আমার চারু পর্ব-০৪

0
265

#আমার চারু
#পর্ব -৪
#ফারজানা নিলা(writer)

আচমকা লাফ দিয়ে উঠে দেখে সকাল ১০ টা বাজে।

এতোক্ষন কি সব স্বপ্ন দেখছিলাম।কিন্তু কে ছিলো মেয়েটি।

দরজায় কে জানি নক করছে,
-কে?
-আমি রিমা।বাবা ডাকছে।
-আচ্ছা।

কাব্য রিমাকে দেখে একটু অবাক হলো,রিমা আমাকে ডাকতে এসেছে,তাও আজ হাসি মুখে কথা বললো।
রিমা একটু চুপচাপ, সেই ছোট থেকেই।কিন্তু রিমা কাব্যকে খুব পছন্দ করতো।সে সব সময় লুকিয়ে লুকিয়ে কাব্যকে দেখতো।কাব্যকে যখন অপরাজিতা (কাব্যের জেঠি) খুব বকা দিতেন তখন কাব্য মন খারাপ করে মুখ গোমরা করে রাখতো।তখন রিমা দরজায় লুকিয়ে দেখতো,আর রিমারও খুব মন খারাপ হতো।
বাইরে যখন গোলিতে ক্রিকেট খেলতো তখন রিমা জানালায় দাঁড়িয়ে দেখতো।আর যখন কাব্য দেখে ফেলতো তখন খুব শব্দ করে জানালা বন্ধ করে দিতো।

একদিন রিমাকে স্কুলের মেয়েরা খুব জ্বালাতন করছিলো।পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়াতে, ক্লাসের কিছু মেয়েরা তাকে নিয়ে নিন্দে করছিলো।
সব ক্লাসেই এমন কিছু মেয়ে থাকে।যাদের নিজেদের চেয়ে অন্যের ব্যাপারে বেশি আকর্ষণ।
তাদের এসব শুনে জবাব দিতে গিয়ে রিমা নিজেই কান্না করে দিয়েছে।তখন কাব্য এসে সে মেয়েগুলোকে খুব বকেছে।সেদিন থেকেই রিমার মনে কাব্যর জন্য একটা আলাদা ভালো লাগা কাজ করা শুরু করলো।কিন্তু সেটা প্রকাশ করতো না।


আজ কাব্যকে কলকাতা ফিরে যেতে হবে।ছুটি শেষ।একদিন অফিসে না গেলে একদিনের বেতন কাটা।

-জেঠু আমি এলাম, তুমি শরীরের যত্ন নিও।জেঠি মা এলাম।
-হ্যা যা এবার।বিদেয় হ।

কাব্য ট্রেনে উঠে গেল।
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হলো।পরশু থেকে অফিস।বিশ্রামের জন্য একদিন আগেই চলে এসেছে।বাসায় এসে দেখে,ঘর পুরো চক চক করছে।কোনোদিকে একটুখানি ধূলি কণা নেই।বেশ আশ্চর্যজনক। কাব্য ময়লা কাপড় ছেড়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো।রান্না করার মতো শক্তি বা ইচ্ছা কোনোটাই নেই।তাই ভেবেছে, বাইরেই খেয়ে নিবে।

বেশ কিছুক্ষণ পর দরজায় টোকা…
-কে?
-আমি চারু।
-দাঁড়ান আসছি।

কাব্য গিয়ে দরজা খুললো, চারু দাঁড়িয়ে। সাদা শাড়ি।খোলা চুল,হয়তো সবেই গোসল সেরেছে।চোখে কাজল।হাতে কোনো চুড়ি নেই।শাড়ি পাতলা তাই নাভিটা হালকা ভেসে উঠছে।

-কি ব্যাপার,এতো কি দেখছেন?
-না মানে,কিছুনা।আপনি এখানে?
-হ্যা,আমি।অন্য কারো আসার কথা ছিলো নাকি?
-না,অন্য কেউ কে আসবে।
-ধরুন,আপনার জন্য খাবার এনেছি।খেয়ে নিয়েন।বাইরের খাবার বেশি খাওয়া ভালো না।
-আপনি কিভাবে জানলেন আমি এসেছি?

চারু কোনো উত্তর না দিয়ে, মুচকি হেসে চলে গেল।
কাব্যর বেশ খিদে পেয়েছে।চারু কিছু খাবার নিয়ে এসেছে।
কাব্য খেয়ে অবাক,এতো স্বাদের খাবার আগে কখনো খায়নি।যেন স্বর্গ থেকে এসেছে এতো সুস্বাদু।
কাব্য বাসন গুলো ধুয়ে রেখে দিয়েছে।
কেউ কিছু দিলে,তাকেও কিছু দিতে হয়।কিন্তু কাব্যের কাছেতো কিছুই ছিলো না দেওয়ার মতো।


রাত ১২.০৫…..

খাবার খেলে শরীরে একটা আলসি আসে।কাব্য তাই ছাদে একটু হাটাহাটি করতে চলে এলো।হাটাহাটি করলে নাকি খাবার একটু নিচে নামে।
ছাদে এসে দেখে,পাশের ছাদে চারু একটি আরাম দায়ক চেয়ার বা যেগুলোকে আমরা ইজি চেয়ার বলে থাকি।সেই চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।শাড়ির আচল টা চেয়ারের হাতলে এসে নিচে পরে আছে।
কাব্য তাকিয়ে আছে।আজকে পূর্নিমার চাঁদ উঠেছে।পুরো ছাদ আলোকিতো।

-কি ব্যাপার এভাবে হা করে কি দেখছেন?ছাদে কিন্তু প্রচুর মশা মুখে ঢুকে যাবে।
-ইয়ে মানে,কই হা করে আছি।আর এতো রাতে ছাদে কি করছেন?
-আমিতো গল্প করতে এসেছি।
-গল্প?কার সাথে?

চারু উত্তর না দিয়ে হাসছে আর দোল খাচ্ছে।

-আপনি সব সময় প্রশ্ন এরিয়ে যাওয়ার জন্য হাসেন তাইনা।
-নাতো।আমিতো এমনিতেই হাসি।হাসতে যে নেই মানা।আপনি ছাদে কি করছেন?
-আমি এই এলাম আর কি।

কাব্য ঘর থেকে একটি চেয়ার এনে বসলো,সাথে একটি সিগারেট ও জ্বালালো।

-আচ্ছা,আপনি সিগারেট খান কেন?
-আসলে,সিগারেট টা আমার একাকিত্বের সাথী বলতে পারেন।আমার মা, বাবা দুইজনই সেই তারা হয়ে গিয়েছে।আর আমি এখানে একা।আমার জেঠিমা আমাকে খুব বকা ঝকা করেন।তিনি আমাকে খুব একটা পছন্দ করেন না।তো আমি যখন থেকে হালকা বুঝতে শিখেছি, তারপর থেকেই একে আকড়ে ধরা।
-এটি কি ছাড়া যায় না?
-হয়তো যায়,কিন্তু আমি ছাড়তে চাইনা।

কাব্য এসব বলতে পেরে নিজেকে খুব হালকা লাগছে।মানুষ কখনো একা বাচতে পারেনা।দুঃখ ভাগাভাগি করে নিলে শুকিয়ে যাওয়া প্রাণ থেকে একটু সতেজ হওয়া যায়।

কাব্য ঘরে চলে গেল, কিছু না বলেই।চারু তার সারদ টা নিয়ে আসলো ঘর থেকে।মাদুর বিছিয়ে সারদ বাজাচ্ছে ছাদে।আজকের সুরে কেমন যেন নিরব কান্না লুকিয়ে আছে।মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার সুখ পাইয়ে দিচ্ছিলো।


গোবিন্দপুরে রিমা খানিক মন খারাপ করে দিন কাটাচ্ছে।কাব্যর চলে যাওয়া রিমার কাছে মোটেও ভালো ঠেকেনি।কাব্যের দেওয়া নূপুর সে পরে থাকে।সেই নূপুর তাকে কাব্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।


পরদিন রাতে,
কাব্য অফিস থেকে ফেরার পথে কিছু বাদাম কিনে আনলো।বাদাম আবার গরম গরম খেতে খুব মজা।চারু খাবার নিয়ে এসেছিলো,তার বদলে কাব্য তাকে বাদাম দিবে।
ছাদে এসে দেখে চারুর ঘরে কোনো আলো জ্বলছেনা।কাব্য চিন্তা করলো,ঘরে গিয়েই দিয়ে আসি।
কাব্য ছাদ পার হয়ে, চারুর ঘরের কাছে এগিয়ে গেল।
দরজাটা খোলা,ঘর খুব অন্ধকার। কেমন যেন গা ছম ছম ব্যাপার।

চারু,আপনি আছেন?চারু?

কাব্য চারুকে ডাক দিলো কিন্তু কোনো সারা পেল না,কাব্যের কাছে লাইটার ছিলো।যারা সিগারেট খায় তাদের কাছে দেশলাই কাঠি পাওয়া অস্বাভাবিক কিছুনা।

দেশলাই জ্বালানোর সাথে সাথে দেখলো,বিছানার উপর সারদ,আর টেবিলে কিছু শুকনো রজনীগন্ধা ফুল।পুরো ঘরে এতো ঘ্রাণ ছিলো, যেন মনে হচ্ছে কাচা ফুলের গন্ধ।কাব্য এগিয়ে যাচ্ছিলো টেবিলের কাছে হঠাৎ একটি ঠান্ডা বাতাস শরীরে শীত কাটা দিয়ে দিলো।কাব্য আচমকা পিছু ফিরে দেখে চারু দাঁড়িয়ে।
চারুকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হালকা ভয় পেয়েছে কাব্য।
-একি আপনি!!
-কেন,আমার না আসার কথা ছিলো নাকি।
-না মানে,আপনি কখন এলেন আমি শুনতে পায়নি।কিন্তু আপনি আমার পিছোনে কেন।আপনার তো আমার সামনে থাকার কথা।

চারু জবাব না দিয়ে মুচকি হেসে বাইরে ছাদে চলে এলো।

-দাঁড়ান তো।আপনি তো ছাদে ছিলেন না।আপনি আমার পিছোনে কিভাবে।
-আমিতো ছাদেই ছিলাম।আপনি আমাকে দেখতে পাননি।
-কি জানি,ধরুন আপনার জন্য বাদাম এনেছিলাম।
-দিন।


কাব্যের অফিস এখন দুপুর ২টায় শেষ হয়ে যায়।নতুন নিয়ম।একদিন ভর দুপুরে, কাব্য অফিস থেকে ফিরে এসেছে।আকাশে হালকা মেঘ ও দেখা দিচ্ছে।মনে হচ্ছে,ঝড় হবে।কাব্যের ঘরের পাশে এক বিরাট জাম গাছ আছে।জাম পেকে মাঝে মধ্যে ছাদে পরে।কাব্যর কোনো কাজ নেই আজ তাই ছাদে এলো জাম পেরে ভর্তা বানাবে।গোবিন্দপুরে জয় আর তার সব দল বল মিলে এভাবে জাম পেরে খেতো।
গ্রামের জীবনের আলাদা একটা সুখ আছে,যেটা শহুরে দেয়াল গুলোতে নেই।
কাব্য ছাদে এসে একটা চেয়ার নিয়ে বসলো,অল্প অল্প বাতাস হচ্ছে।পাশের ছাদে তাকিয়ে দেখে চারু রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।একটা পা কেমন এক ভঙিতে রেখেছে।চুল গুলো উড়ছে বাতাসে।শাড়ির আচলটা উড়ছে।
কাব্য হা করে তাকিয়ে আছে।বাতাস টা ও ধীরে ধীরে বাড়ছে।
অমনি চারু ঘুরে দাঁড়ালো। ঘুরে দাঁড়ানোর সাথে সাথে কাব্য যেন বস হয়ে গেল।কাব্য এগিয়ে আসছে,আর চারু হাসছে।
চারুর চুল গুলো উড়ছে যেন এক ঘূর্ণিপাক।চারু দাঁড়িয়ে আছে কাব্যের দিকে তাকিয়ে।কাব্য এগিয়ে আসছে।আকাশ কালো মেঘে ভরে গেল।বৃষ্টির তুমুল ঘোর ঝড়ে পরলো।
কাব্য চারুর সামনে দাঁড়িয়ে আছে,চারু মুচকি হেসেই চলেছে।

-চারু,তুমিকি আমার হবে?

চারু কাব্যের কানের কাছে এসে বললো,কাব্য তুমি এখন আমার।

এটি বলেই চারু উধাও হয়ে গেল।কাব্য আচমকা যেন হুস ফিরে পেল।

কি ব্যাপার,কি হলো।তাকিয়ে দেখে চারু তার ঘরে দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে।

-চারু আপনি ভিজবেন আমার সাথে?
-আপনার সাথে ভিজার কি কোনো কারণ আছে?
-যদি বলি কারণ এতোদিন না থাকলেও আজ থেকে আছে।

চারু মুচকি হাসছে,কাব্য এগিয়ে গিয়ে চারুর হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো। পুরো ভিজে গেল চারু।
কাব্য চারুর রূপের মোহে ডুবে যাচ্ছিলো।বৃষ্টির ফোটা যেন চারুকে আরো সুন্দর করে তুলেছে।
কাব্য চারুর কোমড়ে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে আনলো।

চারু হালকা ঘাবড়ে গিয়েছে।
-চারু আপনি অনেক সুন্দর।
চারুর গালে পরে থাকা চুল গুলো কানের পিছোনে সরিয়ে দিলো।কাব্য চারুর ঠোঁটের কাছে আসতে চাইলেই, চারু দৌড়ে ঘরে চলে গেল।
কাব্য তাকিয়ে আছে।


চারদিন পর…..

মদন কাকার দোকানে একটি চিঠি এলো।

-ও কাব্য,তোমার চিঠি আইছে।এই দেখো।
-কই দেখি

কাব্য চিঠি খুলে দেখে,কাব্যের জেঠুর চিঠি।তাড়াতাড়ি গোবিন্দপুরে যাওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে। কাব্য জেঠুর চিঠি পেয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা শুরু করলো।হামিদ সাহেব বলেন নি কি ঘটেছে।শুধু যাওয়ার জন্য ডাক পাঠিয়েছে।
কাব্য চলে যাবে তাই চারুকে বলে যাওয়া দরকার বলে কাব্য মনে করছে।তাই সে ছাদে গিয়ে চারুর ঘরের সামনে গিয়ে চারুকে ডাকছে….

চলবে….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হলো কমেন্ট করে জানাবেন।ধন্যবাদ)