আমি সেই চারুলতা পর্ব-০৫

0
235

#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Priya (স্নেহা)
#পর্বঃ৫
_______________________

শাওন তাকিয়ে দেখছে নিজের ভাইয়ের পাশে তার এত বছরের ভালোবাসার মানুষটিকে। চোখ ফেটে যেনো জল আসতে চাইছে তার। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। ছেলেদের যে কাদতে নেই! আচ্ছা ছেলেরা কি মানুষ না? ওদের কষ্ট হয় না? তাহলে এই নিষ্টুর পৃথিবী কেনো কোনো ছেলেকে কান্নারত অবস্থায় মেনে নিতে পারে না? শাওন চারুর দিকে তাকালো। করুন দৃষ্টিতে এতক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো কিন্তু শাওন তাকাতেই সে মেঝের দিকে চাইলো। শিহাব খুবই সুদর্শন, চারুলতাও বেশ সুন্দরী। দুজনকে বেশ ভালোই মানাচ্ছে। ও নিজেই তো দুজনের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। না, ও কেনো ওদের ভিতরে ঢুকবে? ঢুকেছে তো শিহাব। কিন্তু শাওন এইটাও স্বীকার করতে বাধ্য চারুর সাথে কখনোই ওর প্রণয়ের সম্পর্ক ছিলো না। তাতে কি? চারু কে তো ও ভালোবাসতো। চারুও সেটা জানতো। শিহাব ও তো সব জানতো তাহলে এভাবে চোখের পলকে সব পাল্টে গেলো কেনো? দুজনকে একত্রে দেখে খুশিতে বিগলিত হয়ে উঠলেন জমিদার গিন্নি,
– দেখ শাওন, তোর ভাই ভাবি রে কি সুন্দর মানাইছে।
শাওন একটা ধাক্কা খেলো মায়ের কথায়। তার এতদিনের ভালোবাসার মানুষটিকে এখন কি না তার ভাবি ডাকতে হবে। শাওন কোনোরকমে মাথা নাড়িয়ে মায়ের কথার সম্মতি জানালো। চারু একবার নিঃশব্দে তাকালো শাওনের দিকে। তাকে শান্ত দেখালেও তার ভিতরে যে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে যা খুব ভালোই অনুমান করতে পারছে চারু।
– আমি তো চারু মা রে আইজ ই আংটি পড়ায়া দিয়া যামু।
শাওন নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো। যতটা সম্ভব নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে। বাবা মায়ের সামনে কোনো রকম বাজে দৃশ্যপট সৃষ্টি করতে চাইছে না সে। বাবা মায়ের আদরের সন্তান সে সবসময়ই। ভাইয়ের ভালোবাসাও কম পায়নি। জমিদারের ছেলে সে, কোনোকিছুরই কমতি নেই তার। ছোট থেকেই বিলাসী জীবনে অভস্থ্য শাওন। তার এই বিলাসীতাকে শতগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে তার দাদি। শাওনকে কখনো শাসন করতে দেয়নি সে। দাদির জন্যই লেখাপড়া হয়ে ওঠে নি তার। ছোট থেকেই পড়াশুনার প্রতি অমনোযোগী সে। মা শাসন করলে গেলে বলতো, আমার নাতির লেহাপড়া করার দরকার নাই। ওর বাপ দাদার যে সম্পত্তি আছে তা দিয়ে একশো বছর ও আর ওর পরিবার সবাই বসে বসে খাইতে পারবে। দাদির আস্কারা পেয়ে শাওনও লেখাপড়া করেনি। নিজের মতো চলে এসেছে সারাজীবন। অন্য দিকে শিহাব, প্রচন্ড পরিশ্রমী। লেখাপড়ার প্রতি ছিলো মনোযোগী সে। পরিবারের প্রতি সে দায়িত্বশীল, কর্তব্যপরায়ণ। বাবা মায়ের সকল কথা শোনে। শাওন কেও কম ভালোবাসে না শিহাব। শিহাবের একটাই সমস্যা সেটা হলো অতিরিক্ত রেগে যাওয়া। এই একটা সমস্যা ছাড়া তো তার মাঝে আর কোনো সমস্যা নেই। শিহাব শহরে থাকে। দেখতে সুন্দর। শাওন তো শিহাবের ধারে কাছেও যায় না। আসলেই চারুর সাথে শিহাবকেই মানায়। ও নিতান্তই বেমানান চারুর সাথে।
– শাওন বাপ, আমার ওই থলেতে আমি আংটি টা রাখছি। তোর ভাইয়ের কাছে দে। ও তোর ভাবীরে পড়ায়া দেক।
শাওন কাপা কাপা হাতে আংটিটা বের করলো। আংটি টার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। আজ হয়তো এই আংটি টা সে পড়াতো চারুকে। আচ্ছা শিহাব কি জানতো ওর বিয়ে চারুর সাথে ঠিক হয়েছে। জানলে কি ও আসতো নিজের ভাইয়ের ভালোবাসার মানুষটির কাছে।
– কি রে কি হইলো? এমনে তাকায়া আছোস ক্যান আংটির দিকে? পছন্দ হইছে? দেখ তো তোর ভাবির হাতে মানাইবো কি না?
– হ্ মা। ভাবিরে খুব মানাইবো আংটি টা। তুমি ভাইয়েরে এইটা পড়ায়া দিতো কও।
চারু প্রচন্ডরকম অবাক হলো। একইসাথে শিহাবও। সে এতক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো। নিজের মধ্যে এতটা হীন্যমনতা আগে কখনো কাজ করেনি তার। ওর জন্য কি না ওর মা চারু কে পছন্দ করেছে? চারুকে পছন্দ করলেও হয়তো শিহাব বিনা শর্তে মেনে নিতো কিন্তু শিহাব যেখানে জানে চারুকে তার ছোট ভাই ভালোবাসে সেখানে সে কিভাবে চারুকে বিয়ে করে? আর এখন কিনা শাওন চারুকে ভাবি সম্মোধন করছে। কি অদ্ভুত!
– মা আমার একটা কাজ মনে পইড়া গেলো। আমি যাই তোমরা ভাবি রে আংটি পড়ানো শেষ কইরা আইসো।
– তোর আবার কিসের কাজ?
– আছে। তুমি বুঝবে না।
– চুপচাপ বস। তোর ভাইয়ে ভাবী রে আংটি পড়াইবো আর তুই থাকবি না?
– কইলাম তো মা কাজ আছে। তাছাড়া এহনই তো বিয়া হইতাসে না। বিয়ার সময় থাকলেই হয়। আমি যাই তুমি আমারে আটকায়ো না।
শাওন আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না জমিদার গিন্নি কে। চুপচাপ উঠে চলে গেলো সে। চারু আর শিহাবের যেনো তাকিয়ে তাকিয়ে এসব দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলো না। দুজনেই বুঝতে পারছে শাওনের এভাবে উঠে যাওয়ার কারণ।
– শিহাব, চারু মা রে আংটি টা পড়াইয়া দে বাপ।
শিহাব একবার তাকালো নিজের মায়ের দিকে। তার চোখে মুখে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। এতদিন পরে নিজের পছন্দে ছেলের বউ বাছাই করেছেন তিনি। উচ্ছ্বাস তো থাকবেই। তার মতে সব দিক থেকে পার্ফেক্ট মেয়ে চারুলতা আর সেই চারুলতাকেই নিজের বাড়ির বউ করতে চান তিনি। শিহাব সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো। তাকে এভাবে দাঁড়াতে দেখে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেলো।
– মা তোমাকে বলা হয়নি আজ আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে। আমাকে এখনই যেতে হবে।
– যাইতে হইবো মানে? কই যাবি?
– কাজ আছে। খুব জরুরি। আমি যাচ্ছি।
– আংটি টা পড়ায়া দিয়া যা।
– সেসব পরে করা যাবে মা। আমার কাজ খুবই জরুরি।
– একটা আংটি পড়াইতে কতক্ষণ লাগে?
– এই বিষয় আমরা পরে কথা বলি?
শিহাব কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। পরপর দুই ছেলের এভাবে বেড়িয়ে যাওয়া মনোরমা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারলো না। তার মনের ভাব হয়তো বুঝতে পারলেন জমিদার গিন্নি তাই সাফাই গাওয়ার জন্য বললো,
– আসলে আমার পোলারা ব্যস্ত মানুষ তো তাই তাড়াহুড়া কইরা যাইতে হইলো। আপনেরা চিন্তা কইরেন না চারু মা রেই আমি আমার বাড়ির বউ কইরা নিয়া যামু। আমার পছন্দই আমার পোলার পছন্দ। নিজের পোলা বইলা কইতাছি না, ওর মতো পোলা দশ গ্রামে খুইজাও একটা পাইবেন না আপা।

জমিদার বাড়ির লোকজন চলে গেছে অনেকক্ষণ। হামিদ বেশ কিছুক্ষণ ধরে নাজিমুদ্দিনের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে কিছু বলার জন্য কিন্তু তার সাহসে কুলাচ্ছে না। সে চারুর বড় ভাই হলেও বয়সে খুব একটা পার্থক্য নেই। হামিদ চারুর চেয়ে মাত্র চার বছরের বড়। অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে কথা বলার সুযোগ পেলো খাওয়ার সময়। নাজিমুদ্দিন ই ডেকেছে তাকে,
– আয় বাপ, আমার লগে বইয়া খাইয়া নে।
হামিদ এই সুযোগ হাতছাড়া করলো না। বাপজানের মন মেজাজ এখন ভালো আছে। খেতে খেতে হামিদ বললো,
– বাপজান আইজ নাকি চারু রে দেখতে আইছিলো?
– হ। তুই কই ছিলি?
– এইতো এইহানেই। পোলা কেমন?
– পোলা তো মাশাল্লাহ। লাখে একটা। তোর বইনের ভাগ্য খুইলা যাইবো বিয়া ডা হইলে। জমিদারের পোলা। নামটাও কি সুন্দর।
– পোলার বয়স কত?
– এইবার ৩০ এ পড়লো। পোলা মানুষের বয়স কোনো ব্যাপারই না। হেইডা লইয়া তুই চিন্তা করিস না। বিয়া হইলে সব ঠিক হইয়া যাইবো।
– বাপজান, আমি তো চারুর বড় ভাই। আমি কি ওর ব্যাপারে কথা কইতে পারি?
– পারবি না ক্যান? তুই না কইলে কে কইবো?
– বাপজান, মাস্টারমশাই কয় চারুর মাথার ব্রেন ভালা। ওরে এহন বিয়া না দেওয়াই ভালো। অন্তত মেট্রিক টা পাশ করুক।
– লেহাপড়া করাইলে মাস্টার রা ট্যাকা পায় হেইটার জন্য কইসে লেখাপড়া করাইতে। ওইসব ব্রেইন ফ্রেইন কিচ্ছু না।
– মাত্র তো একটা বছর। তাছাড়া ছেলের বয়সও অনেক বেশি।
– দেহো বাপ, তোমারে আমি অনেক আদর করি। তুমি হইলা গিয়া আমার বংশের প্রদীপ। তুমি আমার কথা, আমারে অনুসরণ কইরা চলো। জীবনে সফল হইবা। মাইয়া মানুষ এত লেহাপড়া করায়া লাভ নাই। মাথা থেইকা এইসব শয়তানি ঝাইড়া ফেলো।
খাওয়া শেষ করে উঠে গেলেন নাজিমুদ্দিন। হামিদ আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না।

মলিন মুখে গায়ে থাকা গয়না খুলছে চারু। কি হওয়ার ছিলো আর কি হয়ে গেলো? চারুর এই মলিন মুখ চোখ এড়ালো না মনোরমার।
– কি হইছে চারু? প্যাচার মতো মুখ কইরা বইসা আছস কেনো?
– আমি এখন বিয়ে করতে চাই না মা।
– তুই ই না কইলি ভাগ্যে যা আছে হইবো। হঠাৎ মত বদলাইলি?
– তোমরা যেই ছেলেকে আমার জন্য ঠিক করেছো তাকে আমার পছন্দ হয়নি।
মনোরমা ভ্রু কুচকে চারুর দিকে তাকালো। এইটা সত্য শিহাবের বয়স বেশি কিন্তু সে মোটেও পছন্দ না হওয়ার মতো ছেলে না। এক দেখায় যেকেউ পছন্দ করতে বাধ্য শিহাব কে।
– তোর মতিগতি কিছুই বুঝি না আমি। এক মুখে যে কত কথা বলস। পোলা তো ভালোই।
চারু একবার মায়ের দিকে তাকালো। মাত্র কয়েকঘন্টা আগেও মনোরমা চারুর বিয়ের বিষয় বিন্দুমাত্রও রাজি ছিলেন না। হঠাৎই তার শিহাবকে পছন্দ হয়ে গেলো। এর কারণ কি শিহাব সুন্দর বলে? এখন কি সৌন্দর্য দিয়েই পৃথিবীতে সবাই সবাইকে বিচার করে? চারুলতা মনোরমা কে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখলো, সে নিজেই বললো,
– তুই তো জানসই চারু, আমার হাতে আর এহন কিছুই নাই। এতদিন তো কম কষ্ট কইরা তোর বিয়া আটকাই নাই। তোর বাপজান এহন তোরে বিয়া দিয়াই ছাড়বো বইলা মনে হয়।
মনোরমা আর কিছু না বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন। কিই বা বলার আছে তার? চারু তো জানে সে কতটা অসহায়। চারুর জীবনে একমাত্র আপনজন তার মা। মা ছাড়া কেউ ওর ভালো চাইবো না। আচ্ছা মায়েরা এত ভালো হয় কেনো? কেনো সন্তানকে এভাবে নিজের জীবন দিয়ে আগলে রাখে? বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় কত কষ্ট হয় মায়েদের। এত কষ্ট সহ্য করেও নাকি সন্তানের মুখ দেখে সে সব যন্ত্রণা ভুলে যায়। এইটা কেনো হয়? কেনো তারা জন্মের পরেই বাচ্চাটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে না, নয়মাস পেটে অনেক কষ্ট দিয়েছিস তুই আমাকে আবার জন্মের সময়ও কম কষ্ট দেসনি। তোকে আমার চাই না। এই কথাটা কেনো বলে না? তাছাড়া জন্মের পরেও বা কেনো এত আদর যত্ন করে? বাচ্চাটা যখন বিছানা নষ্ট করে ফেলে তখন কেনো সে পরম যত্নে সেটা পরিষ্কার করে দেয়? কেনো একবারও বলে না বিছানা নষ্ট করেছিস তোরা সেই নষ্ট বিছানা তেই থাক। মায়েরা কেনো এত ভালোবাসায় পূর্ণ হয়? নিজের সবকিছু দিয়ে সন্তান কে ভালোবাসে? মনের মাঝে মা সম্পর্কিত হাজারো প্রশ্ন থাকলেও উত্তর পায় না চারু। সে একবার ভাবলো মা কে জিজ্ঞেস করা যায়, পরক্ষণেই চিন্তা করলো, মা কে জিজ্ঞেস করলে মা উত্তর দিবে যখন মা হবি তখন বুঝবি। তাই আর জিজ্ঞেস করা হলো না। চুপচাপ নিজের শাড়িটা পাল্টে নিলো। বইটা নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বসলো চারু। ও জানে ওর হয়তো পরের বছর পরীক্ষা দেওয়া হবে না কিন্তু এই বইগুলো দেখলেই ওর ভীষণ রকমের মায়া লাগে। লেখাপড়া যে খুবই ভালোবাসে সে। লেখাপড়া ছাড়া কিভাবে থাকবে সে? আচ্ছা, শিহাব কি সত্যিই চারুকে বিয়ে করবে? ও তো জানে, শাওন ভালোবাসে চারু কে। শিহাব কি বাসায় মানা করবে না? চারুর মনে আবারো প্রশ্ন জাগে, শিহাব তো মায়ের কথা খুব মানে। আচ্ছা ও কি মায়ের কথায় বিয়েতে রাজি হয়ে যেতে পারে? সে কি একবারও নিজের ভাইয়ের কথাটা ভাববে না? তাছাড়া এই বিয়ে ভেঙে গেলেই যে চারু চিন্তা মুক্ত এমনও তো না। ওর বাবা যে ওকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই চারুর। আচ্ছা অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে গেলে কি তারা চারুকে পড়াবে? আচ্ছা চারুর বিয়ে হয়ে গেলে শাওন কি করবে? চারু বুঝতে পারলো, যাই হয়ে যাক না কেনো শাওনের সাথে ওর আর বিয়ে হবে না। হবেই বা কিভাবে? জমিদার গিন্নি যেখানে বড় ছেলের জন্য চারুলতাকে পছন্দ করেছে সেখানে নিশ্চয়ই তিনি ছোট ছেলের জন্য চারুলতা কে নেবেন না। আচ্ছা শাওন কি মেনে নেবে সেটা? নাহ, আর ভাবতে পারছে না। পড়াও কিছু হচ্ছে না। এইসব ভাবনা যেনো চারুর পিছু ছাড়তেই চাইছে না। এর মাঝেই ঘরে প্রবেশ করলো হামিদ। চারু আর হামিদের ঘর একটাই। অবশ্য একটা ঘর বললে ভুল হবে। চারুর ঘরের শেষে একটা বারান্দার মতো ছোট ঘর রয়েছে। সেখানে শুধু একটা ছোট জানালা। ঘরে ঢুকতে হলে চারুর ঘর দিয়ে সে ঘরে ঢুকতে হবে। সেখানে ঢোকা এবং বের হওয়ার এই একটাই রাস্তা এমনকি সেখানে কোনো দরজাও নেই তাই দুজনের ঘরকে আলাদা বলা যায় না শুধু মাঝখানে একটা দেওয়াল দেওয়া এবং সেখানেও দরজা পরিমান কাটা। বলা বাহুল্য সেখানে কোনো দরজাও নেই। সেই বারান্দার মতো ছোট ঘরটায় ঘুমায় হামিদ আর ঘরে ঘুমায় চারু। আর বাবা মায়ের আলাদা ঘর। যেদিন নাজিমুদ্দিন মারধর করে মনোরমাকে ঘর থেকে বের করে দেয় সেদিন মনোরমা এসে চারুর সাথে ঘুমায়। হামিদ এসে ভালো মন্দ কিছুই বললো না। মনে মনে বেশ অপরাধবোধ জাগ্রত হচ্ছে তার। সে বড় হয়েও চারুর জন্য আজ কিছুই করতে পারছে না। যতই সে চারুর লেখাপড়া মুখের ভাষা নিয়ে কটাক্ষ করুক না কেনো সে মনেপ্রাণে চায় চারু জীবনে অনেক দুর এগিয়ে যাক। কিন্তু তা বোধহয় আর হবার নয়। চুপচাপ নিজের ছোট ঘরটিতে গিয়ে শুয়ে পড়লো সে যেখানে আসবাব বলতে গেলো শুধু একটি ছোট চৌকি যাতে শুধুমাত্র একজন মানুষই ঘুমাতে পারে।
রাতে ঘুম হচ্ছিলো না চারুর। হামিদের একটা বাজে স্বভাব যতক্ষণ ও জেগে থাকবে ঘরের কুপি জালিয়ে রাখবে। কুপি জালানোর কারনে সে আলো দরজার খোলা জায়গাটুকু দিয়ে চারুর ঘরেও আসছিলো। কুপির আলোয় ঘরে সোনালী আভা দেখা যাচ্ছে। পরিবেশটা কেমন ভুতুড়ে লাগছে চারুর কাছে। কিছুটা ভয়ও লাগছে। বেশ অনেকক্ষণ পরেই কুপি বন্ধ করলো হামিদ কিন্তু তাও ঘুম হচ্ছে না চারুর। কেনো যেনো বারবার শাওনের কথা মনে পড়ছে। আচ্ছা বিয়ের জন্য কি শিহাবের আসাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো? শাওনের জন্য বললে কি এমন ক্ষতি হতো?(গল্পের আসল লেখিকা Shuvra Priya) অবশ্য শিহাবেরও তো এখনো বিয়ে হয়নি। শিহাব কে বিয়ে না দিয়ে নিশ্চয়ই শাওনকে দিবে না। চৌকির উপর উঠে বসলো চারু। শৌচাগারে যাওয়া প্রয়োজন। গ্রামের শৌচাগার গুলো বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে হয়। চারু উঠে গেলো সেখানে। পা ফেলতেই শুকনো পাতার মড়মড় শব্দগুলো নিস্তব্ধতা ভেদ করলো। শীতকালে পাতা সাধারণত এত মড়মড় আওয়াজ করেনা। কে জানে হয়তো এইটা চারুর মনের ভুল। কিছুটা সামনে এগিয়ে যেতেই কেউ তার মুখ চেপে ধরলো, চারুর বুক কেপে উঠলো। কে এইটা? মজিদ? আবার এসেছে ও? চারু প্রানপনে চিৎকার করতে চাইলো কিন্তু মুখ থেকে উম উম শব্দ ব্যাতিত কোনো শব্দই বের হলো না।
– চুপ চারু। চিৎকার করিস না। আমি শাওন।
শাওন চারুকে ধাতস্থ হওয়ার সময় দিলো। কয়েক মূহুর্ত লাগলো চারুর ব্যাপারটা বুঝতে।
– তুমি এত রাতে এখানে? কি হয়েছে?
– আরো আগেই আসছিলাম তোর লগে দেহা করতে।
– কেনো কি হয়েছে? তুমি এখানে কেনো এসেছো? কেউ দেখলে কি ভাববে?
– ভাবাভাবির সময় নাই চারু। আইজ যদি আমি তোর কাছে না আসতাম তাইলে আমি তোরে হারায়া ফেলতাম। চারু তুই বিয়া টা করিস না চারু। আমি তোরে অনেক ভালোবাসি।
– তোমার বাসায় এখন কি অবস্থা? তোমার ভাই কি কিছু বলেনি?
– ভাইজান কইসে তোরে নাকি সে পছন্দ করে নাই কিন্তু মায়ের তোরে খুব পছন্দ। মা জোর করতাছে ভাইজান রে। আমার মনে হয় না ভাইজান বেশিক্ষণ না করতে পারবো। সে মায়ের কথা জান দিয়া মানে। মায়েরে ভালোবাসে।
– এখন আমি কি করতে পারি শাওন ভাই?
– তুই না কইরা দে চারু। আমি মইরা যামু তোরে ছাড়া। তোরে অন্য কারোর লগে দেখতে পারমু না আমি। আমার উপর একটু দয়া কর চারু।
– আমার হাতে কিছু নাই শাওন ভাই। বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে বলে ঠিক করে নিয়েছে।
– আর তুই বিয়া কইরা নিবি? আমার দিকে তাকা চারু। আমারে ভালোবাসোস না তুই?
– না।
– আমার দিকে তাকায়া বল।
চারু অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। শাওনকে কি বলবে ও? কিই বা বলার আছে ওর?
– কি হইলো বল। আমার দিকে তাকা চারু। আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নাই তোর কাছে? আমি তোরে ভালোবাসি আর কতবার কইলে তুই বুঝবি? আমার চোখের পানির অভিশাপ লাগবো না তোর? ক্যামনে বিয়া কইরা সুখি হবি তুই?
– তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো শাওন ভাই?
– ভয় দেখাইতাছি না। তোর কাছে ভিক্ষা চাইতাছি। আমারে একটু দয়া কর চারু। আমি মইরা যাইতাছি। যতবার আমার দুপুরের কথা মনে পড়ছে তুই ভাইজানের পাশে বসছস ততবার আমার দম বন্ধ হইয়া আসতাছে। সব শেষ কইরা দিতে ইচ্ছা করতাছে। বিশ্বাস কর আমি সব মাইনা নিতে চাইছিলাম কিন্তু আমি পারি নাই। আমার মন তোরে অন্য কারোর লগে কল্পনা করতে পারে না। আমি জানি ভাইজান সব দিকে থেইকা আমার চেয়ে ভালো কিন্তু বিশ্বাস কর সে তোরে আমার চেয়ে বেশি ভালো কখোনো বাসতে পারবো না।
– এখানে আমার কি বলার বা করার আছে বলো? আমি তো নিরুপায়।
– না নিরুপায় হবি ক্যান? চল আমরা এইহান থেকে পালায়া যাই। কেউ পাইবো না আমাদের।
– বাজে কথা বলো না শাওন ভাই। আমি পালাতে পারবো না। আমি যদি পালাই তাহলে বাবা মা কে খুব মারবে। একেবারে মেরেও ফেলতে পারে। আর তাছাড়া আমাকে নিয়ে তুমি কোথায় যাবে?
– এত বড় পৃথিবীতে কি কোথাও আমাগো জায়গা হইবো না চারু?
– আমি বাসায় চলে যাও শাওন ভাই। আমার পক্ষে তোমার সাথে যাওয়া সম্ভব না। আমার ভাগ্যকে আমি মেনে নেবো।
– তুই আমারে চাস না চারু? তাহলে ক্যান আমার ভাইজান রে বিয়া করতে রাজি হবি? আমি ক্যামনে তোরে সবসময় আমার ভাইজানের পাশে দেখমু। দুপুরের কয়েক মূহুর্ত যেইখানে আমি ভুলতে পারছি না সেইখানে সারাজীবন তোরে ক্যামনে দেখমু?
চারু চুপ করে রইলো। কিছু বলার নেই তার কিন্তু তার জবাবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে শাওন। কি নিষ্পাপ দেখাচ্ছে তাকে। আচ্ছা এই ছেলেটার কি দোষ? সে তো বিনা স্বার্থে এতদিন যাবত ভালোবেসে এসেছে চারুকে। তাহলে এত ভালোবাসার পরেও সে কেনো চারুকে পাবে না? অন্যদিকে শিহাব, সে চারুকে চেনে না তাকে ভালোবাসে না তাও কেনো সে চারু কে পাবে? এইটা কেমন যুক্তি।
– চুপ কইরা আছস ক্যান চারু কথা বল। আমি তোরে তোর কাছে ভিক্ষা চাইতাছি চারু। আমারে ভিক্ষা দে। আমি সত্যিই থাকতে পারমু না তোরে ছাড়া। তুই ক্যামনে অন্য কারো হবি? তোর কি মনে হয় তুই অন্য কারো হইলে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবি? তুই অন্য কারো যেদিন হবি ওইদিন তুই আমার লাশ দেখবি মিলায়া নিস আমার কথা। আর তারপর কি তুই সুখে সংসার করতে পারবি? সুখে সংসার করার সময় মনে পড়বো না তোর জন্য আইজ একটা জীবন পৃথিবীতে নাই?
শাওন আর কিছু বললো না চুপচাপ হেটে চলে গেলো বহু দুরে। চারুও ফিরে এলো নিজের ঘরে। অদ্ভুত এক বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে তাকে। ঘরে ঢুকতেই সে হামিদ কে দেখতে পেলো। এসময় তার এখানে থাকা উচিত নয়। হামিদ কি কিছু টের পেয়ে গেলো?
– এত রাইতে তুই কই গেছিলি চারু?
– বা বাতরুমে গেছিলাম।
হামিদ আর কিছু বললো না। কলস থেকে পানি ঢেলে খেয়ে আবার নিজের সেই ছোট ঘরটিতে চলে গেলো। হামিদ চলে যাওয়ায় চারু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো সে।

সকাল ঘুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে মায়ের কাজে সাহায্য করছিলো চারু। ও ভেবে পায় না মা কিভাবে এত কাজ একা সামলায়। চারুকেও তো খুব বেশি কাজ করতে দেয় না আর ভারি কাজ একদমই না। মনোরমা চারুকে সকালের নাস্তা বানাতে পাঠিয়ে দিলো। কিছুক্ষণের মাঝেই নাজিমুদ্দিন আর হামিদ ঘুম থেকে উঠে যাবে। চারু চুপচাপ গিয়ে চুলায় ভাত বসিয়ে দিলো। রান্না হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই নাজিমুদ্দিন উঠে গেলো। না খেয়েই কোথাও একটা চলে গেলো সে। খুব একটা প্রয়োজন না হলে সে না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয় না। অবশ্য তার ফিরে আসতেও খুব বেশি সময় লাগলো না। হাতে কিছু প্যাকেট। এসেই মনোরমা কে ডাকতে শুরু করলো। মূহুর্তের মাঝেই মনোরমা হাজির। তার হাতে প্যাকেট গুলো দিয়ে তাকে কিছু একটা বললো তারপর চুপচাপ খেতে বসে গেলো সে। মনোরমা প্যাকেট গুলো নিয়ে ঘরের ভিতর চলে গেলো। এরই মাঝে ঘুম থেকে উঠে গেছে হামিদ। চারু দুজনকেই খাবার বেড়ে দিলো। খাবার সময় কারো মধ্যে বিন্দুমাত্র বাক্য ব্যয় হলো না। খাওয়া শেষে দুজন চলে গেলো তার নিজ নিজ গন্তব্যে আর চারুকে ডেকে নিলেন মনোরমা।
– কি হয়েছে মা?
– নে এইটা ধর। তৈরি হইয়া নে।
চারু প্যাকেট টা নিলো। খুবই সুন্দর একটা নতুন শাড়ি। চারুর কোনো শাড়ি নেই। সবই তার মায়ের। তবে এই শাড়ি টা কখনো দেখেছে কি না মনে করার চেষ্টা করছে সে।
– এইটা কার শাড়ি মা? আর তৈরি হবো কেনো?
– তোর শাড়ি। তোর বাপ জান আইজ কিনে নিয়া আসছে। আইজ নাকি জমিদার বাড়িতে আমাদের সবার দাওয়াত।
– কেনো?
– ক্যান আবার? হয়তো আইজই বিয়া পাকা করে ফেলবো।
চারুর চোখমুখ মলিন হয়ে যায়। চুপচাপ তৈরি হতে শুরু করে সে। এভাবে হুট করে বাবা তার বিয়ে দিয়ে দেবে তা কল্পনাও করেনি চারু। সবাই নতুন কেনা পোশাক গুলো পড়ে তৈরি হয়ে নিলো। হামিদ অবশ্য যেতে চায়নি। আজ গেলে তার বেতন থেকে ৫ টাকা কেটে নেওয়া হবে। কিন্তু নাজিমুদ্দিনের জোড়াজুড়ি তে তাকে যেতেই হলো। নাজিমুদ্দিন একটা গরুর গাড়ি ভাড়া করলো। ৫ টাকা ভাড়া। চারুর অবশ্য এসবে কোনো মাথা ব্যাথা নেই তবে এইটা সত্য দূরে কোথাও যাওয়া না হলে গাড়ি ব্যাবহার করে না তারা। জমিদার বাড়িতে হেটেই যাওয়া যায় তাও কেনো গাড়ি ভাড়া করলো করলো সেটা বুঝলো না সে। উত্তর টা অবশ্য কিছুক্ষণের মাঝেই পেয়ে গেলো। জমিদার বাড়ি যাচ্ছে। খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না। নাজিমুদ্দিন হরেক রকমের জিনিস কিনছে। এতেও কোনো মাথা ব্যাথা নেই চারুর। হয়তো সে আগ্রহ নিয়ে দেখতো যদি তার বিয়ে টা শাওনের সাথে ঠিক করা হতো। নাজিমুদ্দিন গাড়িতে উঠে আসতেই মনোরমা প্রশ্ন করলো,
– আপনে এত ট্যাকা কই পাইলেন?
– সেইডা জাইনা তোমার কি কাম? আর চারুরে সাজাও নাই ক্যান? ও বাড়ির সবাই প্রথম বারের মতো চারুরে দেখবো। হামিদের মা তোমার যদি এট্টু আক্কেল হইতো।
মনোরমা কিছু বললেন না। এমনকি বাকি রাস্তাও প্রত্যেকে নিরুত্তর। জমিদার বাড়িতে পৌঁছাতেই তারা দেখলো একেবারে এলাহী কাজকর্ম চলছে এখানে। সবাই এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে কোনো না কোনো কাজ করছে। চারুকে দেখেই এগিয়ে এলেন জমিদার গিন্নি। তাদের অন্দরমহলে নিয়ে গেলেন। এখানে এসেই অবাক হয়ে গেলো চারু। বাইরে কি মানুষ দেখেছিলো এখানে তার চেয়েও বেশি মানুষ। এই প্রথম এত বড় একান্নবর্তী পরিবার দেখছে চারু। চারু এতদিন শুধু নিজের ঘরেরই চারজন সদস্য কে পরিবার মনে করতো। অবশ্য সেটা একক পরিবার। প্রকৃতপক্ষে একান্নবর্তী পরিবার হওয়ার সুযোগ তাদের ছিলো না। দাদা দাদি মারা গেছে হামিদেরও জন্মের আগে। ওর বাবা রা দুই ভাই। বছর সাতেক আগে কাকা কাকীও ডাকাতদের হাতে নিহত হয়েছে। বেচে আছে শুধু তাদের এক মেয়ে শেফালী। সেও আবার থাকে তার মামার বাড়িতে থাকে।(গল্পের আসল লেখিকা স্নেহা ইসলাম প্রিয়া) ঘরে অবশ্য আগে এত মানুষ ছিলো না। চারু আসছে শুনে সবাই ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে। অনেকের মাঝেই বেশ আভিজাত্য দেখা যাচ্ছে। তারা সবাই নিশ্চয়ই শহর থেকে এসেছে। এর জন্যই এত মানুষ জন। চারুকে দেখে প্রত্যেকেই কম বেশি প্রসংসা করলো। শাওন দূরে এক কোনায় বসে ঝাল আচার খাচ্ছে। তার চোখমুখ লাল হয়ে আছে। চোখ থেকে পানি পড়ছে তাও আচার খাওয়া থামচ্ছে না সে। এইটাই হয়তো তার রাগের বহিঃপ্রকাশ। শিহাব কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে সবাই ওকে বৌ মা সম্মোধন করতে শুরু করে দিয়েছে আর বাড়ির ছেলেমেয়েরা ভাবি ডাকছে। জমিদার গিন্নি কাকে যেনো ডাকলেন মিলি নামে। বেশ সুন্দর গোলাপি রঙের শাড়ি পড়া মেয়ে এগিয়ে এলো। তার শরীর থেকে আভিজাত্য যেনো নূরের মতো ছড়াচ্ছে। জমিদার গিন্নি মিলিকে বললেন,
– মিলি যা তো মা বৌ মা রে গিয়া বাড়িটা ঘুরায়া দেখা। সারাজীবন তো তার এইহানেই থাকতে হইবো।
– আসো ভাবি। আমার সাথে আসো।
মিলি চারুকে নিয়ে সেখান থেকে উঠে চলে গেলো। হামিদ, মনোরমা, নাজিমুদ্দিন সবাই ওখানে বসেই গল্প করতে লাগলো,
– ভাবি আমি মিলি। বয়সে তোমার চেয়ে ছয় বছরের বড় হলেও শিহাব ভাইয়ার দশ বছরের ছোট। ও তোমাকে তো পরিচয়ই দেওয়া হয়নি, আমি শিহাব ভাইয়ার ছোট চাচার বড় মেয়ে।
– আমি চারুলতা।
– আমি তোমাকে চিনি ভাবি।
– আমাকে ভাবি ডাকতে হবে না। আমি তো আপনার অনেক ছোট।
– কি বলো ভাবি ডাকতে হবে না? এই পরিবারের নিয়ম সম্পর্ক মেনে সবার সাথে আচরণ করতে হবে। বয়স দেখে নয়। তুমি আমার ছোট বলে কাউকে নাম ধরে ডেকে ফেলো না যেনো। আগে সম্পর্ক জেনে নিবে। আর আমাকে আপনি ডাকার প্রয়োজন নেই। আমার সাথে মানিয়ে নাও বুঝলে? আমার সাথেই থাকতে হবে তোমাকে।
– তোমার সাথে থাকতে হবে কেনো?
– আমার সাথে থাকবে না তো কি ভাইয়ার সাথে থাকবে?
মিলি হেসে উঠলো,
– সরি ভাবি মজা করছিলাম। তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না। চলো আগে তোমাকে তোমার হবু ঘর দেখাই।
– হবু ঘর?
– হুম। যে ঘরে তুমি পরবর্তীতে থাকবে সেটা হবু ঘর। অর্থাৎ শিহাব ভাইয়ার ঘর।
মিলি তাকে একটি ঘরে নিয়ে গেলো। বেশ সাজানো গোছানো ঘর। ঘরে শিহাবের একটি সাদা কালো ছবিও দেখা যাচ্ছে। তুমি ঘরটা ঘুরে দেখো আমি আসছি।
– কোথায় যাও?
– আরে এক্ষুনি চলে আসবো। তুমি থাকো।
মিলি চলে যেতেই চারু ঘরটা একবার দেখলো। ঘরের সাথে বেশ সুন্দর একটা লাগোয়া বারান্দাও রয়েছে। এমনকি টেবিলেও দেখা যাচ্ছে একটা টেলিফোন। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে গ্রামে সেখানে কেউ টেলিফোন কেনে না আর শিহাব নিজের ঘরেই টেলিফোন রেখে দিয়েছে। বাড়িতে নিশ্চয়ই একটা টেলিফোন নেই। তাহলে সেটা শিহাবের ঘরে থাকতো না। এরমাঝেই চারু দরজা বন্ধ করার শব্দ পেতেই চমকে উঠলো। সেদিকে ঘুরে তাকাতেই দেখলো দরজা শিহাব বন্ধ করেছে।
– আপনি? কি হলো, আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেনো?
#Shuvra_Priya (স্নেহা)

(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)

To Be Continued….