#আমার_বোনু
#Part_12
#Writer_NOVA
কয়েকদিন পর……
ড্রয়িংরুমের সোফায় সিরিয়াল ধরে বসে আছে পাঁচ ভাই। ঊষা তাদের হঠাৎ করে জরুরি তলব করেছে। কিসের জন্য তা তারা জানে না। বোন তলব করেছে আর ভাইরা আসবে না তাতো নয়।বোনের খবর পেয়ে কাজ ফেলে ছুটে এসেছে।ওদের বসিয়ে রেখে ঊষা সেই যে রুমের দিকে গিয়েছে আর আসার খবর নেই। অর্ণব দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো। এক ঘন্টা পর তার একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। বেশ কিছু সময় হাসফাস করে বোনকে ডাকলো,
— কই রে বোনু কোথায় গেলি?
আদিল একবার সব ভাইয়ের দিকে তাকালো। তারপর সেও জোরে চেচিয়ে উঠলো,
— বোনু জলদী আয়।
ঈশানের মুখ থমথমে। উত্তরের রাস্তার মোড়ে আজও সেদিনের মতো তার দলের লোকের সাথে আরানের দলের লোকের সংঘর্ষ বেঁধেছে। অবস্থা বেগতিক। এতখন একের পর এক কল আসছিলো। ঈশান বিরক্ত হয়ে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। মনে মনে ভেবে রেখেছে এখান থেকে যাওয়ার পর নিজের দলের লোকদের আগে সাইজ করবে। এগুলো অল্পতেই মারামারি লাগিয়ে দেয়। আর তার ভোগান্তি পোহাতে হয় ঈশানকে। এখন তার কাছে বোনের থেকে আপাতত আর কিছু বড় নয়।
অরূপ, ইশাত বসে বসে অনলের সাথে কথা বলছে। নিত্যন্ত আজাইরা পেচাল যাকে বলে। সেই পেচাল পারছে তিনজনে। চুপচাপ আজাইরা বসে থাকবে। কিছু তো একটা করতে হয়।
অর্ণবের ধৈর্য্য হারা সুর আবারো পাওয়া গেলো,
— বোনু তোর কি হলো?
ঊষা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে শাসনের সুরে বললো,
— এতো ষাঁড়ের মতো চেচামেচি করছো কেনো? আসতেও তো একটু সময় লাগে। আমি কি এরোপ্লেন নাকি যে উড়ে এসে পরবো?
জিনিয়া ঊষাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— তাদের সব কয়জনকে যে তুমি এই অবেলায় বাসায় আনতে পেরেছো তাইতো অনেক।
ঊষার হাতে অনেকগুলো গিফটের প্যাকেট। সেগুলো সামনের টেবিলে রেখে দাঁড়ালো। তারপর দুই কোমড়ে হাত রেখে কপাল কুঁচকে আদেশের ভঙ্গিতে বললো,
— সবাই এবার চোখ বন্ধ করে বাম হাত এগিয়ে দাও তো দেখি।
ইশাত কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কেনো?
ঊষা মুখ দিয়ে উফ শব্দ করে তার বিরক্তি প্রকাশ করলো। তারপর তাড়া দিয়ে বললো,
— বেশি কথা বলবে না। কোন প্রশ্নও করবা না। যা বলছি তাই করো।
জিনিয়া সামনের সোফায় বসে হাত দিয়ে নিজেকে একটু বাতাস করে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— ঊষা যা বলছে চুপচাপ তাই করো তো।
পাঁচ ভাই আর প্রশ্ন করলো না। চোখ বন্ধ করে বাম হাত সামনের দিকে বারিয়ে দিলো। ঈশান চোখ খুলতেই ঊষা চেচিয়ে বললো,
— তোকে কি আলাদা করে ইনভাইটেশন দিতে হবে ছোট ভাইয়ু?
ঈশান মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইশাত, অরূপ পিটপিট করে এক চোখ খুলে দেখার চেষ্টা করতেই ঊষা ধমকে উঠলো,
— সেজো ভাইয়ু, অরূপ ভাইয়ু একদম চিটিং করবা না। তাহলে কিন্তু গিফট মাইনাস হয়ে যাবে।
ইশাত, অরূপ ধাওয়া খেয়ে দ্রুত চোখ বন্ধ করে নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসলো। ঊষা গিফটের প্যাকেট খুলে প্রতি ভাইয়ের হাতে সুন্দর একটা লেটেস মডেলের ঘড়ি পরিয়ে দিলো। পাঁচ ভাই চোখ খুলে বিস্মিত চোখে ঘড়ির দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। ঈশান প্রথম মুখ খুললো,
— এগুলো কোথা থেকে চুরি করে আনছিস কালুর মা?
ঊষা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে চেচিয়ে উঠলো,
— ছোট ভাইয়ু ভালো হয়ে যা তুই।
ইশাত কপাল কুঁচকে সন্দেহের গলায় প্রশ্ন করলো,
— তোর জামাই দিয়েছে নাকি?
ঊষা রেগে উত্তর দিলো,
— কেন আমার জামাই দিবে কেনো? আমি দিতে পারি না?
অরূপ মাথা চুলকে ঘড়ির দিকে চোখ রেখেই ঊষাকে বললো,
— বোনু সত্যি তুই এগুলো আমাদের জন্য কিনেছিস?
ঊষা ছোট তিনটার ওপর রেগে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে। তিন ভাই তাদের বোনকে রাগাতে পেরে শয়তানি হাসি দিলো। তারপর একসাথে জোরে হো হো করে হেসে উঠলো। অর্ণব বোনের হাত সামনে এনে হাতে একটা চুমু খেয়ে বললো,
— অনেক সুন্দর হয়েছে বোনু। আমার বোনু আমাদের জন্য পছন্দ করে এনেছে তা কি অসুন্দর হতে পারে?
আদিল হাতের ইশারায় ঊষাকে কাছে ডাকলো। ঊষা সামনে যেতেই এক হাতে জড়িয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— বোন তার ভাইদের জন্য গিফট কিনে এনেছে তা না পছন্দ হয়ে যাবে কোথায়?
ঊষা খুশিমনে বললো,
— সত্যি তোমাদের পছন্দ হয়েছে?
আদিল মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। ঊষা খুশিতে আদিলকে জড়িয়ে ধরলো। উচ্ছাস কন্ঠে বললো,
— Thank you মেজো ভাইয়ু। আমি অনেক চিন্তায় ছিলাম। তোমাদের গিফটটা পছন্দ হবে কিনা। আমি পাঁচ জনের জন্য একিরকম ঘড়ি পছন্দ করেছি। আমি আর বড় ভাবী গিয়ে এগুলো কিনে নিয়ে এসেছি। যাতে ঐ তিন বিটকেল বলতে না পারে বড় ভাইয়ুরটা সুন্দর হয়েছে আমরটা নয়। মেজো ভাইয়ুরটা ভালো লাগে বেশি ব্লা ব্লা।
কথাগুলো বলে ঊষা ভেংচি কাটলো।অর্ণব, আদিল উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। জিনিয়া মনোযোগ দিয়ে ওদের খুনসুটি দেখছে। ঊষা জিনিয়ার সামনে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
— এটা তোমার জন্য বড় ভাবী।
জিনিয়া অবাক হয়ে বললো,
— এটা কখন কিনলে? আমি তো পুরো সময় তোমার সাথে ছিলাম। তোমাকে এসব কিনতে দেখলামও না।
ঊষা এক চোখ মেরে মুচকি হেসে বললো,
— সিক্রেট, বলা যাবে না।
জিনিয়া হাসতে হাসতে গিফটের প্যাকেটটা হাতে নিলো। অনল দৌড়ে এসে ঊষার হাত টেনে বললো,
— আমার জন্য কিছু আনোনি রাণী?
ঊষা অনলকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
— আমার বাবাটার জন্য কি আমি কিছু না এনে থাকতে পারি? এই নাও এটা তোমার জন্য।
বিশাল এক গিফট বক্স অনলের দিকে বাড়িয়ে দিলো ঊষা। গিফট পেয়ে অনল খুশিতে লাফাতে লাফাতে ঊষার গালে চুমু খেয়ে বললো,
— লাবুউ রাণী।
আরেকটা গিফটের প্যাকেট আদিলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ঊষা বললো,
— এটা মেজো ভাবীর জন্য। তুমি একটু কষ্ট করে দিয়ে দিও।
আদিল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— তোর ভাবীর জন্য তুই গিফট এনেছিস।তাই তুই দিয়ে আসবি। আমি কেন দিবো?
ঊষা অসহায় চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু আদিলের ভাবগতি পাল্টালো না। অরূপ বললো,
— ঘটনা কিরে বোনু? হঠাৎ আমাদের জন্য গিফট কেন আনলি?
ঊষা উত্তর দেওয়ার আগে ইশাত আরেকটা গিফটের প্যাকেট দেখিয়ে বললো,
— ঐ নীল গিফটটা কার জন্যরে বোনু?
ঊষা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। মাথা নিচু করে বললো,
— ওর জন্য কিনেছি এটা।
ইশাত বুঝতে না পরে বললো,
— ওরটা কে?
অরূপ ইশাতের মাথায় টোকা মেরে বললো,
— ওরে বুদ্ধ বুঝিস না কেন? কে হতে পারে তুই বল।
ইশাত মাথা খাটিয়ে বুঝতে পেরে “ওহো” বলে চেচিয়ে উঠলো। ঊষা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করেই রাখলো। সব ভাই মিটমিট করে হাসছে। ঈশান ভ্রু কুঁচকে বললো,
— আমাকে একটা কথা বল তো বোনু। তুই এত টাকা পেলি কোথায়? চুরি-টুরি করিসনি তো?
ইশাত গলা মিলালো,
— হ্যাঁ রে বোনু চুরি করে আমাদের গিফট দিচ্ছিস না তো?
অরূপ ভাবার ভান করে বললো,
— আমারো সেম কোশ্চেন।
ঊষা চেচিয়ে বললো,
— আমার টাকা দিয়ে কেনা। তোমরা এই জীবনে ভালো হবে না। আমাকে না রাগালে কি তোমাদের পেটের খাবার হজম হয় না? আজ তোমাদের একদিন কি আমার যতদিন লাগে।
ঊষা ছুটে গিয়ে প্রত্যেকের পিঠে চড়, থাপ্পড় যা পারে তাই দিতে লাগলো। সাথে চুল টান তো ফ্রী আছেই। বোনের হাত থেকে বাঁচতে তারা তিনজন ছুট লাগলো।গোল গোল করে ঘুরতে লাগলো৷ ঊষাও ওদের পিছু পিছু ঘুরছে। অর্ণব, আদিল, জিনিয়া বসে বসে মজা নিতে লাগলো।
★
আদিলের রুমের দিকে উঁকি মারতেই ঊষার বুক কেঁপে উঠলো। আজকাল অথৈ কে সে ভীষণ ভয় পায়। এর জন্য একে এড়িয়েও চলে। আদিলের ওপর ঊষার অনেক রাগ হচ্ছে। তখন অথৈ এর গিফটটা নিয়ে অথৈকে দিয়ে দিলে তো তাকে এখন অথৈ এর সামনে পরতে হতো না। বুকে থু থু দিয়ে অনেকটা সাহস যুগিয়ে দরজায় নক করলো ঊষা।
— মেজো ভাবী, মেজো ভাবী!
অপরপাশ থেকে কোন আওয়াজ এলো না। ঊষা গুটিগুটি পায়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ঊষার হৃৎপিণ্ডটা ধুকপুক করছে। তার মনে হচ্ছে সে বাঘের খাঁচায় ঢুকেছে। মনে মনে ভাবলো বাঘের খাঁচায় বোধহয় এতো ভয় করতো না। যতটা এখন করছে। এই বুঝি অথৈ চেচিয়ে উঠে বলে,
— তুমি আমার রুমে কি করো?
কিন্তু তেমন কিছু হলো না। অথৈ ওয়াসরুমে গিয়েছে। তাই ঊষা চুপচাপ এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অথৈ কিছু সময় পর বের হলো। ছিটকিনির খট করে আওয়াজ হতেই ঊষার হৃৎপিণ্ডটা লাফিয়ে উঠলো। অথৈ বের হয়ে ঊষাকে নিজের রুমে দেখে কপাল কুঁচকে ফেললো। তবে কোন কথা বললো না। এগিয়ে গিয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে লাগলো। ঊষা ঢোক গিলে নিচুস্বরে অথৈ কে ডাকলো।
— মেজো ভাবী!
অথৈ চোখে, মুখে বিরক্তি নিয়ে ঊষার দিকে তাকালো। কোন কিছু বললো না। ঊষা ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে গিফটের প্যাকেটটা অথৈ এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— এটা তোমার জন্য।
অথৈ যেনো কথাটা শুনেও শুনলো না। এমন ভাব করে ঊষাকে সাইড কাটিয়ে খাটে গিয়ে বসলো, যেনো ঊষা যা বলেছে তা সে শুনেইনি। ঊষার এবার ভয়ে হাত-পা কাঁপছে। যেখানে ছিলো সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো। ওকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অথৈ ঘর কাঁপিয়ে হুংকার করে উঠলো,
— তোমার এখানে কি?
ঊষা থতমত খেয়ে বললো,
— তোমাকে গিফট দিতে এসেছিলাম।
অথৈ এতে রেগে গেলো। দ্রুত এগিয়ে এসে গিফটটা ঊষার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। ঊষা ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলো। অথৈ পূর্বের থেকে চেচিয়ে বললো,
— আমার থেকে আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়ে এখন দরদ দেখানো হচ্ছে?
ঊষা স্তব্ধ হয়ে গেলো। অথৈ কি বলে এসব? সে আদিলকে কেড়ে নিয়েছে মানে? ঊষা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
— আমি ভাইয়াকে কেড়ে নিয়েছি মানে? কি বলছো এসব তুমি?
অথৈ বাঘের মতো গর্জে বললো,
— এখন ন্যাকা সাজা হচ্ছে? কিছুই জানো না? শুধু মাত্র তোর কারণে আমার স্বামী আমাকে ঠিকমতো সময় দেয় না। তোর কারণে আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলে না। আমার তো মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় তোকে গলাটিপে মেরে ফেলতে। আমার স্বামীকে তুই ইচ্ছে করে আমার থেকে দূরে রাখিস তাই না? তোকে আমি ছাড়বো না এত সহজে।
ঊষা হতবিহ্বল হয়ে রইলো। অথৈ কি বলে এসব? তার চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি পরতে লাগলো। নিজের ভাইকে নিয়ে তাকে কথা শুনচ্ছে অথৈ। এটা কি তার সেই মেজো ভাবী যে তাকে ছাড়া একবেলা খাবার খেতে চাইতো না। নিজের বড় বোনের মতো গার্ড দিতো।
এর মধ্যে পাপ্পি রুমে ঢুকলো। অথৈকে চেঁচাতে দেখে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো। অথৈ তেড়ে ওর দিকে আসতে নিলে সে ঊষার পিছনে লুকিয়ে পরলো। তবুও ঘেউ ঘেউ বন্ধ করলো না। ঊষা তো নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না। বারবার মনে হচ্ছে এসব কথা অথৈ বলতেই পারে না। তার শুনতে ভুল হয়েছে। থুম মেরে ঊষাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অথৈ এর মাথায় চিনচিন করে রাগ বাড়তে লাগলো। সে এবার খেপা বাঘের মতো তেড়ে এসে বললো,
— ঢং করতে মন চাইলে অন্য কোথাও গিয়ে করো। আমার রুম থেকে দয়া করে বের হও। সাথে তোমার এই কুত্তার বাচ্চাও নিয়ে যাও। তোমাকে আর তোমার এই কুত্তার বাচ্চাকে আমার সহ্য হচ্ছে না বাপু। আমি তোমায় এর আগে বহুবার বলেছি তোমার মুখখানা আমাকে দেখাবে না। আর চোখের পানি মুছো৷ এই পানি দিয়েই তো আমার স্বামীকে জাদু করেছো। বোনের চোখের পানি দেখলে ভাইরা তো আবার গলে মম হয়ে যায়। বের হও তো আমার রুম থেকে। আমি তোমাকে আর নিতে পারছি না। কি বলছি শুনছো?
ঊষা কোন উত্তর দিলো না। নিষ্পলক দৃষ্টিতে অথৈ এর দিকে তাকিয়ে রইলো। জিনিয়া নিজের রুম থেকে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে অথৈ? ঊষা তুমি এই রুমে কেন? আর কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে?
ঊষা যেনো কথা বলতে ভুলে গেছে। অথৈ কোন উত্তর দিলো না। রাগে বিরবির করতে করতে খাটে বসলো। জিনিয়া কিছু বুঝতে না পেরে অথৈ কে জিজ্ঞেস করলো,
— হয়েছেটা কি তা কি আমায় বলবে? আর গিফটটা ফ্লোরে পরে আছে কেনো?
অথৈ রাগে চিৎকার করে ঊষাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে জিনিয়াকে বললো,
— ওকে আমার সহ্য হচ্ছে না। ওকে আমার চোখের সামনে থেকে সরতে বলো ভাবী।
জিনিয়া ধমকে উঠলো,
— কি বলো এসব অথৈ? ওর বাড়ি আর তুমি ওকে চলে যেতো বলো? তোমার হয়েছে কি বলো তো? মেয়েটার সাথে ইদানীং এমন ব্যবহার করো কেনো? ও তোমার কোন বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে? আমি এর আগে দুইবার তোমাকে সুন্দর করে বুঝিয়েছি ঊষার সাথে এমন ব্যবহার করবে না। তবুও তুমি একি কাজ বারবার করে যাচ্ছো। এর কারণ কি? তুমি আমার কথা কেনো শুনছো না?
অথৈ কোন কথা না শুনে একটা কথাই বলে যাচ্ছে,
— ওকে আমার সামনে থেকে সরতে বলো। আমি ওকে কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না।
ঊষা কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে গেলো। পাপ্পি অথৈ এর সামনে এসে কয়েকবার ঘেউ ঘেউ করে ঊষার পিছু দৌড় দিলো। জিনিয়া অথৈ এর দিকে তাকিয়ে মুখ ঝামটা মেরে বললো,
— তোমার কপালে শনি ঘনিয়ে এসেছে অথৈ। তুমি বড্ড বেশি বেরেছো। এর খেসারত তোমাকে দিতে হবেই। কাদের কলিজায় আঘাত করছো তা তুমি এখন টের পাবে না। আমার মতো যখন উচিত শিক্ষা দিবে তারপর বুঝবে।
অথৈ জিনিয়ার কোন কথা বুঝলো না। জিনিয়া ঊষাকে ডাকতে ডাকতে বের হয়ে গেলো।
~~~ পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে🥱।
#চলবে
#আমার_বোনু
#Part_13
#Writer_NOVA
— তুমি আজকাল আমাকে সময়ই দাও না।
আক্ষেপের সুরে অথৈ কথাটা বলতে বলতে আদিলের পাশে বসলো। আদিল সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। অথৈ এর কথা শুনে ওর দিকে একটুও তাকালো না। আপনমনে কাজ করতে লাগলো। অথৈ রেগে ল্যাপটপ টান মেরে বললো,
— আমি কিছু বলছি তুমি কি তা শুনতে পেয়েছো?
আদিল হাত বাড়িয়ে ল্যাপটপ নিতে চাইলে অথৈ সরিয়ে ফেললো। এতে আদিলের কপাল বিরক্তিতে কুঞ্চিত হয়ে এলো। আদিল বিরক্তিমাখা কন্ঠে বললো,
— অথৈ আমার ল্যাপটপ দাও।
অথৈ জোর গলায় বললো,
— দিবো না।
— আমি দিতে বলছি।
— আমি দিবো না বলছি।
অথৈ ভেবেছিলো আদিল ল্যাপটপ নিয়ে ওর সাথে জোরজবরদস্তি করবে। কিন্তু তেমন কিছু হলো না। আদিল উঠে কাবার্ডের সামনে গেল। কাবার্ডের দরজা খুলে একে একে অথৈ এর সব জামা-কাপড় এক প্রকার ছুঁড়ে খাটে ফেলতে লাগলো। অথৈ আদিলের কান্ড দেখে হতবাক। ল্যাপটপটা সোফায় রেখে আদিলের সামনে এসে বললো,
— কি হয়েছে আদি? তুমি আমার জামা-কাপড় বের করছো কেন?
আদিল কোন কথা বললো না। অথৈ-কে পাশ কাটিয়ে গিয়ে লাগেজ হাতে তুলে নিলো। লাগ্যাজের মধ্যে অথৈ এর জামা-কাপড় দলা মোচড়ি করে ভরতে লাগলো। অথৈ আদিলের দুই হাত টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
— তোমার হয়েছে কি বলো তো? তুমি আমাকে এমন এভয়েড করছো কেন? আর আমার জামা-কাপড় লাগ্যাজে কেন ভরছো?
আদিল দম টেনে নিজের হাত দুটো অথৈর থেকে ছাড়িয়ে বললো,
— তোমার বাবার বাড়ি যাচ্ছো তুমি?
— হঠাৎ আমরা ঐখানে কেন যাবো?
— আমরা নই শুধু তুমি।
— মানে?
— মানে খুব সিম্পল। তুমি তোমার বাবার বাড়ি যাচ্ছো।
— এই তোমার হয়েছে কি বলোতো আমায়? এত করে যখন যেতে চাইলাম তখন তো যেতে দিলে না। এখন নিজেই পাঠাচ্ছো।
আদিল লাগ্যাজের চেইল লাগাতে লাগাতে বললো,
— তোমার বাবাকে খবর পাঠিয়েছি। তিনি বোধহয় এর মধ্যে চলেও এসেছে। তুমি বরং তৈরি হয়ে নাও।
— বাবার বাড়ি যাবো ভালো কথা। তাই বলে তুমি সব জামা-কাপড় প্যাক করছো কেন?
— একেবারের জন্য গেলে তো সব জামা-কাপড়ই প্যাক করবো।
অথৈ আৎকে উঠে বললো,
— একেবারের জন্য মানে? এই আদি কি বলছো তুমি? তোমার মাথা ঠিক আছে?
আদিল অথৈ এর দিকে তাকিয়ে বললো,
— প্রেগন্যান্ট থাকা অবস্থায় ডিভোর্স দেয়া যায় না। তাই এখন তোমাকে ডিভোর্স দিতে পারছি না। বাচ্চা হওয়ার পর তুমি ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবে। আর হ্যাঁ বাচ্চা নিয়ে টেনশন করো না। আমি বাচ্চা নিয়ে আসবো। তুমি নতুন জীবন শুরু করতে পারবে।
অথৈ এর মাথায় মনে হলো আকাশ ভেঙে পরলো। ওর চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি পরতে আরম্ভ করলো। কান্না জড়ানো কন্ঠে আদিলকে বললো,
— তুমি আমাকে ডিভোর্স দিবে?
— হ্যাঁ, তুমি কি কানে কম শুনো নাকি?
— আদি তুমি এই কথাটা বলতে পারলে? আমার অপরাধটা কি?
এবার আদিল গর্জে উঠলো,
— তোমার অপরাধ কি তুমি জানো না?
— জানলে কি আর জিজ্ঞেস করতাম।
অথৈ কান্না করতে করতে ধপ করে ফ্লোরে বসে পরলো। ওর কানে এখনো ডিভোর্সের কথাটা বারি খাচ্ছে। আদিল এগিয়ে এসে বললো,
— এতো অভিনয় কি করে করো তুমি?
— আমি অভিনয় করছি না আদি।
আদিল চিৎকার করে বলে উঠলো,
— তুমি কোন সাহসে আমার বোনুর সাথে খারাপ ব্যবহার করো? ওর দেয়া গিফট তুমি ফ্লোরে ছুড়ে মারো কোন সাহসে? ওর চোখ দিয়ে পানি ঝড়ানোর তুমি কে? আমার বোনের অপরাধটা কি তুমি বলতে পারবে? আমি কিছু বলছি না বলে তুমি এত বাড় বেড়ে যাবে? কে দিয়েছে তোমায় এতবড় স্পর্ধা?
অথৈ কোন কথা বলতে পারছে না। কাঁদতে কাঁদতে ওর হেচকি উঠে গেছে। আদিল নিজের চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে চেচিয়ে বললো,
— যে আমার বোনকে সহ্য করতে পারবে না তার স্থান এ মির্জা কুঠিরে নেই।
অথৈ হতভম্ব হয়ে গেলো। নিষ্পলক চোখে আদিলের দিকে তাকালো। আদিল কিছু সময় থেমে বললো,
—আমার সন্তানকেও আমি তােমার কাছে রাখবো না। তাহলে সেই সন্তান যে তোমার মতো হবে না তার বা কি গ্যারান্টি? তুমি মুক্তি চাইছিলে না আমার বোনের থেকে? আমি তোমাকে দিবো সেই মুক্তি।
অথৈ এগিয়ে এসে আদিলের দুই হাত জড়িয়ে ধরে বললো,
— এসব তোমাকে কে বলেছে?
আদিল তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
— আমাদের রুমে আমি হিডেন ক্যামেরা সেটআপ করে রেখেছিলাম। সেখানে পুরোটা দেখেছি। তুমি কি ভাবছো? একের পর এক তুমি আমার বোনকে কাদিয়ে যাবে আর আমি হাত-পা গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকবো? একদম না।
— আমি এখন কার কাছে যাবো?
আদিল স্ট্রিট উত্তর দিলো,
—তা যার কথায় এসব করেছো তার কাছে যাও।
অথৈ চমকে উঠলো। আদিল তাহলে কি সবকিছু জেনে গেছে? আদিল অথৈ এর চিবুক উঠিয়ে ধরলো। অথৈ এর এই প্রথম অপরাধবোধ কাজ করছে। সে আদিলের চোখের সাথে চোখ মেলাতে পারছে না। আদিল আবারো তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
— প্রথমে ভেবেছিলাম প্রেগ্ন্যাসির কারণে তুমি এমন করছো। পরে আমার একটু খোটকা লাগলো জানো। মনে হলো কেউ তো তোমার পেছনে কলকাঠি নাড়াচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখলাম আমার সন্দেহ ঠিক। তা তোমার সেই প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে খবর দাও। যে তোমার কানে বিষ ঢেলে ঊষার প্রতি বিষিয়ে তুলেছে। সে এসে নিয়ে যাবেনি।
অথৈ এগিয়ে এসে আদিলের পা জড়িয়ে ধরে বসে পরলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আদি। তাই তোমার ভাগ আর কারো সাথে শেয়ার করতে পারছিলাম না।
আদিল ধিক্কার জানিয়ে বললো,
— তুমি এত নিচ মন-মানসিকতার হলে কি করে অথৈ? ঐ মেয়ের কান ভাঙানো কথায় তুমি এতো নিচে নেমে গেছো। ছিঃ ছিঃ! তোমাকে আমার নিজের স্ত্রী ভাবতেও ঘৃণা লাগছে। তুমি কি করে ভাবলে ঊষা তোমার থেকে আমাকে কেড়ে নিবে? আমার কাছে বোনের জায়গায় বোন আর স্ত্রী এর জায়গায় স্ত্রী। আমি তো কাউকে কম্পেয়ার করিনি। যার যার জায়গায় তাকে ঠিক রেখেছিলাম। তুমি তা সন্দেহের চরম পর্যায় নিয়ে গেছো। তাহলে তুমিও শুনে রাখো। পুরো পৃথিবী একদিকে আর আমার বোন আরেকদিকে। আমি তোমাকে আর নিতে পারছি না অথৈ। অন্যের উস্কানিতে তুমি তোমার আদিকে হারাতে বসেছো। উফস সরি, হারাতে বসেছো নয় হারিয়ে ফেলেছো।
আদিল নিজের পা ছাড়ানোর জন্য পা ঝাড়া মারতে লাগলো। কিন্তু অথৈ পেচিয়ে ধরে রেখেছে। অথৈ হাউমাউ করে কাঁদছে। আজ সে বুঝতে পারছে কি ভুল সে করেছে। থেমে থেমে বললো
— আদি আমাকে মাফ করে দাও।তোমার সন্তান আমার পেটে? ওর কথা ভেবেও তো আমাকে মাফ করতে পারো।
আদিল কপাল কুঁচকে অথৈ এর দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে কাঠ কাঠ গলায় বললো,
— আমার সন্তান তোমার পেটে বলেই তুমি এখনো ভালো আছো। নয়তো ময়লা আবর্জনা লাথি মেরে ডাস্টবিনে ফেলতে আমি দ্বিতীয়বার ভাবি না।
অথৈ স্তব্ধ হয়ে গেলো। এ কোন আদিলকে দেখছে সে। অথচ আদিল থমকে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখের এক্সপ্রেশনে বলে দিচ্ছে সে কতটা কঠিন ও বিরক্ত হয়ে আছে অথৈ এর ওপর। আদিল জানে অথৈ তাকে ছেড়ে যাবে না। এবার সে উপলব্ধি করতে পারবে বান্ধবীর কানপড়ায় সে কতবড় ভুল করেছে।সে অথৈ কে মোটেও ডিভোর্স দিবে না। ভয় দেখাতে এতবড় পদক্ষেপ নিয়েছে। আদিল একবার মনে মনে বড় ভাইকে ধন্যবাদ জানালো। জিনিয়া যখন প্রেগন্যান্ট ছিলো। তখন ঊষার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলো। যদিও সে প্রেগ্ন্যাসির কারণে করেছিলো। কারো কানপড়ায় নয়। তবে অথৈ এর মতো এতো খারাপ ব্যবহার করেনি।তখন জিনিয়াকেও অর্ণব এভাবেই শায়েস্তা করেছিলো। যদিও অর্ণব ডিভোর্সের কথা বলেনি। কিন্তু আদিল অথৈকে ঠিক করতে এতদূর গড়িয়েছে।
★
—গুড আফটারনুন ঢাকা। ৯৪.৮ কেপিটাল এফএমে আমি আরজে রুশা আছি আপনাদের সাথে। আমার শো “মনের কথা” নিয়ে আমি থাকবো বিকেল ৫টা অব্দি। সাথে গান,আড্ডা ও ফান। যারা আমার সাথে যুক্ত হতে চান তারা এসএমএস এবং ফেসবুক পেইজের কমেন্টবক্সে এড হয়ে আপনাদের মনের ভাব জানিয়ে দিন। সাথে আপনাদের মনের গহিন কোণে লুকানো কথাটিও শেয়ার করে দিতে পারেন। এখন নিচ্ছি বিজ্ঞাপন বিরতি। ফিরবো একটু পরে।
মোবাইলটা পাশে রেখে ইয়ারফোন কান থেকে খুলে ঊষা দৃষ্টি দিলো বহুদূরের ঘনকালো মেঘের দিকে। ঠান্ডা বাতাস বইছে। মনে হচ্ছে রাতে বৃষ্টি নামবে। ভীষণ মন খারাপ থাকলে ঊষা এফএম শুনে। তেমনি আজও শুনছিলো। সেদিন অথৈ ওর সাথে রুড ব্যবহার করার পর প্রয়োজন ছাড়া সে রুম থেকে বের হয় না। এমনকি খাবার টেবিলেও যায় না। ভাইরা খাবার নিয়ে এসে বোনকে খাইয়ে দিয়ে যায়।
মোবাইলে রিং হতেই মাথা ঘুরিয়ে তাকালো ঊষা। স্ক্রিনে তারিনের নাম দেখা যাচ্ছে। কল রিসিভ করার কোন তাড়া দেখা গেলো না ওর মধ্যে। রিং হতে হতে মোবাইলের আলো বন্ধ হয়ে গেলো। দুদিন ধরে কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ঊষা। তার জন্য হয়তো তারিন কল করেছে। আবারো তারিনের কল এলো। ঊষা কল রিসিভ করলো না। তার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করলো না। হঠাৎ কেউ এসে ঊষার দুই হাত জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো। ঘটনার আকস্মিকতায় ঊষা হকচকিয়ে গেলো। ভালো করে তাকিয়ে দেখলো সেটা অথৈ।
— আমায় মাফ করে দাও ঊষা। আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। আজ আমি নিজের ভুলে সব হারাতে বসেছি।
ঊষা প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। সে জানতো এমনটাই হবে৷ চুপ করে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তার কাছে এখন নিজেকে অনুভূতি শূন্য মানুষ মনে হচ্ছে। অথৈ নাক টেনে কান্না করতে করতে বললো,
— অন্যের কথা আমার ওপর এতটাই প্রভাব ফেলেছিলো যে আমি দিকবিদিকশুন্য হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কোন হুশ ছিলো না। তাই তো তোমার সাথে আমি এমন জঘন্য ব্যবহার করতে পেরেছি।
ঊষা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। হাসিটা অনেকটা তাচ্ছিল্যের দেখালো। শ্বাস টেনে অথৈ এর থেকে নিজের হাত দুটো ছাড়িয়ে ধীর গলায় বললো,
— তোমার দ্বারা এমনটা আশা করিনি মেজো ভাবী। আমি তোমাদের দুই ভাবীকে ভাবী নয় নিজের বড় বোন মনে করি। কখনো বোন ছাড়া অন্য কোন নজরে দেখিনি। তোমার ওপর আমার কোন অভিযোগ নেই। তুমি যেতে পারো।
অথৈ করুন সুরে বললো,
— তুমি আমায় মাফ করে দিয়েছো তাহলে?
ঊষা একপলকে অথৈ এর দিকে তাকিয়ে বললো,
— চেষ্টা করবো মাফ করতে। কিন্তু জানি না পারবো কিনা। আন-এক্সপেক্টটেড জখম ছিলো তো। তাই ঠাওর করে উঠতে পারিনি। পুরো হৃৎপিণ্ড বরাবর ছুরি চালিয়ে গেছে। কাটিয়ে উঠতে তো সময় লাগবেই।
অথৈ পূর্বের থেকে জোড়ালোভাবে ঊষার হাত দুটি নিজের এক হাতে শক্ত করে ধরে আরেক হাতে ঊষাকে জড়িয়ে ধরে কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো,
— আমি এখন বুঝতে পারছি কত বড় ভুল করেছি আমি। তোমার মেজো ভাইয়ু আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে ভুলটা দেখিয়ে দিয়েছে। তুমি যদি আমায় মাফ না করো তাহলে আমার সংসার নষ্ট হয়ে যাবে। আমি আদিকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবো। তোমার ভাই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। অনেক কষ্ট করে তাকে আমি থামিয়েছি। সে বলেছে যদি তুমি আমাকে মাফ করো তবেই সে আমাকে মাফ করবে। নয়তো নয়।
ঊষা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে গেলো। জানলার সামনে দাঁড়িয়ে দূরের মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখতে দেখতে বললো,
— মাফ শব্দটা না এই মুহুর্তে তোমার জন্য ভেতর থেকে আসছে না ভাবী। তবে বললাম তো আমি চেষ্টা করবো। তোমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। মেজো ভাইয়ুকে তুমি চিনো না। সে এক কথার মানুষ। তোমাকে কিন্তু বিয়ে করেছিলো আমার কথায়। আমি পছন্দ করেছিলাম বলে তুমি এই মির্জা কুঠিরের মেজো বউ। আজ তুমি আমার সাথে…… যাকগে বাদ দেই। সেদিনের কথা মনে এলেই তোমার ওপর ভীষণ রাগ হয়। ভেতরটা দাবানলের মতো পুড়ে যায়।কাকে বোনের মতো ভালোবেসে ছিলাম আমি? যে কিনা তার মর্যাদাই দিতে জানে না। একটা কথা জানো কি মেজো ভাবী, যার ব্যবহার আমার মনের গহীনে আঘাত করে তাকে আমি অন্যদের মতো খুব সহজে মাফ করে দিতে পারি না। তবে আমি চেষ্টা করবো।
অথৈ আরো নানাভাবে ঊষাকে বুঝাতে লাগলো। কিন্তু আজ ঊষা একদম শক্ত হয়ে ছিলো। তাই তাকে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরানো গেলো না।অথৈ হাল ছেড়ে দিলো। আজ সে অসহায়। চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ঊষা একবার সেদিক পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আবারো মনোযোগ দিলে আকাশপানে।
— এদিকে আয় তো বোনু তোর মাথায় একটু তেল লাগিয়ে দেই।
জানলার দিক থেকে দৃষ্টি সরাতেই ঊষা দেখলো আদিল তেলের বোতল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্য সময় হলে সে তেল না দেওয়ার জন্য বহু বাহানা করতো। কিন্তু আজ করলো না। মাথাটা তার ভালোই ধরেছে। তেল দিলে ভালো লাগবে। তাই চুপচাপ খাটে বসে পরলো। আদিল তেলের বোতল নিয়ে ধীরেসুস্থে বোনের মাথায় তেল লাগাতে লাগলো। মাথার তালুতে তেল পরতেই ঊষার কেমন জানি শান্তি শান্তি লাগা শুরু করলো। কিন্তু বুঝতে পারলো না তেলের কারণে নাকি অথৈ এর এমন পরিবর্তনের কারণে।
~~~ কিছু মানুষকে ক্ষমা করতে চাইলেও ভেতর থেকে ক্ষমা নামক শব্দটা আসে না।
#চলবে