আমার বোনু পর্ব-২০+২১

0
315

#আমার_বোনু
#Part_20
#Writer_NOVA

ঈশান এদিক সেদিক তাকিয়ে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো। হঠাৎ এরকম একটা রাস্তায় ওর বাইকটা নষ্ট হলো যে এখান থেকে গাড়ি পাওয়া একেবারে অসম্ভব। রাজনৈতিক একটা সভা থেকে ফিরছিলো। নির্জন রাস্তায় আসার পর হুট করে বাইকটা নষ্ট হয়ে গেলো। মোবাইল বের করে কাউকে কল দিলো।

— যতদ্রুত পারিস গাড়ির ব্যবস্থা কর। এই মাঝ রাস্তায় আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না।

ঈশানের কন্ঠে রাগ ঝড়ে পরছে। মোবাইলের ওপর পাশের মানুষটা কি বললো তা শুনা গেলো না। তখুনি ভেতরের মাটির রাস্তা থেকে কারো কথোপকথনের আওয়াজ ভেসে এলো। ঈশান সাহায্যের আশায় সেদিক তাকালো। গাড়ি আসতে ঢেঢ় দেরী। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে ঈশানকে ধাক্কা মেরে সামনে এগিয়ে গেলো। কিছু দূর গিয়ে মেয়েটা আবার ফিরে এসে বললো,

— প্লিজ আমাকে বাঁচান। ঐ ছেলে দুটো আমার পিছু নিয়েছে।

ঈশান চিন্তিত ভঙ্গিতে মেয়েটার দিকে তাকালো। দেখতে ভদ্র পরিবারের মেয়েই মনে হচ্ছে। কিন্তু এই নির্জন রাস্তায় এই মেয়ে কি করে? মেয়েটা ভয়ে ঈশানের পিছনে দাঁড়িয়ে গেলো।ভয়ার্ত চোখে সামনে তাকালো। মেয়েটার দৃষ্টি বরাবর ঈশান তাকালো। ছোকরা টাইপের দুটো ছেলে এদিকে ছুটে এসেছে। ঈশানের কপালে ভাজ পরলো। ভ্রু কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটা ভয়ে ভয়ে বললো,

— এই ছেলে দুটো আমার পিছু নিয়েছে।

ঈশান মুখে কোন কথা বললো না। বুকে হাত গুঁজে শান্ত চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছোকরা দুটো সামনে এসে ভাব নিতে লাগলো। পাটকাঠির মতো শরীরে বাপরে কি ভাব। একজন ভাব নিয়ে বললো,

— এই পোলা একদম নায়কগিরি করতে আসবি না। জলদী ঐ মাইয়ারে আমগো হাতে তুইলা দেয়।

ঈশান ঠোঁট উল্টে পাশে সরে মেয়েটাকে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দিলো। তারপর ইশারা করে নিয়ে যেতে বললো। ঈশান ভেবে পাচ্ছে না এই পাটকাঠির মতো ছেলে দুটোকে ভয় পাওয়ার কি আছে! শক্ত করে একটা চড় মারলেই তো চিৎপটাং হয়ে পরে যাবে। ভাব সাব নিয়ে একটা ছোকরা এগিয়ে এসে মেয়েটার হাত ধরতে নিলেই ঈশান ছেকড়াটার গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো। ছোকড়াটা দুটো ঘূর্ণি খেয়ে রাস্তায় মুখ থুবড়ে পরে গেলো। ঈশান হাতের ইশারায় আরেকজনকে সামনে আসতে বললো। পাশেরজন ভয়ে দুই হাতে দুই গাল ধরে বসে রইলো। ঈশান মৃদুস্বরে ডাকলো,

— এদিকে আসো। নাও মেয়েটাকে নিয়ে যাও।

ছোকড়াটা মাথা ঝাকিয়ে ক্ষীণ গলায় বললো,
— না বড় ভাই।

ঈশান ধমকের সুরে বললো,
— তাহলে এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চেহারা দেখাচ্ছিস কেন? জলদী দফা হো।

ছোকড়া দুটো উঠেপড়ে দৌড় লাগালো। ঈশান পিছন ঘুরলো। কিন্তু অবাক করা কান্ড! মেয়েটা পিছনে নেই। চট জলদী রাস্তার কিনারে তার বাইকের দিকে তাকিয়ে আরেকটু শকড। সেখানে তার বাইকটা নেই। হন্তদন্ত করে পকেটে হাত দিতে দেখে বাইকের চাবিও হাওয়া। এবার পুরো কাহিনি ঈশানের মাথায় খেললো। মেয়েটা তখন ইচ্ছে করে ধাক্কা খেয়ে আস্তে করে বাইকের চাবি নিয়ে গেছে। আর এদিকে ঈশানকে ছোকড়া দুটো ব্যস্ত রেখেছে। অন্যরা আস্তে করে বাইক নিয়ে চলে গেছে। সে তাহলে ফ্রড চক্রের পাল্লায় পরেছিলো। ঈশান চেচিয়ে উঠলো,

—- ওহ শীট! এতোটা বেখেয়াল হলাম কি করে আমি?

বাস্কেটে বলটা ছুঁড়ে মেরে হাঁটুতে ভর করে হাঁপাতে লাগলো ইশাত। সারা শরীর বেয়ে তার দরদর করে ঘাম পরছে। টানা এক ঘন্টা যাবত খেলছে সে। তখুনি একটা ছেলে এসে ইশাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,

— ইশাত তোর সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে।

ইশাত মুখ থমথমে করে কপাল কুঁচকে তাকালো। এই অসময়ে আবার কে এলো? হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলো,

— কে এসেছে?

ছেলেটা উত্তরে বললো,
— আমি চিনি না।

— ওহ আচ্ছা! তাকে ওয়েটিং রুমে বসতে বল। আমি আসছি।

ছেলেটা চলে গেলো। ইশাত সামনে গিয়ে সাইডের থেকে নিজের ব্যাগ বের করলো। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে কয়েক ঢোক পানি খেলো। বাকি পানি দিয়ে মুখ ধুলো। পকেট থেকে টিস্যু বের করে পানির বোতলটা যথাস্থানে রাখলো। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়েটিং রুমে ছুটলো।

— ইশাত বেবী!

ওয়েটিং রুমে ঢুকতেন তারিন দৌড়ে এসে ইশাতকে জড়িয়ে ধরলো। তারিনকে এই সময়ে দেখে ইশাত বেশ অবাক। মুখে বিস্ময়ের ভাব রেখেই জিজ্ঞেস করলো,

— তুমি এখানে কি করো?

তারিন ওকে আরো জাপটে ধরে খুশিমনে বললো,
— তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।

ইশাত নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করা শুরু করলো। সে বেশ অস্বস্তিতে পরে গেছে। তারিন ধমক দিয়ে বললো,

— বাং মাছের মতো এমন মোড়াচ্ছো কেন?

ইশাত ফোঁস করে দম ছেড়ে বললো
— ছাড়ো আমাকে।

ইশাত ছাড়তে বলায় তারিন আরো জোড়ে ওকে ধরেই রাখলো। সে আজ ইশাতকে ছাড়বে না। ইশাত করুন সুরে বললো,

— কেউ দেখে ফেললে খারাপ বলবে।

তারিন ওকে ছেড়ে হো হো করে হাসতে লাগলো। ইশাতের কথাবার্তায় ওর ভীষণ হাসি পাচ্ছে।যেখানে ওর এসব কথা বলার ছিলো। সেখানে ইশাত বলছে। তারিন হাসতে হাসতে নিচে বসে পরলো। ইশাত এতখন বিরক্ত হলেও এখন তারিনের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো। ওর হাসির ঝংকার কানে বাজছে। মনের মধ্যেও কেমন জানি একটা অনুভূতির প্রকাশ পাচ্ছে। ইশাত সত্যি সত্যি এই পাগলীর প্রেমে পরে গেলো না তো?

কলেজ গেইট দিয়ে বের হওয়ার আগে ঊষার চোখ গেলো সামনের রাস্তায়। গাড়ির ডিকিতে হেলান দিয়ে জিবরান দাড়িয়ে আছে। তারিন আজ আসেনি। এর কারণ ঊষার জানা। তাই তার আজ একা একা ক্লাশ করতে হয়েছে। ঊষা ধীর পায়ে সামনে যেতেই জিবরান সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ঊষা বললো,

— হঠাৎ আপনি এখানে?

জিবরান মুচকি হেসে বললো,
— আজ একটু ফ্রী আছি। তাই ভাবলাম সেই সময়টা আমার বউকে দেই।

শেষের কথাটা বলার সময় জিবরান এক চোখ মারলো। ঊষা খিলখিল করে হেসে উঠলো। জিবরান বাম পাশে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ঘায়েলি স্বরে বললো,

— এমন করে হেসো না বউ। সোজা বুকে এসে লাগে।

ঊষা থামলো না। আরো জোরে হাসতে লাগলো। জিবরান এগিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিলো। ঊষা কথা না বলে ভেতরে প্রবেশ করলো। জিবরান ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো। ঊষা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। জিবরান গাড়ি চালাতে চালাতে আড়চোখে ঊষাকে লক্ষ্য করছে। এক সময় গলা ঝেড়ে বললো,

— মন খারাপ নাকি ঊষারাণী?

ঊষা জানলার দিক থেকে মুখ সরিয়ে জিবরানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— কই না তো।

— তাহলে চুপচাপ কেন?

— কি বলবো তাই খুজতেছিলাম!

— তা খুঁজে পেয়েছো?

— হুম পেলাম তো।

— তাহলে বলে ফেলো।

— আমরা কোথায় যাচ্ছি?

—- দেখি কোথায় যেতে পারি!

ঊষা চোখ,মুখ কুঁচকে বললো,
— এটা কেমন উত্তর হলো।

জিবরান একগালে হাসলো। বাম হাতে নিজের কোঁকড়া চুলগুলো পেছন দিকে ঠেলে আবার দুই হাতে গাড়ি চালাতে লাগলো। ঊষার কথার উত্তর দিলো না। ঊষা কিছু সময় অপেক্ষা করে উত্তর না পেয়ে ধৈর্য্যহারা সুরে বললো,

— কি হলো বললেন না?

জিবরান রহস্যময় হাসি দিলো। ঊষা গাল ফুলিয়ে আবারো জানালার দিকে নজর দিলো। জিবরান মুচকি হেসে তার বাম হাতটা সিটের ওপর থাকা ঊষার ডান হাতের ওপর রাখলো। ঊষা ঝাড়া মেরে হাত সরিয়ে নিতে চাইলে জিবরান শক্ত করে ধরে রাখলো। ঊষা কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন জিবরানের হাতের মুঠোর থেকে নিজের হাত ছাড়াতে পারলো না। তখন সে হাল ছেড়ে দিলো। জিবরান ঊষার কান্ড দেখে মিটমিট করে হাসতে লাগলো। বেশ কিছু সময় পর গাড়ি এসে থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে।

~~~সব চাওয়া-পাওয়া পূর্ণতা পেতে হবে তাও বা কোথায় লিখা আছে? কিছু পূর্ণতা যে শূন্যতার মাঝে রয়েছে।

#চলবে

#আমার_বোনু
#Part_21
#Writer_NOVA

পার্কের মধ্যে সবার সামনে, হুট করেই জিবরান, ঊষাকে কোলে তুলে নিলো। ঊষা হকচকিয়ে গেলো। ভাইদের সামনে জিবরান এমন একটা কান্ড করে বসবে তা সে বুঝতে পারেনি। লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো। ইশাত, অরূপ একসাথে ওহো বলে চেচিয়ে উঠলো। ঊষা নামার জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করতেই জিবরান ধমক দিয়ে বললো,

— একদম নড়াচড়া করবা না। যেভাবে আছো সেভাবেই থাকো। নয়তো ফেলে দিবো।

ঈশান হাত দুটো উপরে তুলে হাই তুলতে তুলতে বললো,
— এটাকে কোলে নেওয়ার কি দরকার? ঐ ঝোপঝাড়ের মধ্যে ফেলে দিয়ে যা।

জিবরান একবার ঊষার দিকে তাকিয়ে ঈশানকে বললো,
— না ভাই! এটাকে ফেলে দিলে পরে আমি কান্না করবো।

অর্ণব, আদিল এক পলক ওদের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো। দ্রুত সেখান থেকে কেটে পরলো, ঊষা লজ্জা পাবে বলে। এক হিসেবে খুশিও হলো। বোনের জন্য সঠিক মানুষ নির্বাচন করতে পেরে। পূর্ব দিকে জিনিয়া, অনল, অথৈ ঘাসের ওপর বসে গল্প করছে আর বাদাম খাচ্ছে। তারা সেদিকে চলে গেলো।

অরূপ আফসোসের সুরে বললো,
— আহা, আজ একটা বউ নেই বলে এভাবে কোলে তুলে ঘুরতে পারি না।

ইশাতও সুর মিলালো,
— ঠিক বলেছিস অরূপ। আজ কেউ নেই বলে।

ইশাতের শেষ কথাটায় আফসোস ফুটে উঠলো।ঈশান তা শুনে বললো,
— কত মেয়ে তোর জন্য পাগল হয়ে আছে। সেখান থেকে একটাকে পাত্তা দিলেই তো হয়। তারিন কিন্তু মেয়ে হিসেবে খারাপ নয়।

অন্যদিন তারিনের কথা শুনলে ইশাত ফোঁস করে উঠতো। কিন্তু আজ তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। তাতে অরূপ, ঈশান দুজনেই একটু অবাক হলো। অরূপ ভ্রু কুঁচকে বললো,

— ঘটনা কি ইশাত? আজ তারিনের কথা শুনে তোর রিয়েকশন স্বাভাবিক কেন?

ঈশান কাধ দিয়ে ইশাতকে ধাক্কা মেরে অরূপকে বললো,
— কুচ কুচ হোতা হে?

ইশাত কোন উত্তর দিলো না। মুচকি হাসলো। এতেই দুজন ওকে জেঁকে ধরলো। আসল কাহিনি জানতে। জিবরান, ঊষাকে কোলে তুলে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এসেছে। ঊষা নিচুস্বরে জিবরানকে বললো,

— এবার নামিয়ে দিন। আমি হাঁটতে পারবো।

জিবরান চোখ পাকিয়ে তাকাতেই ঊষা চুপ হয়ে গেলো। সব ভাই-বোন এসেছিলো ছুটির দিনে সামনের একটা পার্কে ঘুরতে। হঠাৎ করে একটা ছোট ইটের টুকরোর সাথে ঊষার পা বাকিয়ে মচকে গেছে। তাই সে হাঁটতে পারছিলো না। এই কারণে সবার সামনে জিবরান ওকে কোলে তুলে নিলো।

কিছুদূর যাওয়ার পর সিমেন্টের বসার জায়গা দেখতে পেলো জিবরান। অনেকে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাতে ঊষা অস্বস্তিতে পরলেও জিবরানের কিছু আসে-যায় না। জিবরান সেখানে নিয়ে ঊষাকে বসালো। ওদের ক্রস করে বাদাম ওয়ালা যেতে নিলে তাকে ডেকে বাদাম কিনে নিলো। টাকা পরিশোধ করে ঊষার দিকে বাদাম এগিয়ে দিয়ে বললো,

— নাও বাদাম খাও।

ঊষা নাক কুঁচকে বললো,
— ভালো লাগছে না।

জিবরান ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— পা ব্যাথা করছে?

ঊষা মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। তারপর জিবরানের কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বললো,
— এখন ভালো লাগছে।

জিবরানের ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির রেখা দেখা গেলো। সে এখন মনোযোগ সহকারে বাদামের খোসা ছাড়াতে ব্যস্ত। প্রেয়সী তার কাঁধে মাথা রেখেছে। এতে তার মনে অন্য রকম প্রশান্তি কাজ করছে।

আরান ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতেই তার মুখে একটা ঘুষি পরলো। তারপর একের পর এক পরতেই থাকলো। সে মার খাচ্ছে তাতে তার কষ্ট নেই। কিন্তু যে মার দিচ্ছে তাকে দেখে সে বেশি অবাক হলো। হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে ভাই? আমাকে মারছো কেন? কি করেছি আমি?

মাসফি একদফা মেরে হয়রান হয়ে হাঁপাতে লাগলো। আরান পায়ের কাছে বসে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে,”কি হয়েছে ভাই?” কিন্তু মাসফি কোন উত্তর দিচ্ছে না। রাগে ওর চোখ, মুখ লাল টকটকে বর্ণ ধারণ করেছে। আরান আবারো করুন সুরে জিজ্ঞেস করলো,

— ভাই আমি কি করেছি বলো না? আমার অপরাধটা কি? তুমি আমায় মারলে কেনো?

মাসফি হাত মুঠ করে রাগ কন্ট্রোল করে বললো,
— বাঁচতে চাইলে চোখের সামনে থেকে সর। নয়তো তোর অবস্থা কি হবে আমি নিজেও জানি না।

— আমার অপরাধটাতো বলবে?

মাসফি হুংকার দিয়ে বললো,
— তুই জানিস না তুই কি করেছিস?

আরান মাথা নাড়িয়ে বললো,
— সত্যি আমি জানি না।

মাসফি রাগে আরানের কলার ধরে বললো,
— তুই কোন সাহসে অদিতির ঔষধ পাল্টিয়ে সেখানে ড্রাগ মিশানো ঔষধ রেখেয়েছিস?

আরান যেনো আকাশ থেকে পরলো। কি বলে এসব? সে কেন অদিতির ঔষধ পাল্টিয়ে ড্রাগ মেশানো ঔষধ রাখবে? আরান অবাকের সুরে বললো,

— কি বলছো এসব ভাই? তোমার মাথা ঠিক আছে। আমি অদিতি আপুকে নিজের বোনের চোখে দেখি। নিজের বোনের জন্য আমি এরকম ঘৃণিত কাজ কেন করবো?

— তাহলে অন্য কেউ মেশায়? তুই ঔষধগুলো আনিস। তাহলে অন্য কেউ কিভাবে মিশাবে?

আরান এবার জোর গলায় বললো,
— তুমি এমনটা ভাবলে কি করে ভাই? আমার মাথায় তো এসব খেলেইনি। সেখানে এই কাজ আমি করবো? ঔষধগুলো প্রতিবার পাপা আমার হাতে দিয়ে তোমার এখানে পৌঁছে দিতে বলে। যেভাবে পাপা দেয় আমি সেভাবে তোমার কাছে দিয়ে যাই। আমি একদিন প্যাকেট খুলেও দেখিনি।

মাসফি কপাল কুঁচকে আরানের দিকে তাকালো। আরানের মুখ দেখা বোঝা যাচ্ছে সে মিথ্যে বলছে না। তার চোখ দুটোও তা জানান দিচ্ছে। আর বোনের টেনশনে সে তো তার চাচার কথা ভুলেই গিয়েছিলো। তাহলে কি এসব তার চাচা করেছে?কিন্তু চাচাকে জিজ্ঞেস করতে আরানের নাম কেন বললো? নিজের ছেলেকে ফাঁসিয়ে তার কি লাভ? মাসফির এবার মনে হচ্ছে বিশাল বড় একটা ঘাপলা চলছে তার অগোচরে। এর সন্ধানে নামতে হবে। সবকিছু না জেনে চাচার কথায় আরানকে সে শুধু শুধু মারলো। এগিয়ে এসে আরানকে বুকে জড়িয়ে নিলো। আরান অভিমানী সুরে বললো,

— একদম ধরবে না আমায়। অনেক জোরে মেরেছো।

মাসফি অসহায় চোখে বললো,
— সরি রে ভাই। বোনের চিন্তায় মাথা ঠিক ছিলো না।

— তুমি ভাবলে কি করে আমি এমন কাজ করবো? কোনদিন কি অদিতি আপুকে আমি অন্য নজরে দেখেছি? তাকে আমি নিজের বোন মনে করি।

মাসফির এখন খারাপ লাগা শুরু করলো। বেচারাকে মেরে অবস্থা কি করেছে! দৌড়ে ফার্স্ট এইড বক্স এনে ভাইয়ের সেবা করতে লেগে পরলো। মনে মনে পণ করলো যে সবকিছুর পিছনে আছে তাকে সে খুঁজে বের করবেই। আরান এক দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। একটু আগে ভুল বুঝে মেরে এখন নিজেই এন্টিসেপটিক লাগাচ্ছে। অবশ্য এই জায়গায় মাসফির বদলে অন্য কেউ হলে তাকে মেরে লাশ বানিয়ে ফেলতো আরান। কিন্তু মাসফির গায়ে সে হাত তুলে না। এই ভাই তার কাছে সব। বাবার চেয়ে বেশি সে মাসফিকে ভালোবাসে। বড় ভাইয়ের জায়গাটা যে তাকে দিয়ে রেখেছে।

তিন রাস্তার মোড়ের চিপা গলির সামনে দাঁড়িয়ে অরূপ এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। তার চোখে চোরা দৃষ্টি। সাবধানে সবদিকে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। হাতঘড়ির দিকে বারবার তাকিয়ে সময় দেখছে। তবে তার মুখে স্পষ্ট বিরক্ত ভাব। দাঁতে দাঁত চেপে বিরক্তি নিয়ে বিরবির করে বললো,

— আর কত সময় লাগবে? আসছে না কেন?

কার জন্য অপেক্ষা করছে কেন অপেক্ষা করছে তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে সে খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজে আসছে এমনই মুখের ভাব। দুপুরের রোদে তার মুখ ঘেমে-নেয়ে একাকার। পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছে নিলো। রুমাল রাখার আগেই মোবাইল বেজে উঠলো। মোবাইল বের করে দেখলো অর্ণবের কল। অরূপ কল রিসিভ না করেই জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো,

— এই রে বড় ভাই কল করেছে। কি বলবো এবার?

কিছু সময় ভেবে উত্তর তেরি করলো। রিসিভ করার আগেই কল কেটে গেলো। অরূপ নিজে কল করলো। কয়েক সেকেন্ড রিং হওয়ার পর অর্ণব ধরলো। স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

— কোথায় আছিস তুই?

অরূপ এদিক সেদিক তাকিয়ে জায়গাটার নাম দেখে সেই নাম বললো। অর্ণব আদেশের সুরে বললো,

— যেখানে থাকিস সমস্যা নেই। বিকেলে অফিসে থাকা চাই।

— আচ্ছা বড় ভাই।

— আর শোন।

— হুম বলেন।

— একটু সাবধানে থাকিস। সময়মতো অফিসে চলে আসিস। দেরী করিস না।

অরূপ কিছু বলার আগেই কল কেটে গেলো৷ অরূপের কপালে চিন্তার ভাজ দেখা গেলো। হঠাৎ অর্ণব সাবধানে থাকতে বললো কেনো? এই ছোট বাক্যটা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। তৎক্ষনাৎ কেউ পিছন থেকে তার মাথায় পিস্তল জাতীয় কিছু ঠেকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,

— হ্যান্ডস আপ। একদম পালানোর চেষ্টা করবে না।

~~~যারা ছোট ছোট বিষয়ে খুশি, নারাজ হয়। তাদের মন কোমল স্বভাবের হয়🤗।

#চলবে