আমার প্রিয়দর্শিনী তুমি পর্ব-০৯

0
253

#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(০৯)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

আন্টি তুমি জানো না,ও এক নাম্বারের কিপ্টে।সে জন্য এখন আমাকে পাগল সাজাতে চাইতাছে(চাচ্ছে)

ইসরাক অবাক হয়ে বললো,
-“আমি কিপ্টেমির করেছি কি?

তাকিয়া ইসরাক কে জবাব না দিয়ে,আলিয়া কে কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বললো,
-“আন্টি জানো?ও আমাকে শপিং করাতে নিয়ে যায় না।ইনফেক্ট আমার কোন কথাই শুনতে চায় না। তুমিই বলো,যদি ভালোবাসতো তাহলে আমার কথা শুনতো না বলো?

ইসরাক কিছু একটা ভেবে রুম ছাড়লো। আলিয়া তাই কিছু বলার সুযোগ পেলো না। তাকিয়া সু্যোগ পেয়ে বলতে লাগলো,
-“আন্টি দেখলে তো এখন কিভাবে পালালো? সেই জন্যই তো তখন বলেছি ভালোবাসা না ছাই।
আলিয়া বললো,
-“শোন ভালো ভালো রান্না করে খাওয়াবি,যত্ন নিবি।স্বামীর সেবা করা স্ত্রীর জন্য পরম দায়িত্ব কারন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “নারীর জন্যে জিহাদ হলো তার স্বামীর সেবা-যত্ন করা।”
স্বামী সেবাকে আল্লাহর রাসূল জিহাদরূপে আখ্যায়িত করেছেন।
তাহলে দেখ, স্বামীর অগ্রাধিকার কতোটা?
আর তাছাড়া ইসরাক খুব ভালো ছেলে,তোকে অনেক ভালোবাসে। হয়তো কোন কারণে ব্যাস্ত সময় পার করছে, সময় পেলে তোকে ঠিক শপিং মলে নিয়ে যাবে।

______

দুপুরে খাবার খেতে বসে সবাই।
অর্পি বললো,
-“ভাবী ভাইয়া কোথায়? ভাইয়া খাবেন না?

এই মেয়েটা যেন একটু বেশি বেশিই কথা বলে,তাকিয়া’র মনে হয়। খুব বিরক্তিকর একটা মেয়ে তাকিয়া’র কাছে অর্পি। শুধু তাই নয় মাঝে মাঝে তো সতিন ভাবে তাকিয়া! এই মুহূর্তে যেমন মনে হচ্ছে।

খুব বিরক্ত নিয়ে তাকিয়া বললো,
-“আমি জানি না তোমার ভাইয়াআআ কোথায়। সেই এগারোটার নাগাদ বেড়িয়েছে।

তাকিয়া কেন এরকম খামখেয়ালি জবাব দিলো অর্পি বুঝলো। কিন্তু আলিয়া বুঝে নিল, শপিংয়ে যাওয়া নিয়ে হয়তো তাকিয়া রেগে আছে,তাই এভাবে বললো।

খাওয়া শেষ করে তাকিয়া,রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ বটুর সাথে চ্যাট করে শুয়ে পড়ল। দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমাতেই হয় তাকিয়া’র না হয় খুব মাথাব্যথা করে। চোখ বন্ধ করতেই আলিয়া হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে,এসে বললেন,
-“মাহি তারাতাড়ি ড্রয়িং রুমে আয়!
আলিয়ার এরকম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসাতে তাকিয়া জিজ্ঞাসা করলো কোন বিপদ আপদ হলো নাকি? আলিয়া বললেন,
–তুই আয়, আসলেই বুঝতে পারবি।

আলিয়ার সাথে তাকিয়া ড্রয়িং রুমে গেল।যেতেই নজর গেল ডাইনিং টেবিলে বসে আয়েশ করে ইসরাক খাবার খাচ্ছে। তাকিয়া বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“আন্টি আমাকে ডেকে আনলে কেন?
আলিয়া হাত ধরে সোফার কাছে নিয়ে গেল তাকিয়া’কে। সোফার উপরে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ রাখা।
আলিয়া বললেন,
-“দেখ ইসরাক তোর জন্য কত্ত শপিং করে নিয়ে এসেছে! আর তুই কিনা ছেলে টাকে কতো কি বললি।

তাকিয়া নির্বাক,বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়!কি বলবে বুঝতে পারছে না।স্বপ্নেও ভাবেনি ইসরাক সত্যি সত্যি ই শপিং করে নিয়ে আসবে।সে তো আলিয়া কে কিছু একটা বলে শান্তনা দিতে কথা গুলো বলেছিল। ইসরাকের দিকে তাকিয়ে দারিয়ে র‌ইলো,ইসরাক খাবার খেতে ব্যাস্ত। পাশে তাকানোর সময় টুকু ও নেই মনে হচ্ছে।

আলিয়া তাড়া দিয়ে বললে,
-“কিরে দাঁড়িয়ে রইলি কেন? দেখ খুলে ইসরাক কি এনেছে।
-“হুম।

তাকিয়া সোফায় বসে কাঁপা কাঁপা হাতে একটা ব্যাগ খুলে দেখে,একটা জর্জেটের সবুজ রঙের থ্রিপিস। সুতোর কাজ সাথে স্টন বসানো। খুব সুন্দর থ্রিপিস টা। তাকিয়া অবাক হয়ে ইসরাকের পানে তাকালো। তারপর আবার অন্যান্য ব্যাগ খুলতে মনোযোগ দিল। দ্বিতীয় ব্যাগে সবুজ স্লিপার! এবার ও অবাক না হয়ে পারলো না। তারপর ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে সবগুলো ব্যাগ খুলে ফেলল।আরো দুটো সবুজ রঙের সুতির থ্রিপিস এবং একটা সবুজ রঙের কাতান শাড়ি। সাথে কসমেটিকস রয়েছে_সবুজ লিপস্টিক! মানে এলোভেরার লিপস্টিক দেখতে সবুজ কিন্তু ঠোঁটে দেওয়ার পর পিঙ্ক কালারের হয়। তারপর সবুজ হেয়ার ব্যান্ড, সবুজ হ্যান্ড ব্যাগ, সবুজ ব্রেস লাইট, সবুজ ইয়ারিং,গলার চেইনের সাথে সবুজ লকেট।এক কথায় বলতে গেলে যা কিছু আছে সব সবুজ রঙের!

তাকিয়া অবাক হয়ে দেখেই চলেছে,সব কিছু। আলিয়া বললেন,
-“দেখ পাগল ছেলে আমাদের জন্য ও নিয়ে এসেছে।কি দরকার ছিল বল তো শুধু শুধু এতো গুলো টাকা খরচ করার।

তাকিয়া বললো,
-“একদম ঠিক কাজ করেছে। তোমাদের জন্য আনবে না কেন? তোমরা ও তো আমাদের আপনজন।ক‌ই দেখি কি এনেছে? আলিয়া ব্যাগ দুটো এগিয়ে দিল তাকিয়া’র দিকে।
আলিয়া সবসময় থ্রিপিস পরে,তাই আলিয়ার জন্য থ্রিপিস। অর্পির জন্য জর্জেট পিংক কালারের শাড়ি এনেছে।আর অর্পির ছোট বোন অনিতার জন্য খুব সুন্দর টপস।

তাকিয়া’র রাগ হলো অর্পির জন্য শাড়ি আনাতে। মনে মনে বললো,শাড়ি আনার কি দরকার ছিল?দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া একটা মেয়ে তার জন্য শাড়ি আনতে হবে? থ্রিপিস আনলেই তো হতো।
রাগ টা আর বাহিরে প্রকাশ করলো না।
হেসে বললো,
-“আন্টি তোমার পছন্দ হয়েছে তো?
-“আলিয়া বলল খুব পছন্দ হয়েছে।

______

-“আমি কিন্তু মন থেকে কথা গুলো ক‌ইনাই। শুধু শুধু এতো গুলো টাকা খরচ করার কোন মানে হয়? আমি তো আন্টি কে কিছু একটা ক‌ইয়া শান্তনা দিতে ঐসব ক‌ইছিলাম। আপনি আমার কথাটা এতোটা গুরুত্ব না দিলেও হতো।

তাকিয়া কেমন একটা বিব্রতিকর পরিস্থিতিতে পরে গেছে।তাই উপরিউক্ত কথা গুলো ইসরাক কে বলল। তাও যেন শান্তি পাচ্ছে না। যেখানে তার কাছে সম্পর্কটার কোন মূল্য নেই, কিছু শর্তের উপর দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে সে ইসরাকের থেকে কিছু আশা করেনা,করলেও যেন মারাত্মক অপরাধ হবে। যেখানে শর্ত‌ই আছে,কেউ কারো অনুমতি ব্যতীত কাউকে স্পর্ষ করবে না, কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কেউ ইন্টারফেয়ার করবে না, যার যখন প্রয়োজন হয় ডিভোর্স নিতে পারবে।
শেষের শর্তটা সুমাইয়া আর ফাহাদ মিলে লিখেছি যদি দুজন দুজনকে কখনো ভালোবাসে, তাহলে সারা জীবনের জন্য একি বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকবে।

ইসরাক বললো,
-“আমি জানি আপনি যথেষ্ট হাদীসের জ্ঞান রাখেন। এটুকু তো মানেন যে আমাদের বিয়েটা যেভাবেই হোক হয়েছে। এবং ইসলামের দৃষ্টিকোণ মোতাবেক মত‌ই হয়েছে সেটা তো আপনি অস্বিকার করতে পারেন না তাই না?সেই দিক থেকে আপনি আমার কাছে কিছু চাইতেই পারেন সেই অধিকার আপনার আছে। এবং আমার ও দেওয়া কর্তব্য।তাই প্লিজ আপনি এই নিয়ে নিজেকে দোষারোপ করবেন না। আর এগুলো আপনি ব্যবহার করলে আমি খুব খুশি হব, বাকিটা আপনার ইচ্ছা।

তাকিয়া প্রতিউত্তরে কিছু বললো না, শপিং ব্যাগ গুলো কাবার্ডে রেখে শুয়ে পড়লো।ইসরাক দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফায় গিয়ে শুয়ে রইলো।

_______

তাকিয়া ঘুম থেকে উঠে দেখে, অনেক সময় পার হয়ে গেছে আসরের আযান হয়েছে।তাই ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ে নিল।ইসরাক এই সময় অর্পি কে পড়ায়। তাকিয়া’র ইচ্ছে হলো একবার গিয়ে দেখতে ইসরাক কিভাবে পড়ায়।যেই ভাবা সেই কাজ। সিঁড়ি ভেঙ্গে দুতলায় এগিয়ে যায় তাকিয়া।
অর্পির রুমের দরজার কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় তাকিয়া,অর্পি এর মধ্যেই তার জন্য আনা শাড়ি পরে নিয়েছে।কি দূরন্ত মেয়ে!পুচকি একটা মেয়ে।এর‌ই মধ্যে শাড়ি পরে সেজেগুজে বসে আছে।অথচ তাকিয়া দ্বিতীয় বার তার জন্য আনা জিনিস পত্র গুলো ছুঁয়ে ও দেখলো না।

কেন যে এতো অর্পি কে এতো বিরক্ত লাগে তাকিয়া’র সে নিজেও ঠাওর করতে পারে না। আচ্ছা ইসরাকের সাথে অর্পির অন্য সম্পর্ক আছে বলেই কি বিরক্ত লাগে অর্পি কে? হবে হয়তো।

-“আপু ভিতরে আসো?

হঠাৎ অর্পির ডাক শুনে চমকে উঠে তাকিয়া।সে যে এখানেই দাঁড়িয়ে ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়ে, সেই দিকে খেয়াল নেই তার। এখন কেমন একটা বিব্রতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হলো।
তাকিয়া আমতা আমতা করে বললো,
-“দেখতে এলাম তোমার ভাইয়া কেমন পড়ায়।
-“আপু তুমিও নাকি কমার্সের স্টুডেন্ট?
-“হুম।কে ক‌ইছে তোমারে?
-“ভাইয়া বলছে।
-“অহহ আচ্ছা।
আচ্ছা অর্পি তুমি তো আমায় ভাবী বলে ডাকতে এখন আবার আপু বলে ডাকছো যে?
অর্পি হেসে বললো,
-“ভাইয়া বলছে তাই।

তাকিয়া ইসরাকের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“অহহ আচ্ছা।

ইসরাক এক ধ্যানে ব‌ইয়ে মগ্ন হয়ে আছে।যেন তাদের দুজনের কথা কর্ণধারে পৌঁছাচ্ছে না। তাকিয়া আবার বললো,
-“কি অংক করছো এখন?
-“তিন ঘরা নগদান ব‌ই করছি আপু।
-“ওহহ আচ্ছা।করো আমি যাই।
-“বসো না আপু?
-“নাহ,যাই।

তাকিয়ার এবার নিশ্চিত মনে হচ্ছে যে ইসরাক অর্পি’কে পছন্দ করে। কোথাও যেন তার একটা চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে। কিন্তু তার তো এসবে যায় আসার কথা নয়,তবে?

আনমনে হাঁটতে হাঁটতে ছাদে গেল,
মাঝে মাঝে বিপদে আকাশের দিকে মাথা তোলা। আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের কষ্টগুলো আল্লাহকে বলা।প্রিয় নবীর সুন্নত।
মুসলিম- ২৫৩১।

তাকিয়া বুঝতে পারছে না তার মন কেন এতো অশান্ত! আকাশের পানে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা কে কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। আদৌও সে কি চায় সে নিজেই তো জানে না।তাই তাকিয়েই রইলো, এতেও যেন একটা শান্তি অনুভব করছে। আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি নিয়ে গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়লো তাকিয়া।

আকস্মিক হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো”হায়রে জীবন মৃত্যুই শেষ ঠিকানা, পৃথিবীর সব রেস মুছে দিবে তখন আর কেউ পাশে থাকবে না”

তাকিয়া’র মন অজানা ভয়ে কেঁপে উঠল। সুমাইয়া কল করেছে,কল রিসিভ করতেই তাকিয়া যা শুনলো তাঁতে মোটেও প্রস্তুত ছিল না!….

#চলবে…ইনশা আল্লাহ।