আলিঙ্গনে ভালোবাসার মোহ জেগে উঠে পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
141

#আলিঙ্গনে_ভালোবাসার_মোহ_জেগে_উঠে
#পর্ব_০৫(শেষ পর্ব)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

অনুভূতিরা আনন্দে মেতে উঠেছে। বুদ্ধিটা মনের আনাচে-কানাচে দোল খেলছে। বিষাদকে গ্রাস করে নিয়েছে এক টুকরো সুখানুভূতি। হৃদয়টা শীতলতায় আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। আফিফা নববধূ সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে। আফিফার মানিয়ে নেওয়াটা সবাইকে করেছে মনোমুগ্ধ। আফরাতের সমস্ত কক্ষ পুষ্প দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। বিষণ্ণ মন দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করল আফরাত৷ সমস্ত কক্ষ আঁধারে ছেয়ে আছে তা দেখে মুহুর্তের মধ্যে মস্তিষ্ক উত্তপ্ত হয়ে গেল। চন্দ্রের আলো বেলকনির দরজাতে এসে পড়েছে। আফরাত আলো অনুসরণ করে বেলকনির দিকে অগ্রসর হলো। আফরাত কক্ষ ত্যাগ করতেই সমস্ত কক্ষ মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল। আফরাত উপলব্ধি করতে পারলো কক্ষে কেউ এসেছে। আফিফা বেলকনিতে এসে আফরাতকে পেছনে থেকে আলিঙ্গন করল। আফরাতের সমস্ত শরীর শিউরে উঠল। এই আলিঙ্গণে কিছু তো একটা আছে। এই মেয়েটা আলিঙ্গন করলেই ভেতরটায় ভালোবাসার মোহ জেগে উঠে। কিন্তু এখন ভালোবাসার মোহে বিমোহিত হবার সময় নয়। তাকে শক্ত থাকতে হবে মেয়েটা তাকে ভেতর থেকে আঘাতপ্রাপ্ত করেছে। এত সহজে মেয়েটা সে মাফ করবে না৷ কিন্তু অনুভূতিরা তা মানতে নারাজ! মাফ করে দাও মাফ করে দাও বলে মিছিল শুরু করে দিয়েছে। আফরাত আফিফাকে সরাতে চাইলে আফিফা আরো শক্ত করে আফরাতকে জড়িয়ে ধরল। আফরাতের সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছে। তার কথা বলার শক্তি ক্ষয় হতে শুরু করে দিয়েছে। তবুও সে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

“তুমি আমাদের বাসায় কি করতে এসেছ?”

“তোমার কাছে এসেছি।”

“কেন এসেছ?”

“আমি আমার স্বামীর বাড়িতে আসতেই পারি!” আফিফার বলা প্রতিটি বাক্য আফরাতের মুখশ্রীতে তাচ্ছিল্য ফুটিয়ে তুললো। আফরাতের ভেতরটা হাহাকার করে উঠল৷ সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

“আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।”

“বাচ্চা ছেলের মুখে এত বড় বড় কথা মানায় না।”

“একদম বাচ্চা বলবে না।”

“তুমিও একদম বাজে কথা বলবে না। আমি তোমার বিয়ে করা বউ৷ আমাকে বিয়ে করার সময় মনে ছিল না৷ তোমাদের মতো ছেলেদের আমার ভালো করে জানা আছে। এরা আবেগের বশে বড় মেয়েকে বিয়ে করবে। দু’দিন যেতে না যেতেই অপছন্দের হয়ে গেলাম!”

“তুমি কেন অপছন্দের হয়েছ সেটা আমার থেকে তুমি ভালো জানো। তোমাকে অপছন্দ হবার কোনো কারন আমার কাছে ছিল না। কিন্তু তুমি কারনটা তৈরি করে দিয়েছ। তোমার সাথে আমি কথা বলতে চাইছি না৷ তুমি আমার কক্ষ থেকে বের হয়ে যাও। আমি একা থাকতে চাই।”

“আমার হৃদয়ে অস্থিরতা ঝড় তুলে দিয়েছ। আমি এতটা অশান্ত থাকব আর তুমি শান্ত থাকবে। এটা তো আমি হতে দিব না। দরকার পড়লে তোমাকে অশান্ত করে দিয়ে পালাব।”

“আমি তোমাকে অসন্মান করতে চাই না।”

“তাহলে সন্মান করো।”

“তোমাকে সন্মান করার জন্য রেহান আছে।”

“রেহানকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তুমি আছো।” আফিফার বলার বাক্য গুলো আফরাতের হৃদয় ভয়ংকর ভাবে কাঁপিয়ে তুললো। আফরাত কেমন জানি নিস্তব্ধ হয়ে গেল। আফিফা আফরাতের পিঠে পরম আবেশে মস্তক ঠেকিয়ে রেখেছে। আফরাত আফিফাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল। আফরাত কক্ষে যাবে। এমন সময় আফিফা বলল,

“অবহেলায় যদি করবে তাহলে ভালোবেসে ছিলে কেন?”

“তুমি আমার ভালোবাসার মূল্য দাওনি।”

“আমি কি কারো সাথে পালিয়ে চলে গিয়েছি?”

“তার থেকে-ও বড় আঘাত তুমি আমার হৃদয়ে করেছ!”

“আমি আর এমন ভুল করব না। ক্ষমা করে দাও আফরাত।”

“আমি ক্ষমা করার কে আফিফা?” আফিফার ভেতরটা কেঁপে উঠল। আফরাত যখনই তার নামটা উচ্চারন করে তখনই ভেতরটা কেমন জানি অস্থির হয়ে উঠে! আফিফা মলিন কণ্ঠে বলল,

“চলে যেতে বলছো?”

“তোমাকে ধরে রেখেছি?”

“আচ্ছা থাকো চলে গেলাম। আর আসব না৷”

“এত সাজতে কে বলেছিল?” আফিফা চলে যাচ্ছিল। আফরাতের বলা বাক্য শুনে থেমে যায় দু’টি চরণ। আফরাত তার দিকে নজর দিয়েছে। তার মানে তার সাজসজ্জা সার্থকতা পেয়েছে। আফিফা অসহায় দৃষ্টিতে আফরাতের দিকে দৃষ্টিপাত করল। আফরাত আফিফার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। আফিফার ভেতরে অস্থিরতার ঝড় বইতে শুরু করে দিয়েছে। আফরাত আফিফার কাছে এসে আফিফার আঁখিযুগলের অশ্রুকণা টুকু মুছে দিল। আফিফাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,

“তুমি আমায় এত কষ্ট দাও কেন?”

“আমি ইচ্ছে করে কষ্ট দেইনি।”

“আমি তোমাকে বলেছিলাম। তোর কোনো সমস্যা হলে তুমি আমাকে বলবে। দু’জন মিলে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব। কিন্তু তুমি আবার কথা শুনোনি জেনে বুঝে রেহানের কাছে গিয়েছ। রেহান ছেলেটা একদমই ভালো নয়। যদি ভালো হতো তাহলে আমি তোমাদের মাঝে আসতাম না।” আফরাতের শেষোক্ত বাক্যটি শুনে আফিফার ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠল। অদ্ভুত ভাবে অন্য কারো কথা বলাতে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আফিফা মলিন কণ্ঠে বলল,

“আমি সুপ্তিকে অনেক ভালোবাসি। আমি মায়ের আদর পাইনি। আমি জানি মা ছাড়া দুনিয়াটা কতটা কঠিন। সুপ্তিকে বাবা রাস্তায় পেয়েছিল। ছোট্ট একটা বাচ্চাকে আমার কোলে তুলে দিয়েছিল। নিজ হাতে সুপ্তিকে বড় করেছি। সেই বাচ্চা মেয়েটার বিপদের কথা শুনে আমি কিভাবে চুপ থাকতাম বলো?”

“আমি তোমাকে চুপ থাকতে বলিনি। আমি নিজেও সুপ্তিকে নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসি। তাই সব সময় তোমাদের নজরে নজরে রাখতাম। কখন জানি রেহান এসে তোমাদের ক্ষতি করে দেয়। আমার চিন্তা সার্থক হয়েছে রেহান সত্যি সুপ্তিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। আমি সুপ্তিকে উদ্ধার করেছি। তবে তোমাকে রেহানের সাথে নিষিদ্ধ পার্কে দেখে আমার ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছিল। আমার ভেতরে সে কি অসহনীয় যন্ত্রনা করছিল। আমি তোমাকে অন্য পুরুষের সাথে সহ্য করতে পারছিলাম না আফিফা। আমার ভেতরটা যে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল। তাই তোমাকে আঘাত দিয়ে কথা বলে ফেলছি। তুমি আমাকে মাফ করে দিও। আমার কথায় তুমি কষ্ট পেও না আফিফা। তুমি একবার আমাকে ভালোবেসে দেখো আমি তোমার সব কষ্ট মোচন করে দিব।”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না তা জানি না। আমি শুধু জানি তোমার সাথে আমার থাকতে ভালো লাগে। তোমাকে আমার ভয় লাগে। আমি কোনো কাজ করার আগে তোমার কথা ভাবি। তুমি কষ্ট পেলে আমার মস্তিষ্ক ঝলসে যায়। আমি আর তোমাকে কষ্ট পেতে দিব না। আমাকে একটু সুযোগ দাও পৃথিবীর সব ভালোবাসা আমি তোমাকে এনে দিব।” আফিফার কথায় আফরাতের হৃদয় শীতল হলো। ভেতরটা সুপ্ত অনুভূতিতে ভরে গিয়েছে। বিষাদরা ছন্দ তুলে পালিয়েছে। হাহাকার গুলোকে সুখ এসে শুষে নিয়েছে। আফরাত আফিফার ললাটে চুমু খেয়ে বলল,

“আমি তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি আফিফা। তোমাকে ভালো বাসতে বাসতে এতদূর এসেছি। তুমি যদি তোমাকে ভালোবাসার সুযোগ না দাও। তাহলে জ্বলতে জ্বলতে এখানেই শেষ হয়ে যাব। আমাকে এত দ্রুত শেষ হয়ে যেতে দিও না। আমার মতো এত মায়া করে তোমারে কেউ চাইবে না।”

“আমি তোমার মায়ায় আবদ্ধ হয়েছি। ছায়া কখনো পিছু ছাড়ে না আর মায়া কখনো ভোলা যায় না। এই যে তোমার জন্য মনের গহীনে অনুভূতি বাঁধতে শুরু করেছি। এই অনুভূতি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাড়তেই থাকবে। তুমি কি আমাকে তোমার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে করবে গ্রহণ?”

“তোমাকে গ্রহণ করার জন্য কত যুদ্ধ করলাম। এত সুন্দর সেজে সর্বনাশ করতে এসেছ? এতক্ষণে আমার সর্বনাশ তো হয়েই গিয়েছে। আমার সর্বনাশ করার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।” আফরাতের কথায় আফিফা খিলখিল করে হেসে উঠল। আফিফার হাসির প্রতিধ্বনিতের চারিদক মুখরিত হয়ে উঠল। আফরাত আফিফাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

“ভালোবাসি, ভিষণ ভালোবাসি। এই যে তোমাকে যেদিন প্রথম আলিঙ্গন করেছিলাম। যেদিনের আলিঙ্গনে ভালোবাসার মোহ জেগে উঠে ছিল। সেই মোহ আজ ও কাটাতে পারিনি। আমি যদি সেই মোহের অতল গভীরে তলিয়ে যাই। তবে কি আমাকে শাস্তি গ্রহণ করতে হবে?” আফিফা কথা বলে না। নিরবতা প্রণয়নের আভাস দিয়ে যাচ্ছে। আফরাত আফিফাকে কোলে তুলে নিয়ে আস্তরণের কাছে গেল। আফিফাকে শায়িত করে সে আফিফার আঁখিযুগলের পাতায় অধর ছোঁয়াল। আফিফা পরম আবেশে আঁখিযুগল বন্ধ করে আছে। কিছু সময়ের ব্যবধানের চার দেওয়ালের আবদ্ধ কক্ষে প্রেমের মহাপ্রলয় ঘটে গেল। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠল সমস্ত ধরনী। সুখানুভূতিতে পূর্ণতা পেল দু’টি প্রেমিক হৃদয়। নিস্তব্ধ অম্বর তাদের প্রনয়ণের সাক্ষী হয়ে রইল।

(সমাপ্ত)
#গল্পঃ_আলিঙ্গনে_ভালোবাসার_মোহ_জেগে_উঠে