাকরি থাকবে না।
রাহি: চাকরি আমি করছি না আর।
পিয়ন: কেনো?
রাহি: অনেক লম্বা কাহিনি।আমি যাই।
এই বলে রাহি নিজের কেবিনে গিয়ে নিজের সব জিনিস নিয়ে রিতার কেবিনে যায়।
রাহি: রিতা আমি আর চাকরি করছি না। তাই চলে যাচ্ছি। তোর সাথে পরে ফোনে কথা বলে নিবো ঠিক আছে।
রিতা: রাহি কি হয়ছে আমাকে বল।
রাহি: পরে ফোনে বলবো।এখন যায় না হলে ফাজিলটা আবার দেখলে রাগ করবে।
এই বলে রাহি অফিস থেকে বের হয়ে আসে।অফিসের গেটে সামনে দাড়িয়ে রাহি মনে মনে বলে..
রাহি: ফাজিল রিফাত আমার সাথে এমন করেছিস না। কাল থেকে দেখবি আমি তোর কি হাল করি।
আরো অনেক কিছু ভেবে মনে মনে একটা সয়তানি হাসি দেয়।
তারপর রিকশা নিয়ে নিজের বাসায় চলে আসে। বাসার ভিতরে আসার পর রাহির মা রাহিকে ডাক দেয়।
রাহির মা: কিরে রাহি এই সময় চলে এলি যে।শরীর খারাপ লাগছে নাকি,তোর গালে কি হয়েছে?
রাহি: মা চুপ করো তো। কিছু হয়নি।
রাহির মা: এতো আগে তাহলে বাসায় আসলি কেনো?
রাহি:চাকরিটা আমি আর করবো না তাই।
রাহির মা:কেনো কি হয়ছে আবার।
রাহি: মা চুপ করো তো। ভাল লাগতাছে না।আমি নিজের রুমে গেলে।
রাহি সারাদিন নিজের রুমে বসে ভাবে কাল থেকে রিফাতের সাথে সে কি কি করবে।
পরের দিন…
সকালে রাহি তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
রাহি অফিসের সামনের রাস্তায় অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছে রিফাতের গাড়ি আসার অপেক্ষাই কিন্তু আসছে না। রাহির প্রচুর রাগ ওঠছে তাই একা একাই বলছে
রাহি: ফাজিল ছেলে আসছিস না কেনো এখনো।
কিছু সময় পর রাহি দেখে রিফাত গাড়ি নিয়ে আসছে। তাই রাহি তাড়াতাড়ি রাস্তার পাশে থাকা একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে পরে। রিফাত যখন সেই গাছটির পাশ কাটিয়ে চলে যায় তখন রাহি হাতে থাকা ইট টা ছুড়ে মারে আর রিফাতের গাড়ির কাচ ভেঙ্গে ফেলে।
ইট ছুড়ে মেরে রাহি তাড়াতাড়ি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। রিফাত পিছনে কিছু শব্দের জন্য ঘুরে তাকিয়ে দেখে গাড়ির পিছনের কাচ ভাঙ্গা।
রিফাত গাড়ি থামিয়ে তাড়াতাড়ি নেমে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সেখানে কেউ নেই।
এদিকে রাহি সেখান থেকে পালিয়ে আসে। রিকশা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে।
অন্যদিকে…
রিফাত কাউকে না দেখে রাগে জোরে চিল্লিয়ে বলে ফাজিল মেয়ে আজ তোর খবর আছে। অফিস থেকে রাহির বাসার ঠিকানা নিয়ে রাহির বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়।
রাহি নিজের রুমে বসে মনে মনে বলছে।
রাহি : কাল আমাকে কাচ ভাঙ্গার জন্য অপমান করছিলি এখন থেকে যে কয়দিন আমি নতুন চাকরি না পাই। তোর গাড়ির কাচ আমি ভাঙ্গবো।
এই বলে সয়তানি একটা হাসি দিয়ে নিজের ফোনে গান ছেড়ে ওড়া ধুড়া ডান্স করা শুরু করে।
রিফাত রাহির বাসায় এসে রাহির মাকে জিঙ্গেস করে আপনার মেয়ে কোথায়।
রাহির মা: রাহির রুম নিজের রুমে আছে। আপনি সোফায় বসুন আমি ডেকে দিচ্ছি।
রিফাত রাহির মার কথা না শুনে সরাসরি রাহির রুমে চলে আসে আর দেখে রাহি ডান্স করছে।
এইদিকে রাহি বেশি খুশিতে নাচছে যে রিফাত এসেছে সে দিকে তার কোনো খেয়াল নেই।
রিফাত রাগি গলায় বলে
রিফাত: ফাজিল মেয়ে আজও আমার গাড়ির কাচ ভেঙ্গে এখানে এসে ডান্স করছিস।
রিফাতের কন্ঠ শুনে রাহি ভয় পেয়ে যায়। ডান্স করা বন্ধ করে সামনে তাকিয়ে দেখে রিফাত রাগি চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
রাহি নিজেকে সামলে বলে
রাহি: তুই এখানে কি করিস। যা বের হয় আমার বাসা থেকে। কাল তুই তোর কোম্পানি থেকে বের হতে বলছিস। আজ আমার বাসা থেকে বের হ তাড়াতাড়ি।
রিফাত: এই ফাজিল মেয়ে তুই আজ আমার গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে ছিস কেনো।
রাহি:ওই ফাজিল ছেলে।আমি কেনো যাবো তোর গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গতে। কাল অপমান করে শান্তি পাস নাই তাই নিজের গাড়ির কাঁচ নিজে ভেঙ্গে মনে হয় আমার নাম দিতে আসছোস।
রিফাত আরো রেগে যায়
রিফাত: একদম মিথ্যা বলবি না।
রাহি: চুপ।আর তোর কাছে কোনো প্রমান আছে যে গাড়ির কাঁচ আমি ভাঙ্গছি।
রিফাত এখন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তার কাছে তো সত্যি প্রমান নেই তাই চুপ হয়ে যায়।
তা দেখে রাহি বলে…
রাহি: এখন চুপ কেনো, আসছিলি তো আমাকে অপমান করতে। এখন আমার বাড়ি থেকে বের হ।
রিফাত আর কিছু না বলে রাগে দাত কিটমিট করে চলে যায়।
রিফাতের এমন করে চলে যাওয়া দেখে রাহি অনেক খুশি হয়। তাই আবার গান ছেড়ে ওরা ধুরা নাচতে শুরু করে।

রাহি আরো দুদিন রিফাতের গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে দেয়।কিন্তু রিফাতের কাছে কোনো প্রমান না থাকায় রাহির কিছু করতে পারছে না।
রাহি আজ ও গাড়ির কাচ ভাঙ্গার জন্য দাড়িয়ে আছে। রাহি দেখছে রিফাতের গাড়ি আসছে। রাহি যেই ইট ছুড়তে যাবে তখনি পিছন থেকে রিফাত বলে
রিফাত: আজ তোর হাত-পা যদি না ভাঙ্গছি তো দেখিস।
রাহি রিফাতের কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায় আর ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকায় আর তাকিয়ে দেখে রিফাত রাগি চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাহি রিফাতের এমন অবস্থা দেখে কোনো কিছু না ভেবেই দৌড় দেয়।
হঠাৎ এমন হওয়াই রিফাত কিছু বুঝতে পারে না। কয়েক সেকেন্ড পর বুঝতে পারে যে রাহি সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়েছে।
রিফাত: আজ তোকে ছাড়ছি না আমি ফাজিল মেয়ে।
রাহি দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূর চলে আসে। তারপর রিকশা নিয়ে বাসায় চলে আসে। বাসার ভিতর যাওয়ার সময় ভাবে আজও যদি রিফাত তাদের বাসায় আসে তাহলে তার বারোটা বাজাবে। রাহি তাই বাসায় না গিয়ে তাদের বাসার পাশে একটা পার্ক আছে সেখানে যায়। রাহি পার্কের একটা চেয়ারে বসে আছে তখনি একজন তাকে রাহি বুড়ি বলে ডাক দেয়। রাহি পিছন দিকে তাকিয়ে বলে
রাহি:আরে দাদু তুমি।
দাদু: তুই এই সময় এখানে কেনো।
রাহি: সে অনেক লম্বা কাহিনি।
দাদু: আচ্ছা চল তাহলে আমার বাসায় তোর লম্বা কাহিনি শুনবো সাথে তোর হাতের মসলা চা খাবো।
রাহি: আচ্ছা চলো। আমার জন্য ভাল হবে। এখন এমনি ও তো বাসায় যাবো না।
তারপর রাহি তার মাকে ফোন করে বলে দেয় তার বাসায় যেতে দেড়ি হবে। এরপর রাহি সেই দাদুর সাথে তার বাসায় যায়।
রাহি: দাদু তুমি ছাদে যাও আমি চা করে নিয়ে আসি।
দাদু: হুমম যাচ্ছি। এর আগে তো অনেক বার আসছিস। তাই সব কিছু চিনিস তাও কোনো সমস্যা হলে কাজের লোকদের বলবি।
রাহি: আচ্ছা।
তারপর রাহি চা করে ছাদে নিয়ে যায়। দুজনে অনেক আড্ডা দেয়।
রাহি সব কিছু বলে দাদুকে। দাদু সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ তবে কলমদানির সেই ঘটনা শুনে মনটা একটু খারাপ করে।
রাহি: দাদু মন খারাপ করলে কেনো?
দাদু: কিছু না।
রাহি:আচ্ছা তুমি থাকো আমি চায়ের কাপ গুলো নিচে রেখে আসি।
রাহি চায়ের কাপ নিয়ে নিচে নামছে এমন সময় কারো সাথে ধাক্কা খায়।
রাহি কার সাথে ধাক্কা খেয়েছে তা না দেখেই বলে
রাহি:কোন বদ খাটাশ রে। চোখে দেখতে পাস না নাকি।
এই বলে যেই তার দিকে তাকায়। তাকে দেখে রাহি জোরে বলে আল্লাহ গো।
রাহির সামনে রিফাত দাড়িয়ে। রিফাত রাহিকে দেখে রাগে সাপের মতো ফুসছে।
রিফাত: এই তুই এখানে কি করিস।তোর বাড়ি ছিলি না কেনো?
রাহি কিছু না বলে জোরে চিৎকার করে বলে..
রাহি:দাদু গো….
রাহির ডাক শুনে দাদুৃ নিচে আসে।
রাহি:দাদু এই ফাজিল ছেলে এখানে কি করে?
রিফাত:দাদু এই ফাজিল মেয়ে আমাদের বাসায় কি করে?
দাদু: রাহি রিফাত আমার পিচ্ছি দাদু,আর রিফাত রাহি আমার বুড়ি দাদি।
রাহি: দাদু গো এই ছেলে পিচ্ছি না গো,আমারে সে দিন মারছে।
[বলে ন্যাকা কান্না শুরু করে দেয়]
রিফাত:চুপ ফাজিল মেয়ে।
দাদু: চুপ কর দুজন। আমি সব শুনেছি তাই আমি যা বলবো তাই হবে। রাহি আমাদের কোম্পানিতে জব করবে।
রিফাত: কিন্তু দাদু….
রিফাতের দাদু আর কিছু বলতে না দিয়ে বলে
দাদু: আমার কথাই শেষ কথা।
রাহি করুন চোখে আর করুন কন্ঠে দাদু কে বলে…
রাহি:দাদু ও দাদু একটু শোনা না।
দাদু: বল।
রাহি: আমি জব করবো কিন্তু তোমার নাতি আমাকে কিছু বলতে পারবে না কখনো। আমি যা ইচ্ছা করি আর আমার গায়ে ও হাত তুলতে পারবে না জবে যে পযন্ত থাকবো। এই গুলোই রাজি থাকলে আমি করবো আর না হলে আমি করবো না।
দাদু:ঠিক আছে তোর কথায় রাজি। তবুও তুই চাকরিটা করবি।
রিফাত: দাদু এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে।
দাদু: তুই চুপ থাক। আর রাহি শুন তোকে রিফাত কিছু না বললে ও যদি কিছু ভুল করিস তো আমি তোকে শাসন করবো।
রাহি:আচ্ছা।
রিফাত তার দাদুর কথা শুনে সেখান থেকে রাগ করে চলে যায়।
রাহি রিফাতের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে…
কাল থেকে দেখবে মজা।আমার সাথে লাগা।কাল থেকে তোর বারোটা বাজাবো আমি বলেই সয়তানি একটা হাসি দেয়।
পরেরদিন……
চলবে….