আসল সম্পর্ক পর্ব-০২

0
169

#আসল_সম্পর্ক
#পর্ব_২
#ইশরাত_জাহান

সীমান্তের সাথে কথা বলে বাসায় ফিরলো অনুপম।প্রিয়তা রান্না করছে।অনুপম এসে কলিং বেল বাজালো।প্রিয়তা খুলে দিলো দরজা। অনুপমকে ঢুকতে সাইড দিলো।অনুপম এসে সোফায় বসলো।প্রিয়তা বললো,”কাজ হয়েছে?”

প্রিয়তার দিকে এক পলক তাকালো অনুপম।রমণীকে বোঝার চেষ্টা চালালো।না একে বোঝা তার কর্ম না।এক গ্লাস পানি পান করে নিলো।তারপর বললো,”সবকিছু খুলে বললাম।এখন দেখি কি হয়!ও বললো সময় লাগবে কিছুদিন।”

রান্নাঘরে যেতে যেতে প্রিয়তা বললো,”ওহ আচ্ছা।তোমার বাসায় এই কয়দিন রাখতে অসুবিধা হবে না নিশ্চয়ই!”

অনুপম জানে প্রিয়তা একটু ওভার মাইন্ডেড ইগো পারসন।তারই মামাতো বোন হয়।খুব বেশি না দেখতে পেলেও যতটুকু দেখেছে বই পোকা আর ঘরকুনো।ঘরের কাজকর্ম শেষ করে গল্পের বই নিয়ে বসা প্রিয়তার একটি সভাব।এই মেয়ে প্রেম করলো কিভাবে! রাজীব কি আদৌ সহ্য করতে পারতো ওর এসব রসকষহীন কথা।অবশ্য এতে অনুপমের যায় আসে না।অনুপম বললো,”তোর যতদিন ইচ্ছা থাক।আছিস তো সেই পাশের ঘরে।আমার আর কি!ফ্রীতে রান্না করার মানুষ পেয়েছি।ঘরের সবকিছুই তো গুছিয়ে রাখছিস।সমস্যার থেকে সুবিধা বেশি।”

কথা বাড়ালো না প্রিয়তা।ওই যে চুপচাপ শান্তশিষ্ট পদবী পেয়েছে সে।তারই সূত্র ধরে জীবন চলে তার।

অনুপম আসলো রান্নাঘরে।দেখলো প্রিয়তা খুন্তি হাতে নিয়ে কড়াইতে নাড়াচাড়া করছে।জিজ্ঞাসা করলো,”কি রান্না করছিস আজ?”

প্রিয়তা রান্নার কাজ করতে করতেই বললো,”শীত পড়েছে তো তাই খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজি।খেতে অসুবিধা হবে না তো তোমার?”

খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ শুনেই জিভে পানি এলো অনুপমের।বললো,”আরে নাহ।কি যে বলিস।বাঙালি আমি এসব মজার খাবারই তো বেশি করে খেতে মন চায়।”

স্মিত হাসলো প্রিয়তা।বললো,”রুহি আপুকে বলেছো তো তোমার সময় লাগবে!”

মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে সেট করলো অনুপম।তারপর বললো,”এসএমএস করেছিলাম।তার উত্তরে বলছে ডিভোর্সের পর ওর সাথে কন্টাক্ট করতে।ডিভোর্স না হওয়া অব্দি আমার জীবনে আসাটা ওর অমুল্লোহীন।আপাদত তুই নাকি আমার জীবনের আসল। আমার আসল সম্পর্ক তোর সাথে।বিয়ের পর বাইরে ছেলেমেয়ে চলাফেরা করাটা পরকীয়া।তাই ও চায় না আপাদত কোনো যোগাযোগ রাখতে।”

আসল সম্পর্ক!কথাটা শুনতেই প্রিয়তার হাতের রান্না বন্ধ হয়ে গেলো।তার আর অনুপম আসল সম্পর্কে জড়িয়ে আছে।কিন্তু এই আসল সম্পর্ক কেউ বেধে রাখতে পারেনি। বাধনের সুতোটি তো শক্ত করে বাধাই হয়নি।সেই সুতো তো শুরু থেকেই ঢিলা।কয়দিন পর সুতো ছিরে যাবে।

অনুপম দেখলো প্রিয়তা চুপ।কিছু একটা ভাবছে।কি ভাবছে প্রিয়তা এটা জানে না অনুপম। এতক্ষন পর অনুপমের নজরে এলো আজ প্রিয়তা শাড়ি পরেছে।প্রিয়তার কোমরের দিকের কাপড় অল্প কিছুটা সরে যায়।হালকা এক ঢোক গিলে ঘরে ফিরে আসে অনুপম।যতই হোক পুরুষ মানুষ সে।প্রিয়তা তার বৈধ বউ।ভালোবাসার টান না থাকুক।ভুলভাল টান আসতেই পারে।তাই রান্নাঘরে থাকলো না সে।

রান্নাঘর থেকে ঘরে এসে গান শুনতে লাগলো অনুপম।কিছুক্ষণ পরে প্রিয়তা এসে ডাক দিলো।বললো,”রান্না হয়ে গেছে।শীতকালে খাবার বেশিক্ষণ বাইরে রাখলে ভালো লাগে না।গরম গরম খাবে এসো।”

অনুপম গান বন্ধ করে বললো,”তুই যা আমি হাতমুখ ধুয়ে আসছি।”

চলে গেলো প্রিয়তা।টেবিলে খাবার গোছাতে লাগে।অনুপম শার্ট প্যান্ট খুলে লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে আসলো।টেবিলে আজ খাবার গোছানো।তাও দুইজনের জন্য।এটা খুব কমই হয়।শুক্রবারে অনুপম বাড়িতে থাকে।কিন্তু তারপরও সময়ের হেরফের করে তারা।মাঝে মধ্যে একসাথে খেতে বসে।কিন্তু তাও দুজন দুজনের মত নিরবতা।প্রয়োজনের বাইরে কেউ কথা বলে না।কথার ছলে অনুপম একটু আড্ডার দিকে যায়।তবে তা শুধু মামাতো বোনের দৃষ্টিতে।বেশি আগাতে পারতো না।কারণ প্রিয়তা চুপ থাকতো।হালকা ইমেজে লাগতো অনুপমেরও।

প্রিয়তা টেবিলে বসে পড়ে।তাই দেখে অনুপমও বসে।প্রিয়তা খাবারগুলো বেড়ে দেয় কনুপমের প্লেটে।ইলিশ মাছের মাথা আর মাছের ডিম আলাদা ভাজা ছিলো।ওটা দেয় অনুপমকে।এটা অনুপমের প্রিয় খাবার।ইলিশ মাছ করা করে ভাজা হবে আর ওর কাঁটাগুলো মুচমুচে থাকবে। আস্ত একটি মাছের ডিম।তার সাথে ইলিশ মাছ ভাজার তেল আর শুকনো ঝাল ভাজা।আজ প্রিয়তা ওকে এগুলোই দিলো।অনুপম জিজ্ঞাসা করলো,”তুই কি করে জানলি যে আমি এভাবে খেতে ভালোবাসি?”

প্রিয়তা নিজের প্লেটে খিচুড়ি আর ইলিশ মাছের পেটি পিস নিতে নিতে বললো,”ফুফু আম্মা বলেছেন।আজ কথা হয়েছিলো সকালে ফুফু আম্মার সাথে।রান্নার কথা জিজ্ঞাসা করেন তিনি।বলি এগুলো রান্না করবো।তখন তিনি জানান তুমি কি খেতে ভালোবাসো।”

অনুপম দেখলো তার প্লেটের মাছের ডিম বেশ বড়।প্রিয়তা নেয়নি মাছের ডিম।ছোটবেলায় প্রিয়তা যখন তাদের বাসায় যেতো।তখন অনুপমের মা মাছের ডিম দুই ভাগ করতো।একটু প্রিয়তা আর একটু অনুপম খেতো।মাছের ডিম প্রিয়তার খুব প্রিয়।তাই অনুপম নিজের প্লেটের মাছের ডিম থেকে কিছু অংশ ভেঙ্গে প্রিয়তার প্লেটে দিলো।প্রিয়তা তাকালো অনুপমের দিকে।কিছু বলতে যাবে তাকে থামিয়ে অনুপম বললো,”আমি আগে খুব খেতে পারতাম।তবে এখন এতবেশি খাই না।”

কথার পিঠে নিরবতা রাখলো প্রিয়তা। আর কিছু বললো না।অনুপম জানে প্রিয়তাকে এমনি এমনি দিলে ও খেতো না।তাই বানিয়ে বললো।খাওয়া দাওয়া শেষ করে প্লেট ধুতে গেলো প্রিয়তা।অনুপম নেকড়া দিয়ে টেবিল মুছলো। বণ প্রিচে কিছু কাটা আছে।ওগুলো অতিথি বিড়ালের জন্য।অতিথি বিড়াল বলার কারণ বিড়ালটি হঠাৎ হঠাৎ তাদের ফ্ল্যাটে আসে। কার পোষা বিড়াল তা এরা জানে না।তবে বিড়ালকে মাঝে মাঝে কাটা দিয়ে আপ্যায়ন করে প্রিয়তা।তাই একে বলা হয় অতিথি বিড়াল।

বিড়ালের হয়তো আয়ু বেশি।নাহলে অনুপমের ভাবনার মাঝে কিভাবে হাজির হয় সে।বিড়াল এসে মিউ মিউ করছে।অনুপম বিড়ালের দিকে ঝুঁকে লুঙ্গি কাচিয়ে বসে বললো,”হায়রে বিড়াল।তুইও মজার খাবারের লোভ সামলাতে পারলি না।লোভ জিনিসটা বড়ই বেহায়া।সবার ভিতরে বিরাজ করে।এই যেমন তোর কথা বলি।তুইও খাবারের লোভে এসে পড়লি।”

চলবে