আমার চারু পর্ব-০৩

0
289

#আমার চারু
#পর্ব-৩
#ফারজানা নিলা(writer)

হঠাৎ এই মধ্য রাতে আমাকে কে ডাকছে।

কাব্য অনেকটা ভয় পেয়ে গেল।তবুও সাহস করে পিছোনে তাকিয়ে তো চোখ কপালে।

এ আমি কি দেখছি।
আপনি?এখানে?
-হ্যা আমি।কেন?
-না মানে আপনি এখানে কোত্থেকে?
-আপনিতো আমার কথা মনে করছেন।তাই চলে এলাম।
-মানে?
-এটা আমার ঘর।আমি এখানে থাকি।
-আপনার ঘর?কিন্তু কখনো যে, আলো জ্বলতে দেখিনি।
-আসলে,আমি অন্ধকার খুব পছন্দ করি।তাই।

কাব্য অনেকটা দ্বিধায় পরে গেল।মনে হলো যেন,সবটা মাথার উপর দিয়ে গেল।মনে মনে ভাবছে,
ইনি এখানে থাকেন তাহলে সারদ কি ইনি বাজান।

-হ্যা আমি সারদ বাজাই।
-মানে?
-আপনিতো বললেন তাহলে কি আমি সারদ বাজাই কিনা।
-কিন্তু আমি যে মন…….

কাব্য কথা গুলো মনে মনে বলেছে আর এই মেয়েটি সেই কথার উত্তর দিয়েছে।কাব্য বুঝে উঠতে পারছেনা।

আচ্ছা আমি ঘরে যাই,ঘুমাবো।
-ঘুম আসবে?নাকি সারদ বাজাবো?

কাব্য কিছু না বলেই ঘরে চলে গেল,গিয়ে শুয়ে পরলো।মেয়েটি হাসছে কাব্যকে দেখে।


ঘুম থেকে উঠে কাব্যর মাথা খুব ভারি হয়ে আছে।মাথার যন্ত্রণা যেন বেড়েই চলেছে।এদিকে আবার অফিসে যেতে হবে।
কাব্য বিছানা থেকে পা নামিয়ে বসলো।মাথা যেন ফেটে যাচ্ছে।টেবিলে পরে থাকা শুকনো রজনীগন্ধার দিকে চোখ পরলো।কেন জানি ফুল টা হাতে নিলো আর হু হু করে মাথার যন্ত্রণা সেরে গেল।
কাব্য ফুলটার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু টেরই পায়নি, মাথার যন্ত্রণা যে সেরে গিয়েছে।

উঠে মুখ হাত ধুয়ে তৈরি হয়ে নিলো।কালো জামা পড়েছে।আয়নায় ভালোই দেখাচ্ছে।নিচে নেমে মদন কাকার দোকানে বসলো।

-কাকা করা করে একটা চা দাও তো
-হ্যা দিচ্ছি।
-হ্যা দাও আজ খুব মাথ….
(কি ব্যাপার আমার মাথার যন্ত্রণা তো সেরে গেল)
-কি বলছো?
-না বলছিলাম,তোমার হাতের চা খেলে মাথা ফ্রেশ হয়ে যায়।



কাব্য চা খেয়ে অফিসের জন্য রওনা হলো।গাড়ির জন্য দাঁড়িয়েছে।

-কি ব্যাপার মাথার যন্ত্রণা সেরেছে?
-কে?আপনি এখানে।?
-হ্যা আমি।
-আমার মাথা ব্যাথা আপনি জানলেন কিভাবে?

মেয়েটি হাসছে কিন্তু কিছুই বলছেনা।কাব্য তাকিয়ে আছে রহস্যময়ী ভঙী নিয়ে।
-আচ্ছা আপনি সব সময় সাদা শাড়ি পড়েন কেন?
-আমার প্রিয় রং সাদা।

এটি বলেই চলে গেল।কিন্তু আজও নামটি জানা হলোনা।

এক মাস পর…..

আজ কাব্য প্রথম মাইনে পেয়েছে।গরমের ছুটি চলছে।আজ কাব্য গোবিন্দপুর রওনা হবে।রাতের ট্রেন ধরে গোবিন্দপুর যাবে।যাওয়ার সময় কিছু উপহার নিবে সবার জন্য।
অফিস শেষে সবার জন্যই কিছু না কিছু কিনেছে।
বাসায় গিয়ে কাপড় গুছাবে।
কাব্য বাসায় ফিরে গোসল সেরে ব্যাগে কিছু জামা নিয়ে নিলো।হুট করে…
-আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
-আহ!
-কি হলো?ভয় পেলেন?
-ভয় পায়নি।চমকে উঠেছি।এভাবে হুট করে কেউ ডাক দিলে মানুষতো চমকাবেই।
-অহ। কই যাচ্ছেন?
-বাড়ি যাচ্ছি।গোবিন্দপুর।
-কবে ফিরবেন?
-দশদিন পর।আচ্ছা আমি এলাম।

কাব্য ঘর তালা দিয়ে বেরিয়ে গেল।আবার সেই মেয়েটি পিছু ডাকলো।
শুনছেন?
কাব্য পিছু তাকালো,
কিছু বলবেন?
-বলছিলাম,আমি চারু।

চারু তার নাম বলে হেসে চলে গেল।কিন্তু কাব্য এখনো তাকিয়ে আছে।কাব্য ভাবছে,
মেয়েটি হঠাৎ নাম বললো কেন।চারু।বেশ সুন্দর নাম তো।


কাব্য ট্রেনে উঠে গেল।ট্রেনে বসে বার বার একটি কথা বলছে আর হাসছে,চারু।আবার হাসে।
কাব্যের হয়তো নামটি খুব পছন্দ হয়েছে।
ট্রেনের হালকা বাতাসে কাব্য ঘুমিয়ে পরেছে।হঠাৎ কানের মধ্যে কেমন ঠান্ডা বাতাস এসে কেউ ধীর গলায় বললো,চারু।
হুট করে কাব্যর ঘুম ভাঙলো।ঘুম ভেঙেই মুখে উচ্চারণ করলো,চারু।স্বপ্ন দেখছিলাম নাকি।

ট্রেন স্টেশনে থামলো।ভোর হয়ে গিয়েছে।একটা ভাড়া গাড়ি নিয়ে বাড়ি যেতে হবে।
বাড়ি চলে এলো।কাব্যের জেঠি খুব ভোরে উঠে পরেন।অবশ্য গ্রামের মানুষরা খুব ভোরেই উঠে।ভোরে উঠে তারা রান্নাবান্না ঘর গুছানো, সব সেরে নেয়।


কে বাপু ঘন্টা বাজিয়ে চলেছে,আমিতো মানুষ নাকি,উড়ে তো আসতে পারুম না।উফ পারি না বাপু এ পাড়ার ছেলেদের জ্বালা।

জেঠি মা দরজা খুলেই দেখে কাব্য,অমনি মুখটা বাংলার পাচঁ করে ফেলেছে।
-ও বাপু, তুই কই থেকে আইলি।
-জেঠি মা কেমন আছো?
-হু ভালো।আয়।
-সবাই কোথায় জেঠি মা।
-জানিনা,এতো বক বক করবিনা।যা নিজের ঘরে যা।


কাব্য নিজের ঘরে গেল।কাব্যের জেঠুর বিশাল বাড়ি।অনেক গুলো ঘর আছে।তাই কাব্যকেও একটা দেওয়া হয়েছে।কাব্য যাওয়ার পর ঘর টা তালা দিয়ে দিয়েছিলো কাব্যের জেঠু।যাতে সেই ঘরে কেউ কোনো কাজ না করতে পারে।তবে,প্রতি সপ্তাহে বাড়ির সব ঘর পরিষ্কার করা হয়।
কাব্য ঘরে ঢুকে দেখে বেশ পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে সব কিছু।
ময়লা কাপড় ছেড়ে, গোসল সেরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে।
নিজের ঘরে এসে যেন সুখ খুজে পেয়েছে।অবশ্য নিজের ঘরের মতো আর কোনো কিছুই নেই।নিজের ঘরটি ছোট হলেও মনে হবে এটি সেই জায়গা যেখানে একটু সুখ আছে।

কাব্য একটু বিশ্রাম নিয়ে, নিচে নেমে আসলো।জয়ের ঘরে উকি মেরে দেখছে জয় ঘুমাচ্ছে।রিমা ঘরের দরজা বন্ধ।

নিচে নেমে দেখে জেঠু পেপার পড়ছে।জেঠি মা বলেনি,কাব্য যে বাড়ি এসেছে।

-জেঠু!!
-কে?কাব্য,কখন এলি বাবা।আয় বুকে আয়।কতদিন পর দেখছি তোকে।

কাব্যকে তার জেঠু হামিদ সাহেব বুকে নিয়ে নিলেন।
হামিদ সাহেব বরাবরই খুবই ভালোবাসেন কাব্যকে।

-এই শুনছো,দেখো কে এসেছে।আজকে বাসায় ভালো রান্না হবে কিন্তু।
-হ্যা দেখছি,এতে বাড়ি মাথায় করার কিছু হয়নাই।


-কাব্য,ভালো আছিস তো?কলকাতায় কষ্ট হচ্ছেনাতো?
-না জেঠু।কোনো কষ্ট হচ্ছে না।একটা ঘর ভাড়া নিয়েছি।ভালোই যাচ্ছে।


দুপুর একটা….

কিরে কাব্য যে?কখন এলি।
-এইতো সকালে এসেছি।

সবাই খাবার টেবিলে বসেছে।রিমা জেঠি মার সাথে খাবার গুলো টেবিলে আনছে।রিমা কেমন যেন চোখ লুকাচ্ছে।হয়তো কাব্যকে দেখে লজ্জা পাচ্ছে।রান্না হয়েছে মুরগী, বড় কাতলা মাছ,রুই মাছের পেটি,আমের চাটনি।
বেশ খাবার খেয়ে,জয় কাব্যকে রুমে নিয়ে গেল।

-বল এবার,কলকাতা গিয়ে কি কি করলি?
-আরে, কিছুই না।একটা চাকরী পেয়েছি এই চলছে।
-তা ঠিক আছে,কোনো সুন্দরীর দেখা পাস নি?
-সুন্দরী, জয় জানিস তো,একটা মেয়ে বুঝছিস খুব সুন্দর।
-হ্যা কি হইছে!!
-আমার সাথে হুট করেই দেখা হয়ে যায়।মেয়েটাকে যতবার দেখেছি, ততোবার সাদা শাড়িতে।
-বিধবা নাকি?
-বিধবা কিনা জানিনা।কিন্তু মনে হয় না বিধবা।একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম,যে আপনি সাদা শাড়ি পড়েন কেন?
-কি বলছে?
-বললো,আমার প্রিয় রং সাদা তাই।জানিস মেয়েটা না কিভাবে যেন হাসে।ওর হাসিতে কেমন রহস্য।
-ও ওহ,সুন্দরী তাইলে পেয়ে গেলা।
-ধুর।কি যে বলিস না।বাদ দে চল নিচে যাই।সবার জন্য উপহার এনেছি।

জেঠু তোমাদের জন্য আমার প্রথম মাইনে দিয়ে কিছু এনেছি।
-তুই আবার এগুলো আনতে গেলি কেন।বেকার খরচা।
-কি এনেছিস দেখা, সেই তো আনবি সস্তার জিনিস।

(উফ তুমি থামলে)

-কাব্য তুই দে কি এনেছিস।
-জেঠু নাও তোমার জন্য পাঞ্জাবী, জেঠি মা তোমার জন্য শাড়ি,জয় তোর জন্য শার্ট, রিমা তোর জন্য নুপুর।

সবাই উপহার পছন্দ করেছে।কিন্তু জেঠি মা নাক ছিটকাচ্ছেন।
(ছে ছে, এই শাড়ি আমি পরব,আনলি যখন ভালো থেকেই আনতি)
জেঠির শাড়ি ঠিকিই পছন্দ হয়েছে,কিন্তু তিনি স্বীকার করবেন না।কিছু কিছু মানুষ থাকে,নিজের টা উপরে রাখবেন,হার স্বীকার করে না।জেঠি মা ও ঠিক তেমন।তিনি কাব্যকে ছোট থেকেই পছন্দ করেন না।হামিদ সাহেব কাব্যকে আদর করে সেটাও খুবই অপছন্দ করেন।কাব্য এসব বুঝেও কিছু বলে না।কারণ কাব্য তার জেঠিকে নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসে।


রিমা কাব্যের দেয়া নুপুর গুলো পায়ে পড়ে দেখছে,কেমন মানিয়েছে।রিমার খুব পছন্দ নুপুর।কিন্তু সে কাব্যর সাথে কথা বলে না।
রিমা নুপুর পায়ে দিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
কাব্য তার ঘর থেকে বের হলো আর দেখে রিমা দাঁড়িয়ে আছে।রিমা কাব্যকে দেখেই একটা হাসি দিলো,তারপর দৌড়ে ঘরে চলে গেল।
কাব্য কিছুই বুঝলো না, রিমার কি হলো।রিমা হয়তো এজন্যই দাঁড়িয়ে ছিলো।


বিকালে কিছুক্ষণ ঘুরা ফেরা করে,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় এসে খাবার খেয়ে ঘরে চলে গেল।
কাব্যের হালকা সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস আছে।বাইরে থেকে সিগারেট নিয়ে এসেছে,ঘরে বসেই খাবে।কাব্যের ঘরে জানালা আছে একটা,সেই জানালা দিয়ে দূর পাহাড় অব্দি চোখ যায়।রাতে খুলে ঘুমালে বাতাস আসে।খুব আরমের ঘুম হয়।

কাব্য সিগারেট জ্বালিয়ে জানালার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।হালকা বাতাস ও আছে।বাতাসে দূরের গাছ গুলোও নড়ছে। বাতাসটা যেন হঠাৎ বাড়ছে।
কাব্যের সিগারেট খাওয়া শেষ।আজ ভেপসা গরম পড়ছে,তাই জানালা খোলাই রেখে দিলো।
কাব্য শুয়ে পড়েছে।ঘুমে চোখ ভাড়ি হয়ে আসছে।
ঠান্ডা বাতাসের কারণে আরো বেশি ঘুম ভর করেছে।
কাব্য ঘুমিয়ে পড়েছে,ঠান্ডা বাতাস টা ঘুরে ঘুরে কাব্যের কানের কাছে এসে পরলো,কে যেন ফিস ফিস করে বলছে,কাব্য…
এই কাব্য ঘুমিয়ে পরলে।একটা খিলখিলিয়ে হাসি।
কাব্যর ঘুম ভেঙে গেলো।চোখ খুলে দেখে জানালার পাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।
হালকা বাতাসের সাথে মহিলাটির চুল উড়ছে।গুন গুন করে গান গাইছে, কেমন মিষ্টি গলা।কিছু কিছু গলা আছে, যা শুনলে কানে আরাম পাওয়া যায়।এটিও তেমন ছিলো।
কাব্য বসে পরেছে।জিজ্ঞেস করলো
-কে?

মহিলাটি কোনো উত্তর দিচ্ছিলোনা,গুন গুন করেই যাচ্ছে।কাব্য বিছানা থেকে নামলো।এগিয়ে যাচ্ছে জানালার দিকে।জানালার কাছে যেতেই মেয়েটি আচমকা পিছু তাকালো আর কাব্য চিৎকার দিয়ে উঠলো……

চলবে…….

( ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হলো।পাশে থাকবেন।ধন্যবাদ