আমি সেই চারুলতা পর্ব-০৪

0
254

#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Priya (স্নেহা)
#পর্বঃ৪
_______________________

মজিদ কাকার গাড়ি এসে থামলো গ্রামের ঠিক মাঝখানে সেই বট গাছের নিকট। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও চারু এখানে আসেনা আর মজিদ এই অবস্থায় তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। রাত হোক দিন হোক কেউই এখানে তেমন আসেনা তাই মজিদের কাছে হয়তো এখন এর চেয়ে ভালো জায়গা নেই।
– আমাকে এখানে নিয়ে আসছো কেনো তুমি? ছাড়ো আমাকে। আমাকে বাসায় যেতে দাও। আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
– এত কথা কস ক্যা? আমি তো তোরে ঘোরানোর জন্য নিয়া আসলাম। দেখ কি সুন্দর গাছ।
কথা বলতে বলতে মজিদ চারুকে গাড়ি থেকে নামালো। চারু প্রানপণে মজিদের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু মজিদের শরীরে যেনো অসুর ভর করেছে সেই অসুরের কবল থেকে কোনোক্রমেই নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না চারু। চারু মজিদের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো এতে মজিদ তো ওকে ছাড়লোই না বরং চুলের মুঠি ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলো। চারু প্রানপনে চিৎকার করছে কিন্তু ও জানে এই ভরদুপুরে এই গাছতলায় ভুল করেও কেউ পা রাখবে না তাই আর নিজের শক্তি এভাবে খরচ না করে মজিদের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করলো,
– এমন ছটপট করতেছিস ক্যান চারু? মজিদ কাকা না তোরে কত্ত আদর করে? তোরে আদর করতেই তো নিয়া যাইতাছি।
– ছাড়ো আমাকে। আমাকে যেতে দাও। মা আমার জন্য চিন্তা করছে।
– তোর মা রে আমি বুঝায়া বলমু তুই একদমই চিন্তা করিস না।
চারুর দম বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে ওর আর বাচার কোনো উপায় নেই। মনে মনে আল্লাহকে ডেকে চলেছে। মনে হচ্ছে এখনই হয়তো কেউ চলে আসবে আর চারুকে এখান থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাবে কিন্তু চারু জানে এই ভরদুপুরে এখানে কেউ আসবে না। আসার কথাও না। কিন্তু আসার কথা না হলেও কিছুটা দূর থেকেই পুরষালি কণ্ঠের আওয়াজ ভেসে আসলো,
– ওখানে কে?
আওয়াজটা শুনে চারু যতটা স্বস্তি পেলো তার চেয়ে বেশি ভড়কে গেলো মজিদ। সে চারুর হাত ছেড়ে দিলো। ইতিমধ্যেই শার্ট প্যান্ট পরহিত এক যুবক ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। এই গ্রামে এখনো শার্ট-প্যান্ট পড়ার চল হয়নি। শুধুমাত্র জমিদার বাড়ির ছেলেরাই শার্ট-প্যান্ট পড়ে তাও সবাই না। যারা ঢাকা গিয়ে লেখাপড়া করে কিংবা ব্যাবসা করে তারা। যুবকটি মজিদকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো,
– কে আপনি? আর এই মেয়েটিকে এভাবে টানছেন কেনো?
– আমি মজিদ ছোট সাহেব। আপনি মনে হয় আমারে চিনতে পারেন নাই। আমি আপনেগো ধানের ব্যাবসার,,,,
মজিদকে কথা শেষ করতে দিলো না যুবকটি। তার আগেই বলে উঠলো,
– মেয়েটি কে? ওভাবে টানছিলেন কেনো?
– ও আমার বন্ধুর মাইয়া। বড় ভালা মাইয়াডা। কিন্তু জেদ করলো তারে এই বট গাছের সামনে ঘুরতে লইয়া আইতে হইবো। আপনিই বলেন এই ভরদুপুরে কেউ এমন বায়না করে?
সে সম্মতি নিতে চারুর দিকে তাকালো কিন্তু চারু জানে এইটাই তার বাঁচার একমাত্র সুযোগ তাই চিৎকার করে বললো,
– মিথ্যা কথা। মজিদ কাকা আমাকে জোর করে এখানে নিয়ে এসেছে।
– এইসব কি কইতাছস চারু? আমি তোর বাপের সমান। আমার উপর এমন অপবাদ দিতে পারলি তুই?
– কিছুক্ষণ আগে যখন আমাকে এভাবে টেনে এখানে নিয়ে আসছিলেন তখন মনে পড়ে নাই আমি আপনার মেয়ের সমান।
এই শীতেও মজিদ কুলকুল করে ঘামতে লাগলো। পাঞ্জাবীর হাতায় ঘাম মুছে বললো, “তোরে আমি মাইয়ার মতো দেহি চারু। আর এই তুই কিনা আমারে এতবড় অপবাদ দিলি?”
কথাটা বলে চারু কিংবা এই যুবকটিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিজের গাড়িতে উঠে চলে গেলো সে। একপ্রকার পালিয়ে বাঁচা যাকে বলে। যুবকটি বোধহয় তাকে কিছু বলতো কিন্তু এই জনমানবহীন এলাকায় লোকটার এই পালানো চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না তার।
– এই মেয়ে বাড়ি কোথায় তোমার? বাবার নাম কি?
– নদীর পাড়ে বাড়ি। বাবার নাম নাজিমুদ্দিন।
– তোমার বাড়ি নদীর পাড় তো তুমি এখানে এসেছো কেনো?
– মজিদ কাকা জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে এসেছে।
– ঠিক আছে, চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই।
– আমি যেতে পারবো।
– যেতে পারবে তো এতক্ষণ যাওনি কেনো? পথে যদি আবার ওই লোকের কবলে পড়ো তখন কি হবে?
চারু মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বেশ ভয় লাগলো তার। আসলেই তো, পথে যদি মজিদ কাকা আবার চলে আসে। এইবার আর কিছু না বলে যুবকটির সাথে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলো সে। তবে এতটা পথ চুপচাপ থাকা যায় না। তাই হয়তো ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো,
– এই ভরদুপুরে কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
– স্কুলে গিয়েছিলাম। পরীক্ষা ছিলো।
– ওহ।
– হুম। একটা কথা জিগ্যেস করবো?
– করো।
– আপনি কে? এই গ্রামে তো আগে কখনো দেখিনি আপনাকে। শহর থেকে এসেছেন?
– না শহর থেকে আসিনি আমি গ্রামেরই বাসিন্দা তবে ঢাকা থাকি।
– এই গ্রামের কোথায় থাকেন। জমিদার বাড়িতে?
– হ্যাঁ ঠিকই ধরেছো। আমি শিহাব, তুমি?
– আমি চারুলতা।
শিহাব আঁকাবাকা সেই মাটির পথটিতে দাঁড়িয়ে পড়লো। মজিদ এতক্ষণ চারু চারু করছিলো কিন্তু সে ঘূনাক্ষরেও ভাবেনি চারুর সম্পূর্ণ নাম চারুলতা। এই চারু যে চারুলতা হতে পারে সে এটা ভাবেইনি। শিহাব একবার চারুলতার দিকে তাকালো। পরনে সালোয়ার কামিজ। কোমড় ছাড়ানো চুলে দুই বেনি করা যা লাল ফিতা দিয়ে বেধে রাখা। বেনি থেকে বেশ কিছু চুল এর মধ্যেই ছুটে এসেছে। মুখমণ্ডল ফর্সা তবে কপালে ও নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এককথায় বেশ সুন্দরী বলা চলে মেয়েটিকে কিন্তু বয়স খুবই কম।
– তুমিই সেই চারুলতা যার পেছনে শাওন ঘুরে বেড়ায়?
এবার চারুও থমকে গেলো। সে শিহাবকে চেনার চেষ্টা করছে। চারুর হঠাৎই মনে পড়ে গেলো শাওন বলেছিলো তার বড় ভাইয়ের নাম শিহাব আর সে প্রচন্ড রাগী। চারু একটা শুকনো ঢোক গিলে ভালো করে শিহাবের দিকে তাকালো। শিহাব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে চারুর দিকে। তার পরনে বেশ ভালো দেখতেই শার্ট-প্যান্ট রয়েছে। এই গ্রামে শার্ট-প্যান্ট পরহিত অনেককেই দেখেছে চারু কিন্তু এত আভিজাত্য কারোর মধ্যেই ছিলো না। শ্যামলা রঙ ও মুখে চাপ দাড়ি। নিঃসন্দেহে শিহাবকে সুদর্শন বলা চলে কিন্তু এখন শিহাবকে চারুর বেশ ভয় লাগছে।
– কথা বলো না কেনো?
শিহাবের উঁচু গলায় বলা কথায় চমকে গেলো চারু।
– ক কি বলবো?
শিহাব নিজের সজ্ঞানে ফিরে এলো। আসলেই তো, চারু কি বলবে? একটা ছেলে ওর পেছনে ঘোরে তাতে ওর কি দোষ। চারু মেয়েটা নিঃসন্দেহে সুন্দরী। শাওনের সাথে মানাবেও ভালোই।
– তোমার বাবা কি করে?
– কৃষিকাজ করে। বাড়ির পাশেই আমাদের এক বিঘা ধানি জমি আছে।
শিহাব এতক্ষণে খেয়াল করলো মেয়েটা সম্পূর্ণ শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে যা এই গ্রামে বিরল। এমনকি শাওনও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে না। নাহ, মেয়ে খারাপ না। শিহাবের মনের ভাব হয়তো চারুও বুঝতে পারলো। অজান্তেই তার বেশ খুশি লাগছে। শিহাব যদি শাওনের জন্য চারুকে পছন্দ করে তাহলে মন্দ হয় না। চারু যতই শাওনকে এড়িয়ে চলুক না কেনো মনে মনে সেও যে শাওনকে চায় সেটা তো আর অস্বীকার করা যায় না। যদি শাওনের সাথে সত্যিই ওর বিয়ে হয় হয় তাহলে শিহাব হবে ওর ভাসুর। কথাটা ভাবতেই চারুর চোখমুখ লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠলো। ধুর কিসের মধ্যে কি ভাবছে ও। এসব নেহাৎই বাচ্চামি!
– তোমার বয়স কত?
– চৌদ্দ।
শিহাবের মুখ হঠাৎ গম্ভীর হয়ে উঠলো। চারু বুঝলো না এর কারণ। শিহাব কি ওকে বেশি বড় মনে করছে। ভাইয়ের জন্য আরো কম বয়সী মেয়ে সে চায়। কিন্তু শাওনের বয়স তো একুশ। সেই হিসাব করলে তো ঠিকই আছে। চারুর ভুল ভাঙলো নিমিষেই,
– তোমার বয়স তো খুবই কম। এইটা তোমার পড়াশোনা করার বয়স। কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?
– নবম শ্রেনিতে পরীক্ষা দিলাম। সামনের বছর দশম শ্রেনিতে উঠবো।
সারারাস্তা শিহাব আর কোনো কথা বললো না। ওকে পৌঁছে দিয়েই শিহাব চলে গেলো। চারু বারবার ঘরে আসার অনুরোধ করলেও শিহাব জানালো তার কাজ আছে। সে আসতে পারবে না। উঠোনে আসতেই আবার মায়ের কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেলো। ওই অমানুষ টা আবারও ওর মা কে মারছে। চারুর মন ঘৃণায় ভরে উঠলো। চুপচাপ এগিয়ে গেলো ঘরের দিকে। চারুকে দেখে নিজামুদ্দিন তাকে অপয়া অলক্ষী মেয়েছেলে ইত্যাদি নানারকম গালিগালাজ করতে লাগলো। ব্যাপারটা চারুর গায়ে লাগলো না। এত বছরে সয়ে গেছে এই ব্যাপারটা তার কাছে। চারুকে গালাগাল করতে করতে বেড়িয়ে গেলো নিজামুদ্দিন। চারু মনোরমাকে উঠালো। মনোরমা আবারও স্বাভাবিক আচরণ করছে। এমন একটা ব্যাপার যেনো কিছুই ঘটেনি। নিজের মায়ের এত ধৈর্য দেখে নিজেই অবাক হয় চারু। কোনো কিছুতেই যেনো তার কিছু হয় না। এমন না যে মনোরমার কেউ নেই। গরীব পরিবারের মেয়ে। মনোরমার বাবা ছিলেন খুব ধনী। মনোরমা শ্যামলা হওয়ায় তার বাবা চাইতেন যেনো তার ফর্সা ছেলের সাথে বিয়ে হয়। তাতে ছেলেমেয়ে গুলো সুন্দর হবে। বিপুল পরিমাণ যৌতুক দিকে নাজিমুদ্দিনের সাথে মেয়ে বিয়ে দেন মনোরমার বাবা। তার উদ্দেশ্য অবশ্য সফলও হয়েছে। চারু আর হামিদ দুজনেই বাবার রঙ পেয়েছে। মনোরমার বাবা এখনো বেচে আছে। ভাইয়েরাও সাবলম্বী কিন্তু এসব কিছুর পরেও মনোরমা কেনো এখানে পড়ে রয়েছে তা বোঝে না চারু। মা বলে এটা নাকি সংসারের মায়া। ওর যখন সংসার হবে তখন ও ও নাকি সংসারের মায়া শিখবে। আসলেই সংসারের মায়া কি এতটাই তীব্র?
– বাবা আজ তোমাকে কেনো মারলো মা?
– তোর বিয়ার জন্য পোলা খুজতে চাইছে আমি মানা করছি তাই। তোরে অনেক পড়তে হইবো চারু। অনেক বড় হইতে হইবো তোরে।
– আমি অনেক বড় হবো মা। নিজের পায়ে দাঁড়াবো। তার পর তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো।
– আমি আর কই যামু? কয়দিন আছি আর। তুই বড় হবি। বড় হইয়া নিজের জীবন সুন্দর কইরা সাজাইবি। তারপর এখান থেকে চইলা যাবি।
– কেনো? তুমি কোথায় যাবে?
– মানুষের হায়াত আর কয়দিন থাকে?
চারু জড়িয়ে ধরলো মনোরমাকে, “এগুলা কি বলো মা? আর বলবে না। তুমি অনেক দিন বাঁচবা। অনেক দিন।”
– ধুর পাগলি, মানুষ কি সবসময় বাচে?
– তুমি বাঁচবা। জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছো তুমি। তোমার সুখ পাওয়া এখনো বাকি আছে।
– হায়াত মউত আল্লাহর হাতে। আল্লাহ বাচায়া রাখলে থাকবো। যা হাত মুখ ধুইয়া আয়। এই অবস্থায় আর কতক্ষণ থাকবি?
আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা মনোরমাকে জানালো না চারু। জানালে আবার বলবে তার ভোরের দুঃসপ্নের জন্য এটা হয়েছে। আর বাবার কানে গেলো সরাসরি বিয়ে দিয়ে দেবে। তখন মাও আটকাতে পারবে না। এখন থেকে সাথে করে সুচ নিয়ে স্কুলে যাবে চারু। ওই মজিদ আরেকবার ওর সামনে এলে একেবারে চোখ গেলে দেবে।

– চারু রে সুন্দর কইরা তৈরি করো। বিকেলে পাত্র পক্ষ দেখতে আইবো।
নাজিমুদ্দিন চৌকির উপর বসে শান্ত ভঙ্গিতে কথাটা বললো কিন্তু এই কথাটাই কাপিয়ে তুললো মনোরমাকে।
– কি বলেন এইসব? আমার মাইয়াডা ছোড।
– কিসের ছোট মাইয়া? ওর বয়সী মাইয়া বিয়ে হইয়া বাচ্চাও হইয়া গেছে।
– আর কয়েটা দিন যাইতে দেন। মেট্রিক টা পাশ করুক।
– ওরে লেখাপড়া করায়া আমি আর আমার ট্যাকা পয়সা ধ্বংস করতে পারমু না।
– কিন্তু,,,
– আর একটা কথাও বলবা না হামিদের মা। পাত্রপক্ষ আইবো এহন মাইর দিতে চাইতাছি না। চুপচাপ তৈরি করো।
মনোরমা চুপ করে গেলো। আর বোধহয় চারুকে আগলে রাখা গেলো না। মনে মনে চারুকে বলল, “মা রে মাফ কইরা দিস। তোরে আর আগলায়া রাখতে পারলাম না।”
– পাত্র কে জানো?
– কে?
– আমাগো জমিদারের পোলা। ভাবতে পারো জমিদার বাড়ির সাথে আমাগো সম্পর্ক হইবো। গ্রামে মান সম্মান কত উঁচু হইবো আমাগো। তুমি চিন্তা কইরো না, ওরা বলছে তোমার মাইরা রে পড়াইবো।
মনোরমা কিছু বললেন না। ঘরের ভিতরে গিয়ে নীরব অশ্রু ফেলতে লাগলেন। নিজামুদ্দিনের সমস্ত কথাই শুনেছে চারু। জমিদারের ছেলে তার মানে শাওন। শিহাব নিশ্চয়ই বাসায় সবাইকে জানিয়েছে। আজ প্রথমবারের মতো নিজের বিয়ের কথা শুনে রাগ হলো না চারুর। মনে মনে শিহাবকে অনেক ধন্যবাদ জানালো। ওর জন্যই এটা হয়েছে। তাছাড়া একবার শাওনের সাথে বিয়ে হয়ে গেলে লেখাপড়ারও আর কোনো চিন্তা নেই। শাওন বলেছে ওকে লেখাপড়া করাবে। চারু চাইলো মনোরমার মন ভালো করে দিতে।
– মা!
– আমি পারলাম না রে চারু। তোর বাপ জান রে আটকাইতে পারলাম না।
– কান্না করো না মা। আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। তাছাড়া তুমি তো শুনলে ওনারা বলছে আমারে লেখাপড়া করাবে।
চারুর কথা শুনে চুপ করে গেলেন মনোরমা। এই প্রথম বিনা শর্তে চারু বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো। এটা কি শুধুই পড়াবে বলে?

বেশ সুন্দর গোলাপি রঙের একটি শাড়ি পড়েছে চারু। শাড়িটি ওর মায়ের। তাছাড়া গোলাপি নাকি শাওনের পছন্দের রঙ। শাড়ির সাথে মিলিয়ে কিছুটা গহনাও চারু কে পড়িয়ে দিলেন মনোরমা। সাথে হালকা একটু সাজগোজ। কিছুক্ষণের মাঝেই নাকি দেখতে আসবে চারুকে। ওই তো বাইরে গাড়ির হর্ন শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই চারুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মনোরমা হাজির হলেন। তার চোখ মুখ মলিন। মেয়েকে বিয়ে দিতে চায় না সে। হামিদও মোটামুটি চায় না এখনই চারুর বিয়ে হয়ে যাক তাই তাকেও আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। চারু একবার ভাবলো বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। চারুকে ওদের সামনে নিয়ে গিয়ে বসানো হলো। চারুর সামনেই রয়েছে জমিদার বাবু আর জমিদার গিন্নি। তাদের একপাশে শাওন অন্যপাশে শিহাব। ওদের দুজনের মুখেই কিসের যেন একটা ছাপ পড়েছে। চারু সেটা অনুমান করতে পারলো না। চারুকে দেখেই আহ্লাদে গলে গেলেন জমিদার গিন্নি,
– কি গো মাইয়া নাম কি তোমার?
– চারুলতা।
চারুলতা একবার শাওনের দিকে তাকালো। ও ভেবেছিল শাওন খুবই খুশি হবে কিন্তু শাওনকে মোটেও খুশি হতে দেখা গেলো না। চারুর খুব অভিমান হলো। আর কখনো কথা বলবে না ও শাওনের সাথে। তাছাড়া সারাজীবন লুঙ্গি পড়া শাওনকে আজ শার্ট প্যান্ট পড়ায় বেশ চোখে ঠেকছে চারুর। জমিদার গিন্নি ওর মায়ের সাথে কথা বলা শুরু করেছেন,
– মনে করেন আমার পোলারা ব্যাবসার কাজে প্রায় সময় বাইরে থাকে। ওইহানে মানুষ কত্ত সুন্দর কইরা কথা কয়। এহন আমার পোলার জন্যেও তো এমন সুন্দর কথা কইতে পারা মাইয়াই লাগবো।
চারুর হাসি পেয়ে গেলো। শাওনকে কখনো শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে দেখেনি চারু। আর তার জন্য কি না এমন মেয়ে খোজা হচ্ছে। কি অদ্ভুত পরিবার!
– আমি মনে করেন আবার বাইরের মাইয়া নিতে চাই না। যহন শুনলাম এই গ্রামেরই একটা মাইয়া শুদ্ধ বাংলায় কথা কয় তহনই ঠিক করলাম মাইরারে আমার পোলার জন্য নিবো। এই গ্রামে তো আর কেউ সুন্দর কইরা কথা কয় না। তার উপর আবার মাইয়া নাকি সুন্দর তাই আর ছাড়াছাড়ি নাই। মাইয়া তো মাশাল্লাহ। অনেক পছন্দ হইছে আমার।
– চারুলতা বয়স কত গো তোমার মা?
– চৌদ্দ।
– বাহ! একেবারে সব গুণ আছে মাইয়ার মইধ্যে। এমন মাইয়াই তো চাই। আহো মা তুমি আমার পোলার পাশে আইসা বসো। তোমাদের একসাথ দেইখা আমি আমার চোখ জুড়াই।
চারু ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো শাওনের দিকে। শাওন এখনো নির্বাক। চারুর রাগটা এবার আরো বেড়ে গেলো। এর মাঝেই জমিদার গিন্নি বলে উঠলো,
– আরে তুমি কই যাও?
– আপনিই তো বললেন আপনার ছেলের পাশে গিয়ে বসতে।
– তো ওদিকে যাও কেনো? শিহাব তো এইহানে। এইহানে ওর পাশে আইসা বসো।
চারু খুব বড় একটা ধাক্কা খেলো। এরা চারুর বিয়ে শাওনের সাথে না বরং শিহাবের সাথে দেওয়ার জন্য এসেছে। এতক্ষণে বিষয় টা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেছে চারুর কাছে। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের বড় ভাইয়ের জন্য দেখতে আসা পাত্রীর জায়গায় দেখে শাওন হতবাক হয়ে গেছে আর শিহাবের চোখেমুখে রয়েছে সংশয়। নিজের ছোট ভাই যাকে ভালোবাসে তাকেই ওর নিজের বিয়ের জন্য ঠিক করা হয়েছে এটা ভাবতে ভাবতেই হয়তো ওর মনে একরাশ সংশয় ডানা বেধেছে।
– কি হইলো? যাও শিহাবের পাশে গিয়া বসো।
চারু যেনো নিজের বোধশক্তি হারিয়ে ফেললো। চুপচাপ গিয়ে শিহাবের পাশে বসে পড়লো। কি অদ্ভুত! এইটা কি আসলেই হওয়ার ছিলো?

[সবাই শুধু নাইস নেক্সট করেন কেনো বুঝি না। গল্প কি আমি না দিয়ে পালিয়ে যাবো? প্রতিদিনই গল্প দেই। একটু গঠনমূলক কমেন্ট করুন। হাতে গোনা চার পাচজন ছাড়া আর কারো কমেন্ট পাই না।]

#Shuvra_Priya (স্নেহা)

(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)

To Be Continued….