আমার চারু পর্ব-০৬

0
230

#আমার চারু
#পর্ব-৬
#ফারজানা নিলা(writer)

কি ব্যাপার কি দেখছেন?
-আপনার চোখ গুলো না অনেক সুন্দর।
-আর কি কি সুন্দর?
-জানিনা।

কিছু কিছু ছেলে আছে যারা মেয়েদের দিকে তাকাতে পারে না।খুব লজ্জা পায়।এদের মধ্যে কাব্যও একজন।কিন্তু আজ সে চারুর চোখে তাকিয়ে আছে।কেমন যেন গভীরতা দেখতে পাচ্ছে।এই বুঝি চোখের ভিতরেই ঢুকে যাবে।

-আপনি ঠিক আছেন?
-হ্যা। আচ্ছা আমি আসি এবার।আপনি নিশ্চয়ই অনেক ক্লান্ত।

চারু ঘরে চলে গেল।কাব্য শুয়ে পরলো।বেশ রাত হয়েছে কাল আবার অফিসে যেতে হবে।

সকালে উঠে মদন কাকার দোকানে গিয়ে বসলো
-কাকা কেমন আছো?
-তুমি কবে আইছো?
-আমি কাল এসেছি, একটু দেড়ি হলো। তখন তো তোমার দোকান বন্ধ আমাকে দেখবা কিভাবে।

-হ, আমিতো নয়টার সময় দোকান বন্ধ কইরা একখান ঘুম দেই।
-কাকা,তুমি থাকো তাইলে আমি অফিসে যাব।


কাব্য অফিসে চলে গেল বড় বাবুর কাছে।কালকের কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে।না হয় বলবে,ফাকি মারছে।
অফিসে কাজের খুব চাপ।কাব্য তার কাজ নিয়ে ভালোই সিরিয়াস।পনেরো দিনের মতো নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় ছিলো না।বাসাই এসে খেয়ে ঘুমাতো আবার অফিস।এই করে করে পনেরো দিন কাটিয়েছে।


আজ কাব্য মাইনে পাবে।যেদিন অফিসে মাইনে দেয় সেদিন ২টার সময় ছুটি।অবশ্য কিছুদিন পর পর নিয়ম বদলানো হয়।মাইনে পাবে তাই অনেক খুশী। আর এবারের পুরো মাইনে কাব্যর।জেঠু জেঠির জন্য উপহার দেওয়া হয়েছে।
কাব্য তাই এবার মদন কাকার জন্য কিছু উপহার কিনবে বলে ঠিক করেছে।

কাব্য তার মাইনে পেয়ে গিয়েছে।ফেরার পথে মদন কাকার জন্য একটা লুঙী আর একটা গেঞ্জি নিবো।মদন কাকা এসবই পড়েন।খুশী হবেন।

কাব্য দোকানে ঢুকলো অফিস শেষে,এই দোকানে সব পাওয়া যায়।ছেলেদের মেয়েদের সবার পোশাকই আছে।শহরের দোকান গুলোর ধরন আলাদা।সস্তার জিনিসও খুব দামে বিক্রি করে।
কিন্তু মদন কাকার জন্য ভালো থেকে নিতে হবে।
গেঞ্জি কিনতে গিয়ে দেখে একটি শাড়ি খুব সুন্দর।সাদার উপর ছোট ছোট সুতার কাজ করা ফুল।কাব্য শাড়ি দেখে চারুর কথা চিন্তা করলো,মনে মনে ভাবছে,

বেশ অনেকদিন তো পরিচয় একটা উপহার তো দেওয়াই যায়।
-ভাই এই শাড়ির দাম কত?
-এই শাড়ি অনেক দামি,৩০০ টাকা।
-কি!৩০০”!!আচ্ছা থাক দিয়ে দিন।

কাব্য চারুর জন্য খুব দামি একটা শাড়ি কিনে নিয়ে গেল।প্রথমে মদন কাকাকে দেবে তারপর রাতে চারুকে দিবে।কাব্য আজ খুব খুশী।


-কাকা কি করছো?একটা করা করে চা দাও দেখি।
-আমিতো বইয়া আছি।কিন্তু পেট কি খালি নাকি ভরা?
-কাকা পুরা খালি।
-খালি পেটে চা খাইলে সমস্যা হইবো।
-কাকা আজ আমি খুশি, তাই খালি পেটে চা খাওয়া যায়।

অবশ্য মানুষ যখন খুব খুশি থাকে তখন আনন্দে অনেক কিছুই করে থাকে।তাই কাব্য আজ খালি পেটে চা খাবে।

-কাকা তোমার জন্য কি এনেছি দেখো
-কি?
-ধরো খুলে দেখো।
-ওমা এডি আমার?
-হ্যা কাকা তোমার।পছন্দ হয়েছে কিনা বলো।
-কি কও, পছন্দ মানে খুব পছন্দ।যাও রাইতের চা টা ফিরি খাওয়ামু।
-সত্যি?ঠিক আছে রাতের চা ফ্রি।
-হ একদম ফিরি।
-ঠিকাছে কাকা রাতে দেখা হচ্ছে,বাসায় যাই রান্না করতে হবে।
-এই হুনো এইডা কি ফ্যাকেট ফালাই যাইতাছো।
-অহ,এটা চারুর শাড়ি।
-চারু?কে চারু,আগে কও নাই।
-চারুকে চিনোনা।আরে আমার পাশের বাড়ি থাকে উপর তলায় ছাদের সাথে লাগানো।
-পাশের বাড়ির ছাদ।কি কও এসব তুমি।আমি এইখানে আইজকা ১৯ বছর আছি।এই বাসায় এক সময় এক পরিবার থাকতো।কিন্তু কি জানি হইছে আর জানিনা ওরা কই গেলো।
-কি বলছো কাকা,চারু তো আমার বাসায় কয়েকবার এসেছে।তুমি দেখোনি ছাদে কখনো।
-কি কও তুমি এইসব,এইখানে কেউ নাই।তোমার এই বাড়িত তুমি থাকো নিচে একটা ফরিবার আর পাশের বাড়ি আইজকা বহুত দিন খালি।মজা করতাছো।
-আরেহ কাকা হ্যা। ঠিকাছে আসি আমি।


কাব্য নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।কিন্তু চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো কি ছিলো তাহলে।
চারুর চোখের গভীরতা কাব্যকে আকড়ে ধরেছিলো।কেন জানি মদন কাকার কথা গুলো অবিশ্বাস করতে চাচ্ছে কাব্য।

কাব্য ঘরে গিয়ে শাড়িটা টেবিলে রেখে শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।কাব্য বলছে…

-চারু তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?তুমি কি আছো? চারু তোমার জন্য শাড়ি এনেছি কিন্তু অনেক প্রশ্ন মাথায় সমাধান কিভাবে করব।

হঠাৎ একটা ঠান্ডা বাতাস আসলো সাথে রজনীগন্ধার মিষ্টি কাচা ঘ্রাণ। কাব্য কোথাও না কোথাও মদন কাকার কথা গুলো হয়তো বিশ্বাস করেছে কিন্তু মানতে চাইছে না।

পৃথিবীতে মানুষের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাও বিশ্বাস করতে চায় না কারণ একটাই মানুষ হয়তো আপন হাড়াতে ভয় পায়।কাব্য ও হয়তো তাই।

মদন কাকার কথা গুলো হয়তো সত্যি।কাব্য একটি আলু সিদ্ধ বসালো,সাথে ডাল।আলুর ভর্তা আর সাথে ডাল যেন বিশ্বের সব খাবার কে হার মানাবে।কাব্যর মনে একটাই কথা, যেভাবেই হোক মদন কাকার কথাটি মিথ্যা প্রমাণ হওয়া চাই।
কিন্তু মানুষ যেটা আশা করে সেটা হয় না।কিন্তু কেন হয় না সেটার কোনো যুক্তি জানা নেই।


কাব্য খেয়ে দেয়ে ছাদে চেয়ার নিয়ে বসে আছে।হাতে সিগারেট। মশার কামড় যেন গায়ে লাগছেনা।হঠাৎ দমকা হাওয়া শুরু হয়েছে।মনে হচ্ছে ঘর বাড়ি সব চুরমার করে তুফান হবে।বেশ কিছুক্ষণ পর কাব্যের নাকে ঘ্রাণ এলো রজনীগন্ধার মিষ্টি কাচা ঘ্রাণ। আচমকা নূপুর এর শব্দ।কাব্য স্থির হয়ে বসে আছে আর সিগারেটের ধোয়া ছাড়ছে।কাব্যের কাছে আজ সব প্রশ্নের উত্তর চারুকে দিতে হবে।
চারুকে কখনো নূপুর পড়া আগে দেখা যায় নি।এবারই প্রথম।
চারু এগিয়ে এলো।চারুর ছাদে সব সময় একটি চেয়ার পাতা থাকে।আরাম দায়ক চেয়ার বলে এগুলোকে।দোল খাওয়া যায়।
চারু এসে চেয়ারে বসে গেল।সাদা শাড়ি, খোলা চুল।বাতাসে চুল গুলো উড়ছে।বেশ লম্বা হালকা লালচে রং চুলের।

চারু কোনো কথা বলছেনা।কাব্য সিগারেট শেষ করে ছাদের এপাশে আসলো।চারুকে ডাক দিলো

-চারু!!

চারু কোনো উত্তর দিচ্ছেনা।কাব্য আবারো ডাক দিলো।এবার চারু দোল খাওয়া বন্ধ করে স্থির হয়ে বসেছে।

-কে তুমি?আমি সবটা জানতে চাই।

চারু উঠে দাঁড়ালো। কাব্যের সামনে এসে দাড়াল,অনেক টা কাছে।দমকা হাওয়াতে চারুর চুল গুলো মনে হচ্ছিলো ঘন কালো মেঘ।
কাব্য,চারুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করে চারুর চোখের রং বদলে গেল।চোখে আগুন জ্বলছে,ঠিক যেন চোখের মধ্যে আগুনের কুণ্ডলী পাক খাচ্ছিলো।কিন্তু কাব্যের চোখে কোনো ভয় নেই।

-কাব্য!! আপনি কি আমায় ভয় পাচ্ছেন না?
-না।আমি আপনাকে ভয় পাবো,তেমন কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা আমি।
-কেন পাচ্ছেন না?আমাকে কি মনে হচ্ছে আপনার,মানুষ?
-সেই উত্তর আপনি দিবেন।
-উত্তর পেয়ে কি করবেন, নিশ্চয়ই আমাকে তাড়ানোর চেষ্টা।
-সেটা দেখা যাবে পরে।আগে সব আমি জানতে চাই।
-জেনে কি করবেন?
-আপনার সব কিছু আমি জানতে চাই।
-আমি একজন মহিলা জ্বীন।এখানে আমি আছি ৩৪ বছর।এই বাসায় আগে একটি পরিবার থাকতো।তখনও আমি ছিলাম এখানে।ছাদের ঘরটায় কেউ থাকতো না।এই পরিবার আসার আগে থেকেই আমি এখানে আছি।
এখানে যে পরিবারটি থাকতো।তারা ভালো ছিলো কিন্তু সেই মেয়েটির স্বামী ছিলো খারাপ।প্রতিদিন বাসায় এসে বউ কে মারতো আর ছোট ছেলেটি বসে বসে দেখতো।
মেয়েটির নাম আয়েশা আর ছেলেটির নাম রাব্বি।তাদের দুই বছরের মাথায় আলিফ আসলো।তাদের ছেলে।আয়েশা সেলাই কাজ করে কিছু পয়সা যোগার করতো।রাব্বি কিছুই করতো না।বাসায় এসে প্রতিদিন রাতে আয়েশাকে খুব মারধর করতো।আয়েশা এবং রাব্বি প্রেম করে বিয়ে করেছিলো।পরিবার তাদের মেনে নেই নি।আয়েশা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় কিছু গোহনা টাকা পয়সা নিয়ে বের হয়েছিলো।সেগুলো শেষ।অভাবে আলিফকে মানুষ করছিলো কিন্তু আয়েশা, রাব্বিকে খুবই ভালোবাসতো।রাব্বি বেশ কিছুদিন ধরেই নতুন জামা পড়ে বাসায় আসা শুরু করলো।যখনই প্রশ্ন করতো রাব্বি তাকে সামনে যা পেতো তা দিয়েই মারতো।আলিফ পালিয়ে গিয়ে টেবিলের নিচে লুকিয়ে পরতো।আমি সব দেখতাম বসে বসে।জানেন কাব্য, আয়েশা, রাব্বিকে খুব ভালোবাসতো।রাব্বি এক মেয়ের প্রেমে পরে আয়েশাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলো।তাই সকালে বাসা থেকে বের হয়েছে আর আমি তাকে মেরে ফেলেছি।
-কি!?মেরে ফেলেছো।
-হ্যা,কোনো ভুল করেছি কি?
-আয়েশা তারপর একটা চাকরী পায়।যে চাকরীর জন্য কোনো পরীক্ষা সে দেয় নি।আয়েশা এখনো তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে।তার ছেলেটা বড় হয়েছে।
-চারু!!
-হ্যা বলুন।
-আপনি কোনো ভুল করেন নি।আমি আপনাকে বিশ্বাস করি।
-ভয় করেন না?
-না,মোটেও ভয় হচ্ছে না।
-আমার এই অগ্নি চোখ দেখেও না?
-না, খুব সুন্দর লাগছে।আপনার অগ্নি শিখা চোখ ও আমায় গভীরতা দেখায়।আচ্ছা, আপনি এখানে থাকেন কেন?মানে এখানে কেন এলেন?

-যদি বলি আপনার জন্য

চারু বেশ শব্দ করে হাসছে,কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে।

-আমার জন্য মানে?
-তাহলে শুনুন।

চলবে……

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হলো.ধন্যবাদ)