আমার গল্পে আমি খলনায়ক পর্ব-৫+৬

0
133

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#part_5

“বাবা আর বেচে নেই কাকা।ওনাকে কে যেনো কল করে ঢাকা যাওয়ার জন্য বলে,, ওনি ঢাকা যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট করে মারা যায়,আজকে পাঁচ দিন হয়েছে,,,,

কথাটা বলেই কান্নায় ভেঙে পরেন,, আহিল। আর তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রায়হান। ওর কান্না থামার নাম-ই নিচ্ছে না,, তাই রায়হান আবার ওকে বলে,,,

__কি বলছো,,এসব!রোশান মারা গেছে মানে! আর তুমি কে? রোশানকে বাবা বলছো কেনো! আর আমাকে কাকা,,,

__কাকা আপনি আমাকে চিনতে পারেননি,, আমি তো আপনার চাচাতো ভাই রোশানের ছেলে,, আহিল।

__রোশান আবার বিয়ে করলে কবে,,, আমি দেশে থাকা অবস্থায় তো ও অবিবাহিত ছিলো।তাহলে তুমি ওর ছেলে হও কি করে! তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে তোমার বয়স কমপক্ষে ছাব্বিশ থেকে সাতাইশ। তুমি আমার সাথে কি মজা করছো,,,

__এসব কি বলেন কাকা,,আপনি আমার বাবার সমান আপনার সাথে আমি মজা করবো কেনো!আসলে বাবা-মার বিয়েটা গোপনে হয়েছিলো,, কোনো একটা কারনে। আমার জন্মের পর থেকেই তো আমি আমার নানার বাড়িতে বড়ো হয়েছি।কখনো নিজের বাড়িতে আসতে পারিনি , আব্বুকে বল্লেই আব্বু একটা না একটা অযুহাত দেখিয়ে আমাদের এখানে আনা থেকে বিরত রাখতো।কিন্তু আপনি যখন গ্রাম ছেড়ে ইতালি চলে যান,তার কিছুদিন পরেই আমাদের আব্বু বাড়িতে নিয়ে আসে। তাই হয়তো আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না।কাকা রাস্তায় দাড়িয়েই কাথা বলবেন বাড়িতে আসেন, কত বছর পর আপনি গ্রামে এসেছেন। ( রোশান বিয়ে করেছিলো তাও আমার আগেই! আর তা সম্পর্কে আমি কিছুই জানতামই না।আবার আমার মেয়ে দিশার সমান একটা ছেলে ও আছে! তাহলে মীরার সাথে ওর,,,,!না আর কিছু ভাবতে পারছিনা আগে এখানে যে কাজে এসেছি সে কাজ সম্পূর্ন করতে হবে, মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আহিলের উদ্দেশ্য বলে,,)

__ওহ্,,,দুঃখিত আমি তোমাকে চিনতে পারিনি,আসলে আমি জানতাম না যে তোমার বাবা রোশান বিয়ে করেছিলো। ও কখনো ওর বিয়ে ব্যপারে আমাকে কিছু বলেনি,তাই তুমি যখন আমাকে কাকা আর রোশান কে বাবা বলে বললে তাই আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কিছু মনে করো না। আচ্ছা এখন চলো বৃষ্টি ফোঁটা পরতে শুরু করে দিয়েছে,,

__না কাকা আমি কিছু মনে করি নাই।
আপনি আমার পিছনে পিছনে সাবধানে আসেন, , আজ সকালে বৃষ্টি হয়েছিলো তাই রাস্তা কাদা পানিতে বরে আছে,,একটু ভুল যায়গায় পা রাখলেই পরে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।

কথা গুলো বলে হাটতে শুরু করে দিয়েছে আহিল, আর তার পথ অনুসরণ করে, পিছু পিছু হাটছি আমি। সকালে একবার বৃষ্টি হয়েছে, তাই রাস্তায় কাদা পানিতে বরে আছে। গ্রামের রাস্তা হওয়ায় অনেকের সাথেই ইতিমধ্যেই দেখা হয়েছে আমার । সকলের সাথে একটু আধটু কথা বলে আবার নিজেট হাটার দিকে মনোযোগ দিলাম। হাটতে হাটতে চলে আসলাম বাড়ির সামনে, বাড়ির সামনে আসতেই আমি অবাক হয়ে আছি ! কারন রাস্তা দিয় আসার সময় দেখেছি গ্রামের অনেক উন্নতি হয়েছে। আধুনিকতায় ভরপুর হয়ে ওঠেছে আজমপুর গ্রাম । কিন্ত আমাদের বাড়ি পঁচিশ বছর আগে যা অবস্থা ছিলো এখোনো তাই আছে। শুধু টিনের ঘর গুলো একটু পুরোনো হয়েছ,আর তাছাড়া বাকি সব কিছুএকদম আগের মতোই আছে।সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি নিজের ঘরটা দেখে,,, যেই ঘরের মাটির নিচেই চিরো নিদ্রায় শুয়ে আছেন আমার প্রথম ভালোবাসা মীরা। সেই ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম!কারন,,এই ঘরে আমার নিজের হাতে লাগানো পঁচিশ বছর আগের তালা দেখে। তালায় মরিচাধরে একদম বাজে অবস্থা হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে এটা কেও আজ পর্যন্ত খুলেনি!আর খুলবেই বা কি করে? কার ন এই তালার চাবি আমি এমন যায়গায় ফেলে দিয়েছিলাম যে কেও কখনো খুঁজে বের করতে পারবেন না। আর তালার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না এটা কেও অদোও খুলেছে,,,,

__কাকা চলেন আমাদের ওই দোচালা ঘরটায়,ওই ঘরটায় আম্মু আছে। আম্নুর সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দেবো। আপনি তো মনেহয় আমার আম্মুকে চিনেন না। আর আপনি এখন অনেকটা বিজে গেছেন। আর কিছুখন এভাবে থাকলে আপনার শরির খারাপ করবে, জ্বর বা শর্দি আসতে পারে আপনি ভেতরে আসুন। (কথাটা বলে দোচালা ঘরটার দরজাটা খুলে ভেতরে চলে গেলেন আার তার,পিছু পিছু আমিও ওই দোচালা ঘরটায় গেলাম।
দোচালা ঘরটায় ডুকতেই একজনকে দেখেই আমি হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে আবার কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমার হাত-পা কাপা শুরু করেছে,আমার শরির অনবরত ঘামাতেছে।এটা কি করে সম্ভব ও এখানে কিভাবে থাকতে পারে! আর কিছু না ভেবে তাকে, দেখা মাএই জোরে চিতকার দিয়ে বলো ফেল্লাম,,,

মহুয়া! তুমি এখানে ,,,,,

চলবে,,,,

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#part_6

“দোচালা ঘরটায় ডুকতেই একজনকে দেখেই আমি হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে আবার কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমার হাত-পা কাপা শুরু করেছে,আমার শরির অনবরত ঘামাতেছে।এটা কি করে সম্ভব! ও এখানে কিভাবে থাকতে পারে! আর কিছু না ভেবে তাকে, দেখা মাএই জোরে চিতকার দিয়ে বলে ফেল্লাম,,, মহুয়া তুমি এখানে!

__কে মহুয়া! আর আপনি কে! আপনি কার থেকে অনুমতি নিয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করেছেন।

__মহুয়া তুমি বেঁচে আছো!তুমি এখানে আসলে কি করে! আর আমি যাকে দাফন করেছি, তাহলে সে কে!চুপ করে আছো কেনো মহুয়া, কিছু বলো! তুমি তো পাঁচ দিন আগেই মারা গিয়েছিলে।আমি তো নিজের হাতে তোমাকে দাফন করেছি! তাহলে তুমি এখানে থাকো কি ভাবে,,, (কথা গুলো বলে আহিলের মা-র দিকে তাকিয়ে আছে রায়হান)

__কি মহুয়া মহুয়া করছেন তখন থেকে? আমি রোশানের স্ত্রী মায়া, মহুয়া নয়। আমি আবার পাঁচ দিন আগে মারা গেলাম কখন!পাঁচ দিন আগে তো আমার স্বামী রোশান মারা গেছে। আপনার মাথা ঠিক আছে। একে তো আপনি কাওকে কিছু না বলে ঘরে চলে এসেছেন, আবার আমাকে মৃত ঘোষণা করছেন! আপনি কাকে না কাকে দাফন করেছেন, সেটা তো আমার জানবার কথা নয়।৷,,, আর আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেনো। কে আপনি, আর এখানে কেনো এসেছেন? (কথা গুলো বলে রায়হানের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহিলের মা মায়া)

__ দুঃখিত,, আপনাকে দেখতে একদম আমার স্ত্রী মহুয়ার মতো। পাঁচ দিন আগে আমার স্ত্রী মহুয়ার মৃত্যু হয়, ও দেখতে একদম আপনার মতো,, শুধু ওর মুখে কোনো তিল ছিলো না, যেটা আপনার মুখে আছে। তাই আপনাকে দেখার সাথে সাথেই আমার মনে হচ্ছিলো আপনি মহুয়া।

__তা বুঝতে পারলাম আমাকে দেখতে একদম আপনার মৃত স্ত্রী মহুয়ার মতো।কিন্তু আপনি কে!এখানে কেনো এসেছেন সেটা তো বললেন না…

__আম্মু ওনি আমারদের রায়হান কাকা,কিছু দিন হলো ইতালি থেকে দেশে এসেছে। পঁচিশ বছর পরে আজকে গ্রামে এসেছে, পথ ঘাট কিছু চিনতে পারছিলেননা পরে আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো রোশানের বাড়িটা কোন দিকে। পরে ওনাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি ওনি মীরা কাকি আর তিশার বাবা রায়হান চৌধুরী,মানে আমার কাকা। যাঁর কথা আব্বু প্রাই বলতেন, তাই এখন ওনাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি।

__ওহ্,,,,,,,,,ওনি তাহলে তিশার বাবা!

__ হ্যাঁ।

__আচ্ছা ওনাকে হাটের ওপর বসতে বল আমি,, আমি ওনার জন্য নাস্তার ব্যবস্তা করি। (বলেই দুচালা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন মায়া)

__ কাকা হাটের ওপর বসেন আপনি, আমি আপনার জন্য গামছা নিয়ে আসছি।

“কি হচ্ছে এগুলো আমার সাথে! আমি তো পাগল হয়ে যাবো, এত চাপ আমি আর নিতে পারতেছিনা। প্রথমে মীরার মতো দেখতে মহিলা আর তিশা, এখন আবার মহুয়ার মতো দেখতে রোশানের স্ত্রী। এগুলো কি করে সম্ভব! মীরার টা না-হয় মেনে নিলাম যে কোনো না কোনোভাবে বেঁচে গেছে। কিন্ত মহুয়া! যাকে আমি নিজের হাতে দাফন করেছি সে কি করে জীবিত থাকতে পারে। একজনের সাথে এরকম হলেও হয়তো ভাবতাম,, কিন্তু মীরা, মহুয়ুা, দুজনেই ডাবল। আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না আমাকে যতো দ্রুত সম্ভব এখানে যেই উদ্দেশ্য এসেছি সেটা সেরে ফেলতে হবে। তারপর ঢাকা ফিরে গিয়ে,, এই মীরা আর তিশার ব্যবস্তা করবো।সাথে রোশানের জন্য রোশানের স্ত্রী মায়া ও আহিল কে ‘ও শাস্তি পেতে হবে।আমাকে এখন আমার পুরনো ঘরে প্রবেশকরতে হবে, কিন্তু চাবি তো নেই! তালাটা ভেঙ্গে তারপর ঘরে ঢুকতে হবে। আমার এসব চিন্তার মাঝেই দুচালা ঘরে আহিল আসে হাতে গামছা নিয়ে।

__কাকা নিন আপনার শরীরটা মুছে নিন,না হলে শর্দি লাগতে পারে। ( আহিলের হাত থেকে গামছা নিয়ে শরীর মুছতে মুছতে আহিল কে বলে..)

__আমাকে একটা হাতুড়ি, আর একটা কোদালের ব্যবস্তা করে দিতে পারবে,,!

__হাতুড়ি আর কোদাল দিয়ে আপনি কি করবেন…?

__ আমার ঘরে ঢুকবো,চাবিটা চাবিটা তো আমার কাছে নেই কবেই হারিয়ে ফেলেছি।তাই তালাটা ভাঙতে হাতুড়ি লাগবে। আর আমার ঘরে মাটির নিচে আমার কিছু জিনিস পএ লুকিয়ে রেখেছিলাম ওগুলো এখন নিচ থেকে ওঠিয়ে আমার সাথে নিয়ে যাবো।

__আচ্ছা তাহলে আপন একটু অপেক্ষা করেন, আমি হাতুড়ি আর কোদালের ব্যবস্তা করছি।(কথা গুলো বলে আবারও দুচালা ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়)

“এরিমধ্যে আবার আহিল চলে আসে হাতে হাতুড়ি, কোদাল নিয়ে। আমিও দুচালা ঘর থেকে বেড়িয়ে আমার ঘরের সামনে আসি।তারপর আহিলের হাত থেকে হাতুড়ি নিয়ে তালার মধ্যে কয়েকটি আগাত করতেই তালা খুলে যায়। তালা খুলার সাথে সাথে আহিলের হাত থেকে কোদাল নিয়ে আমি ঘরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেই।

__কি হলো কাকা দরজা বন্ধ করলেন কেনো, আমি ও আপনাকে সাহায্য করি মাটি খুঁরতে।দরজার বাহিরে দাড়িয়ে রায়হানের উদ্দেশ্য কাথা গুলো বলছে আহিল।

__না,,, আমার তোমার সাহায্যের প্রয়জন নেই।আমি নিজেই মাটি খঁরতে পারবো,তুমি এখন এখান থাকা চলে যাও আমি কাজ শেষ হলে তোমাকে আবার ডেকে নেবো।

__কাকা রুমে তো লাইটের ও মনে হয় ব্যবস্তা নেই, আপনি হাতে পায়ে চোট পেতে পারেন। আমি লাইট নিয়ে আসছি,আপনি অপেক্ষা করুন।া

__তার কোনো দরকার নেই, আমার ফোনের ফ্ল্যাশ দিয়ে আমি কাজ করতে পারবো তুমি এখন আসতে পারো এখান থেকে।

__আচ্ছা তাহলে আমি এখন চলে যাচ্ছি আপনার কাজ শেষ হলে আমাকে ডাক দিয়েন, আমি চলে আসবো।বলেই আহিল চলে যায় রায়হানের ঘরের সামনে থেকে।

আমি ফোনের লাইটটা চালিয়ে,, ঘরের সুইচ বোর্ডের দিকে এগিয়ে গিয়ে সুইচ টিপতেই পুরো রুম আলোকিত হয়ে উঠলো। পুরনো দিনের লালবাতি গুলো রুমে লাগানো ছিলো, কিন্তু এতো দিন পর্যন্ত কিভাবে ভালো ছিলো আল্লাহ মালুম। পুরো রুমের অবস্থা একদম নাজেহাল মাকড়সা জাল ধুলো বালি দিয়ে ভরপুর। আর বিছানার চাদরে রক্তের দাগ শুকিয়ে একদম খারাপ হয়ে গেছে। আমি আর দেরি না করে ঘরের মাঝ বরাবর এসে মাটি খুঁরতে শুরু করলাম। প্রায় দুই ঘন্টা মাটি খুঁরতে খুঁরতে আমি ক্লান্ত, তার পর আরো এক ঘন্টা মাটি খুরার পর, মাটি খুরা শেষ হলো।

এটা কি করে সম্ভব মীরার লাশের এখনো কিছু হয়নি, পঁচিশ বছরে তো লাশ একদম মাটির সাথে মিশে যাওয়ার কাথা কিন্তু এখানে তো আমি যেই প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে ডুকিয়ে মাটি চাপা দিয়েছিলাম সেই ব্যাগ এখনো আগের মতো আছে শুধু একটু আধটু ফোটো হয়েছে আর মাটিতে বরে আছি।আমি কোনোমতে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগসহ মীরার লাশটি কে ওপরে তুললাম। তারপর প্লাস্টিকের ব্যাগটি খোলার সাথে সাথে আমি অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম,,,,,

চলবে,,,,