আলিঙ্গনে ভালোবাসার মোহ জেগে উঠে পর্ব-০৪

0
84

#আলিঙ্গনে_ভালোবাসার_মোহ_জেগে_উঠে
#পর্ব_০৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সুপ্ত অনুভূতি গুলো মেঘের আড়ালে লুকিয়েছে। বিষাদ গুলো হাহাকারের ছন্দ তুলতে ব্যস্ত। অশান্ত মনটা উত্তাল সমুদ্রের ন্যায় উথাল-পাতাল করছে। ভারাক্রান্ত হৃদয়টা ক্ষণিকের জন্য স্থির হয়ে গেল। বুকের মধ্যে অশান্ত ধুকপুকানির শব্দ কর্ণকুহরে এসে পৌঁছাচ্ছে। রেহান আফিফার ফোনে ফোন দিয়েছে। আফিফার সমস্ত শরীরে ধীর গতিতে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। আফিফা নিষ্পলক চাহনিতে ফোনে স্ক্রিনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। হঠাৎ করে ভেতরটা কু গেয়ে উঠল। আফরাতের কথা ভিষণ মনে পড়ছে। সে রেহানের সাথে কথা বলেছে। সেটা যদি আফরাত জেনে যায়। আজকাল আফরাত সমস্ত মস্তিষ্ক জুড়ে বিরচন করে। সে ভেবে পায় না। বাচ্চা ছেলেটার প্রতি তার মন এত দুর্বল হয়ে গেল কি করে? আফিফা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ফোনটা কর্ণে ধরলো। ওপর প্রান্ত থেকে কারো অস্থির কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

“আফিফা আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। তোমার সাথে আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। অনেক মিথ্যার আড়ালে সত্য মাটি চাপা পড়ে গিয়েছে। তুমি কবে আমার সাথে দেখা করবে?” আফিফা থমকালো। হৃদয় জুড়ে অস্থিরতা বিরাজমান করছে। মনের কোলে হাজারো প্রশ্ন ঢলে পড়েছে। আফিফা উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালো,

“তুমি এতদিন কোথায় ছিলে? আমি তোমাকে দেখেছিলাম। কিন্তু আফরাত আমার কথা বিশ্বাস করেনি। আমি ভুল ছিলাম না। আমি জানতাম তুমি বেঁচে আছো।” আফরাত বাক্যটা কর্ণকুহরে আসতেই সমস্ত মস্তিষ্ক ঝনঝন করে উঠল। সমস্ত মন জুড়ে ঘৃণার আনাগোনা শুরু করে গেল। রেহান চোয়াল শক্ত করে শুধালো,

“তুমি আমার সাথে কবে দেখা করবে, সেটা বলো?”

“আফরাত অনুমতি না দিলে কিভাবে দেখাব করব?” মুহুর্তের মধ্যে রেহানের মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠল। মেয়েটার মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু আফরাত আর আফরাত! ছেলেটা জাদু জানে নাকি আফিফার মতো মেয়ের হৃদয়ে প্রবেশ করে ফেলছে।

“তুমি যদি আমার সাথে দেখা না করো। তাহলে সুপ্তিকে আমি খু’ন করে ফেলব। তুমি যদি ভুলেও কাউকে বলার চেষ্টা করেছ। তাহলে সুপ্তির সাথে আফরাতের জীবনটাও অকালে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়বে।” রেহানের বাক্য গুলো আফিফার অন্তর আত্মা কাঁপিয়ে তুলল। এই রেহানের সাথে সে পরিচিত নয়। তবে কি রেহান বাহিরে যা দেখায় তার ভেতরে অন্য রহস্য লুকিয়ে আছে? সমস্ত মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে আসলো আফিফার। আজকে তার নিজেকে ভিষণ দিশেহারা লাগছে।

পার্কের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে রেহান আর আফিফা। রেহানের সমস্ত মুখশ্রী গম্ভীর হয়ে আছে। আফিফা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজকে তার রেহানকে ভিষণ ভয় লাগছে। রেহানের মাঝে আগের মতো সুন্দর অনুভূতি খুঁজে পাচ্ছে না আফিফা। রেহান গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

“আফরাতকে ডিভোর্স দিতে হবে, কবে দিবে তাই বলো?”

“অসম্ভব আমি আফরাতকে কখনো ডিভোর্স দিব না।”

“এতটুকু ছেলের সাথে সংসার করবে। তোমার লজ্জা করছে না?”

“লজ্জা করবে কেন? তুমি বেঁচে থেকেও আমাকে বিয়ে করতে আসোনি। ঐ ছেলেটা আমার খারাপ সময়ে আমার পাশে থেকেছে। আমার মন ভালো রাখার চেষ্টা করেছে। এমন একটা মানুষকে ভালো না বেসে থাকা যায়!”

“আমাকে বিয়ে না করলে সুপ্তিকে মে’রে ফেলব।” রেহানের কথা শেষ হতেই আফরাত পেছনে থেকে রেহানের চুল হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে বলল,

“সুপ্তিকে মারার মতো অবস্থায় থাকলে তো মারবি।” আফরাতকে দেখে চমকে উঠল আফিফা। আফিফা দ্রুত আফরাতের থেকে রেহানকে সরিয়ে দিয়ে শুধালো,

“তুমি কেন এখানে এসেছ? আফরাতের সমস্ত মুখশ্রী ভয়ংকর ভাবে রক্তিম বর্ন ধারন করেছে। আফিফা আফরাতকে এমন রেগে যেতে আগে কখনো দেখেনি। আফরাত রাগান্বিত হয়ে শুধালো,

“সব কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে? তুমি এখানে আসার আগে আমাকে বলে এসেছিলে। বিয়ের পরে পরকীয়া করতে চাও। আমার বাড়ির বউ হয়ে এসব করতে পারবে না। তোমার যদি এসব নষ্টামি করতে হয়। তাহলে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে করবে।” আফরাতের কথা শেষ হবার সাথে সাথে আফিফার আফরাতের গালে থা’প্প’ড় বসিয়ে দিল। আকষ্মিক ঘটনায় আরহান স্তব্ধ হয়ে গেল। আফিফা চেচিয়ে বলল,

“তুমি আমার কে হও? তোমাকে আমার সব বিষয়ে মাথা ঘামাতে কে বলেছে? তুমি কোন সাহসে রেহানের গায়ে হাত দিয়েছ। তোমার জন্য যদি সুপ্তির কিছু হয়ে যায়। তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করব না।” আফরাত তাচ্ছিল্য করে বলল,

“আরহান তোর বোন কি জানেনা এই পার্কে শরীর বিক্রি হয়। তোর বোনের শরীর বিক্রি করার এত তাড়া! সে আমাকে বললেই পারতো। আমি তাকে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে কিনে নিতাম। আমার বাপের টাকার অভাব পড়ছে নাকি। শুধু শুধু রোদে পুড়ে পায়ে হেঁটে তোর এই বোনের জন্য ইনকাম করতে যাই।” আরহান নিম্ন কণ্ঠে বলল,

“আপু তুমি এখানে এসেছ কেন?”

“রেহান সুপ্তিকে তুলে নিয়ে এসেছে। সেজন্য আমাকে এখানে আসতে হয়েছে।”

“তুমি চিন্তা করো না সুপ্তি ভালো আছে। আফরাত সুপ্তিকে বাড়িতে দিয়ে আসছে। রেহান ভালো ছেলে নয় রেহানের সাথে আফরাতের বিলাশ ঝামেলা চলছে। রেহান কোনো কারনে আফরাতকে ভয় পায়। সেজন্য সে তোমাকে কাজে লাগিয়ে আফরাতকে কাবু করতে চেয়েছিল। তুমি আফরাতকে বাজে ভাবে রাগিয়ে দিয়েছ। আফরাত তোমাকে ভিষণ ভালোবাসে আপু। তোমাকে পাওয়ার জন্য ও যতদূর যেতে হয় গিয়েছে। কিন্তু তুমি ওর ভালোবাসার মূল্যটা দিলে না। আমি জানিনা আফরাত আজকের পরে তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবে কি না৷ তবে তুমি আফরাতকে ভেঙেচুরে চুরমার করে দিয়েছ। তুমি এমনটা না করলেও পারতে।”

“তারমানে আফরাতই রেহানকে বিয়ের দিন সরিয়েছিল।”

“না।”

“তাহলে!”

“বিয়ের দিন রেহান হোটেল মেয়েদের নিয়ে মগ্ন ছিল। আর রেহানের মৃত্যুর খবরটা আফরাত ছড়িয়েছে। না হলে সে তোমাকে বিয়ে করতে পারতো না। তোমাকে পাওয়ার জন্য যে মানুষটা পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াই করল। আর তুমি তাকে আঘাত করলে আপু!”

“পুরো পৃথিবীর মানে?”

“আফরাতের পরিবার তোমাকে মেনে নিবে না। শুধু মাত্র আফরাতের জেদের কাছে তারা হার মেনে গিয়েছে। তোমাকে পাবার আশায় গুনে গুনে তিন দিন আফরাত না খেয়ে ছিল।”

“এসব কথা আমাকে আগে বলিস নি কেন?”

“আফরাতের নিষেধ ছিল। আফরাতকে দেখতে যতটা আলাভোলা মনে হয়। ভেতর থেকে ও তার চেয়েও বেশি ভয়ংকর!” তাদের কথোপকথন মধ্যে পুলিশ এসে রেহানকে ধরে নিয়ে গেল। আফরাত বিলম্ব করল না দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। আফিফা অসহায় দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে।

চলবে…..
#গল্পঃ_আলিঙ্গনে_ভালোবাসার_মোহ_জেগে_উঠে