আলিঙ্গনে ভালোবাসার মোহ জেগে উঠে পর্ব-০৩

0
78

#আলিঙ্গনে_ভালোবাসার_মোহ_জেগে_উঠে
#পর্ব_০৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

চন্দ্র মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়েছে। ধরনীর বুকে হিম শীতল হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে। গাছের ডাল গুলো বাতাসে হেলেদুলে পড়ছে। নিস্তব্ধ অম্বর জানান দিচ্ছে বর্ষনের ধারা ধেয়ে আসছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ঝড়ের বেগ প্রকোপ পেতে শুরু করল। অম্বর তার অবস্থা জানান দিতেই বিদ্যুৎ কক্ষের সাথে বিচ্ছেদ ঘটালো। আলোয় আলোকপাত কক্ষটা মুহুর্তের মধ্যে আঁধারে রুপ নিল! বিদুৎ বিছিন্ন হতেই আফিফার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। সে শৈশব থেকেই ঝড়বৃষ্টি করে ভিষণ ভয় পায়। আফিফা ভয়ে জড়সড় হয়ে উঠে বসলো। আফিফাকে অস্থির হতে দেখে আফরাত শুধালো,

“কি হয়েছে তোমার? তুমি কি কোনো কারন ভয় পাচ্ছো? আমি কি ভয় পাবার মতো কোনো কাজ করেছি!” আফিফার পক্ষ থেকে উত্তর এলো না। আফিফা দু’হাতে নিজেকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। আফরাত চিন্তিত হলো সে তো আফিফাকে কোনো ভাবে অসন্মান করেনি। তাহকে আফিফা ভয় পাচ্ছে কেন? আফরাত আবার শুধালো,

“তুমি কথা বলছো না কেন?”

“আমি ঝড়বৃষ্টি ভয় পাই।” আফিফার কথা শুনে আফরাত শব্দ করে হেসে উঠল। এতক্ষণে আফরাতে অশান্ত বুকটা প্রসস্থ হলো। আফরাত উঠে আফিফার পাশে বসলো। আফিফার রক্তিম দৃষ্টিতে আফরাতের দিকে দৃষ্টিপাত করল। কিন্তু আফরাত আঁধারে তা দেখতেও পেল না। আফরাত নিজের ফোনের আলো জ্বালিয়ে বলল,

“তুমি নাকি আমার থেকে বড় সামান্য ঝড়বৃষ্টি ভয় পাও। আমাকে তো খুব কথা শোনাতে এখন নিজেই বাচ্চাদের মতো আচরণ করছো।”

“তুমি যেমন কুকুর ভয় পাও। ঠিক তেমনই আমি ঝড়বৃষ্টি ভয় পাই। কারো দুর্বলতা জেনে হাসা উচিৎ নয়।” আফিফা বেশ সিরিয়াস হয়ে গিয়েছে। আফরাত কোনো বাক্য উচ্চারন না করে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। দু’জনের নিস্তব্ধতা বুঝি মেঘ মামার সহ্য হয়নি। তাই তো সে বিকট শব্দে গর্জন করে উঠল। আফিফা মুখশ্রীতে মা শব্দ উচ্চারন করে আফরাতকে আলিঙ্গন করল। জীবনে প্রথম কোনো নারীর স্পর্শ পেয়ে আফরাতের হৃদক্রিয়া কার্যক্রম বন্ধ করে নিল। অনুভূতিরা অদ্ভুত মোহে জেগে উঠেছে। এই অনুভূতির সাথে পরিচিত নয় আফরাত। তবে তার এই অনুভূতি ভিষণ ভালো লাগছে। মন বলছে বৃষ্টি না থামুক ঝড় আরো বাড়ুক। মেঘ দ্বিগুন গর্জে গর্জন করে উঠুক। কিন্তু তার আশার পানি ঢেলে দিয়ে দশ মিনিট পর পরিবেশ শান্ত হলো। পরিবেশ শান্ত হতেই আফিফা আফরাতের থেকে ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ালো। আফরাত এখনো ঘোরের মধ্যে বসে আছে। আফিফা অন্য পাশ হয়ে দ্রুত শায়িত হলো।

পনেরো দিন পর……

আফিফা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছে। তখনই আফরাত বাইক নিয়ে এসে আফিফার সামনে দাঁড়ালো। আফরাতকে দেখে বিরক্তিতে মুখশ্রী কুঁচকে এলো আফিফার। আফরাত কালো সানগ্লাস পড়ে বেশ ভাব নিয়ে সামনের দিকে দাঁড়িয়ে আছে। আফিফা গাড়িতে উঠছে না দেখে সে নিজেই শুধালো,

“গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছো?”

“হুম।”

“আজকে আর গাড়ি পাবে না। তুমি আমার সাথে চলো আমি তোমাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে আসছি।”

“আমি তোমার সাথে যাব না।”

“আমার সাথে গেলে আমি তোমাকে খেয়ে ফেলব?”

“তুমি আমার সাথে গেলে সবাই জানতে চাইবে। তুমি আমার কেউ হও? তখন আমি সবাইকে কি বলব?”

“যা সত্যি তাই বলবে।”

“তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।”

“আমার মাথা খারাপ হতে যাবে কেন? তুমি আমার বউ হও। এটা আমি সবার সামনে বলতে পারব। তাহলে আমি তোমার স্বামী হই। এটা কেন তুমি সবার সামনে বলতে পারবে না?”

“তোমাকে অপমান করতে চাইছি না। তাই চুপচাপ আমাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে আসো।” বাক্য গুলো শেষ করেই আফিফা আফরাতের কাঁধে হাত রেখে বসলো। আফরাতের সমস্যা শরীর অদ্ভুত ভাবে শিউরে উঠল। এই রমনীর ছোঁয়ায় জাদু আছে। নয়তো এই রমনীর ছোঁয়া শরীরে লাগতেই ভেতরটা বাজে ভাবে এলোমেলো যায়।

সূর্য মস্তিষ্ক উত্তপ্ত করতে মেতে উঠেছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তেজের প্রখরতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। শহরের কোলাহল পূর্ণ পরিবেশে আফিফা দৃষ্টি স্থির হলো একজন সুদর্শন যুবকের ওপর। মুহুর্তে মধ্যে আফিফার বুকের মধ্যে ছ্যাঁত কইরা উঠল। আফিফা ভয়ংকর রকমের অবাক হয়েছে। তার সমস্ত মুখশ্রী বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। আফিফা চেচিয়ে বলল,

“আফরাত গাড়ি থামাও। আমি রেহানকে দেখতে পেয়েছি।” আফিফার বাক্য গুলো কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই আফরাতের বুকের মধ্যে ধক করে উঠল। আঁখিযুগল অসম্ভব ভাবে রক্তিম বর্ন ধারন করল। আফরাতের ভেতরে অস্থিরতার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আফরাত চোয়াল শক্ত করে বলল,

“রেহান মারা গিয়েছে। মৃত্যু মানুষ কিভাবে শহরের বুকে আসবে। মৃত্যু মানুষের ঠাই কবরে ধরনীর বুকে নয়।”

“তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যা কথা বলছি। আমাকে তুমি যেতে দাও না হলে আমি গাড়ি থেকে লাফ দিব। আমার রেহানের সাথে অনেক কথা আছে। রেহান কেনো আমার সাথে ছলনা করল! রেহান যদি বেঁচে থাকে তাহলে সেদিন বিয়েতে আসেনি কেন?” আফিফার প্রতিটি বাক্য আফরাতের হৃদস্পন্দনের গতিবেগ স্থির করে দিচ্ছে। আফরাতের সমস্ত মুখশ্রীতে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। আফরাত দ্রুত সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাইল। কিন্তু আফিফা আফরাতের হৃদয়টা রক্তাক্ত করে দিয়ে বাইক থেকে লাফ দিল। গাড়ির স্পিড অল্প থাকায় আফিফা খুব একটা ব্যথা পেল না। তবে হাত-পায়ের চামড়া কিছুটা উঠে গিয়েছে। আফরাত গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে আফিফার কাছে এলো। সে অস্থির হয়ে শুধালো,

“তোমার কিছু হয়নি তো আফিফা?” আফরাতের অশান্ত মুখ আফিফা ডাকটা বুকে এসে লাগলো। তার প্রতি আফরাত এতটা কেয়ারিং কেন? এটা কি শুধুই দায়িত্ববোধ নাকি এর ভেতরে গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। আফরাতের এলোমেলো মুখশ্রী পাষাণ রমনীর হৃদয় কাবু করতে পারল না। অথচ এই মুখশ্রীতে একটু অস্থিরতা দেখার জন্য কত-শত রমনী অপেক্ষা করে! আফিফা রাগান্বিত হয়ে বলল,

“আমি তোমাকে গাড়ি থামাতে বলেছিলাম। তবুও তুমি গাড়ি থামাচ্ছিলে না কেন? তোমাকে আমি বললাম আমি রেহানকে দেখেছি। তবুও তুমি আমার কথা বিশ্বাস করলে না কেন?”

“রেহানকে তুমি খুব ভালোবাসো?” আফরাতের প্রশ্নে হকচকিয়ে যায় আফিফা। সে রেহানকে ভালোবাসে না। তবে রেহানের থেকে অনেক কিছু জানার আছে। রেহান যদি বিয়েতে রাজি না থাকতো। তবে তাকে মিথ্যা স্বপ্ন কেনো দেখালো? সে রেহানকে ভালোবাসেনি ঠিকি কিন্তু রেহানকে নিয়ে একটু হলেও মুনে স্বপ্ন বুনেছিল। আফিফার নিরবতা আফরাতের ভেতরটা চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল। আফরাত আবার শুধালো,

“তুমি যদি রেহানকে ভালোবাসো। তাহলে আমি নিজে তোমাকে রেহানের হাতে তুলে দিব।” আফরাতের কথায় আফিফার সমস্ত মুখশ্রী চকচক করে উঠল৷ সে উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালো,

“তুমি সত্যি কথা বলছো? তুমি আমার সাথে রেহানের দেখা করিয়ে দিবে।”

“তুমি নিজেই তো রেহানের সাথে দেখা করতে চাইছো। বাচ্চা মেয়েদের মতো কান্না করে না বাবু। আমি তোমাকে বিকালে রেহানের কবরের কাছে নিয়ে যাব৷ তারপর তুমি দিনভর অশ্রু বিসর্জন দিবে আর বলবে ওগো তুমি আমাকে রেখে কেন চলে গলে?” আফরাতের কথায় জ্বলে উঠল আফিফা৷ সে এই অসভ্য ছেলেটাকে সত্যি বিশ্বাস করেছিল। আর এই অসভ্যটা তাকে নিয়ে মজা লুটছে। আফিফার ভেতরটা অদ্ভুত ভাবে হাহাকার করে উঠল। তাকে বোঝার মতো ধরনীর বুকে কেউ নেই। অজানা এক শূন্যতা তার ভেতরটাকে বিষণ্ণ করে তুলেছে। আফিফা উঠে দাঁড়ালো আফরাত আফিফাকে নিয়ে ভার্সিটিতে না গিয়ে বাড়ি চলে গেল।

বাড়ি এসে আফিফার সমস্ত মন মস্তিষ্ক বিষন্নতায় ছেয়ে গেল। সে যতক্ষণ আফরাতে সাথে থাকে সময় গুলো অদ্ভুত ভাবে ভিষণ সুন্দর কাটে। হৃদয় জুড়ে অনুভূতির বিরচন ঘটে। কিন্তু ছেলেটার থেকে দূরে সরলেই বিষাদ মনকে গ্রাস করে ফেলে। আফিফা উপলব্ধি করতে পারছে। সে ছেলেটার প্রতি বাজে দুর্বল হতে শুরু করেছে। নিজের দুর্বলতার কথা স্মরণ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল আফিফা।

চলবে…..
#গল্পঃ_আলিঙ্গনে_ভালোবাসার_মোহ_জেগে_উঠে