আহনাফ চৌধুরী পর্ব-০৬

0
97

#আহনাফ_চৌধুরী
#পর্ব_৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
______________
ব্যস্ততার মধ্যেই সাজেদা বেগম অর্ষার কাছে এলেন। আচানক হাত ধরায় অর্ষা কিছুটা চমকে গেল। তার মনোযোগ তামিম এবং ঐশির দিকে ছিল বলে এই ভয়টুকু পেয়েছে। পরক্ষণেই সাজেদা বেগমকে দেখে মুচকি হাসল সে।

সাজেদা বেগম আলতো করে অর্ষার চোখের পাশটায় হাত বুলালেন। আহতস্বরে বললেন,

“এখনো সারেনি?”

অর্ষা মৃদু হেসে বলল,

“সেরে গেছে তো! শুধু দাগটাই আছে। চলে যাবে। কেমন আছেন আপনি?”

“ভালো আছি, মা। তুমি কেমন আছো?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি।”

দুজনে কিছুক্ষণ টুকটাক আরও কথা বলছিল তখন অর্থি সেখানে উপস্থিত হয়ে বলল,

“বড়ো আপু তোমাকে ডাকে।”

অর্ষা সাজেদা বেগমের দিকে তাকাল। তিনি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“যাও। পরে কথা হবে।”

অর্ষা হেসে অর্থির সঙ্গে চলে গেল। ঐশি দাঁড়িয়ে ছিল সিঁড়ির কাছে। ড্রয়িংরুমে এখন শুধু বড়োদের আলাপ-আলোচনা। শেষ সময়ে তামিমের বড়ো চাচা-চাচি, কাজিন আর কিছু ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশিও এসে আয়োজনে যোগদান করেছেন।

অর্ষা আসতেই ঐশি বলল,

“চল।”

“কোথায়?” জানতে চাইল অর্ষা।

“ছাদে।”

“এই শীতের মধ্যে ছাদে কেন?”

“ছাদেও নাকি কীসের আয়োজন করেছে। সবাই অপেক্ষা করছে চল।”

“তোর যেতে হয় যা। আমি এই শীতের মধ্যে ছাদে যাব না।”

“অর্ষা! তামিম কী ভাববে বল তো? তাছাড়া এখানে সবাই মুরুব্বিরা বসে আলোচনা করছে। এখানে তুই কী করবি? কথা না বাড়িয়ে চল এখন।”

অর্থিও অর্ষার হাত ধরে টানতে টানতে বলল,

“হুম আপু, চলো তো।”

অগত্যা অর্ষাকে যেতে হলো। তিন বোন যখন একত্রে ছাদে পৌঁছাল তখন মুগ্ধতায় তিনজনেরই চোখ ভরে গেল। ছাদটা খুব বেশি বড়ো নয়। আবার খুব বেশি ছোটোও না। মাঝারি ধরণের বলা যায়। চারদিকে ইটের রেলিং করা। একপাশে রয়েছে পরিচিত অনেক ফুল ও ফলের গাছ। গাছগুলোতে এখন বিভিন্ন রকমের ঝাড়বাতি জ্বলছে। ছাদের অন্য সাইডে ফ্লোরিং করে বসার জায়গা বানানো হয়েছে। গায়ে দেওয়ার জন্য অনেকগুলো কম্বলও ভাঁজ করে একপাশে রাখা আছে। কয়েকটা কম্বল আবার অনেকে খুলে পায়ের ওপর দিয়ে রেখেছে। বসার জায়গাটুকুতেও রয়েছে লাইটিং, ফুল ও বেলুন। বাতাসে বেলুনের জোড়াগুলো এদিক-ওদিক উড়ছিল।

অর্থি তো আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলল,

“এত্ত সুন্দর!”

তামিম ওদের দেখে এগিয়ে এলো। হাতটা ঐশির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে মৃদুস্বরে বলল,

“ওয়েলকাম মাই কুইন।”

লজ্জায় হোক বা শীতে; ঐশির কাঁপান্বিত ভাব লক্ষ্য করছিল অর্ষা। তিন বোন তামিমের সাথে গিয়ে বসল জায়গাটিতে। বাকিরাও সবাই এখানেই বসে আছে। তামিম ওর সব বন্ধু-বান্ধব এবং কাজিনদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। অফিসের কয়েকজন কলিগও ছিল এখানে। তবে আহনাফ অনুপস্থিত। লোকটা কি চলে গেছে? নিচে তো তার বাবা-মা আছে। তাহলে? কী জানি! গেলে যেতেও পারে। অর্ষা আর বিষয়টা ঘাঁটাল না।

তামিম ঐশিকে জিজ্ঞেস করল,

“জায়গাটা ভালো লেগেছে?”

ঐশি লজ্জায় নতজানু হয়ে মাথা নাড়াল। তামিমের বন্ধুরা তখন একজোট হয়ে হেসে বলল,

“সব ক্রেডিট কিন্তু আমাদের ভাবি। জায়গাটা আমরা সাজিয়েছি।”

তামিম বলল,

“আচ্ছা! তোরা সাজিয়েছিস বলে এখন সব ক্রেডিট তোদের হয়ে গেল? প্ল্যানিং কার ছিল শুনি?”

বন্ধুদের মধ্যে তখন একজন বলল,

“বউয়ের সামনে এত ভাব নিও না বাবু। প্ল্যান তোমার একারও ছিল না। আহনাফেরও ভূমিকা আছে এখানে।”

“তো আমি কখন এটা অস্বীকার করলাম? আমি কি তোদের মতো নিমকহারাম নাকি?”

“খবরদার! আমাদের পচাবি না। ভাবির সামনে কিন্তু সব ফাঁস করে দেবো?”

“কী ফাঁস করবি? কর। তামিম ভয় পায় না কাউকে।”

“আমাদের সামনে তো বাঘ সাজবিই। বিড়াল তো হবি বউয়ের সামনে।”

তামিম রেগে তাকাতেই ওরা হেসে বলল,

“আচ্ছা আমরা ঝগড়াঝাঁটি পরে করব। চল এখন আড্ডা শুরু করা যাক। প্রথমে গান দিয়েই শুরু করি? এরপর ট্রুথ এন্ড ডেয়ার গেইম খেলে শেষ করব। কী বলিস তোরা?”

একজন বলল কথাগুলো। বাকিরা তার সাথে সহমত পোষণ করলেও এরমধ্যে অনেকেই আগে থেকে বলে দিতে লাগল যে,

“আমি কিন্তু গান-টান পারি না। আমি গাইব না বলে দিচ্ছি।”

তামিম বলল,

“আই থিংক, আমার চেয়ে বাজে গান এখানে তোরা কেউ গাস না। আমি যদি আমার হবু বউয়ের সামনে এই ভয়েস নিয়ে গান গাইতে পারি তাহলে তোরা পারবি না কেন? এক কলি হলেও গাইতে হবে। তাছাড়া এখানে কেউই আমরা প্রফশোনাল নই। সো, এত ভেবে-চিন্তে গাইতে হবে না। আমরা জাস্ট সবাই একসাথে সময়টাকে উপভোগ করব এই যা!”

তামিমের লম্বা বক্তব্যের পর কেউ আর দ্বিরুক্তি করল না। তামিমও একপাশে ভালোমতো বসে বলল,

“প্রথমে কে গাইবি?”

অর্থি হাত তুলে বলল,

“আমি।”

সবাই মুচকি হাসতে হাসতে হাত তালি দিয়ে অর্থিকে উৎসাহ দিল। হাত তালি থামার পর অর্থি চমৎকার একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে শোনাল সবাইকে। অর্থির কণ্ঠে এত সুন্দর রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে সবাই রীতিমতো বিস্মিত। একজন তো বিস্ময় লুকিয়ে রাখতে না পেরে বলেই ফেলল,

“তুমি কি গান শেখো অর্থি?”

অর্থি দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,

“না।”

“তাহলে এত চমৎকার করে গাইলে কীভাবে? তাও আবার রবীন্দ্র সঙ্গীত!”

অর্থি অর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,

“আপুর সাথে গাইতে গাইতে শিখে গেছি। আপু তো আরও সুন্দর করে গান গায়।”

সবার নজর গিয়ে পড়ল এবার অর্ষার দিকে। অর্ষা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,

“অযথাই! ও আগ বাড়িয়ে বলছে সব।”

ঐশি তখন বাঁধ সেজে বলল,

“মিথ্যে বলছিস কেন? অর্থি যা বলেছে সত্যিই তো বলেছে।”

এরপর সে সবার দিকে তাকিয়ে বলল

“আসলেই অর্ষা অনেক ভালো গান করে। ওর গানের গলা অনেক সুন্দর। গানের জন্য অনেক পুরুস্কারও পেয়েছে।”

অর্ষা চোখ পাকিয়ে বলল,

“আপু!”

এবার উপস্থিত সবাই অর্ষার গান শোনার জন্য উতলা হয়ে পড়ল। এত মানুষের উতলা ভাব দেখে অর্ষার কেমন জানি নার্ভাস লাগছে। সে এটা বলেছেও। কিন্তু সবাই এমনভাবে জোরাজুরি করছে যে অর্ষা বাধ্য হয়েই গান গাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে সে নিজের মতো করে গাইতে শুরু করল,

“ঠিক এমন এভাবে,
তুই থেকে যা স্বভাবে।
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই,
আর তুই ছাড়া গতি নেই।

ছুঁয়ে দে আঙুল
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা
কথা দেয়া থাক,
গেলে যাবি চোখের বাইরে না।
ছুঁয়ে দে আঙুল
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা
কথা দেয়া থাক,
গেলে যাবি চোখের বাইরে না…”

আহনাফ ছাদের অন্যপাশে দাঁড়িয়ে আছে। সবার থেকে দূরে থাকার কারণ হচ্ছে সুপ্তি। তামিম অফিসের কয়েকজন কলিগকে দাওয়াত দিয়েছিল। ছেলে-মেয়ে উভয়কেই। তবে আহনাফের সাথে সুপ্তির সম্পর্ক নেই বলে সে সুপ্তিকে দাওয়াত করেনি। তবে সুপ্তি বাকি কলিগদের সাথে এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। বলাই বাহুল্য যে, বিনা দাওয়াতেই। যেটা তামিম কিংবা আহনাফ কারও-ই ধারণায় ছিল না। এখন একটা মানুষ বিনা দাওয়াতে এলেও তো তাকে মুখের ওপর চলে যেতে বলা যায় না। আফটারঅল, সে আবার পরিচিত। আহনাফ সুপ্তির আগমনে প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ হলেও তামিম স্বাভাবিক থেকেছে। কাউকে কিছু বুঝতে দেয়নি। কারণ অনুষ্ঠানটা তো তার বাসাতেই হচ্ছে। সুপ্তি এখানে এসেছে মূলত আহনাফের সাথে কথা বলার জন্যই। অফিসে সে আহনাফের ধারে-কাছেেও যেতে পারে না। এড়িয়ে চলে। ভেবেছিল এখানে এসে অন্তত কথা বলার সুযোগ পাবে। যেভাবেই হোক, কথা বলে আহনাফকে কনভিন্স করে ফেলবে। কিন্তু তার ধারণাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করেছে আহনাফ। এখানেও সে সুপ্তিকে এড়িয়ে চলছে। মুখোমুখিও পর্যন্ত হয়নি। সে চলেই যেত; যদি না এঙ্গেজমেন্টটা তামিমের হতো। ঐ মেয়ের জন্য তো আর সে নিজের কাছের বন্ধুকে কষ্ট দিতে পারে না। তাই সে সুপ্তিকে এড়িয়ে চলতে আড্ডায়ও যোগদান করেনি। তামিমের কথা রাখতে ছাদে এলেও সে দূরে সবার আড়ালে একাকি দাঁড়িয়ে আছে।

এখান থেকে ওদের কথোপকথন সব শোনা না গেলেও গান শুনতে পাচ্ছিল। অর্থির গাওয়া গানও সে শুনেছে। গানটা যে অর্থিই গেয়েছে এটা বুঝেছে সে অর্থির বাচ্চা বাচ্চা ভয়েস শুনেই। কিন্তু অর্ষার গান শুনে সে একটু না; বেশ অনেকটাই কৌতুহলী হয়ে উঠল। এত স্বচ্ছ ভয়েস! সে কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে অন্ধকার থেকে এক পা, দু পা করে বেরিয়ে আড্ডার জায়গায় এগিয়ে যেতে লাগল। সাদা শার্ট ও কালো স্যুটে তাকে এত সুন্দর লাগছিল যে সুপ্তি চোখই সরাতে পারছে না। এতক্ষণ পর আহনাফকে দেখতে পেয়ে তার ভীষণ আনন্দও হচ্ছিল। আহনাফ যখন প্যান্টের পকেটে দু’হাত ঢুকিয়ে একটু একটু করে এগিয়ে আসছিল, সুপ্তির ইচ্ছে করছিল দৌঁড়ে গিয়ে আহনাফকে জড়িয়ে ধরতে। তবে আহনাফের মন কিংবা দৃষ্টি কোনোটাই মোটেও সুপ্তির দিকে নেই। সে তো কেবল মুগ্ধ নয়নে, মগ্ন হয়ে অর্ষাকে দেখছিল এবং ওর মিষ্টি সুরের গান শ্রবণ করছিল।

অর্ষার দৃষ্টি নত, তার মুঠো করে রাখা হাতের দিকে। সে নিজের মনেই গাইছিল তখনো,

”তোরই মতো কোনও একটা কেউ
কথা দিয়ে যায়, ছায়া হয়ে যায়,
তোরই মতো কোনও একটা ঢেউ;
ভাসিয়ে আমায় দূরে নিয়ে যায়

ছুঁয়ে দে আঙুল,
ফুটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা;
কথা দেয়া থাক,
গেলে যাবি চোখের বাইরে না

ছুঁয়ে দে আঙুল,
ফুঁটে যাবে ফুল ভিজে যাবে গা;
কথা দেয়া থাক,
গেলে যাবি চোখের বাইরে না।…”

অর্ষার গান শেষ হলে হাত তালিতে ভরে গেল চারপাশটা। অর্থি উৎফুল্ল হয়ে বলল,

“দেখেছেন সবাই? আমি সত্যি বলেছিলাম না?”

সবাই অর্থির সাথে সহমত হলো। আহনাফ যেভাবে এসেছিল আবার সেভাবেই চলে গেল। বাকিরা ডাকলেও সে আসেনি। তামিম বিষয়টা এড়িয়ে যেতে বলল,

“এবার কার গানের পালা? শুরু কর।”

এরপর গান গাইল তামিমের এক বন্ধু। সেই সুযোগে সুপ্তি উঠে গেল আহনাফের কাছে। পেছন থেকে ডাকল,

“আহনাফ!”

সুপ্তির কণ্ঠ শুনেই মেজাজ বিগড়ে গেল গেল আহনাফের। পিছু ফিরে দাঁত-মুখ খিঁচে বলল,

“সমস্যা কী তোমার? বলেছিলাম না আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না?”

“আমাকে কি একটাবার ক্ষমা করা যায় না?”

“না, যায় না।”

“প্লিজ!”

“এটা তামিমের বাসা না হলে আর অনুষ্ঠান না থাকলে ঠিক কীভাবে যে তুমি অপমানিত হতে ভাবতেও পারছ না! সো, প্লিজ! কোনো সিনক্রিয়েট করতে বাধ্য কোরো না আমায়। আর নিজেও কোরো না।”

“আমায় অপমান করে যদি তুমি শান্তি পাও। তাহলে করো। আমার কোনো আপত্তি নেই। তবুও শেষবারের মতো আমায় ক্ষমা করে দাও। একটা সুযোগ দাও।”

“সুযোগ তো দিয়েছিলাম তোমায়। ছবিটা নিয়ে এক্সপ্লেইন করতে বলেছিলাম। করেছিলে? ওকে ফাইন! চলো তোমাকে আরেকটা সুযোগ দিচ্ছি। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো রাইট?”

“হ্যাঁ।”

“ঐ ছবিটায় তুমি যেমন ক্লোজ ছিলে ঐ ছেলের সঙ্গে, তোমার সাথে কি আমি এতটাও ক্লোজ হয়েছি কখনো?”

সুপ্তি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

“না।”

“তাহলে আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও তুমি আরেকটা ছেলেকে কীভাবে চুমু দিতে পারো? তাও আবার কোলে বসে। শুধু এটুকুই এনাফ না। এটা আবার ছবি তুলেও রেখেছ। এর মানেটা কী দাঁড়াল তাহলে? ভালোবাসবে আমাকে আর শরীর…”

একটু থেমে বলল,

“তোমাকে বাজে কথা বলতেও আমার মুখে লাগে! প্লিজ! যাও এখান থেকে। ঘৃণা লাগে আমার তোমাকে দেখলে এখন।”

সুপ্তির চোখ ছলছল করছে। আহনাফ বিরক্ত হয়ে বলল,

“এক সময় এই চোখে পানি দেখলে আমার কষ্ট হতো। আর এখন হয় করুণা। না, তেমার প্রতি নয়। আমার নিজের প্রতি আমার করুণা হয়। কারণ আমি তোমার মতো একটা মেয়েকে ভালোবেসে ছিলাম।”

সুপ্তিকে এবার আর যেতে বলল না। আহনাফ নিজেই ছাদ থেকে নিচে নেমে গেল। ওর চলে যাওয়া দেখে তামিম বুঝতে পেরেছে ঘটনা উল্টা-পাল্টা কিছু একটা ঘটেছে। তাই সেও নিচে নামল আহনাফের সাথে কথা বলার জন্য।

গানের আড্ডা শেষ হতে হতে প্রায় রাত দশটা বেজে গেছে। ট্রুথ এন্ড ডেয়ার গেইম আর খেলা হলো না। শীতের রাত ১০টা মানেই অনেক রাত। সবাইকে বাড়ি ফিরতে হবে। অর্থি ঐশির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে অনেকক্ষণ। তামিম ঘুমন্ত অর্থিকে কোলে নিয়ে নিচে নামল। একে একে সবাই বিদায় নেওয়ার পর অর্ষার পরিবার এবার বিদায় নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। তামিমের বাবা-মা আজ রাতটা অনেকবার থেকে যেতে বললেও ওসমান আলম রাজি হলেন না।

এরমধ্যে অর্থির ঘুম ভেঙে গেছে। তার পায়ে জুতা নেই। ছাদে রেখে এসেছে। তাই অর্ষা গেল ছাদে জুতা আনতে। ঐশি অর্থিকে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল।

অর্ষা ছাদে গিয়ে জুতা নিতে গিয়ে দেখল আহনাফ ছাদে একা দাঁড়িয়ে আছে। সে না দাঁড়িয়ে সরাসরি চলে গেল যেখানে এতক্ষণ সবাই বসে ছিল। আহনাফ ওকে দেখে বলল,

“কিছু খুঁজছেন?”

“হু, অর্থির জুতা নিতে এসেছি।”

“ওহ। চলে যাচ্ছেন আপনারা?”

“হ্যাঁ। আপনি এখানে একা দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”

“এমনিই। আপনি কিন্তু দারুণ গান করেন।”

অর্ষা মৃদু হেসে বলল,

“থ্যাঙ্কিউ। কিন্তু আপনি আড্ডায় আসেননি কেন?”

আহনাফ কোনো রাখঢাক না রেখেই বলল,

“আমি অপছন্দের মানুষদের সামনে থাকতে পারি না।”

“মানে?”

আহনাফ ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার পর সুপ্তিকে চোখ মুছতে মুছতে আসতে দেখেছিল অর্ষা। সেখান থেকেই আন্দাজ করেছিল হয়তো আহনাফের সাথেই কিছু হয়েছে বা মনোমালিন্য। তবে এই ব্যাপারে সে আহনাফকে সরাসরি কিছু জিজ্ঞেস করল না।

আহনাফ এবারও কিছু না লুকিয়ে বলল,

“আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড ছিল।”

“সুপ্তি আপুর কথা বলছেন?”

আহনাফ অর্ষার দিকে একবার তাকাল। এরপর ফের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলল,

“হু। চিনেন?”

“না। তামিম ভাইয়া তখন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সবার সাথে। নামটা তখনই জেনেছি। আর আপনি যখন ছাদ থেকে নেমে গিয়েছিলেন, তখন সুপ্তি আপু কাঁদতে কাঁদতে আসছিল। কিছু হয়েছিল কি?”

“নাথিং! ব্রেকাপ হয়েছে বেশিদিন হয়নি আরকি।”

“যেদিন ভাঙচুর করলেন সেদিন?”

“হু।”

“ব্রেকাপ হয়ে গেছে। তাহলে এখন সে কী চাচ্ছে?”

“সুযোগ।”

“সুযোগ চাইলে দিচ্ছেন না কেন? যদিও জানিনা সে কী ভুল করেছে!”

“ভুল তো করেনি।”

“তবে?”

“শী চিটেড উইথ মি!”

অর্ষা চুপ হয়ে গেল। প্রতারণা শব্দটাকে সে ভয় পায় আজকাল। কেন পায় কে জানে! আহনাফ বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

“প্রতারককে কি ক্ষমা করা যায়?”

“প্রতারণা করে আবার ফিরে কেন এসেছে?”

“হু নোজ! আর তাছাড়া একটা কথা আছে না? আমরা সবাই একদিন বুঝি। কিন্তু হারানোর পর।”

কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে অর্ষার চোখের দৃশ্যপটে কেন জানি রিহানের মুখটা ভেসে উঠল।

চলবে…