আমার চারু পর্ব-০৫

0
259

#আমার চারু
#পর্ব-৫
#ফারজানা নিলা (writer)

কাব্য বাড়ি ফিরে গেল।গিয়ে জেঠুর কাছে জানলো

-বাবা কাব্য তুই এসেছিস।দেখ অপরাজিতার কি হয়েছে।কাল হঠাৎ রাতে কেমন যেন আবল তাবল বকছে।কি সব বলছে।আবার তোর নাম ও নিচ্ছিলো।
-আমার নাম?ভালো ডাক্তার দেখাও।
-আজকে একজন ওঝাকে বলেছি আসার জন্য।উনি নাকি খুব ভালো।
-কি বলছো এসব।ওঝা কি করবে।একটা ডাক্তারের ব্যবস্থা করো।
-তুই এসব বুঝবি না।যা ঘরে যা।

গ্রামে আবার রাত দুপুরে ঘর থেকে বের হতে নেই।না হয় আবার ভূতে ধরে।অবশ্য এগুলো গ্রামের মানুষের আজগুবি কথা।বাস্তবে ভূত বলতে কিছু নেই।তবে,অন্য কিছু আছে।

কাব্য ঘরে গিয়ে দেখে অপরাজিতা শুয়ে আছে।পাশে রিমা বসে আছে।জয় ওঝা আনতে গিয়েছে।ওঝা এসে জেঠিকে দেখবে,ঝাড় ফুক করবে।
রিমা কাব্যের দিকে তাকিয়ে আছে,যেন কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু ইচ্ছে করে বলবেনা।মানুষ আবার খুব বিচিত্র, চোখে মুখে ভেসে উঠে মনের কথা।

বেশ কিছুক্ষণ পর জয় ওঝাকে নিয়ে আসলো।ওঝা এসে পুরো বাড়ি ঘুরলো,জেঠিকে একটু দেখলো আর কি যেন বিড় বিড় করে বলে, আর বড় করে ফুক দেয়।ওঝার কাজ মনে হচ্ছে শেষ।

-হামিদ সাহেব আপনার বউরে পশ্চিমা বাতাসে পাইছে।আমি কাল আবার আসমু,একটা তাবিজ দিমু কাইল।আইজা আমি গেলাম আর পশ্চিমের জানালা আইজ আর খুলবেন না।

ওঝা বিদেয় হলো।অপরাজিতা শুয়ে আছে।মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়েছে।কপালে ভয়ের ছাপ পরে আছে।

অপরাজিতার শরীর ভালো নেই তাই আজকে রিমা রান্না করেছে।বেগুন ভাজা,ভেটকি মাছ,কড়াই শুটি।
রিমার রান্না আগে খাওয়া হয়নি,আজই প্রথম খেল কাব্য।রিমার হাতের রান্নাও ভালোই, ১০ এ ৮ পাবে।তবে জেঠির রান্না ১০ এ ১১ পাবে।
বেশ খাওয়া দাওয়া শেষ করে কাব্য বসার ঘরে বসে আছে।টেবিলে খবরের কাগজ ছিলো সেটাই উল্টাচ্ছে।জয় বাইরে থেকে ফিরলে একটু গল্প গুজোব আর সিগারেট খাওয়া হবে।

রিমা, কাব্যকে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এলো..

-বলছি,আপনি চা খাবেন?

(কাব্য খুবই অবাক, রিমাকে দেখে।রিমা এসেছে তাও আবার নিজে থেকে কথা বলছে।ব্যাপারটা সুবিধার ঠেকছে না।)

-হ্যা বলো।
-বলছি চা দিব?
-চা!!হ্যা খাওয়া যায়।

একটু পর রিমা চা নিয়ে এলো
এসে ছোট করে একটা কাশি দিলো,কাব্য পিছু ফিরে দেখে চা বানানো শেষ।অবশ্য এমন ছোট করে কাশির মূল অর্থ হলো আমি এসেছি।এসব বহু নতুন প্রেমিদের করতে দেখা যায়।

-আপনার চা।
-অহ, হ্যা দাও।

কাব্য চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে, এদিকে রিমা দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।যা কাব্যকে খুবই অসুবিধায় ফেলছিলো।

-কিছু বলবে?
-না কিছু না।চা কেমন হয়েছে।?
-হ্যা ভালো।


কাব্য চা খেয়ে ঘরে চলে গেল।রিমা তার নিজের ঘরে চলে গেল।রাত বাজে ১.০৮…
হামিদ সাহেব কে জরুরী এক কাজে বাইরে যেতে হয়েছে।হামিদ সাহেব মাঝে মধ্যেই কাজের জন্য গভীর রাতে বের হন।কাব্য আর জয় কেও জানিয়ে গিয়েছে।
অপরাজিতা ঘুমাচ্ছে।

হঠাৎ অপরাজিতার কানের মধ্যে যেন কেউ একজন ফুক মারলো।অপরাজিতা নরে উঠেছে।পাশে একটা জানালা ছিলো,কেমন যেন মর মর করে শব্দ করে উঠলো।অপরাজিতার ঘুম ভেঙে গিয়েছে।একটা বাতাস চারপাশে ঘুরছে।ঘুরতে ঘুরতে একদম মুখের উপর বাতাস টা এসে পরেছে।ফিস ফিস করে কানের মধ্যে বলে গেল কাব্য।আর একটা খিলখিলিয়ে হাসি।অপরাজিতা চিৎকার করে উঠলো।কিন্তু হামিদ সাহেবের ঘর নিচ তলায় আর রিমা জয়দের ঘর উপর তলায়।তাই না শুনতে পাওয়ারি কথা।
পুরো ঘরে খিলখিল হাসি,আর বাতাস টা চারপাশে ঘুরছে।অপরাজিতা সাহস করে শোয়া থেকে উঠে বসলো।বসার সাথে সাথে পাশের টেবিলে থাকা ফুল দানি টা মাথার পাশ দিয়ে কে যেন ছুড়ে মারলো আর সাথে সাথে ফুলদানি ভেঙে টুকরো টুকরো।অমনি পাশের জানালাটা মর মরিয়ে খুলে গেল।অপরাজিতা চিৎকার দিলো।

কাব্য আর জয় বসে গল্প করছে।তারা দু জনে সিগারেট খেয়ে নিচে নামছে।চিৎকার শুনতে পেয়ে কাব্য আর জয় দৌড়ে গেল।গিয়ে দেখে অপরাজিতা বসে আছে আর হাপাচ্ছে।কপাল ঘেমে একাকার।

-কি হলো জেঠি
-মা কি হলো?
-ওই যে দেখ,ফুল দানি।কে যেন ঘুরতেছে।
-কই মা কিছুই তো নেই।তুমি মনে হয় স্বপ্ন দেখেছো।

অপরাজিতার পাশে ফুলদানি অক্ষত অবস্থায় ছিলো।কিন্তু জানালাটি খোলা ছিলো।রিমা এসে অপরাজিতার মাথায় পানি দিলো।অপরাজিতা কিছুই বলছে না আর চুপ করে আছে।অপরাজিতা খুবই অবাক হলেন ফুলদানি অক্ষত দেখে।চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাও মিথ্যে হয়ে গেল।অনেক সময় চোখে যা দেখি তা বিশ্বাস না করাই উচিত।অপরাজিতা শুয়ে পরলো কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই।কানের মধ্যে একটি নাম,সেটি হলো কাব্য।

জয় মায়ের এই অবস্থা দেখে খুবই চিন্তিতো।অবশ্য চিন্তা হওয়ারই কথা।সুস্থ মানুষ হঠাৎ কি হয়ে গেল সেটাই সবাই ভাবছে।

পরদিন আবার ওঝা আসলো।একটা তাবিজ নিয়ে এসেছে।বাম হাতের কনুই এর উপর বেধে দিলো।
ওঝা বারবার বলে দিয়েছে,তাবিজ যেন কোনো ভাবেই না খুলে।ওঝা পুরো ঘরে কি যেন পানি ছিটিয়ে দিলো, যাওয়ার সময়
-খুব গম্ভীর গলায়, এই জানালা কেন খুললে?এই তাবিজ যেন খোলা না হয়।মহাবিপদ হবে।মহাবিপদ।

বাসার মধ্যে এসব কি হচ্ছে কেউই বুঝতে পারছিলোনা।এদিকে কাব্যর আবার ফিরে যেতে হবে।দুই দিন ছুটি নিয়েছে দুই দিনের বেতন কাটা।কাব্য ভোরের ট্রেন ধরে কলকাতা চলে গেল।কাব্য চলে যাচ্ছে দেখে রিমার মন খারাপ হয়ে গেল।বাসায় আমের আচাড় বানিয়েছে।কাব্য আবার আমের আচাড় খুব পছন্দ করে।রিমা ছোট একটা বক্সে আমের আচাড় দিয়ে দিলো।
রিমার আচরণে অনেকটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
বয়সের সাথে সাথে অনেক বদল দেখা যায় মানুষের।রিমা সবে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে।তাই যৌবনের একটু পাগলামি শুরু হওয়ারি কথা।

কাব্য কলকাতায় এসেই অফিসে চলে গেল।কাজ সেরে বাসায় ফিরতে অনেক রাত হলো।প্রায় দশটা হবে হবে এমন।সারাদিনের ক্লান্তি আবার অফিস,কাব্য পুরোপুরিভাবে বিদ্ধস্থ্য। মদন কাকার দোকানো বন্ধ।
ক্লান্তির মধ্যে এক কাপ চা মানে অনেক কিছু।
বাড়িতে ঢুকে ঘরে ঢুকলো।ঢুকতেই রজনীগন্ধার মিষ্টি সুবাস।যেন কাচা ফুল কেউ ছিটিয়ে রেখেছে।ঘর কেমন চকচক করছে।
কাব্য মনে মনে ভাবছে-

-কি ব্যাপার ঘরে কোনো ধূলোর চিহ্ন নেই, এর উপরে রজনীগন্ধা।
চারুর ঘরে সেদিন রজনীগন্ধা দেখেছিলাম,সেখান থেকে নয় তো।কিন্তু এতো প্রখর ঘ্রাণ।


কাব্য আর কিছু না ভেবে গোসল করে নিলো।গোসল করে কিছু খাবার বানাবে।জার্নি করে অফিস করে নাড়িভুঁড়ি সব জ্বলে গেল।ঝুড়ি থেকে আলু নামাতে যাচ্ছে আর,কেউ একজন দরজা ধাক্কাচ্ছে।
দরজা খুলে দেখে চারু।
পাতলা সুতির সাদা শাড়ি,পেটের ভাজ দেখা যাচ্ছে,নাভিটা পুরোপুরি দেখা না গেলেও শাড়ির আড়াল থেকে উকি মারছিলো,ব্লাউজের গলাটা বুক বরাবর চলে এসেছে।তার মধ্যে ভেজা চুল,চোখের পাপড়ি এখনো ভেজা,কপালে পানির ফোটাও আছে।মনে হচ্ছে এই গোসল থেকে নেমেছে।

-কি ব্যাপার আপনি?
-হ্যা আমি।আপনার জন্য খাবার এনেছি।
-আমি এসেছি আপনি কিভাবে জানলেন।
-ছাদ থেকে দেখেছি।তাই প্রতিবেশী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।
-অহ।
-ঘরে আসতে বলবেন না?
-ঘরে!!অহ হ্যা আসুন।

চারু খাটের উপর বসে পরলো,কাব্য টেবিলে বসে খেয়ে নিলো।

-বেশ মজা হয়েছে।আপনি এতো ভালো রান্না কার থেকে শিখেছেন?
-জাদু করে শিখেছি।
-মানে?
-মানে নিজে নিজেই শিখেছি।
-অহ।

চারু তাকিয়ে মুচকি হাসছে আর পা দোলাচ্ছে।চারুর পা দোলানো যেন কাব্যের দৃষ্টিকে টানছিলো।কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু বলছেনা।

-আপনি কি কিছু বলবেন?
-না মানে কিছুনা।
-তাই!!
-হ্যা তাই।

কাব্য খাবার খেয়ে বক্স গুলো ধুয়ে নিয়ে এসেছে।
চারুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্স গুলো দিয়ে দিলো।
-আচ্ছা তাহলে আমি আসি!!
-হু আসুন।

চারু খাট থেকে উঠার সময় শাড়ির কুচিতে পা লেগে মাটিতে পরতে গিয়ে কাব্য পিছোন থেকে তাকে ধরে ফেললো।কাব্য, চারুর কোমড় ধরে রেখেছে ঠিকি কিন্তু হাত ছিলো নাভির উপরে।
কাব্য চারুকে ধরার সাথে সাথে, চারু পিছু ফিরে তাকালো।ভেজা চুল কাব্যের মুখে এসে পরলো।

চলবে…..