আর একটিবার পর্ব-৮+৯

0
227

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৮

গালে, গলায় ছোঁয়া পেয়ে সাগরিকার ঘুম ভাঙলো৷ উঠে দেখে শ্রাবণ রুমাল দিয়ে তার গলা মুছে দিচ্ছে। সাগরিকা ঘরে চোখ বুলালো। ঘর না যেন মরুভূমি। সাগরিকা উঠতে নিলো কিন্তু শ্রাবণ বাঁধা দিলো- “শুয়ে থাকো, গরমের কারণে তুমি ছটফট করছিলে বলে ঘাম মুছে দিচ্ছিলাম।”
“এত গরমে ঘুম আসবে না।”
সাগরিকা উঠে বসলো। পেটে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো। পেট ধরে চোখ চেপে ধরে বসে রইল কিছুক্ষণ। শ্রাবণ সাগরিকার পিঠে হাত রেখে কপাল ছোঁয়া চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল- “খারাপ লাগছে? ডাক্তারকে কল দিয়ে আসতে বলবো?”
সাগরিকা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল-
“না আমি ঠিক আছি। এসি বন্ধ করে রেখেছো কেন?”
“বন্ধ না, এসি চলছে না। হয়তো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর ফ্যানের বাতাসও গায়ে লাগছে না।”
সাগরিকা ওহ বলে বিছানা ছেড়ে ধীরে ধীরে নামলো। উঠে দেখে সোফার উপর তার জামা বের করে রাখা। সাগরিকা ঘাড় ঘুরিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ বিছানা ঠিক করছে। সাগরিকা লম্বা নিশ্বাস ফেলে জামা নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। শ্রাবণ ঘর গুছিয়ে রান্নাঘরে গেল। কখনো রান্না করেনি। আজ না-হয় চেষ্টা করা যাক। কিন্তু কোথায় কি রাখা তা জানে না। কাজের লোককে জিজ্ঞেস করে আটা বের করলো।
.
.
রিকশা থেকে নেমে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতেই কেও সাঈদের পেছন থেকে বলল- “আসসালামু আলাইকুম স্যার।”
সাঈদ পেছনে ফিরে দেখে প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়ে ও ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট জেসমিন দাঁড়িয়ে আছে। সাঈদ হেসে সালামের উত্তর নিয়ে ভাড়া মিটিয়ে জেসমিনের বরাবর মুখ করে বলল- “আজ আইসিটি না পারলে তোমার নামে লম্বা লেকচার দিয়ে আসবো স্যারকে।”
জেসমিন মুখ লটকিয়ে বলল- “কেমন আছি জিজ্ঞেসও করলেন না। দেখার সাথে সাথে পড়াশোনার আলাপ।”
“এখন আমরা কলেজের সামনে তাই আমরা শুধু পড়াশোনার কথা বলবো।”
“স্যার আপনি প্রচুর বোরিং।”
সাঈদ শব্দ করে হাসলো। কেন যেন তার খুব বিরক্ত লাগে জেসমিন মেয়েটাকে। প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়ে বলে কিছু বলে না। জেসমিন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে সাঈদের দিকে। সাঈদ তার চাহনি দেখে হাসি থামিয়ে বলল- “ক্লাসে যাও এখন। আর তোমার পড়া চোর বান্ধবীদের বলো গিয়ে হোমওয়ার্ক না করলে তারাতাড়ি করে রাখতে নাহলে খবর আছে।”
“কোন চ্যানেলে স্যার?”
সাঈদ কপাল কুঁচকে তাকাল তার দিকে। জেসমিন জিহ্বায় কামড় দিয়ে মাথা নিচু করে বলল- “আই এম সরি স্যার”
“বেশি দুষ্টুমি করা ভালো না। যাও এখন।”
জেসমিন মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। সাঈদ লম্বা নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো।
.
.
ইর্তেজা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আছড়াচ্ছে। আজ ডিউটি নেই। শ্রাবণ তাকে ২ দিনের ছুটি দিয়েছে। কিন্তু তার মন চাচ্ছে যেতে। আবার আজ ইরিনাকে নিয়ে হসপিটাল যাবে। তাই সে চেয়েও যেতে পারবে না। ইর্তেজা চুল ঠিক করে খাটে বসে জুতা পরতে লাগলো। তখনই ঝর্ণা এসে বলল- “ভাইজান আপারে জামা বদলায় দিছি।”
“তোমাকে ধন্যবাদ। টেবিলের উপর খাবার রাখা আছে খেয়ে নিও। আর বাসায়ই থেকো আমরা এসে পরবো।”
“আমার লেইগ্যা কেন খাবার বানাইলেন?”
“বাহ রে, তুমি আমার বোনের এত খেয়াল রাখো আমি কি তোমার জন্য খাবার বানাতে পারবো না। তুমি না থাকলে কি যে হতো।”
ঝর্ণা হাসলো। ইর্তেজাও জবাবে হাসি দিয়ে বলল-
“এখন আমরা আসি।”
“আইচ্ছা”
ঝর্ণা চলে গেল ইরিনার ঘরে। ইর্তেজা তৈরী হয়ে আর একবার সব রিপোর্ট চেক করে নিলো। ব্যাগে সব রেখে ঘর থেকে বের হয়ে ইরিনার ঘরে গেল। ইরিনা বিরক্ত ভাব নিয়ে খাটে বসে আছে। ইর্তেজা কিছু বলল না। রিপোর্টের ব্যাগটা ইরিনার পাশে রেখে বলল- “আমি রিকশা নিয়ে আসছি তুমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো।”
ইরিনা মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। ইর্তেজা মুচকি হেসে বাহিরে চলে গেল। রিকশা নিয়ে দাঁড় করিয়ে বাসায় আসলো। ঝর্ণার হাতে ব্যাগ দিয়ে সে বোনকে কোলে তুলে বাহিরে গেল। ইরিনাকে রিকশায় বসিয়ে বাসায় এসে ঝর্ণার কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে আবার বাহিরে গেল৷ ইরিনা শুধু নিঃশব্দে ভাইকে দেখছে। তার জন্য এত কষ্ট। দিন দিন ইরিনা যেন ঋণি হয়ে যাচ্ছে ইর্তেজার কাছে। হসপিটাল গিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে গেল তারা। প্রতিবারের মতো চেকআপ করিয়ে ঔষধ নিলো। এবার ঔষধ দু’টো কমিয়েছে৷ ইর্তেজা বেশ খুশী। কারণ ডাক্তার বলেছে ইরিনা আগের থেকে অনেকটা সুস্থ হয়েছে। এখন সে পায়ের তলায় কাতুকুতু দিলে অনুভব করতে পারে। বাসায় যাওয়ার পথে ইরিনার বার বার ইর্তেজার দিকে তাকাচ্ছে। ইর্তেজা বিষয়টা খেয়াল করে ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল- “কি দেখছো আপু?”
“তোর হাসি, এভাবেই হাসতে থাক সবসময়। খুব শান্তি লাগে।”
“আমি আজ অনেক খুশী। বলেছিলাম না তুমি সুস্থ হবে? দেখলে মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা কাওকে নিরাশ করেন না।”
ইরিনা মুচকি হেসে ইর্তেজার মাথায় হাত বুলালো।
.
.
ফ্রেশ হয়ে সাগরিকা নিচে নামলো। হলরুমে আসতেই সে পুড়া গন্ধ পেল। গন্ধ রান্নাঘর থেকে আসলো। সাগরিকা দৌড়ে রান্নাঘরে গেল। গিয়ে দেখে শ্রাবণ পরোটা ভাজছে। ভাজছে বললে ভুল হবে পুড়িয়ে ফেলছে। সাগরিকা অবাক হয়ে রান্নাঘরে চোখ বুলালো। সে রান্নাবান্না কম করলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে সবসময় রান্নাঘর৷ সাগরিকা শ্রাবণের দিকে তাকাল। চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে ছেলেটা। ঘাম দিয়ে যেন গোসল করেছে। সাগরিকা দ্রুত গিয়ে বলল- “কি করছো এগুলা? সরো এখনই।”
“তুমি আসলে কেন? যাও ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসো আমি নাশতা করে আসছি।”
সাগরিকা চোখ মুখ কুঁচকে একটা পরোটা হাতে তুলে বলল- “এটা নাশতা?”
শ্রাবণ মন খারাপ করে বলল- “কোনোদিন বানাই নি বলে এমন হয়ে গিয়েছে।”
“কোনোদিন বানাও নি তো এখন কেন মাতব্বরি করছো? বের হও আমার রান্নাঘর থেকে।”
“আচ্ছা আচ্ছা রাগ করছো কেন? পরিষ্কার করে দিচ্ছি এক মিনিট।”
সাগরিকা শ্রাবণের দিকে হাত জোড় করে বলল- “রিকুয়েষ্ট করছি শ্রাবণ যাও তুমি আমি এসব দেখে নেবো। আমার প্রিয় রান্নাঘরের অবস্থা নাজেহাল করে দিলে।”
শ্রাবণ কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাগরিকা তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। শ্রাবণ আর কিছু বলার সাহস পেল না। চুপচাপ সব রেখে রান্নাঘর থেকে বের হলো। সাগরিকা তার উদ্দেশ্যে উঁচু স্বরে বলল- “গিয়ে গোসল করে জামা বদলাও। এসে যদি এই অবস্থায় দেখি খবর আছে।”
শ্রাবণ সাগরিকার কথা শুনে মুচকি হেসে উপরে চলে গেল। সাগরিকা চুলা বন্ধ করে সব পরোটা ফেলে দিলো। নতুন করে আটা বেলে পরোটা বানালো। শ্রাবণ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সাগরিকা এক হাত কোমড়ে রেখে পরোটা ভাজছে৷ কপালে আটা লাগানো। শ্রাবণ মুচকি হেসে ধীরপায়ে হেটে গেল। সাগরিকার পাশাপাশি দাঁড়াতেই সাগরিকা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল- “আবার আসছো কেন? যাও এখনই। খুব কষ্টে সব পরিষ্কার করেছি।”
“না না আমি আর কিছু করছি না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবো।”
সাগরিকা আর কিছু বলল না। নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। সাগরিকার নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখে শ্রাবণ ঢোক গিলল। এত আকর্ষণীয় কেন মেয়েটা? শ্রাবণকে যেন সবসময় কাছে টানে৷ শ্রাবণ আলতো করে সাগরিকার নাক ছুঁয়ে ঘাম মুছে দিলো। সাগরিকা তাকাল শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ মুচকি হেসে সাগরিকার কপালে লাগা আটা মুছে দিতে দিতে বলল-

একটা মানুষের প্রেমে এতবার পড়া যায় আগে জানতাম না।”
সাগরিকা চুলা বন্ধ করে বলল- “নাশতা তৈরী। তুমি গিয়ে বসো আমি আসছি।”
বলেই সাগরিকা ঘুরে দাঁড়াল। শ্রাবণ তাকে পেছন থেকে ঘরে ঘাড়ে থুতনি রাখলো। সাগরিকার অস্বস্তি হলো ভীষণ৷ বিরক্ত হয়ে বলল- “বাহিরে কাজের লোকেরা আছে ছাড়ো আমায় কেও এসে পরবে।”
“সমস্যা কোথায়? আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরেছি।”
“এটা কোনো মুভি না শ্রাবণ। স্বামী স্ত্রী বলেই আমাদের লজ্জা থাকা উচিত।”
শ্রাবণ সাগরিকাকে ছেড়ে হাসি মুখে বলল- “বাহ আমার বউ বড়ো হয়ে গিয়েছে। কতো সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারে।”
“বড়ো হবো না? একজন স্ত্রী হওয়ার সাথে সাথে একজন মা-ও আমি।”
সাগরিকার কথা শুনে শ্রাবণ থমকে গেল। বুকের বা পাশে ব্যাথা অনুভব করলো। সাগরিকার হাত ধরে বলল- “রেগে বললে কথাটা তাই না?”
সাগরিকা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল- “একদম না, বলেছি না আমি রাগ করি নি তোমার সাথে? হ্যাঁ আমাদের সন্তান এই দুনিয়ায় আসতে পারেনি এর জন্য আমার মন ভীষণ খারাপ। কিন্তু ভাগ্যের লিখা তো পরিবর্তন করা সম্ভব না তাই না? সে আসে নি দুনিয়ায় কিন্তু আমাকে মা হওয়ার অনুভূতি তো অনুভব করিয়েছে। ক্ষণিকের জন্য হলেও আমার মধ্যে ছিল সে।”
শ্রাবণ সাগরিকাকে বুকে টেনে নিলো। জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখলো। সে বুঝতে পারছে না কি বলবে সাগরিকাকে। সাগরিকা শ্রাবণের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল- “ভুলে যাও সব। আমি অনেক ভেবেছি। আর ভালো লাগে না একটা বিষয় নিয়ে তিন চারদিন তর্ক করতে। আমি ভেবে নিয়েছি। আমাদের মধ্যে ঝগড়া হোক আমি টেনে লম্বা করবো না।”
শ্রাবণ সাগরিকাকে ছেড়ে তার দিকে তাকিয়ে কপালে ঠোঁট ছোয়ালো। সাগরিকা নিজেকে ছাড়িয়ে বলল-
“অনেক হয়েছে যাও এখন আমি আসছি।”
“সাহায্য করি।”
“লাগবে না আমি পারবো।”
“আমি তো করবোই।”
বলেই শ্রাবণ প্লেট আর গ্লাস বের করতে লাগলো। সাগরিকা নিঃশব্দে হাসলো।
.
.
ইর্তেজা ছাদে এসেছে। গতকাল ঝর্ণা কাপড় শুকাতে দিয়েছিল নামানো হয়নি। যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে ভেবেছে। রেলিং-এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইর্তেজা। ভালো লাগছে না তার। এই সময় সিগারেটের খুব প্রয়োজন। পকেট থেকে সিগারেট বের করে জ্বালিয়ে নিলো। সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ আগে রোদ ছিল কিন্তু এখন আকাশে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। ইর্তেজা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অতীতের এক সুন্দর পৃষ্ঠা খুলে বসলো।

অতীতের কিছু অংশ…..
তখন শীতকাল চলছিল। শীতের সকালে ভার্সিটি যেতে খুব খারাপ লাগে। প্রথমত শীত দ্বিতীয়ত আলসেমি। কম্বল মুড়ি দিয়ে বেখেয়ালি ঘুমাচ্ছে ইর্তেজা। তার মোবাইল টন বাজছে। বিরক্ত হয়ে হেলেদুলে উঠে বসলো। হাতাতে হাতাতে মোবাইল নিয়ে দেখে স্ক্রিনে নাম প্রিয় নাম ভাসছে “মাহা”। ইর্তেজা মুচকি হেসে রিসিভ করে কানে ধরলো।
“জি হুকুম?”
অপরপাশ থেকে ঝড়ের বেগে বকা ছুঁড়ে মারলো মাহা, “ইডিয়ট কোথাকার, স্টুপিট কোথাকার, কেয়ারলেস কোথাকার কোথায় তুই?”
“তোর হৃদয়ে, খুঁজে দেখ পেয়ে যাবি।”
“ওহ তাই? তো স্যার আজ রং এর স্যান্ডেল দিয়ে মার খাবেন বলুন।”
“আপনার যে রং এর ইচ্ছে করে।”
“উফফফ ইর্তেজা মজা সাইডে রাখ এখন। তারাতাড়ি ভার্সিটি আয়। আমাদের ভোলাভালা আফজালকে আবারো এক মেয়ে টুপি পড়িয়ে চলে গিয়েছে। বেচারা মেয়েদের মতো কাঁদছে।”
“মেয়েদের মতো? আচ্ছা আমি আসার সময় ওর জন্য লিপস্টিক আর চুড়ি কিনে নিয়ে আসবো এখন ওকে থামতে বল।”
“ইর্তেজা”
মাহার রাগান্বিত কন্ঠ শুনে ইর্তেজা হাসতে হাসতে বলল- “সরি সরি, আসছি আমি। গিভ মি থার্টি মিনিটস।”
“নো, অনলি ফিফটিন মিনিটস। হারি আপ ম্যান হারি আপ।”
বলেই মাহা কল কেটে দিলো। ইর্তেজা মুচকি হেসে স্ক্রিনে তাকাল৷ এই মেয়েটা এমন কেন সে ভেবে পায় না। বন্ধুদের জন্য জানপ্রাণ লুটিয়ে দিতে পারবে৷ ইর্তেজা দ্রুত উঠে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে গেল। বাহিরে গিয়ে দেখে তার মা রান্নাঘর থেকে বের হচ্ছে। ইর্তেজা মাকে দেখে দ্রুত মায়ের দিকে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো। এটা তার প্রতিদিনের কাজ। মা হেসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল- “কি ব্যাপার আমার রাজপুত্র আজ এত তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠল যে? নিশ্চয়ই মাহা বলেছে আজ তাড়াতাড়ি যেতে?”
ইর্তেজা মাকে ছেড়ে লজ্জামাখা হাসি দিয়ে মাথা নাড়াল। মা কিছু বলার আগেই পাশ ছেকে ইরিনার কন্ঠ ভেসে আসলো। ইরিনা ঘড়ি পড়তে পড়তে এগিয়ে আসলো৷ “হ্যাঁ হ্যাঁ আম্মু সব ভালেবাসা নিজের ছেলেকেই দাও৷ মেয়েকে তো রাস্তা থেকে তুলেছিলে।”
মা কিছু বলতে চেয়েও বললেন না। উনি জানেন এখন কি হবে। ইর্তেজা বলল- “না আপু ভুল বললে, এলাকায় একজন ভদ্রমহিলা আসে না ঘরে ঘরে গিয়ে মাছ কাটার ছাই বিক্রি করার জন্য। উনি বস্তায় ভরে তোমাকে নিয়ে আসছিলেন। তোমার কান্নার শব্দ শুনে আম্মুর ভীষণ মায়া লাগছিল। তাই তোমাকে নিয়ে নিয়েছে।”
ইরিনা রেগে গেল। দৌড়ে আসলো ইর্তেজার দিকে। ইর্তেজাও দৌড়ে একবার এখানে যাচ্ছে আর একবার ওখানে৷ ইর্তেজা ইরিনার সাথে দৌড়ে পারবে না৷ ইরিনা একজন ম্যারাথন চ্যাম্পিয়ন। ইর্তেজার কলার ধরে ইরিনা পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল- “হা হা বাচ্চু এবার কোথায় পালাবে?”
“আপু মাফ করে দাও৷ আমি তো দুষ্টুমি করছিলাম।”
ইর্তেজা মুখ লটকিয়ে কথাটা বলল। ইরিনার মায়া লাগলো ভীষণ। ঠিক এইভাবেই ইর্তেজা ছাড় পেয়ে যায় সবসময়। ইরিনা তাকে ছেড়ে সোফায় বসলো। জুতার পড়তে পড়তে মায়ের উদ্দেশ্যে বলল- “আজ ব্যাডমিনটন প্র্যাকটিস আছে তাই আসতে দেরি হবে।”
“কিন্তু ফাইনাল খেলার তো আরো ১ মাস বাকি।”
“এটা এমন তেমন ম্যাচ না। আমাদের ভার্সিটির সম্মানের বিষয়। তাই মন দিয়ে প্র্যাকটিস করতে হবে।”
ইর্তেজা বলল- “তুমি চিন্তা করো না আপু তোমরাই জিতবে আমি জানি।”
“তোর বোন ম্যারাথন চ্যাম্পিয়ন ব্যাডমিনটন চ্যাম্পিয়ন না। তাই আগে থেকে আশা ধরে বসে থাকিস না।”
ইর্তেজা মুচকি হেসে ইরিনার গাল টেনে বলল- “আমি লিখে দিতে পারি।”
“হয়েছে হয়েছে যা এখন তোর মেহরুন্নেসা ডাকছে তোকে।”
ইর্তেজা লজ্জা পেল। ইরিনা ভেংচি কেটে বলল- “ছি বড়ো বোন এখনো সিংগেল আর ও প্রেমিকা নিয়ে ঘুরছে ফিরছে।”
মা মিটিমিটি হাসছে ছেলে মেয়ের কথা শুনে। তিনজন একসাথে নাশতা করে বেরিয়ে পরলো। তাদের মা একটা গার্মেন্টসের সুপারভাইজার। সেই বেতন দিয়েই তাদের সংসার চলে। ইরিনা আর ইর্তেজা পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটো বাচ্চাদের পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ বের করে। এইভাবেই চলছে তাদের হাসিখুশি পরিবার।

.
গান গাইতে গাইতে এগিয়ে যাচ্ছে ইর্তেজা। ইরিনা আর ইর্তেজা আলাদা আলাদা ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে। ইরিনা শেষ বর্ষে আর ইর্তেজা প্রথম বর্ষে। কিছুক্ষণ আগে রোদ ছিলো আর এখন মেঘের চাদরে ঢেকে আছে আকাশ। ভার্সিটিতে গিয়ে বন্ধুদের কাছে গেল ইর্তেজা। সেখানে ৫ জন বসে আছে। মাহা, আফজাল, বিথি, আলিয়া, রাফসান। ইর্তেজাকে নিয়ে তারা ৬ বন্ধু। আফজাল এখনো ফুপাচ্ছে বসে বসে৷ ইর্তেজা তাকে দেখেই হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পরলো৷ মাহা আফজালকে শান্তনা দিচ্ছিল। ইর্তেজার হাসি দেখে পায়ের জুতা খুলে তার দিকে ছুঁড়ে মারলো। জুতা লাগলো ইর্তেজার বুকে। ইর্তেজা তবুও হাসছে। মাহার জুতা নিয়ে বলল- “আরে বাহ লাল রং এর নতুন জুতা। কত নিয়েছে রে?”
“কেন তোর লাগবে? পড়বি তুই? বল আমায় কিনে দেবো নি।”
“আরে না আফজালের জন্য লাগবে। দেখ কিভাবে কাঁদছে।”
বলেই ইর্তেজা আবার হাসতে লাগলো। আফজালের কান্না আরো বেড়ে গেল। মাহা রাগে ফুঁসছে। এত হাসে কেন ছেলেটা? কখনো সিরিয়াস হয় না। উঠে হনহন করে ইর্তেজার দিকে এগিয়ে আসলো। ইর্তেজার বরাবর বসে বলল- “যেদিন আমাকে হারাবি তখন বুঝবি আফজালের কষ্ট।”
বলেই মাহা তার জুতা নিয়ে পায়ে পড়ে চলে গেল। ইর্তেজা থতমত খেয়ে বসে আছে। মাহা তো সিরিয়াস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মাহার কথাটা তার বুকে গিয়ে সুঁইয়ের মতো লাগছে৷ ইর্তেজা সবাইকে অপেক্ষা করতে বলে মাহার পেছনে গেল। মাহা আম গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। ইর্তেজা এসে তার পাশাপাশি হেলান দিয়ে দাঁড়াল। মাহা মুখ ঘুরিয়ে ফেলল তাকে দেখে। ইর্তেজা মাহার হাত ধরে বলল- “মাফ করে দে। আমি দুষ্টুমি করছিলাম।”
মাহা উত্তর দিলো না। ইর্তেজা মুচকি হেসে মাহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল- “ওয়াদা করছি আর এমন করবো না।”
মাহা ইর্তেজার দিকে তাকাল। মাহার চাহনি দেখে ইর্তেজার নিশ্বাস ভারী হয়ে গিয়েছে। তার ইচ্ছে করে হৃদয় ছিঁড়ে মাহাকে ভেতরে ভোরে রাখতে। যাতে কেও মাহাকে তার থেকে দূর না করতে পারে। মাহা ইর্তেজার কলার ঠিক করে দিতে দিতে বলল- “সত্যি বলছিস তো? তুই জানিস আমার জন্য আমার বন্ধুরা কি। তাই কখনো তাদের কষ্ট দেখে হাসবি না।”
“ওকে ম্যাডাম, এখন আমাকে ক্ষমা দিয়ে হাসুন। আপনার হাসি না দেখলে আমার দিন খারাপ যায়।”
মাহা খিলখিল করে হেসে উঠল। ইর্তেজা মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছে৷ হঠাৎ ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি নেমে আসলো। ছোটো ছোটো বিন্দু ঝরতে ঝরছে হঠাৎ বিন্দুর বেগ বেগ বেড়ে গেল। মাহা বৃষ্টি দেখে লাফাতে লাফাতে বলল- “আজ ক্লাস করবো না। চল বৃষ্টিতে ভিজি।”
“না তোর ঠান্ডা লেগে যাবে।”
“কিছু হবে না আয়।”
মাহা ইর্তেজাকে টেনে বৃষ্টির নিচে নিয়ে গেল। মাহাকে দেখছে আর হাসছে ইর্তেজা। বৃষ্টির কারণে সবাই যার যার ক্লাসে চলে গিয়েছে কয়েকজন বাদে। কয়েকজন বলতে ইর্তেজার বন্ধুরা শুধু। তারা সবাই বৃষ্টিতে ভিজছে। মাহা হাতের মুঠোয় পানি জমিয়ে ইর্তেজার চেহারায় মারলো। ইর্তেজা হেসে মাহার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো। মাহা চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল- “কি করছিস সবাই দেখছে।”
“দেখুক, সবাই জানে আমরা একে অপরের কি হই।”
“কি হই?”
ইর্তেজা তাকিয়ে রইল মাহার দিকে। মাহার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে। ইর্তেজা মাহার কপাল ছোঁয়া চুলগুলো সরিয়ে কপালের সাথে কপাল ঠেকালো। তার বন্ধু বান্ধবরা তাদের ছবি তুলছে আর মজা করছে। মাহা লজ্জায় ইর্তেজার বুকে মুখ লুকালো।

বর্তমানে…..
ঝর্ণার ডাকে ইর্তেজার হুঁশ ফিরলো। ইর্তেজা চারপাশে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি পড়ছে। কতক্ষণ ধরে পড়ছে সে জানে না৷ সে ভিজে একাকার। ঝর্ণা আবার বলল- “ভাইজান তারাতাড়ি আহেন আপা ডাকতাসে।”
“তুমি যাও আমি আসছি।”
ঝর্ণা চলে গেল। ইর্তেজা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে এক সময় মাহাকে ওয়াদা করেছিলো তাকে ছাড়া আর কাওকে ভালোবাসবে না৷ কিন্তু সে সাগরিকার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছিল এটা জানার পরও সে শ্রাবণের স্ত্রী। বুকে ব্যাথা অনুভব করলো। ইর্তেজা রাগে হাতমুঠো শক্ত করে হনহন করে এগিয়ে গিয়ে দেয়ালে সজোরে ঘুষি মারলো। না, বুকের ব্যাথা করছে না। আবারো সজোরে ঘুষি মারলো। এখনো কমছে না। হাত কেটে রক্ত ঝরছে। বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গেল রক্ত৷ ইর্তেজা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। রক্তে মাখা হাত দিয়েই চুল চেপে ধরলো। মাহার কথা ভাবলেই তার নিজেকে পাগল মনে হয়৷ মাহা হয়তো এখন অন্য কারোর সাথে বেশ সুখে আছে। সে মাহাকে ভুলতে চায় তাই হয়তো অন্য কারোর কথা ভাবছিল। কিন্তু মন তো অন্য কাওকে জায়গা দিতে চায় না। ইর্তেজা আকাশের দিকে তাকাল। বৃষ্টির পানি তার অশ্রু ঢাকতে পারছে না। বুকের যন্ত্রণা বাড়ছে তার। ইর্তেজা চিৎকার করে উঠল। সাথে আকাশও গর্জন করছে৷

চলবে……

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৯

ইর্তেজা মুখ গোমড়া করে রেখেছে। ইরিনা কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করছে না। ইর্তেজা ভাত মেখে লোকমা তুলে ধরলো ইরিনার দিকে। ইরিনার চাহনি দেখে বলল- “কি হলো? হা করো।”
ইরিনা ইর্তেজার হাত সরিয়ে বলল- “তোর কি হয়েছে এটা বল। কিছুক্ষণ আগে ভালো ছিলি। এখন মন খারাপ করে রেখেছিস।”
“কিছু হয়নি আপু।”
“আমি অনেকবার বলেছি আমাকে মিথ্যে বলে লাভ নেই।”
ইর্তেজা মাথা নিচু করে ফেলল। ইরিনা ইর্তেজার হাত ধরে বলল- “তুই বলিস আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড। বেস্টফ্রেন্ডের সাথে শেয়ার করবি না?”
ইর্তেজা একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল- “আমি খুব খারাপ জানো?”
ইরিনা চমকে উঠল ইর্তেজার মুখে এমন কথা শুনে। আলতো করে ইর্তেজার গালে হাত রেখে বলল- “কি হয়েছে ইর্তেজা? প্লিজ আমাকে বল আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।”
“আপু তুমি বলতে না আমি খুব লয়াল?”
“হুম”
“একদম না, আমার মতো স্বার্থপর এই দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি আর নেই।”
“হঠাৎ এমন কথা বলছিস কেন?”
ইর্তেজা ইরিনার দিকে তাকাল। তার মনে হচ্ছে কেও তার গলা চেপে ধরেছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল- “আমার মনে হচ্ছে আমি মাহাকে ভুলে যাচ্ছি।”
বলেই ইর্তেজা মাথা নিচু করে ফেলল। ইরিনা অবাক হয়ে বলল- “এতে স্বার্থপরের কি আছে ইর্তেজা?”
“স্বার্থপরই তো, তুমি বিষয়টা বুঝতে পারছো না? আমি মাহাকে ভুলে যাচ্ছি। মেহরুন্নেসাকে ভুলে যাচ্ছি আমি।”
“তো কি হয়েছে? ২ বছর হয়ে গিয়েছে ওর চলে যাওয়ার। এখনো ওকে মনে ধরে তুই বাঁচতে চাস?”
“হ্যাঁ, কারণ ওকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।”
“পাগলদের মতো কথা বলিস না ইর্তেজা। যার ভালোবাসায় তুই নিজেকে বরবাদ করছিস সে এখন অন্য কারোর স্ত্রী।”
ইর্তেজার গলা কাঁপছে। খুব কষ্টে সে কান্না আটকে রেখেছে৷ ইরিনা আর কি বলবে বুঝতে পারছে না। ইর্তেজা ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল- “আমি ওকে ভুলতে চাই না আপু। আমি ওকে হারিয়ে বাঁচতে রাজি। কিন্তু এমন কারো প্রেমে পড়তে চাই না যাকে আমি কখনো পাবো না।”
“তুই কি বলছিস আমি বুঝতে পারছি না।”
ইর্তেজা মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। ইরিনার প্রশ্নের উত্তর সে কিভাবে দেবে বুঝতে পারছে না।
.
.
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুখ কুঁচকে ফেলল সাগরিকা। চোখ তুলে শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ কাপে চা ঢেলে পায়ের উপর পা তুলে কাপে চুমুক দিলো। দেয়ার সাথে সাথে সাগরিকার দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। সাগরিকা কাপ রেখে বলল- “আমি চিনি নিয়ে আসি।”
“আরে তুমি বসো আমি যাচ্ছি। ভুলেই গিয়েছি যে চায়ে চিনি দিতে হয়।”
শ্রাবণ দ্রুত হেটে রান্নাঘরে গেল। আজ শ্রাবণের ব্যবহার সাগরিকার বেশ ভালো লাগছে৷ এমন যদি প্রতিটা দিন হতো কতোই না ভালো কাটতো জীবন। সাগরিকা সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসলো। শ্রাবণ আসলো চিনি নিয়ে। সাগরিকা ও তার চায়ে চিনি মিলিয়ে বসলো। সাগরিকা সোজা হয়ে বসে বলল- “একটা কিছু চাই, দেবে?”
“বলে তো দেখো। তোমার জন্য সব করতে পারি।”
“হ্যাঁ পারো, তাই তো আমার কোনো কথা-ই শোনো না।”
শ্রাবণ শব্দ করে হাসলো। সাগরিকা মাথা নিচু করে বলল- “আব্বু আর নেই।”
শ্রাবণ থমকে গেল। অবাক দৃষ্টিতে সাগরিকার দিকে তাকিয়ে রইল। সাগরিকা মাথা তুলে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল- “আমি আর তুমি ছাড়া সূর্যের কেও নেই। ওর বয়সই কত তুমি বলো। কিভাবে একা থাকবে সে? ওকে কি আমাদের সাথে রাখা যায় না?”
“হুম, অবশেষে তোমার লোভী বাবা দুনিয়া ছেড়ে গেল। তাই তো বলি অনেকদিন ধরে কল দিয়ে বলছে না যে তার টাকা দরকার মদ খাবে।”
“মানুষটা চলে গিয়েছে এখন এমনটা না বললেই নয়?”
“আমি তো বলবোই? তার পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা ভাসিয়েছি আমি এই দুই বছরে।”
সাগরিকা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। ঠিক এই কারণেই তার শ্রাবণকে সহ্য হয় না। মৃত মানুষকেও সে রেহাই দেয় না। শ্রাবণ চায়ের কাপ রেখে বলল- “ঠিক আছে ডেকে নাও সূর্যকে। কিন্তু ওকে বলবে অকারণে যদি আমার সাথে না লাগতে আসে।”
“তাহলে তুমিও সহ্য করা শিখে নাও। কারণ কেরাসিন আর আগুনের সম্পর্ক খুব ভয়াবহ।”
শ্রাবণ বিরক্ত হলো। সাগরিকা হেসে বলল- “আচ্ছা আমি ওকে বুঝাবো। তার আগে ওয়াদা করো ওর সাথে ভালো ব্যবহার করবে।”
“সাগরিকা আমার চেহারা দেখে কি মনে হয় আমি গুন্ডা?”
সাগরিকা এক ভ্রু উঁচু করে তাকাল শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ আমতা আমতা করে বলল- “ইয়ে মানে, হ্যাঁ মানে গুন্ডা ছিলাম। মানে আমি বলছি যে..”
“হয়েছে থামো এবার। অফিস যাও নি কেন আজ?”
“তোমার সাথে সময় কাটাবো বলে।”
সাগরিকা তাকিয়ে রইল শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ মুচকি হেসে চায়ের কাপে চুমুক দিল।
.
.
সাঈদ ভয়ে কাঁপছে। হঠাৎ প্রিন্সিপাল স্যার ডাকে ডাকলো কেন বুঝতে পারছে না। সে তো ভালো মতোই ক্লাস নেয়। অফিসরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রস্তুত করলো সাঈদ। তারপর হাসিমুখে গিয়ে পারমিশন নিয়ে ভেতরে গেল। স্যারকে সালাম দিয়ে মুখ ঘুরাতেই চমকে উঠল। জেসমিন বসে আছে সোফায়। সাঈদ ভাবছে সে কি জেসমিনের সাথে বাজে ব্যবহার করেছে কখনো? না, তার কিছুই মনে পড়ছে না। হ্যাঁ জেসমিনকে এড়িয়ে চলে। কারণ মেয়েরা বেশ চিপকু৷ প্রিন্সিপাল স্যার সাঈদকে বসতে বলল। সাঈদ চেয়ারে বসে বলল- “স্যার আমার দ্বারা কি কোনো ভুল হয়েছে।”
“আরে না না, তুমি তো খুব ভালো মতো ক্লাস করাও।”
“ধন্যবাদ স্যার”
“আসলে সাঈদ জেসমিনকে তো দেখছোই তুমি। সে আইসিটিতে খুব খারাপ।”
“হ্যাঁ স্যার, তার বুঝতে খুব সময় লাগে। কিন্তু একবার বুঝে গেলে সব পারে।”
“হ্যাঁ সেটাই, সাঈদ আমি চাচ্ছি তুমি জেসমিনকে আলাদা ভাবে আইসিটি শিখাও।”
“কিন্তু স্যার আমি তো সবাইকে কোচিং করাচ্ছি।”
“জানি, আমি বলতে চাচ্ছি তুমি কলেজের ছুটির পর আমাদের বাসায় গিয়ে জেসমিনকে আলাদা সময় দিয়ে ভালো মতো পড়া শেখাবে।”
সাঈদ বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল৷ সে যত মেয়েটার কাছ থেকে দূর যেতে চায় তত কাছে যাচ্ছে। সাঈদ জেসমিনের দিকে তাকাল। জেসমিন মোবাইলে গেমস খেলছে। প্রিন্সিপালের মেয়ে বলে এত আরাম আয়েসে বসে আছে। সাঈদ না করবে কিভাবে বুঝতে পারছে না। স্যার বললেন- “তোমার কি কোনো সমস্যা আছে? টাকার চিন্তা করো না। আমি এর জন্যও তোমাকে আলাদা টাকা দেবো।”
সাঈদ স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল- “না স্যার, টাকার চিন্তা করছি না। আমি যদি আপনাকে আগামীকাল জানাই চলবে? আসলে আমার সময় বের করতে হবে।”
“ঠিক আছে জানিও তাহলে। সে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে৷ যদি এই সাবজেক্টে ভালো নাম্বার না পায়? আমি চাচ্ছি আমার মেয়েটা সবার থেকে ভালো করুক।”
“জি স্যার প্রত্যেক বাবা মা-ই এমনটা চান। আমি তাহলে আপনাকে আগামীকাল জানাবো।”
“ঠিক আছে”
পারমিশন নিয়ে সাঈদ অফিস-রুম থেকে বের হলো। তার সাথেই সবসময় কেন এমন হয়। এখন ইরিনার সাথে দেখা করার সময়টুকু তার কাছে থাকবে না। প্রিন্সিপাল স্যারকে যেভাবেই হোক না করতে হবে।
.
.
সাগরিকা আর শ্রাবণ পাশাপাশি হাঁটছে বাগানে৷ বৃষ্টি পড়ায় বাগান ভিজে আছে। বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে পা ভেজাতে বেশ ভালো লাগে। শ্রাবণ এখন বেশির থেকে বেশি সময় কাটাতে চায় সাগরিকার সাথে। ডাক্তার বলেছে এমন সময় রোগী ডিপ্রেসড হতে পারে৷ তাই তাকে হাসিখুশি রাখা প্রয়োজন। সাগরিকা হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো- “এত পরিবর্তন কিভাবে হলে তাও মাত্র ১ দিনে।”
“কেন তোমার ভালো লাগে নি আমার পরিবর্তন দেখে?”
“অবাক হওয়া এখনো শেষ হয়নি আমার। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।”
“কেন?”
“শ্রাবণ আহমেদ রান্না করছে। শ্রাবণ আহমেদের মুখে আজ কাজ কর্মের কথা নেই। শ্রাবণ আহমেদ আমার সেবা করছে। প্লিজ শ্রাবণ নিজের আসল রূপে আসো।”
শ্রাবণ থেমে গেল। সাগরিকাও থামলো তাকে দেখে। শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে দেখে শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সাগরিকা হেসে দিলো। শ্রাবণ বিরক্ত হয়ে বলল- “যত চেষ্টা করি তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করবো তুমি ততবার আমার রাগ ওঠাও।”
“এটাই তো আসল কথা। তোমার রাগ হয় আমার কথায়। থাক বাদ দাও। এখন ঝগড়া করতে চাই না আমি। জানি ক্ষণিকের জন্য তোমার এই পরিবর্তন। এই সুন্দর সময়টা নষ্ট করতে চাই না।”
“তোমার মনে হয় আমি এক্টিং করছি?”
“আমি এমনটা বলি নি শ্রাবণ।”
“সাগরিকা তোমার সমস্যা জানো কি? তুমি আমাকে কোনো রূপেই মেনে নিতে পারো না।”
শ্রাবণ রেগে হনহন করে চলে গেল। সাগরিকা দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা নিশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকাল। বৃষ্টি পড়ার পর আকাশ বেশ সুন্দর দেখায়৷ শ্রাবণ আবার হেটে আসলো। সাগরিকা তাকে দেখে মুচকি হাসলো। কিছু বলার আগেই শ্রাবণ বলল- “আমি অফিস যাচ্ছি। তুমি তৈরী হয়ে নাও। তোমাকে সূর্যের কাছে দিয়ে আমি চলে যাব।”
সাগরিকার হাসি উড়ে গেল। কিছু বলল না। এই মানুষটা শুধরাবে না সে জানে। শ্রাবণ চলে গেল। সাগরিকা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঘরে গেল। শ্রাবণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই বাঁধছে। সাগরিকা খাটে বসলো৷ শ্রাবণ রাগান্বিত কন্ঠে বলল- “তৈরী হতে বলেছিলাম।”
“যাব না আমি। ক্লান্ত লাগছে খুব।”
শ্রাবণ কিছু বলল না। দ্রুত তৈরী হয়ে চলে গেল। সাগরিকার চোখ গেল আলমারির দিকে৷ জামা সব এলোমেলো হয়ে আছে। সাগরিকা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। এগিয়ে গেল আলমারি গুছাতে।
.
.
আজ অতিরিক্ত সিগারেটের নেশা লাগছে ইর্তেজার। ছাদে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছে সে। বুকের জ্বালা সিগারেটের ধোঁয়া বানিয়ে বের করছে সে৷ হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল তার৷ পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে শ্রাবণ কল করছে। রিসিভ করে কানে ধরলো- “আসসালামু আলাইকুম বস।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, ইর্তেজা এখনই অফিস আসো।”
“সব ঠিক আছে তো?”
“এত প্রশ্ন করো না। তারাতাড়ি আসো।”
“জি”
ইর্তেজা কল কেটে ছাদ থেকে নামলো। ঝর্ণাকে ইরিনার সাথে থাকতে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে পরলো। অফিস বাসা থেকে দূর৷ একটা রিকশা নিয়ে রওয়ানা দিলো। অফিস পৌঁছে শ্রাবণের কেবিনে গেল। শ্রাবণ পকেটে হাত দিয়ে জানালার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। ইর্তেজা এগিয়ে গিয়ে বলল- “জি বস বলুন।”
শ্রাবণ পেছনে ফিরলো। শ্রাবণের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। ইর্তেজা চিন্তিত হলো।
“বস আপনি ঠিক আছেন তো?”
“একটা কথা জানানো ছিলো তোমাকে।”
“জি বস বলুন।”
“বসো আগে।”
ইর্তেজা চেয়ার টেনে বসলো। শ্রাবণও বসে লম্বা নিশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। ইর্তেজার চিন্তা বাড়ছে। হঠাৎ মাথায় আসলো সাগরিকার কিছু হয়নি তো?
“বস, ম্যাম ঠিক আছে তো?”
শ্রাবণ মাথা তুলে ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল- “হুম ও ঠিক আছে। ইর্তেজা মনোযোগ দিয়ে শুনো। তুমি জানো আমার ব্যবসায় অনেক লস হচ্ছে। আমি একদিকে সাগরিকার মন জয় করার চেষ্টায় আছি আর একদিকে ব্যবসা সামলাচ্ছি। সেদিন ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগায় আমি আরো ডুবে যাচ্ছি।”
ইর্তেজা মাথা নিচু করে ফেলল। শ্রাবণ যদি জানে সেদিন আগুন লাগার পেছনে ইর্তেজার হাত আছে। তাকে মেরেই ফেলবে। শ্রাবণ আবার বলল- “আমি অবৈধ ব্যবসা করি এটা জানলে কেও ফ্যাক্টরি গুলো কিনতে চাইবে না। আমি চাই তুমি যেভাবেই হোক আমার ৪ টা ফ্যাক্টরি বিক্রি করিয়ে দাও।”
ইর্তেজা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল- “হয়ে যাবে বস। কিন্তু আপনি কি করবেন এর পর?”
“খোঁটা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। সাগরিকা যেমন শ্রাবণ আহমেদ চায় আমি তেমন শ্রাবণ আহমেদ হয়ে দেখাবো। সে চায় আমি আমার সব অবৈধ কাজ বন্ধ করি। ঠিক আছে তা-ই হবে। যাতে এরপর থেকে আমার ব্যবহার দেখে ওর মনে না হয় আমি নাটক করছি।”
বলেই শ্রাবণ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।
“জানো আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। আমি তো না করছি না ইর্তেজা। আমি জানি আমি অনেক খারাপ। কিন্তু আমার কী ভালোবাসার অধিকার নেই? হ্যাঁ আমি অহংকার করি। আমার রাগ হয় সাগরিকার চোখে যখন নিজের প্রতি ভালোবাসা খুঁজে না পাই।”
“বস, দোষ আপনারই। আপনি ম্যামের মন জেতার চেষ্টা করেন নি। বরং তাকে ব্ল্যাকমেইল করে ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছেন। তার বাবাকে টাকা দিয়েছেন। ম্যাম মনে করে আপনি তাকে কিনে নিয়েছেন। একটা সাধারণ জিনিসের মতো মানুষকে কিনে নেয়া বিষয়টা কেমন দেখায় আপনিই বলুন।”
“তো কি করতাম আমি? আর আমার একা দোষ ছিল না। সাগরিকা আমাকে ধোঁকা দিয়েছিল। ঠিক এই কারণে আমি রাস্তা খুঁজে না পেয়ে তার বাবাকে ব্যবহার করেছি। ওর বয়ফ্রেন্ডকে মেরে….”
শ্রাবণ থমকে গেল কথাটা বলে। ইর্তেজা শ্রাবণের কথার মানে বুঝলো না। শ্রাবণ চিন্তায় পরলো। এখন ইর্তেজা প্রশ্ন করলে? যেমনটা চিন্তা করলো তেমনটাই হলো।
“ম্যাম আপনাকে ধোঁকা দিয়েছিল আবার বয়ফ্রেন্ডকে মেরে মানে? বস কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?”
.
.
দরজা ঠকঠক করার শব্দ আসলো। ইরিনা বসে নিউজপেপার পড়ছিল। ঝর্ণা গিয়ে দরজা খুলে চমকে উঠে বলল- “আপনে হেনে কেন আইছেন? যান এহনই।”
ইরিনা ভ্রু উঁচু বলল- “কে এসেছে আর তাকে তাড়াচ্ছো কেন?”
ঝর্ণাকে ঠেলে একটা পুরুষ ভেতরে প্রবেশ করলো। ইরিনা তাকে দেখে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ঝর্ণা এগিয়ে এসে বলল- “যান আপনে এহানতে।”
“একদম চুপ, আমি তোমার সাথে কথা বলতে আসি নি।”
মানুষটার ধমক শুনে ঝর্ণা চুপসে গেল। ইরিনা রাগী কন্ঠে বলল- “আবার কেন এসেছেন আপনি? আমার জীবন বরবাদ করে শান্তি পান নি? না-কি খবর পেয়ে গিয়েছেন আমি সুস্থ হয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে।”
মানুষটা হাঁটু গেড়ে বসে বলল- “শান্ত হও, আমি যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শোনো।”
“আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না ডক্টর হাসিব। ইর্তেজা জানে না আপনি আমার উল্টা পাল্টা চিকিৎসা করায় আমি প্যারালাইজড হয়েছি। জানলে এখনই মাটিতে পুঁতে ফেলবে।”
“হ্যাঁ ফেলবেই তো। তোমার ভাই গুন্ডা হয়ে গিয়েছে।”
ইরিনা হাসিবের কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল- “মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ । নাহলে ভুলে যাব আপনি কে।”
“তার আগে নিজের ভাইকে সামলাও। ক্রিমিনাল শ্রাবণ আহমেদের সাথে ও কী করছে জিজ্ঞেস করো গিয়ে।”
ইরিনা হাসিবের কলার ছেড়ে দিলো। হাসিব নিজের কলার ঠিক করে বলল- “দেখো ইরিনা, তুমি আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলে। হ্যাঁ আমার আর আমার সিনিয়রদের দ্বারা ভুল হয়েছে। আমরা তোমার ভুল চিকিৎসা করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার এত বড়ো ক্ষতি হবে বুঝতে পারি নি। তুমি আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ ভেঙেছো মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমি সবসময় তোমাকে ভালো বান্ধবী ও ইর্তেজাকে ছোটো ভাই মনে করেছি। ইর্তেজাকে আমি ১ বার ২ বার না পুরো ৫ বার দেখেছি শ্রাবণ আহমেদের সাথে। তার গাড়িতে দেখেছি। তার বাড়িতে, অফিসে ঢুকতে দেখেছি। শুধু তাই না গত পরশুদিন হসপিটালেও দেখেছি শ্রাবণ আহমেদের সাথে।”
“এতে কি প্রমাণ হয় আমার ভাই ক্রিমিনাল হয়ে গিয়েছে? আর তোমার কাছেই বা কি প্রমাণ আছে যে তুমি সত্যি বলছো?”
“তুমি আমার কথা বিশ্বাস না করলে আমার কিছু করার নেই। ইর্তেজা আসলে জিজ্ঞেস করে নিও।”
“অনেক হয়েছে, আমার বাসা থেকে বের হও।”
হাসিব ইরিনার হাত মুঠোবন্দি করে বলল- “আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানের কসম খেয়ে বলছি আমি মিথ্যে বলছি না। ইর্তেজাকে থামাও প্লিজ।”
ইরিনা তাকিয়ে রইল হাসিবের দিকে। তখনই দরজা দিয়ে সাঈদ প্রবেশ করলো। হাসিমুখে প্রবেশ করলেও এমন দৃশ্য দেখে বুকে এক ধাক্কা খেলো। ইরিনার পাশের লোকটাকে সে চিনে না। কিন্তু হাতধরা দেখে মনে হচ্ছে তারা একে অপরকে চিনে। ঝর্ণা সাঈদকে দেখে বলল- “আপনে আইসেন আমি যায়া চা বানাই।”
ইরিনা ঝর্ণার কথা তাকাল। সাঈদকে দেখে থমকে গেল। হাসিবও তাকাল সাঈদের দিকে৷ ঝর্ণা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতেই সাঈদ বলল- “না আমি চা খাবো না। ইর্তেজার সাথে দেখা করতে আসছিলাম। হয় তো ভুল সময় এসে পড়েছি। পরে আসবো নি।”
সাঈদ আর এক মুহুর্ত দাঁড়াল না। দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। পরিস্থিতি হঠাৎ অস্বাভাবিক হয়ে উঠল। সাঈদের ব্যবহার দেখে সবাই কনফিউজ। হাসিব সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল- “এই ছেলেটা কে ছিল?”
“ইর্তেজার বন্ধু”
“ও এমনভাবে চলে গেল কেন?”
“তা তো জানি না।”
“আমার কেন মনে হলো আমাদের একসাথে হাতধরা দেখে ও চলে গেল।”
ইরিনা চমকে উঠল হাসিবের কথা শুনে।
.
.
ইর্তেজা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ইর্তেজা বলল- “আপনি কি বলছেন এসব? মানে সেদিন আপনি আমাকে যা যা বলেছেন সব মিথ্যে ছিল।”
শ্রাবণ ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। ইর্তেজা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। শ্রাবণ আবার বলল-
“সাগরিকা জানলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমি কি করবো ইর্তেজা? না পারছি সত্য বলতে না পারছি মিথ্যে লুকাতে।”
ইর্তেজা শ্রাবণের সামনে এসে বলল- “আপনি এখন কি করতে চাচ্ছেন?”
“২ বছর ধরে যা করে আসছি। সাগরিকাকে সত্য বলা যাবে না। ইর্তেজা তুমি আমাকে সাহায্য করবে সব অবৈধ কাজ বন্ধ করতে।”
“বস আমি সব করতে পারি আপনার জন্য। বলুন কি করতে হবে?”
“একটা জমিন কিনতে চাই। কিন্তু যার থেকে কিনতে চাই সে দেবে না।”
“তাহলে অন্য জমিন কিনে নিন।”
“না আমার ওটাই লাগবে। সেই লোকটা আমাকে বলেছে আমার মতো ক্রিমিনালের কাছে বিক্রি করবে না। অথচ সে অন্যান্য বিজনেসম্যানদের কাছে যাচ্ছে।”
“তো বস, এখন কি করবেন?”
“জোর করে সেই জমিন কিনতে হবে।”
“কিভাবে?”
শ্রাবণ ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল- “তুমি ভেবে নাও আমার সাহায্য করবে কি-না।”
“ভেবে নিয়েছি বলুন আমাকে কি করতে হবে।”
“কিডন্যাপ”

চলবে……