আলোকবর্ষ পেরিয়ে পর্ব-১১

0
433

#আলোকবর্ষ_পেরিয়ে ( একাদশ পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<২২>
আসলে এখানে আসার পর থেকেই ঐশী মেঘাকে একবারও দেখেনি বাড়িতে। একদিন অপেক্ষা করে তারপর নিজেই গেছিল মেঘার ঘরে খোঁজ নিতে। কিন্তু দরজা খুলে একটা অন্ধকার ঘর ফেরৎ পেয়েছিল ঐশী। অনেকদিন কারোর না থাকার ছাপ ছিল এই ঘরে কেমন! বইয়ের টেবিলটা ও ফাঁকা ছিল। তাহলে কি মেঘা পড়াশোনার জন্য অন্য কোথাও গেছে! কিন্তু অভীক মেঘাকে নিয়ে যেরকম চিন্তা করে, তাতে তো মেঘাকে একা কোথাও পড়াশোনার জন্যও ছাড়া সম্ভব না ওর পক্ষে। কথাগুলো ভেবেই ও এরপর একজন কাজের লোককে জিজ্ঞেস করেছিল মেঘার কথা, আর উত্তরে জানতে পেরেছিল বড় একটা ঘটনা।

সেদিন কাজের মাসী যদিও পুরোপুরি কিছু বলতে পারেনি ওকে; কিছুটা খাপছাড়া ভাবেই বলেছিল,
—–” মেঘা দিদি তো চার মাস হলো বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে! আর থাকে না এখানে। আসলে স্যারের সাথে কোন একটা ব্যাপারে খুব বড় ঝামেলা হয়ে ছিল মেঘা দিদির। তারপর রাত্রিবেলা কাউকে কিছু না বলেই দিদি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিল। স্যার যদিও তারপর অনেক যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে শুনেছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি!”
কথাগুলো শুনে ঐশীর যেন ধাক্কা লেগেছিল কেমন! অভীক নিজের বোনকে নিয়ে ঠিক কতোটা কনসার্নড, কতটা প্রোটেক্টিভ, এটা খুব ভালো করে জানে ঐশী। কিন্তু কি এমন হলো যে মেঘাও দূরে চলে গেল অভীকের থেকে! প্রশ্নটা মনে অনেকবার এলেও ও অভীককে কিছু জিজ্ঞেস করেনি কখনো নিজে থেকে। আসলে প্রয়োজন ছাড়া, হিসেবের বাইরে তো কোন কথা নেই ওদের দুজনের। এই নিয়মটা ঐশীরই তৈরি করা। আর নিজের তৈরি নিয়ম ভাঙার তো কোন ইচ্ছে নেই ওর।
তবে এর মধ্যে একদিন একটা ঘটনা হলো। ঐশীর বাবার সেদিন ডাক্তারের কাছে একটা এপয়মেন্ট ছিল। হাই প্রেশার তো! তাই প্রত্যেক মাসে একটা করে চেক আপ করতেই হয়। সেই মতন দুপুর তিনটের এপয়মেন্ট নেওয়া ছিল। কিন্তু ঐশীর লাস্ট মোমেন্ট এ অফিসে কাজ পরে গেল ইম্পর্টেন্ট। হঠাৎ করে কোম্পানির ডিরেক্টর এই মাসের সমস্ত হিসেব চেয়ে পাঠিয়েছিল ঐশীর থেকে। তাই কিছুতেই আর অফিস থেকে সেদিন দুপুরে বেরোতে পারলো না ঐশী! এমনকি বাবাকে ফোন করে ইনফর্ম করারও সময় পায়নি ঠিক ও।
যাইহোক, এরপর বিকেলের দিকে ফ্রি হয়েই ঐশী ওর বাবাকে কল করেছিল। সেই মুহুর্তে কিছুটা এলোমেলো হয়েই ও বলেছিল,
—–” সরি বাবা! আজ আসলে অফিসে একটা কাজ পরে গেল হঠাৎ। তাই কিছুতেই বেরোতে পারলাম না লাঞ্চ টাইমে। কিন্তু আমি নেক্সট উইকের এপয়মেন্ট করে রাখছি আজ। তুমি চিন্তা কোরো না!”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বললো ঐশী। কিন্তু বাবা সেই সময় খুব নিশ্চিন্তে বলে উঠলো,
—–” আর নেক্সট উইকে এপয়মেন্ট নেয়ার দরকার নেই তোর। আমি ডাক্তার দেখিয়ে এসেছি আজ, অভীকের সাথে।”
কথাটা শুনে ঐশী কয়েক সেকেন্ড অবাক হয়ে গেছিল হঠাৎ! তারপর নিজের মনেই জিজ্ঞেস করেছিল, —-” অভীকের সাথে মানে! ওর সাথে কি করে ডাক্তার দেখাতে গেলে!”
এই প্রশ্নে বাবা খুব সহজ ভাবে বলেছিল,
—–” আরে, অভীক তো আমাকে মাঝে মাঝেই ফোন করে খোঁজ খবর নেয়ার জন্য। সেরকম আজকেও যখন ফোন করেছিল আমার শরীর কেমন আছে জানতে, তখন এই ডাক্তারের এপয়মেন্ট এর কথা বলেছিলাম। তখন আড়াইটে বেজে গেছিল ঘড়িতে অলরেডি। সেই সময়েও তুই আসিসনি শুনে অভীক নিজেই অফিস থেকে আমাকে নিতে চলে এলো। এরপর আর কিভাবে না বলি ছেলেটাকে বল! তাই ওর সাথেই গিয়ে ডাক্তারটা দেখিয়ে এলাম। তারপর অভীক যা যা আমার ওষুধ দরকার, সেসবও কিনে দিয়েছে। কিছুতেই আমার বারণ শুনলো না!”
কথাগুলো এক টানা বলে এবার থামলো ঐশীর বাবা। কিন্তু ঐশী কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেল এখন! অভীক ওর বাবার ফোন করে খোঁজ খবর নেয়! এসব তো জানা ছিল না! যাইহোক, এরপর আর ঐশী বেশি কথা না বাড়িয়ে ফোনটা রেখে দিল সেই মুহূর্তে।
কিন্তু রাতে অভীক বাড়ি ফেরার পর ঐশী নিজেই গেছিল এরপর ওর কাছে। অভীক ঐশীকে দেখে একটু অবাকই হয়ে ছিল যেন! আসলে একই ঘরে থাকলেও ঐশী সব সময় নিজের মতনই থাকে। কোন কথা, কোন শব্দও বলে না অভীক কে কখনো। তাহলে আজ হঠাৎ ওর কাছে এসেছে কেন! কথাটা ভাবতেই ঐশী কিছু টাকা ওর সামনের টেবিলটায় রেখে বলেছিল স্থির গলায়,
—–” শুনলাম বাবাকে আজ তুমি ডাক্তার দেখিয়ে এনেছ। থ্যাঙ্কস.. আর এই যে ডাক্তারের ফিজ, আর ওষুধের টাকাটা রাখলাম টেবিলে। নিয়ে নিও।”
কথাটা শুনে অভীক কেমন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিল যেন! ঐশী ওকে টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছে এই সামান্য একটা ব্যাপারে! কথাটা মনে আসতেই অভীক অসংলগ্ন ভাবে বলে উঠেছিল,
—-” একটা ডাক্তার দেখিয়েছি বাবাকে শুধু! তার জন্য তুমি আমায় টাকা দিচ্ছ! আমি যেটা করেছি মন থেকেই বাবার জন্য!”
না, কথাটাকে আর শেষ করতে না দিয়েই ঐশী এবার বললো দৃঢ় গলায়,
——” আমরা তোমার কেউ নই অভীক। তুমি তো অনেকদিন আগেই খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলে এটা, যে আমি একজন বাইরের লোক। আর তোমার কোন বাইরের লোকের ফ্যামিলির জন্য হিসেব মতন তো কিছু করার কথা নয়! আর আমি তোমার থেকে কোন হেল্প নেবোই বা কেন!”
কথাগুলো ঐশী অভীকের চোখে চোখ রেখে বলেছিল সেদিন। কিন্তু অভীক এরপর আর নিজেকে সামলাতে পারেনি। হঠাৎ সমস্ত হিসেবের বাইরে গিয়ে অভীক ঐশীকে শক্ত করে ধরেছিল এলোমেলোভাবে, তারপর আবছা চোখেই বলেছিল,
—–” একবার কি পুরনো কথাগুলো ভোলা যায় না! আমি যা বলেছিলাম, যেটা করেছিলাম, সব রাগে করেছিলাম। মাথার ঠিক ছিল না আমার সেই সময়ে! মেঘাকে ওই অবস্থায় দেখে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি! আমি জানি, আমি অনেক বড় ভুল করেছি। কিন্তু প্লিজ, একবার, একটা সুযোগ দেওয়া যায় না আমাকে? ভুলগুলোকে ঠিক করার সুযোগ!”
কথাগুলো কেমন অসহায় চোখে বলেছিল ও। কিন্তু ঐশী সেই মুহূর্তে খুব নিস্তেজ গলাতেই বলে ছিল অভীক কে একটা কঠিন উত্তর। সেদিন অভীকের শক্ত করে ধরে রাখা হাতটা নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঐশী বলেছিল স্থির গলায়,
—– ” পারবো না আমি! তুমি যেই ব্যাবহার গুলো করেছ, সেটা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। আসলে আমি অনেক ভালোবেসে, অনেক মন থেকে এই বিয়েটা করেছিলাম, তোমার সাথে সংসার করতে এসেছিলাম। আমি কখনো ভাবতে পারিনি যে এই সম্পর্কটা এত ঠুনকো, এত সস্তা তোমার কাছে, যে একটা খারাপ সময় আসলেই তুমি এইভাবে সরে দাঁড়াবে! পুরোপুরি আলাদা করে দেবে নিজের থেকে! যাইহোক, আমি একা বাঁচতে শিখে গেছি এখন। আর পুরনো খারাপ লাগা গুলোকে জীবনে আসতে দিতে চাই না কোনদিন। আর সত্যি পারবো না আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে! কারণ বলা তো যায় না, আবার কোন খারাপ সময় এলো, আর আবার তুমি সব কিছুর জন্য আমাকে রেসপনসিবেল করে দূরে সরিয়ে দিলে নিজের থেকে!”
কথাগুলো খুব কঠিন গলায় বলে ঐশী দাঁড়ায়নি আর সেদিন অভীকের সামনে। ঘরটা খালি করে দিয়ে চলে গেছিল সেই মুহূর্তে। কিন্তু অভীক আজ পাথরের মূর্তির মতন স্থির হয়ে গেছিল যেন কিছুক্ষণ। আসলে ঐশীর কথাগুলোতে খুব বেশি করে বুঝেছিল নিজের ভুলটাকে অভীক। আর বুঝেছিল, কিছু ভুলের হয়ত সত্যি কোন ক্ষমা হয় না!
<২৩>
কিন্তু এই দিনটার পর আরো একটা সত্যি অপেক্ষা করছিল ঐশীর জন্য। যেটা এতদিন ঐশীর অজানা ছিল, ওর চাকরির ব্যাপারে। আসলে সেদিন ঐশীর একটা ইনক্লিমেন্ট হয়ে ছিল অফিসে, ওর ভালো পারফর্মেন্স এর জন্য। তাই বেশ খুশিই ছিল প্রথমে। কিন্তু কোম্পানির ডিরেক্টর ওর হাতে ইনক্লিমেন্ট এর অফিসিয়াল লেটার টা হাতে দিয়ে হাসি মুখে বলেছিল,
—-” সত্যি, মিস্টার অভীক ঠিকই বলেছিলেন আপনার ব্যাপারে। আপনি ভীষণই এফিশিয়েন্ট। আমাদের কোম্পানির জন্য আপনাদের মতন এমপ্লয়ি দরকার।”
কথাটা শুনে ঐশী যেন থমকে গেছিল কয়েক সেকেন্ড! তারপর একটুও সময় না নিয়ে ও জিজ্ঞেস করেছিল সোজাসুজি,
—–” অভীক সেনগুপ্ত ? আপনি চেনেন ওনাকে?”
এই প্রশ্নে সেদিন কোম্পানির ডিরেক্টর সতীশ বসু একটু হেসেই বলেছিলেন,
—–” কি বলছেন কি আপনি! অভীক সেন, এত বড় প্রোমোটার, বিজনেসম্যান। ওনাকে কে ই বা না চিনবে! আর উনিই তো আপনার সিভিটা পাঠিয়েছিলেন আমাকে। কেন আপনি জানেন না? আমি তো ভেবেছিলাম আপনি চেনেন পার্সোনালি ওনাকে!”
কথাটা শুনে ঐশী আর কোন উত্তর দেয়নি ঠিক। বলতে পারেনি যে ও অভীকের ওয়াইফ। আসলে যেই সম্পর্কটা আর কদিনের মধ্যেই পুরোপুরি ভাবে শেষ হয়ে যাবে, সেই সম্পর্কটা সবার অন্তরালেই থাকুক না হয়! কথাগুলো মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা রাগও এসে ভিড় করেছিল ঐশীর মনে সেদিন। ও তো অভীকের থেকে কোন হেল্প চায়নি কখনো! তাহলে অভীক ঠিক কি ভেবে ওর চাকরির ব্যাবস্থা করলো! তাও পুরো ব্যাপারটা ঐশীর থেকে আড়াল করে! কি প্রমাণ করতে চাইলো অভীক এইসব করে! যে ও কত মহান! আর ঐশী ঠিক কতটা সাধারণ। কথাগুলো ভীষণ ভাবে মনে হচ্ছিল ঐশীর, আর নিজেকে খুব ছোট লাগছিল হঠাৎ। তবে সেদিন ঐশী বাড়ি পৌঁছে আর চুপ থাকেনি। অভীক অফিস থেকে ফেরার পরই ঐশী মুখোমুখি হয়ে ছিল ওর। আর আজ ভীষণ রেগেই বলেছিল ও,
——” তুমি আমাকে ছোট করে, ইনসাল্ট করে, ঠিক কি শান্তি পাও বলো তো? আমার চাকরির জন্য তুমি আমাকে রেকমেন্ড করেছিলে? মানে আমার চাকরিটা তোমার কথাতে হয়েছে! আর সেটা এতদিন বাদে আমি জানলাম! আমি তো প্রথমে চাকরিটা হওয়ার পর ভেবেছিলাম, যে ছ মাস আগে এপ্লাই করার পর তখন ওরা কোন রেসপন্স করলো না; তাহলে এতদিন বাদে কেন হঠাৎ ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকলো! আজ বুঝতে পারলাম উত্তরটা। যে ওরা আমার এপ্লিকেশন এর উত্তর হিসেবে আমাকে ইন্টারভিউ দিতে ডাকেনি, ডেকেছিল শুধু তোমার কথা শুনে। আচ্ছা, তুমি এসব করে কি প্রুভ করতে চাইলে! যে আমার কোন যোগ্যতা নেই! আমি নিজের চেষ্টায় একটা চাকরি পেতে পারি না! তোমার মতন পাওয়ারফুল লোকের হাত না থাকলে আমার কিছু হবে না!”

কথাগুলো খুব তীক্ষ্ম স্বরে বলেছিল ঐশী। অভীক সেই মুহূর্তে যেন অবাক চোখেই দেখছিল ওকে। কতটা খারাপ মানুষ ভাবে ঐশী ওকে! তাই এইভাবে ভাবতে পারছে অভীকের ব্যাপারে। কথাগুলো মনে নিয়েই অভীক সেদিন বলেছিল শান্তভাবে,
—–” আমি এত কিছু ভেবে কিছু করিনি। আমি শুধু তোমার নামটাই রেকমেন্ড করেছিলাম। ওদের সিভি পছন্দ হয়ে ছিল, ওরা ইন্টারভিউ তে তোমার কথা শুনে স্যাটিসফাই হয়ে ছিল বলেই চাকরিটা দিয়েছে তোমাকে। আর এরপর এতদিন ধরে নিজের কাজ দিয়েই তুমি নিজেকে প্রুভ করেছ। আর আমি যত টুকু করেছি,সেটা তোমার ভালো ভেবেই করেছি। কারণ একটা সময় তুমি নিজের চাকরি ছেড়েছিলে; আমার বোনের ট্রিটমেন্ট এর জন্য। আর এই স্যাক্রিফাইসটা আমি কখনো ভুলবো না! যাইহোক, জানি এরপরও তুমি আমাকেই খারাপ ভাববে, আর নিজের হয়ে কিছু বলার নেই আমার। এন্ড সরি, তোমাকে না বুঝে হার্ট করে থাকলে! সরি ফর এভরিথিং..”
কথাগুলো বলেই অভীক আর থাকেনি ঐশীর সামনে। আসলে খুব কষ্ট হচ্ছিল ওর। ঐশীর ওকে দিনের পর দিন নিজের থেকে এত দূরে সরিয়ে দেয়াটা ঠিক যেন কাঁটার মতন বিঁধছিল মনে। চোখটা আবছা হয়ে আসছিল হঠাৎ জলে। কিন্তু এই কষ্টটা, এই জলটা ঐশীর সামনে দেখানো যাবে না! তাহলে হয়ত ভাবতে পারে অভীক নাটক করছে! তাই চুপচাপ চলে গেছিল ও ঘর থেকে। কিন্তু ঐশী এই সময়ে অভীকের কথাগুলো ভেবেছিল আরেকবার ঠাণ্ডা মাথায়, আর কেন জানে না, মনে হয়েছিল, ও কি অভীক কে একটু বেশি বলে ফেললো! ও কি সত্যিই ভুল বুঝেছিল অভীক কে! এতটা হয়ত না বললেও চলতো।

কিন্তু এর পরেরদিন একটা কথা জেনে ঐশীর সত্যিই হঠাৎ খুব খারাপ লেগেছিল। সেদিন ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে ও বাড়ির কাজের লোকের কাছ থেকে শুনেছিল অভীকের কথা। অভীক আসলে সেদিন খুব সকাল সকাল বেরিয়ে গেছিল অফিসে কিছু না খেয়েই। ঐশী যদিও সেটা জানতো না। কিন্তু বাড়ির কাজের মাসি মালতিদি ওকে না দেখে ঐশীকেই জিজ্ঞেস করেছিল,
——” অভীক স্যার কি বেরিয়ে গেছে? খাবে না ব্রেকফাস্ট!”
কথাটা শুনে ঐশী একটু আনমনেই বলেছিল,
—–” আমি জানি না! আমি দেখিনি ওকে সকাল থেকে।”
কিন্তু এটা শুনে মালতিদি কিছু না ভেবেই বলে উঠেছিল,
—–” কিন্তু স্যার তো কাল রাতেও কিছু খায়নি। আর আজ ব্রেকফাস্টটাও করলো না! আজকাল যে কি হয়েছে! স্যারের খাওয়া দাওয়ার আর কোন ঠিকই নেই! এইভাবে চললে না শরীর খারাপ হয়ে যায়!”
কথাগুলো আপন খেয়ালে বলে মালতি দি রান্না ঘরে চলে গেলেও, ঐশী কেমন থমকে গেছিল যেন। কাল রাতে অভীক কিছু খায়নি! আজকাল ঠিক করে খাওয়া দাওয়াও করে না! কথাটা ভেবেই অভীকের বিবর্ণ ফ্যাকাসে মুখটা ভেসে উঠেছিল হঠাৎ চোখের সামনে। সত্যিই কি অভীক আর নিজের খেয়াল রাখে না! ও কি ভেতরে ভেতরে খুব খারাপ আছে! প্রশ্নটা যেন অজান্তেই মনে এসে ভিড় করেছিল ঐশীর।
চলবে।