আমার বোনু পর্ব-২২

0
286

#আমার_বোনু
#Part_22
#Writer_NOVA

— হ্যান্ডস আপ। একদম পালানোর চেষ্টা করবে না।

কন্ঠটা কেমন জানি পরিচিত লাগলো অরূপের। তবুও নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নেই। তাই চালাকি করে হাত ঘুরিয়ে অপর পাশের ব্যক্তিটাকে কাবু করে ফেললো। হাত মুচড়ে সামনের দিকে নিয়ে আসতেই একটা মেয়েলি স্বর বলে উঠলো,

— আরে আরে অরূপ আমি। তোমার রাহী!

রাহী নামটা শুনে অরূপ থমকে গেলো। চোখ সরু করে রাহীর দিকে তাকাতেই রাহী মুখ কুচোমুচো করে শুকনো হাসি দিলো। কিন্তু হাসিতে অরূপের মন গললো না। থমথমে গলায় বললো,

— এখানে কি করছো তুমি?

রাহী হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তার দুই হাতে অরূপের গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো,

— একদম ন্যাকামি করবা না। আমি জানি তুমি আমাকে দেখতেই এখানে এসেছো।

অরূপ ধরা খেয়ে বিষম খেলো। মাথার তালুতে হাত ঘষতে ঘষতে রাহীকে নিজের থেকে দূরে সরালো। দম টেনে বললো,

— কি ধরনের অসভ্যতা রাহী? রাস্তার মাঝখানে এভাবে কেউ কাউকে ধরে?

অরূপের রাগী গলা শুনে রাহী ভড়কে গেলো। মুখটাকে ইনোসেন্ট করে মাথা নিচু করে ফেললো। ঠোঁট উল্টে বললো,

— সরি অরূপ!

অরূপ এবার ফিক করে হেসে দিলো৷ তার মাঝে মাঝে রাহীকে এমন ভড়কে দিতে বেশ লাগে। বিশেষ করে রাহীর বাচ্চামোগুলো। অরূপ, রাহীর দুই বছরের সম্পর্ক। রাহীর এমন বাচ্চামো দেখেই অরূপ প্রেমে পরেছিলো৷ এক হাতে রাহীর বাহু জড়িয়ে ধরে অরূপ বললো,

— আরে ধূর পাগলী! আমি তো মজা করছিলাম।

রাহী ঠোঁট কামড়ে মুখ গোমড়া করে ফেললো। অভিমান হয়েছে তার। অরূপ এদিক সেদিক তাকিয়ে রাহীর কপালে টুপ করে একটা চুমু বসিয়ে দিলো। রাহী বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললো,

— এতখন জ্ঞান দেওয়া হচ্ছিলো রাস্তার মাঝখানে এসব কি? এখন নিজে কি করলেন?

অরূপ চোখ উল্টে কয়েক সেকেন্ড কি জানি ভাবলো। তারপর ঠোঁট কামড়ে বললো,
— বেশি কথা বললে চুমুর বর্ষণ হবে।

রাহী লজ্জা পেয়ে অরূপের বুক বরাবর আস্তে করে ঘুষি মেরে বললো,

— ছিঃ কি ধরনের অসভ্যতামী এসব?

অরূপ মুচকি হেসে রাহীর থুতনি দুই আঙুল দিয়ে ধরে বললো,
— ওরে আমার লজ্জাবতীরে!

রাহী মাথা নিচু করে ফেললো। তারপর পিছনে তাকিয়ে সাবধানী গলায় বললো,

— অনেক হয়েছে! ঐদিকে চলো৷ কেউ দেখে ফেললে আব্বুর কাছে বিচার দিবে৷ তারপর আবার বিশাল কাহিনি। এখন আমি এসব চাইছি না।

অরূপ হাই তুলে বললো,
— দেখলে দেখুক! আমি কাউকে ভয় পাই না। প্রেম করতে এসেছি ভয় কিসের? চুরি করতে তো আসিনি।

রাহী চোখ পাকিয়ে বললো,
— কাঁঠাল গাছের সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে পিটালে বড় বড় ডায়লগ ছুটে যাবেনি।

অরূপ হো হো করে হেসে উঠলো। রাহী বিরক্তি নিয়ে অরূপের দিকে তাকালো। এই ছেলে আসলে আল্লাহ কি দিয়ে বানিয়েছে কে জানে! কাউকে ভয় করে না। মাঝে মাঝে রাহীর তো এর সাহস দেখে বুক কেঁপে উঠে। আবার ভয়ও করে। বেশি সাহস যে দেখাতে নেই। এতে বিপদে পরতে হয়।

সোফায় পা তুলে বসে পরলো মাসফি। তার বরাবর আরাভ শিকদার। যে মাসফির আপন চাচা। মাসফির চোখে এখন জহুরির নজর। সেই নজরে আরাভ শিকদার কেমন জানি পালাই পালাই ভাব। চোরা দৃষ্টি তার। সে মাসফির চোখের সাথে চোখ মিলাতে পারছে না। তা দেখে মাসফি তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

— কি বলতে আমায় এখানে ডেকেছেন চাচাজান?

মাসফির ঠান্ডাস্বর পেয়ে তিনি চমকে উঠলো। আমতাআমতা করে বললো,

— অদিতি মা-মণির কিছু সিক্রেট বলতে চাই।

মাসফি পায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে আয়েশী ভঙ্গিতে বসে বললো,
— হুম বলেন।

আরাভ শিকদার পকেট থেকে টিস্যু বের করে মুখ মুছে নিলো। তীক্ষ্ণ নজরে তা খেয়াল করলো মাসফি। তার চাচার হাবভাব তার কাছে ভালো ঠেকছে না। মাসফিকে এরকম করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরাভ সাহেব শুকনো হাসি দিয়ে বললো,

— অনেক গরম পরেছে।

মাসফি মাথা ঝাকালো। আরাভ শিকদার পরে গেলেন বিপাকে। এই ভাতিজাকে তার একটু বেশি ভয় করে। আরাভ শিকদার খুবই ধূর্ত মানুষ । তবুও মাসফির সামনে তার হাঁটু কাপে। যদি ঊনিশ থেকে বিশ হয় তাহলে ধরা পরে যাবে। সামনের টি-টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে সবটুকু পানি শেষ করে ফেললো। মাসফি বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো। কিঞ্চিত বিরক্তির সুরে বললো,

— আপনি কেন ডেকেছেন তা বলবেন? আমার এখানে ফালতু কাজে নষ্ট করার মতো সময় নেই।

আরাভ শিকদার দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বললো,
— হ্যাঁ বলছি। অদিতি মা-মণি একটা ছেলেকে পছন্দ করতো।

মাসফির বিরক্তি কমেনি। তাই বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,
— হুম জানি। নতুন কিছু থাকলে বলুন। এগুলো পুরাতন কথা।

আরাভ শিকদার নড়েচড়ে বসে শুরু করলেন,
— হ্যাঁ আমিও জানি তুমি এটা জানো। তবে এটা জানো কি কার সাথে সম্পর্ক ছিলো? অর্ণব মির্জার মেজো ভাই আদিলের সাথে।

মাসফি চমকে তাকালো। আরাভ শিকদার চোখ দিয়ে আশ্বস্ত দিয়ে বললো,

— হ্যাঁ মাসফি বাবা। আদিল আর অদিতির খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। তোমার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে তো অদিতি আমাদের কাছেই আছে। তুমি নিউইয়র্কে ছিলে। তাদের সম্পর্কের বিষয় আমি অন্য মানুষের থেকে জেনেছি। হঠাৎ একদিন অদিতি বাসায় এসে কান্নায় ভেঙে পরে। এতো করে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? কিন্তু কোন কিছু বলে না। পরে অনেক কিছু বলার পর অদিতি মুখ খুললো। অদিতিকে না জানিয়ে আদিল বিয়ে করে ফেলেছে। এতে অদিতি পুরো ভেঙে পরেছে। পাগলামি শুরু করলো। আমি তাই ওকে রুমে আটকে রাখলাম। কিন্তু একদিন ছাড়া পেয়ে দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। হঠাৎ একটা গাড়ির সাথে লেগে ওর এক্সিডেন্ট হলো। আমরা দ্রুত ওকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম। তারপরের ঘটনা তো তুমি জানোই। পরে খবর নিয়ে জানতে পারলাম আদিল বিয়েতে রাজী ছিলো না। তার একমাত্র বোন ঊষা নাকি অদিতিকে পছন্দ করেনি৷ তাই সে অথৈ নামের মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে।

এসব কথা শুনে মাসফির চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। কপালের রগটা ফুলে ফেঁপে উঠছে। লাথি মেরে টি-টেবিলটা ফেলে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। টি-টেবিল ভাঙার শব্দে আরাভ শিকদার ভয় পেয়ে গেলো। চূর্ণবিচূর্ণ কাচগুলো ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মাসফিকে চলে যেতে দেখে বুকে থু থু ছিটিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লেন আরাভ সাহেব । কোণার দিক থেকে মিসেস রুমানা শিকদার থমথমে গলায় বললেন,

— আর কত নিচে নামবেন আপনি? এবার তো আল্লাহকে ভয় করুন।

আরাভ শিকদার স্ত্রীর কথায় দপ করে জ্বলে উঠলেন। নিচ থেকে এক টুকরো কাচ তুলে রুমানা শিকদারের গলার সামনে ধরে তেজি স্বরে বললো,

— চুপ, একদম চুপ। বেশি কথা বললে যেভাবে নিজের ভাই,ভাবীকে মেরেছি সেভাবে কিন্তু তোকেও শেষ করে দিবো।

মির্জা কুঠির…..

রাতের খাবার টেবিলে বৈঠক বসেছে। আলোচনার মুখ্য বিষয় হলো ঊষার জন্মদিন। সামনেই ঊষার জন্মদিন আসছে। আর পাঁচ ভাই তা বেশ জাঁকজমকভাবে পালন করতে চাইছে।ঊষা কথা বলছে না। সে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। অথৈ মাংসের বাটি থেকে বড় কয়েক পিস মাংস ঊষার প্লেটে তুলে দিতেই। ঊষা চোখ বড় করে বললো,

— আরে মেজো ভাবী করো কি, করো কি?

অথৈ মিষ্টি হেসে বললো,
— তুমি তো কিছুই নিচ্ছো না। তাই নিজ থেকে দিয়ে দিলাম। এখন কথা না বলে শেষ করো।

ঊষা করুন চোখে তাকিয়ে বললো,
— এতগুলো শেষ করতে পারবো না ভাবী। খাবার নষ্ট হবে। তুমি শুধু শুধু দিলে।

অথৈ তরকারির বাটি অরূপের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো,
— শেষ না করতে পারলে আমি আছিতো।

অথৈ এর এমন ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো। অথৈ এর এমন পরিবর্তনে সবাই খুশি। জিনিয়া খুশি মনে অর্ণবকে কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে চোখের ইশারায় তার খুশি হওয়া বুঝালো। ঈশান প্লেটের খাবার নাড়াচাড়া করতে করতে বললো,

— বোনু, জন্মদিন নিয়ে তোর কি ইচ্ছা বল।

ঊষা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো,
— কিছু না ভাইয়ু। তোরা খুশি হয়ে যা করবি তাতেই আমি খুশি।

আদিল গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বললো,
— তাই বলে তোর কোন ইচ্ছে, আবদার থাকবে না?

অরূপও তাল মিলালো আদিলের কথায়,
— হ্যাঁ মেজো ভাইয়ু তো ঠিকই বলেছে। তোরও তো কোন ইচ্ছা, আবদার থাকতে পারে। লজ্জা না পেয়ে বলে ফেল তো।

ঊষা মাথা নিচু করে ফেললো। তার এখন ফুপিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এবারি ভাইদের সাথে এই বাসায় জন্মদিন পালন করা হবে৷ তারপর থেকে শ্বশুর বাড়ি। এই বাসা ছেড়ে নতুন জীবনে পদার্পণ করতে হবে। এটা মনে এলেই তো তার বুক ফেটে কান্না আসে। ইশাত ঊষার বাহুতে কুটুস করে একটা চিমটি বসিয়ে দিলো। ঊষা আহ করে শব্দ করে উঠতেই সবাই সমস্বরে চেচিয়ে উঠলো,

— কি হয়েছে?

ঊষা উত্তর না দিয়ে চোখ রাঙিয়ে ইশাতের দিকে তাকালো। ইশাতের এমন একটা ভাব সে কিছু করেনি। আপনমনে খাবার খাচ্ছে। ঊষা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— সেজো ভাইয়ু!

ইশাত মুখটাকে একদম ইনোসেন্ট বানিয়ে বললো,
— কি হয়েছে বোনু?

ঊষা দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
— তুই ভালো হয়ে যা।

ইশাত শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— আমি তো ভালোই।

ঊষা চেচিয়ে অর্ণবকে ডাকলো,
— বড় ভাইয়ু!

অর্ণব মিষ্টি সুরে বললো,
— হ্যাঁ বোনু বল।

ঊষা বিচার দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো,
— তুমি এদের শায়েস্তা করো।

অরূপ চেচিয়ে বললো,
— এই বোনু আমি কিছু করিনি।

ঊষা বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো,
— একজন শুরু করছে। তার মানে বাকি দুজনও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ঈশান পা বাড়িয়ে ঊষার পায়ে একটা লাথি মেরে বললো,
— কিছু না করে বকা খাওয়ার চেয়ে করে বকা খাওয়া ভালো।

ঊষা চিৎকার করে বললো,
— বড় ভাইয়ু, মেজো ভাইয়ু ওদেরকে কিছু বলো।

জিনিয়া মুখটাকে থমথমে করে বললো,
— এই শুরু হলো ভাই-বোনের টমি এন্ড জেরী যুদ্ধ।

অথৈ মুচকি হাসলো। কোন উত্তর দিলো না। জিনিয়া বাটি নিয়ে কিচেনে তরকারি আনতে গেলো। অর্ণব ধমকে উঠলো,
— ঈশান হচ্ছেটা কি?

আদিল হুমকির সুরে বললো,
— আর একটাও যদি বোনুর সাথে লেগেছিস তাহলে কানে ধরিয়ে কিন্তু উঠবস করাবো।

আদিলের হুমকিতে কাজ হলো। সবাই চুপ হয়ে গেলো। ঊষা দাঁত বের করে বিজয়ী হাসি দিলো। ঈশান ভেংচি কেটে খাবার খেতে লাগলো। ঊষা চেচিয়ে বললো,

— দেখো মেজো ভাইয়ু দেখো। আমাকে ভেংচি কাটলো।

ঈশান হাত মুঠ করে রাগ কন্ট্রোল করে বিরবির করে বললো,
— দিন আমারো আসবে কালুর মা।

ঊষা জিহ্বা দেখিয়ে ভেংচি কাটলো। অরূপ নিচুস্বরে বললো,
— এটা কিন্তু ঠিক হলো না বোনু। আমি কিছু করিনি।

ইশাত এক টুকরো শসায় কামড় বসিয়ে কচমচ করে খেতে খেতে বললো,
— এই দিন দিন না। আরো দিন আছে জরিনার মা। এই দিন নিয়া যাইবো সেই দিনের কাছে।

ঊষা এসব কথা গায়ে মাখলো না। চুপচাপ খাবারে মনোযোগ দিলো৷ খাবার টেবিলে ছোট তিন ভাইয়ের সাথে না লাগলে তারও ভালো লাগে না।

অফিসের ফাইলগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলো জিবরান। হঠাৎ দরজায় কেউ কড়া নাড়লো৷ এতো সকালে কারো আসার কথা নয়। সে আজ খুব দ্রুত অফিসে এসেছে। কিছু হাতের কাজ ছিলো৷ সেগুলো কমপ্লিট করতে হবে। ফাইলের থেকে চোখ না সরিয়ে বললো,

— ইয়েস কাম ইন!

মুখে এতটুকু বলে কাজে মনোযোগ দিলো। মিনিট খানিক সময় পার হওয়ার পর তার মনে এলো কেউ দরজায় কড়া নেড়েছে। চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে কাউকে দেখলো না। তার কপালে চিন্তার ভাজ পরলো। চোখ, মুখ কুচকে বিরবির করে আপনমনে বললো,

— ঘটনা কি!

কোর্টটা খুলে চেয়ারের হাতলে রাখলো। ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খুললো। বাইরে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পারলো না। দরজা বন্ধ করার সময় পায়ের সামনে কিছু একটা বাজলো। সেদিকে তাকাতেই হলুদ একটা কাগজ দেখতে পেলো। হাতে নিয়ে দেখে একটা খাম। খামের ওপর তার নামটা কালো জড়ি কালিতে জ্বলজ্বল করছে। হঠাৎ এমন খাম পাওয়ায় সে বেশ অবাক হলো। কিন্তু প্রেরক বিহীন খামটা তার কাছে চিন্তার কারণ হয়ে গেলো। কাকে জিজ্ঞেস করবে এটা কে দিয়েছে। হঠাৎ অফিসের এক পিয়নকে দেখে ডাক দিলো।

— রাব্বি ভাই!

রাব্বি তার অফিসের পিয়নের পদে চাকরি করে। সে দ্রুত এগিয়ে এসে জিবরানকে বললো,

— জ্বি স্যার!

— এই খামটা কি তুমি দিয়েছো?

— না তো স্যার।

— তাহলে কে দিয়েছে বলতে পারবে?

— আজ এই ওয়ার্ডের ডিউটিতে কাশেম আছে। আপনি ওরে জিজ্ঞেস কইরা দেখেন।

— ওহ, তা তুমি কি কাউকে এখান দিয়ে যেতে দেখছো?

— না স্যার। আমি মাত্র আসলাম।

— ঠিক আছে তুমি যেতে পারো।

রাব্বি চলে গেলো। জিবরান বিস্ময় নিয়ে খাম হাতে টেবিলের সামনে গেলো৷ খামটা খুলবে কি না খুলবে না সেই দ্বিধায় পরে গেলো। কৌতূহলী মন বলছে খুলতে। ততক্ষণাৎ মোবাইলে একটা ম্যাসেজ এলো। সাধারণত জিবরান ম্যাসেজ চেক করে না। কিন্তু আজ কি মনে করে যেনো মোবাইল হাতে নিয়ে ম্যাসেজ চেইক করলো। ইন্টারনেটের নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ এসেছে। জিবরানের চোখ দুটো সরু হয়ে গেলো। ম্যাসেজ ওপেন করতেই আরো ভড়কে গেলো। সেখানে লিখা ছিলো,

” তোমার প্রিয় জিনিসটা হারাতে প্রস্তুত হও।”

ম্যাসেজের কোন আগাগোড়া খুঁজে পেলো না জিবরান। তাই এটা নিয়ে তত ঘাটাঘাটি করলো না। তবে মাথা থেকে সম্পূর্ণ ঝেড়েও ফেললো না। সে এখন খাম নিয়ে ব্যস্ত হতে চায়। খাম খুলবে নাকি খুলবে না সে দ্বিধাদ্বন্দে পরে গেলো।অবশেষে মনের সাথে যুদ্ধ করে খামের মুখটা ছিঁড়ে ফেললো। খামের থেকে একগাদা ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরলো। কিছু ছবি নিচে পরে গেলো। সেখান থেকে একটা ছবি হাতে তুলতেই তার চারিদিক থমকে গেলো। রাগে সারা শরীর রি রি করে উঠলো। মুখ দিয়ে রাগীস্বরে শুধু একটা বাক্য বের হলো,

— হোয়াট ইজ দিস!

~~~ছেড়ে যাওয়ার জন্য অযুহাত না খুঁজে ধরে রাখার উপায় খুঁজেন। হারিয়ে যাওয়ার পর উপায় খুঁজলে আর লাভ হবে না।

#চলবে