আমার চারু পর্ব-০৭

0
266

#আমার চারু
#পর্ব-৭
#ফারজানা নিলা( writer)

আমার অনেক বড় পরিবার।আমার ১২ জন বোন আছে, তাদের মধ্যে আমি ৭ম।গোবিন্দপুরের বিশাল এক পুকুর আছে।যখন পূর্নিমা রাত হতো, সেদিন আমরা সব বোনেরা মিলে সেখানে গোসল করতে যেতাম।
আমাদেরও বাবা মা আছে,আমরা মানুষ থেকে অনেকটাই আলাদা কিন্তু আপনাদের মতো আমাদের ও সব কিছু আছে।
আমরা মানুষ থেকে দূরে থাকি।আপনার বয়সের তুলনায় আমি হয়তো কিছুটা বড়।সেদিন আমরা পুকুরের পাড়ে বসে ছিলাম।সেই গ্রামের এক লোক মাছ ধরছিলো পাড়ের মধ্যে।
সে আমাদের না দেখলেও আমরা দেখছিলাম তাকে।
গোসলের জন্য যে কাপড় রাখা হয়েছিলো,সেই কাপড় এ সেই জেলে পা দিয়ে দিয়েছে।যার ফলে আমার পরিবার বলেছে,তোর গায়ে মনুষ্যর ছোঁয়া লেগেছে, তুই আর আমাদের সাথে থাকতে পারবিনা।
আমার কিছু নিয়ম থাকে,যা আমাদের মানতে হয়।সেদিন আমি সেই জেলের সাথে তার মাছের সাথে তার ঘরে গিয়ে উঠি।
সেই জেলের কারণে আমার পরিবার আমাকে আলাদা করেছে।প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিলো,
বেশ কিছুদিন ধরে তাকে আমি অনেক জ্বালাতন করেছি।
কিন্তু পরে ভাবলাম,সেতো ইচ্ছে করে ভুল করেনি।
তারপর আমি একটি খালি ঘরে আশ্রয় নেই।

ভর দুপুরে আপনি মাঠ দিয়ে হেটে এসে গাছের নিচে বসেছিলেন।আমি সেই গাছেই ছিলাম।আপনার কিছুক্ষণ এর জন্য চোখ বন্ধ করে রাখা খুব কোমল ছিলো।সেদিন থেকেই আমি আপনার কাছে আছি।কিন্তু কখনো বুঝতে দেইনি।
-তাহলে আপনি যদি গোবিন্দপুরে থাকতেন তাহলে এখানে?
-এখানে আসার ও কিছু কারণ ছিলো, যা আমাকে বাধ্য করেছে সেই জায়গা ছাড়তে।
আমাদের জাতের মধ্যে অনেক ধরনের জাত থাকে।কেউ ভালো, কেউ খারাপ,কেউ খুব ভয়ংকর।এমন একটি জ্বীনের সাথে আমার লড়াই হয়েছিলো।তখন আমার বয়স ১৬, খুব একটা শক্তিশালী ছিলাম না।যার দরুন আমাকে সেই জায়গা ছাড়তে হয়েছে।
ছেড়ে আসার পর আয়েশার সাথে দেখা।
তারপর এখানেই।তারপর একদিন আপনার দেখা পেলাম।
সেদিনের পর থেকে আমি আপনার সাথে আছি।

কি ব্যাপার,চুপ করে আছেন?ভয় পাচ্ছেন?

-ঠিক ভয় না,কিন্তু ব্যাপারটা খুবই মারাত্মক।
-তাই, জানেন আপনার আশে পাশে এমন অনেক আছে।আমিও চাইলে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারি।

কাব্য তাকিয়ে আছে কিছু বলছেনা।হয়তো ভাবছে।মানুষ কিন্তু সব ব্যাপারে ভয় পায় না।আর যে ব্যাপারে ভয় পায় না, সেই ব্যাপার গুলো গভীর ভাবে চিন্তা করে।কেন হলো, কিভাবে হলো।তা সব জানতে চায়।

-আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে আপনি ঘরে যান,কাল আবার অফিস আছে আপনার।
-হ্যা যাচ্ছি,চারু আমি আপনার জন্য একটা উপহার এনেছি।একটু দাঁড়ান।

কাব্য গিয়ে শাড়ি নিয়ে আসলো।
-এই ধরুন
-কি এটায়।

চারু এমন একটা ভান করছে যেন সে কিছুই জানে না।কিন্তু সে সব কিছুই জানে।

-শাড়ি।আমার জন্য।।
-হ্যা।পছন্দ হয়েছে?
-হ্যা অনেক পছন্দ।
-তাহলে আমি আসি।
-হু।

কাব্য ঘরে চলে যাচ্ছিলো, চারু আবার পিছু ডাকলো

-কাব্য”!
-জ্বি
-বলছিলাম…..
আপনি আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না তো।

চারুর এই কথাটা কাব্যের কাছে মনে হলো যেন, বিশাল একটা দায়িত্ব।কাব্য চুপ করে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে।চারুর চোখে এখন কেমন ভয় কাজ করছে।

কাব্য মুচকি হেসে বললো

-আমার চারু আমার।

কাব্য ঘরে চলে গেল,চারু যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেও ফেলতে পারছেনা।কাব্য এখন হয়তো বলছে, ভয় পাবে না কিন্তু চারু যে কাব্যের মতো স্বাভাবিক কেউ নয়।সেটাই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখে টেবিলে কাচা রজনীগন্ধা ফুল।চেনা ঘ্রাণ। কাব্য আজ অবাক না হয়ে মুচকি হাসলো।মনে হচ্ছে, খুশি হয়েছে।
রেডি হয়ে অফিসের জন্য বের হলো।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কাব্য,

-কি ব্যাপার গাড়ি পাননি?

কাব্য ফিরে দেখে কেউ নেই,কিন্তু সে বুঝতে পেরেছে চারু পাশে।

-হ্যা গাড়িতো পাইনি।তাহলে চলুন আজ হেটেই যাওয়া যাক।
-হ্যা চলুন তাহলে।

আজ কাব্য আর চারু হাটছে হাটছে,আচমকা চারু এখন সামনে চলে এলো।

-কি ব্যাপার,এতোক্ষন লুকিয়ে ছিলেন কেন।
-উম,কারণ সবাই ভাবছিলো আপনি একা একা কথা বলছেন
আবার পাগল ভেবে ধরে নিয়ে গেলে তো সমস্যা।তাই না।
-অহ তাই।নিয়ে গেলে নিয়ে যাবে।তাতে আপনার কি?
-আমার?আমার কিছু না।তবে ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে ভাল লাগে না।এটাই হলো কথা।

-অহ তাই।আরে কখন চলে এলাম।
-আচ্ছা তাহলে আমি আসি।আপনি অফিস করেন।আবার বড় বাবুরা দেখলে আপনাকে গারদে ভরে দিবে।


চারু আজ অনেক কিছু রান্না করেছে।অবশ্য তাদের কাছে এটা কিছুই না।জ্বীনদের কাছে কিছু আলাদা ক্ষমতা থাকে।সেগুলো চারু মাঝে মধ্যেই ব্যবহার করে।লোকে বলে জ্বীনেরা মিষ্টি অনেক বেশি পছন্দ করে।চারু বেশ অনেক মিষ্টি নিয়ে এসেছে বাসায়।
চারু আজ পরিকল্পনা করছে কাব্যকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে।
আর রাতের বেলা পৃথিবীর আলাদা রুপ ফুটে উঠে যা হয়তো সাধারণ মানুষরা দেখতে পায় না বা দেখার সুযোগ হয়ে উঠেনা।


রাত ৮টা হয়ে গেল।মদন কাকা এখনো দোকানে।দোকানে দুই জন রিকশাওয়ালা চা খাচ্ছে আর মদন কাকা বারবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।হয়তো কাব্যের জন্য অপেক্ষা করছে।

কাব্য ঠিক ৮.৩০ এর দিকে এলো

-কাব্য,তুমি আইছো,শোনো।তুমি অইদিন কি জানি কইছিলা না।
-কই কাকা, কি বলেছি।
-আইজা মাগরিবের আযান দিছে আর তোমার ঘরের অইদিক থিকা কেমন খানার গন্ধ আইতাছিলো।
কে রান্না করে,কেমন বাসনের আওয়াজ আইতাছিলো।আমি বুঝলাম না।
-আরে কাকা, এদিক সেদিক থেকে হয়তো খাবারের গন্ধ আসে।
-কি জানি বাবা,দেইখো।
-আরে কাকা,আপনার সাথে সেদিন আমি মজা করেছি।কাকা আমি ঘরে যাই।


কাব্য ঘরের চাবি খুলতেই দেখে ঘর অনেক গুছানো,অনেক সুন্দর ঘ্রাণ আসছে চারদিক থেকে।

-আপনি এসেছেন?
-আপনি আমার ঘরে?
-হ্যা আমি,আমার তো কারো অনুমতি লাগে না।
-তাই নাকি।
-একদম তাই।আচ্ছা আপনি হাত মুখ ধুয়ে নিন।

কাব্য হাত মুখ ধুয়ে এসে দেখে প্রায় অনেক খাবার।

-এ কি!!এতো খাবার।কোত্থেকে?

-আমি বানিয়েছি।

কাব্যর মাথায় আসলো,
মদন কাকা তাহলে এসবের কথাই বলেছেন।

-চারু আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো,
-বলুন
-আপনি কি বিনা শব্দে কাজ করতে পারবেন?
-হ্যা তা পারা যায়,কিন্তু কেন বলুন তো?
-আমি বাসায় একা থাকি তাই।আমি চলে গেলে লোকজন শব্দ শুনলে অন্য কিছু ভাববে।
-আচ্ছা ঠিক আছে,এবার খেয়ে বলুন দেখি কেমন হলো।

সাধারণ মানুষের রান্না আর একটি জ্বীনের রান্না এক হতে পারেনা।কেমন যেন মনের মধ্যে প্রশ্ন আনবে।তবে কাব্য বেশ মজা করেই খাবার খেয়ে নিলো।অবশ্য কাব্য এর আগেও চারুর হাতের রান্না খেয়েছে।তখন হয়তো জানতো না,যে চারু মানুষে না।

-কেমন হয়েছে বলুন?

-হ্যা অনেক মজা।

-তাই,কাব্য আপনি আমাকে কখনো ভয় পাবেন না।আমি আপনার কোনো ক্ষতি হতে দিব না।
-কেন?
-কারণ আপনি আমার পছন্দের মানুষ। আপনি চাইলে আমি আপনাকে আমার দুনিয়ায় নিয়ে যাব।

-আপনার দুনিয়া?কেমন সেটা?

-অনেক সুন্দর।সেখানে কোনো কিছুর অভাব নেই।

আজ আপনাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।যাবেন আপনি?
-কোথায়?
-সেটা না হয় গেলে দেখা যাবে।
-বলুন না
-কেন আপনি কি আমায় বিশ্বাস করেন না?
-সেটা না,আচ্ছা ঠিক আছে যাব।কখন যেতে হবে?গাড়ি আনিয়ে রাখতে হবে।
-আমি থাকতে আবার গাড়ি?কোনো কিছু লাগবে না।রাত ঠিক ১টার দিকে আমরা যাব।


কাব্য খাবার খেয়ে সিগারেট নিয়ে বসলো। জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছে।চারু খাবার খাওয়ার পর নিজের ঘরে চলে গেল।
ঠান্ডা বাতাসের সাথে সারদের সুর।বাতাস আর সুর মিলে যেন কাব্যকে এখন উড়িয়ে নিবে।কাব্য খুব অনুভব করছে সুর।সুরের মধ্যে অনেক কথা।সেই লুকানো কথা কাব্য হয়তো হালকা হালকা বুঝতে পারে।
কাব্য নিজ মনে কথা বলছে-

চারুকে আমি ভয় পাইনা কেন।ওর সাথে আমি এতো বন্ধু সুলভ আচরণ করি কেন।আমি কি ওকে পছন্দ করি?না না,ও তো জ্বীন এ হতে পারে না।কিন্তু কেমন যেন দূরে থাকতে পারিনা।

এইসব ভাবতে ভাবতে একটা বেজে গেল।নূপুর পায়ে দিয়ে হেটে আসছে,অসম্ভব সুন্দর ঘ্রাণ নাকে ভেসে আসছে।
কাব্য ফিরে তাকিয়ে দেখে,
কাব্যের দেওয়া শাড়িটা চারু পড়েছে।খোলা চুল,কাজল চোখ, কপালে কালো টিপ ঠোঁটে হালকা লাল রং।উফ এতো কাছে টানছে কেন আমাকে চারু।
শাড়ির পাতলা আবরণের উপর তার ভেসে উঠা শরীর ও আজ আমার চোখে লাগছে।আজ নাভিটা পুরো দেখা যাচ্ছে,কিন্তু বাতাসে শাড়িটা হালকা উড়ছে।

-কাব্য,আমায় কেমন লাগছে?
-হ্যা!! হ্যা ভাল।
-চলুন তাহলে।
-আচ্ছা চলুন।
-হেটে যাব?
-ছাদে চলুন।

কাব্য, চারু ছাদে উঠে গেল,আজ আকাশে অনেক তারা। খুব সুন্দর লাগছে আকাশ আর তার সাথে চারু।

-এখান থেকে কই যাবো?
-যাব।আমার কাধে উঠুন.
-কাধে?মানে
-আপনি আমাকে কাধে নিবেন কেন।আর আপনি আমাকে তুলতে পারবেন না।আমি আপনার চেয়ে অনেক ভারী।
-যেটা বলেছি,সেটাই করুন।

চারু কাব্যকে কাধে নিয়ে নিলো।

চলবে…….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
জানাবেন কেমন হলো।পাশে থাকবেন।)