আসল সম্পর্ক পর্ব-০১

0
315

#আসল_সম্পর্ক
#সূচনা_পর্ব
#ইশরাত_জাহান

সীমান্ত,”দোস্ত তুই শিওর যে প্রিয়তাকে ডিভোর্স দিবি?”

অনুপম,”হ্যা,এই সম্পর্কের মূল্য আমার বা ওর কারো কাছেই নেই।”

সীমান্ত,”তোর একটু ভেবে দেখা উচিত।বৈবাহিক সম্পর্ক এটা।বিয়ের সম্পর্কের থেকে বড় বাইরের ছেলে মেয়েদের প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক হয় না।”

অনুপম,”আমি প্রিয়তাকে বউ হিসেবে মানতে পারিনি। প্রিয়তাও তো আমাকে ভালোবাসে না।দেখতে দেখতে এগারো মাস হয়ে গেলো।না আমি আর না প্রিয়তা কেউ কারো প্রতি সম্পর্ক আগানোর অনুভূতি ফিল করিনি।ওদিকে বেচারি রুহি।আমাকে ভালোবাসে ও।আমিও ওকে ভালোবাসি।রুহি আর আমি তো বিয়ের পর আর সম্পর্কে জড়াইনি।কিন্তু প্রিয়তা এই সম্পর্কের ইতি চায়।ওই আমার কাছে রুহিকে এনে দেয়।তাহলে আমি কেনো রুহির থেকে দূরে থাকবো?প্রিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে আমি রুহিকে বিয়ে করবো।”

সীমান্ত,”তোর যা ভালো মনে হয় তুই তাই কর।আমি তাহলে ডিভোর্সের পেপার রেডি করি!”

অনুপম,”হ্যা,তাই কর।”

সীমান্ত,”সময় লাগবে আমার।যেহেতু এক বছর এখনও হয়নি।তাই একটু সময় লাগবে।তুই বাসায় যা।রেডি হলে তোকে জানিয়ে দিবো।”

অনুপম,”ঠিক আছে।আসি আজ,বাই।”
বলেই চলে গেলো অনুপম।

এতক্ষণ ধরে কথা চলছিলো অনুপম ও সীমান্তর ভিতর।সীমান্ত একজন অ্যাডভোকেট।সে ডিভোর্সের বিষয়ে কাজ করে।অনুপম সীমান্তের বন্ধু।আজ অনুপম সীমান্তের কাছে এসেছে তার বিচ্ছেদের জন্য।

অনুপমের বিয়ে হয় এগারো মাস আগে।প্রিয়তা নামের একটি মেয়ের সাথে।বৈবাহিক সম্পর্ক ভালো যায় না তাদের।অনুপমের বিয়ের আগে সম্পর্ক থাকে রুহির সাথে।অনুপম ঢাকা শহরে একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে।অনুপমের বাবা মা গ্রামে থাকেন।একদিন অনুপমকে কল দিয়ে গ্রামে আসতে বলে তারা।অনুপম আসে গ্রামে।কথা নেই বার্তা নেই লোক সম্মুখে ওই সময়ে বিয়ে করতে বলে।প্রিয়তা অনুপমের মামাতো বোন।প্রিয়তার বিয়ে ছিলো ওইদিন।ছেলেটি গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়।তাই সবাই প্রিয়তাকে দায়ী করেন।লোকলজ্জার ভয়ে অনুপমের মা অনুপমকে ডেকে আনেন।অবশ্য এর আগে তিনি বেশ কয়েকবার ছেলেকে জিজ্ঞেস করছেন যে তার কোনো পছন্দ আছে কি না।অনুপম বরাবর বলেছে “না”।মাকে বলতে লজ্জা করতো তার।কিন্তু এখন কি করবে সে?কিভাবে বলবে রুহিকে সে পছন্দ নয় বরং ভালোবাসে।মাকে বলার সুযোগও পাচ্ছে না সে।এতগুলো লোকের সামনে বলতে গেলে লজ্জায় পড়তে হবে।এটা গ্রাম তার উপর প্রিয়তার জীবন জড়িয়ে আছে।তার বাবা মায়েরও সম্মান এখানে।সব দিক ভেবে চুপচাপ বিয়ে করতে হয় তাকে।

বিয়ের পরদিনই প্রিয়তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে অনুপম।ছোটখাটো রুম ভাড়া নিয়ে থাকতো এতদিন।বাবা মা প্রায়ই আসে তাই।অনুপম কিছু বলতে যাবে তার আগে প্রিয়তা বলে,”আমার এই সম্পর্ক মানতে সময় লাগবে।আমি এখনও রাজীবকে ভালোবাসি।ওকে ভুলতে পারছি না আমি।”
কিছু বলে না অনুপম।সম্মতি জানায় প্রিয়তার কথায়।
রাজীবের সাথে প্রিয়তার প্রেমের সম্পর্ক থাকে।প্রিয়তা ঢাকার একটি হোস্টেলে পড়াশোনা করতো। রাজীব চাকরি করতো।বাসায় জানায় দুজনের কথা।সবাই রাজি হয়।কিন্তু বিয়ের দিন গাড়ির সাথে ট্রাকের সংঘর্ষ লেগে যায়।ট্রাকে ছিলো বড় বড় রোড।সেই রোড রাজীবের মাথা দিয়ে ভেদ করে চলে যায়।প্রেমিকের মৃত্যু সহ্য করতে পারে না প্রিয়তা।আজ তার বিয়ে হওয়ার কথা।কিন্তু মৃত্যু হয়ে গেলো।গ্রামের মানুষ এর ভিতর বলছে প্রিয়তা অশুভ।রাজীবের মাও একই কথা বলছেন ছেলের শোকে।অবশেষে সবার কথা সহ্য করতে না পেরে প্রিয়তার বাবা ভেঙ্গে পড়েন।অনুপমের মা ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে সাথে সাথে ছেলেকে কল দেন।তার ছেলে চাকরি করে।আবার সিঙ্গেল(তার এটাই জানা থাকে)।

বিয়ের পর অনুপম ও প্রিয়তা দুজন আলাদা ঘরে থাকতো।রুহিকে সবকিছু বলে দেয় অনুপম।এটাও বলে,”যেহেতু আমার বিয়ে হয়ে গেছে।এই সম্পর্ক আর এগোনো যায়না রুহি।আমাদের বিচ্ছেদ এখানেই।”

অনুপম ও রুহির বিচ্ছেদের পর কোনরকমে যায় প্রিয়তা ও অনুপমের জীবন।অনুপম কাটাতে পারেনি রুহির মোহ। আর প্রিয়তা ভুলতে পারেনি তার রাজীবকে।

বিয়ের নয় মাসের মাথায় প্রিয়তা জানতে পারে রুহির কথা।অনুপমের ফোনে হাত দিয়েছিলো প্রিয়তা।মায়ের সাথে কথা বলবে বলে।প্রিয়তার ফোনে টাকা না থাকলে অনুপমের ফোন দিয়ে কথা বলে।অনুপম কিছু বলে না।মায়ের সাথে কথা বলার পর উপরে দেখলো গুগল নোটিফিকেশন।এক বছরের পূর্তি আজ ছবিগুলোর।একসাথে কলাগ তৈরি করার জন্য।আতঙ্কে প্রিয়তা গ্যালারিতে ঢুকলো।খুব বেশি খারাপ ছবি না।তবে প্রেমিক প্রেমিকা এটা বোঝা যায়। অনুপমের সাথে কথা বলে বাকি কাহিনী জানতে পারলো সে।নিজের বিবেকে বাঁধলো প্রিয়তার।সে তো নিজেই ভুলতে পারেনি রাজীবকে।এই যে অনুপমের সাথে নয়মাস আছে এক ফ্ল্যাটে।কিন্তু এক ঘর তো হয়নি।প্রতিদিন রান্না করে দুজনের জন্য।খায় দুজনে আলাদাভাবে।প্রতিদিন রাত জাগে প্রিয়তা।কিন্তু ঘুমায় আলাদা ঘরে।এই সম্পর্কের মূল্য নেই।তাই সে রুহির সাথে কন্টাক্ট করে।নাম্বার অনুপমের ফোনে পায়।
রুহির সাথে কথা বলে বুঝতে পারে রুহিও অনুপমকে ভালোবাসে।তাই তারা একসাথে কথা বলে।সব কথার পর রুহির একটাই কথা,”আমি এইভাবে কারো সংসারে ঢুকতে পারবো না।যদি অনুপম তোমাকে ডিভোর্স দেয় তাহলে আমি ওকে বিয়ে করতে রাজি।”
সাথে সাথে প্রিয়তা বলে,”হ্যা আমরা ডিভোর্স দিবো একে অপরকে।”
কথা ওখানেই স্থির থাকে।

সীমান্ত ঢাকার বাইরে থাকে দুই মাস।তাই অনুপম চুপ থাকে এই কয়দিন।সীমান্ত আসার পর সীমান্তের সাথে দেখা করে অনুপম।তারপর ওই কথাগুলো হয়।

চলবে,