আহনাফ চৌধুরী পর্ব-০৮

0
72

#আহনাফ_চৌধুরী
#পর্ব_৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
______________
অর্ষা বাসায় ফিরেছে বিধ্বস্ত অবস্থায়। সাথে সম্পাও এসেছে। বাড়িতে আসার আগে অর্ষা বারবার করে বলে দিয়েছে বাসায় কিছু না বলতে। সে নিজেও চেষ্টা করল স্বাভাবিক থাকার। সবার সাথে হেসে কথা বলল। সম্পা অবাক হয়ে দেখছে অর্ষাকে। একটু আগেও তো মেয়েটা পাগলের মতো কাঁদছিল। আর এখন! এখন কতটা হাসি-খুশিভাবে কথা বলছে! বোঝার উপায়ই নেই মেয়েটা কী পরিমাণ পাহাড়সম কষ্ট বুকে চেপে রেখেছে। অবশ্য অর্ষা কারও দিকে সরাসরি চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলেনি। কণ্ঠ আর ঠোঁটের হাসিকে পরিবর্তন করা গেলেও চোখের ফোলা ভাব তো আর এক নিমিষেই পরিবর্তন করতে পারবে না। সম্পা গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস নিল।

আমেনা বেগম জানেন যে, সম্পার সাথে অর্ষার সম্পর্ক অনেক ভালো। এর আগেও অনেকবার বাড়িতে এসেছে। বাড়ির সবার সাথে সম্পার বন্ডিংও অনেক ভালো। অনেকদিন বাদে সম্পা বাসায় এসেছে বিধায় আমেনা বেগম যতটুকু সম্ভব রান্নাবান্না করে নাস্তা, মিষ্টি দিলেন। সেই সাথে কপট রাগও দেখালেন এঙ্গেজমেন্টে না আসার জন্য।

সম্পা আমেনা বেগমকে কথা দিয়ে ব্যস্ত রাখায় তিনিও মেয়ের দিকে নজর দেননি তেমন। যাওয়ার পূর্বে সম্পা বেশ ভালোভাবেই অর্ষাকে সান্ত্বনা দিয়ে গেল। যদিও এতে খুব বেশি কাজ হবে না, এটা সম্পা নিজেও জানে।

রাতে আর খাবারও খেল না অর্ষা। ঘরের দরজা আটকে কান্না করতে লাগল। সারা রাত ঘুম আসেনি চোখের পাতায়। কখন যে কাঁদতে কাঁদতে ভোর হয়ে গেছে সে নিজেও জানে না। কতবার ফোন চেক করেছে হিসাব নেই। ফেসবুক, হোয়াটসএপ, নাম্বার কোথাও কোনো কল বা টেক্সট করেনি রিহান। যতবার এই তেতো সত্যের সম্মুখীন হয়েছে ততবারই অঝোরে কেঁদেছে বোকা মেয়েটি। তার মনে হচ্ছিল ভেতর থেকে কেউ বুঝি জানটাকেই বের করে নিচ্ছে। এখুনি মা’রা যাবে সে।

যখন তন্দ্রাভাব লেগে এসেছিল প্রায় ঐ সময়েই রিহানের টেক্সট আসে অর্ষার ফোনে।
.
.
অর্ষা এবং রিহান বসে আছে একটা রেস্টুরেন্টে। সকালে রিহানের ম্যাসেজ পাওয়ার পর থেকে আর অপেক্ষা করতে পারেনি। সময়ের আগেই চলে এসেছে। দেখা করার কথা অবশ্য রিহান নিজেই বলেছিল। সে এসেছে বেশিক্ষণ হয়নি। চুপচাপ বসে আছে। অর্ষাও নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে রিহানের পানে। বেশ অনেকক্ষণ পর রিহান তাকাল অর্ষার দিকে। মলিনস্বরে বলল,

“কেঁদেছ? চোখ-মুখ এত ফোলা কেন?”

অর্ষা কিছু বলল না। তাচ্ছিল্যের ঈষৎ হাসি তার ঠোঁটে খেলে গেল। রিহান শ্বাস নিয়ে বলল,

“কথাগুলো কীভাবে বলব বুঝতে পারছি না। কিন্তু বলাটা ভীষণ প্রয়োজন।”

“বলো।”

রিহানকে ফের নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ষা শুধাল,

“মেয়েটি কে ছিল?”

রিহান কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল,

“বাড়ি থেকে ওর সাথে বিয়ের কথাবার্তা চলছে আমার।”

অর্ষার মনে হলো কেউ তাকে গভীর সাগরে ফেলে দিয়েছে। যেখানে কোনো কূলকিনারা নেই। অর্ষা ঠাঁই পাচ্ছে না। গভীর সমুদ্রে সে তলিয়ে যাচ্ছে। রিহান অবলীলায় কীভাবে বলল কথাগুলো? অর্ষার চোখ ছলকে পানি বের হলো। কান্না করেই জিজ্ঞেস করল,

“তুমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করবে?”

“প্লিজ অর্ষা! কান্না করো না। আমার কিছু করার নেই। আমি পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে পারব না।”

“তাই? ভালোবাসার আগে তো পরিবারের অনুমতি নাও নি। আর এখন পরিবারের দোহাই দিচ্ছ আমাকে? তোমাদের হাত ধরে ছবি তোলা দেখে তো মনে হয়নি গতকালই প্রথম দেখা কিংবা কথা হয়েছে। তারমানে আরও আগে থেকেই ঐ মেয়ে তোমার জীবনে আছে। আর এজন্যই ছিল তোমার এত ব্যস্ততা? আমার কী অপরাধ ছিল রিহান? আমায় কেন ঠকালে তুমি? আমায় তোমার ভালো লাগে না এটা আমাকে তুমি বলতে পারতে। আমি সরে যেতাম তোমার পথ থেকে।”

“আসলে এতদিনের সম্পর্ক আমাদের। তোমার প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছিল। তাই ছাড়তে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম পরে সময় সুযোগ বুঝে তোমার সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব। কিন্তু তার আগেই তো সব ঘটে গেল। আমার মনে হয়, আমাদের এবার আলাদা হওয়ার সময় এসে গেছে। সম্পর্কটা আর এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।”

আজ সকালে যখন রিহান কল করে দেখা করতে চাইল অর্ষা খুশিই হয়েছিল। ভেবেছিল রিহান সরি বলবে, সব ঠিক করে নেবে। কিন্তু এমন কিছু যে শুনবে এটা ভাবেনি। সে বলার মতো কোনো কথাও খুঁজে পাচ্ছে না। নিরবে কাঁদছে শুধু।

রিহান বলল,

“আমি জানি আমি তোমার সাথে হয়তো অন্যায় করেছি। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই এখন। আ’ম সরি। ক্ষমা করে দিও আমায়।”

অর্ষা উঠে দাঁড়াল। চোখের পানি মুছে বলল,

“তোমাকে ক্ষমা করতে না পারার জন্য তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। কারণ আমি যদি তোমায় ক্ষমা করি, তাহলে নিজের প্রতি খুব অন্যায় করা হয়ে যাবে আমার।”

“সরি…”

অর্ষা দাঁড়াল না। শুনলও না আর রিহানের কোনো অজুহাত। নিরবে কাঁদতে কাঁদতেই বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে।

বাড়ি ফিরে একদম চুপচাপ রইল। পাথর মনে হলো তার নিজেকে। আচমকা কান্নাও থমকে গেল তার। বাড়ির সবার থেকে একটু একটু করে গুটিয়ে নিতে লাগল নিজেকে। অন্যদিকে ঐশির বিয়ের বন্দোবস্ত করতে গিয়ে অর্ষার প্রতি আলাদা নজর দিতে পারেনি বাড়ির কেউই। তাদের ভাবনাতেও নেই যে, তাদের আদরের মেয়ে মৃ’ত্যু যন্ত্রণা নিয়ে কীভাবে আছে। রাত নামার সাথে সাথে অর্ষার আহাজারি বাড়ে। বুকে ব্যথা করে। কতবার যে সে সিলিং ফ্যানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল নিজেও জানে না। পরক্ষণে বাবা-মায়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। পিছিয়ে আসে সে। কিন্তু কোনোভাবেই কমানো সম্ভব হচ্ছে না ভেতরকার যন্ত্রণা।

একদিন খুব সকালেই সম্পা এলো বাড়িতে। অর্ষা তখন বারান্দায় বসে আছে। পুরো রাত ধরে সে এখানেই জেগে কাটিয়ে দিয়েছে। তার বোবা কান্নার সাক্ষী ছিল একটি রূপলী চাঁদ এবং এক ঝাঁক নক্ষত্র।

অর্ষাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে সম্পা কিছুটা ভয়ই পেয়ে গেল। পাশে বসে বলল,

“এই ঠান্ডা ফ্লোরের ওপর এভাবে বসে আছিস কেন? সোয়েটারও পড়িসনি!”

অর্ষা জবাব দিল না। ফিরেও তাকাল না সম্পার দিকে। সম্পা বলল,

“অর্ষা? পাখি? কী হয়েছে আমাকে বল? কতবার ফোন দিয়েছি ধরিসনি। কলেজেও যাচ্ছিস না।”

“মানুষ এত নিঁখুত অভিনয় কীভাবে করে বল তো?”

“রিহান ভাইয়ার কথা বলছিস?”

“পরেরদিন দেখা হয়েছিল।”

“পরে?”

অর্ষা কাঁদতে কাঁদতে রিহানের সাথে বলা কথাগুলো বলল। কান্নার দমক বেড়ে গেছে ওর। সম্পা ওকে বুকে জড়িয়ে নিল। মাথায় বুলিয়ে ধরে আসা গলায় বলল,

“কাঁদিস না প্লিজ!”

“আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে সম্পা। আমার মনে হচ্ছে আমি ম’রে যাচ্ছি। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। কেন করল রিহান আমার সাথে এমন? আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারব না, সম্পা। ওকে এনে দে আমায়। আমি ম’রে যাচ্ছি!”

সম্পা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“পাগলামি করিস না। কাকে ফিরে চাচ্ছিস তুই? যে তোকে চায় না? সে আর তোর নেই। মেনে নে এই সত্যিটা। যে যেতে চায় তাকে যেতে দে। তোর জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। বিশ্বাস রাখ আল্লাহর ওপর।”
.

আহনাফ আর তামিমের জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছেন আমেনা বেগম। ঐশির বিয়ের জন্য বেশ কিছু লেহেঙ্গা পছন্দ করেছে তামিম। সেগুলোই দেখানোর জন্য এই বাড়িতে এসেছে। চাইলে ফোনেও দেখানো যেত। কিন্তু ঐশির সাথে একটাবার দেখা করার অজুহাতে এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায়নি।

লেহেঙ্গার ছবিগুলো দেখে আমেনা বেগম এবং ঐশি দুজনেরই ভীষণ পছন্দ হয়েছে। অর্থি বলল,

“আমাকে কিনে দিবে না ভাইয়া এমন লেহেঙ্গা?”

উত্তরে আহনাফ হেসে বলল,

“দেবে তো।”

“কবে দেবে?”

“তোমার বিয়েতে।”

“কিন্তু আমি তো এখনো ছোটো। বিয়ে হতে তো দেরি আছে। এতদিন অপেক্ষা করব?”

“হ্যাঁ, করতে হবে।”

“না, পারব না। তাহলে আপুর সাথে আমিও বিয়ে করব।”

তামিম হেসে বলল,

“কাকে বিয়ে করবে?”

অর্থি হাত দিয়ে আহনাফকে দেখিয়ে বলল,

“এইযে এই ভাইয়াটাকে করব।”

আমেনা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললেন,

“অর্থি! সবসময় শুধু পাকা পাকা কথা! যাও ভেতরে যাও।”

আহনাফ অর্থিকে পাশে বসিয়ে বলল,

“বকবেন না আন্টি। ছোটো মানুষ। বোঝে না।”

এরপর সে অর্থিকে বলল,

“আমিও তো ছোটো। আমিও আগে বড়ো হই তারপর বিয়ে করব।”

“তুমি ছোটো? কই? তুমি তো অনেক বড়ো।”

তামিম, আহনাফ দুজনেই হাসতে লাগল। সেই সাথে দুষ্টুমি করতেও ছাড় দিল না।

বিয়ের যেহেতু বেশি দেরি নেই, তাই বিয়ের শপিং আস্তেধীরে শুরু করবেন বলে জানালেন আমেনা বেগম। তামিম বলল,

“আন্টি তাহলে কাল আপনারা আমাদের সাথে চলেন। ঐশি সরাসরি দেখেই ড্রেস পছন্দ করুক।”

ঐশি একবার আমেনা বেগমের দিকে তাকাল। তিনিও তাকালেন মেয়ের দিকে। বললেন,

“ঠিক আছে। তোমরা যা ভালো বোঝো।”

কথাবার্তা বলে আহনাফ এবং তামিম উঠে দাঁড়াল চলে যাওয়ার জন্য। ওসমান আলম অফিসে গেছে এটা ওরা জানে। বাকিরা সবাই বাসায়। কিন্তু এরমধ্যে একবারও অর্ষাকে দেখেনি বলে একটু খটকা লাগল আহনাফের। বোনের বিয়ে নিয়ে কোনো আনন্দ-উচ্ছ্বাস নেই কেন এই মেয়ের মধ্যে?

পরেরদিন সকালে ওসমান আলী অফিসে চলে গেলেন। বিয়েতে বেশ কয়েকদিন ছুটি নেওয়া হবে অফিস থেকে। তাই এখন আর বাড়তি ছুটি নেননি। তাছাড়া স্ত্রী আমেনা বেগমের ওপর যথেষ্ট ভরসা আছে তার। শপিং এর দিকটা সে-ই সামলে নিতে পারবে। অর্ষা অসুস্থতার দোহাই দিয়ে ওদের সাথে গেল না। অর্থি তখনো ঘুমে ছিল। তাই ওকে আর ডাকেনি। যাওয়ার আগে ঘুমন্ত অর্থিকে অর্ষার রুমে দিয়ে গেলেন আমেনা বেগম। অর্ষাকে ডেকে বললেন,

“ঘুম থেকে উঠলে অর্থিকে খেতে দিস। আর তুইও খেয়ে নিস।”

অর্ষা শুয়ে থেকেই বলল,

“আচ্ছা।”

বের হওয়ার সময় আহনাফ না পারলেও তামিম জিজ্ঞেস করল,

“অর্ষা যাবে না?”

ঐশি বলল,

“না। ওর শরীরটা ভালো না। জ্বর জ্বর ভাব।”

“বলেন কী! ওষুধ খেয়েছে?”

“না। আজ সকাল থেকেই। মা ওষুধ টেবিলের ওপর রেখে দিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে খাবে।”

তামিম আর কথা বাড়াল না।

সবাই চলে যাওয়ার পর অর্ষা শোয়া থেকে উঠল। অন্ধকার রুমে আলো জ্বালিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল সে। বিধ্বস্ত, শুকনো চোখ-মুখ দেখে নিজেই আঁতকে উঠল সে। এই কয়দিন আয়নাও দেখেনি। নিজেকে একলা আটকে রেখেছে, দূরে রেখেছে সবার থেকে। মনের শান্তি কোথাও মেলেনি। নিজেকে ঘৃণা করবে নাকি ঐ মানুষটাকে ঘৃণা করবে সে বুঝতে পারে না। আয়নায় তাকিয়ে সে হঠাৎ-ই শব্দ করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতেই চিৎকার করে কেঁদে উঠল সে। উশকো-খুশকো চুলগুলো দুই হাতের মুঠোয় চেপে ধরে অঝোরে কাঁদতে লাগল সে। অর্থির ঘুম ভেঙে গেছে অর্ষার কান্না শুনে। শোয়া থেকে উঠে বসলেও ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি তার। সে বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে, কেন কাঁদছে তার আপু!

অর্ষা তখন রাগে, জিদ্দে, ঘৃণায় উন্মাদ। নিজের চুল দেখে রিহানের করা প্রশংসার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। রিহান সবচেয়ে বেশি পছন্দ করত অর্ষার চুল। কতবার সে চুমুও খেয়েছে চুলে। খুবই সাবধানী ছিল চুলের ব্যাপারে। একটুখানি চুল কাটলেও রাগ করে থাকত। কথা বলত না। নিজের পছন্দের চুলের প্রতিও রাগ হতে লাগল অর্ষার। উঠে এই ড্রয়ার, সেই ড্রয়ার খুঁজে সিজার বের করল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল কাটতে যাবে ঐ সময়ে অর্থি চিৎকার করে কেঁদে উঠল,

“আপু!”

অর্ষা থমকাল। অর্থি দৌঁড়ে খাট থেকে নেমে এলো। অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আপু, আপু। তোমার কী হয়েছে আপু? চুল কাটছ কেন?”

অর্থিকে জড়িয়ে ধরে আরও শব্দ করে কাঁদতে লাগল অর্ষা। অর্থি জানেনা তার বোনের কী হয়েছে, কিন্তু সে নিজেও কাঁদছে এখন। অর্ষা হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,

“ঐশি আপুর রুমে যাও।”

“তোমার কী হয়েছে আপু?”

অর্ষা ছেড়ে দিল অর্থিকে। অর্ষা আবার বলল,

“যাও।”

“না। আপু! আমি যাব না।”

“আমি বলছি, যাও।”

“না।”

“যেতে বলেছি আমি অর্থি! যা এখান থেকে।”

ধমক খেয়ে অর্থি তবুও যাচ্ছিল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে সে। অর্ষা আর অপেক্ষা করল না। তার লম্বা চুলগুলো কেটে ঘাড় অবধি করতে লাগল। অর্থি আবার জড়িয়ে ধরে আটকানোর চেষ্টা করলে, এবার অর্ষা মেজাজ হারিয়ে অর্থিকে একটা থা-প্প-ড় দিয়ে বলল,

“যেতে বলেছি না আমি? যা! আমার চোখের সামনে থেকে যা বলছি!”

অর্থি ভয়ে কান্না করতে করতে রুম থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল।

অর্ষা চুল কেটে হাউমাউ করে কাঁদছে। এত অসহায় লাগছে তার নিজেকে। এবার সে আরও ভয়ংকর কিছু করার জন্য উদ্বুদ্ধ হলো। অর্ষার চেহারার মধ্যে গাল দুটো অনেক বেশি পছন্দ করত রিহান। অর্ষা এবার ব্লে’ড হাতে নিয়েছে!
.

অর্ধেক পথ আসার পর খেয়াল করল যে তামিমের ফোন ঐশিদের বাড়িতেই রেখে এসেছে। ঐ ফোনেই সব লেহেঙ্গার ডেমো ছবি আছে। তাই আহনাফ বলল,

“তুই আন্টি আর ভাবিকে নিয়ে শপিংমলে যা। আঙ্কেল-আন্টিও তো অপেক্ষা করছে। গিয়ে গহনা দেখতে থাক। আমি গিয়ে ফোনটা নিয়ে আসছি।”

তামিম রাজি হয়ে গেল। মাঝপথে আহনাফ গাড়ি থেকে নেমে উলটো আবার অর্ষাদের বাড়িতে এসেছে। সিঁড়ির কাছে যেতেই দেখল অর্থি কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। আহনাফ দ্রুত এগিয়ে গেল। অর্থি ওকে দেখেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছে। বেশ ভয় পেয়েছে বুঝতে পেরেছে আহনাফ। ওর নিজেরও আংশিক ভয় করছে এখন। কী হলো হঠাৎ করে?

আহনাফ জিজ্ঞেস করল,

“অর্থি, কী হয়েছে? কান্না করছ কেন? কান্না থামাও। বলো আমাকে।”

অর্থি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল,

“আপু…আপু…”

“আপু? অর্ষার কথা বলছ? কী হয়েছে?”

অর্থি কথাই বলতে পারছিল না। আহনাফও আর অপেক্ষা না করে অর্থিকে নিয়ে দ্রুত ওদের অ্যাপার্টমেন্টে গেল। মেইন দরজা হাট করে খুলে রাখা। অর্থি বোধ হয় ভয়ে দরজা লাগাতেও ভুলে গেছে। আহনাফকে অর্থি সোজা অর্ষার রুমে নিয়ে গেছে।

অর্ষা ততক্ষণে ব্লে’ড দিয়ে একটা হালকা আঁচর দিয়েছে গালে। দ্বিতীয়বার গালে ব্লে’ড লাগানোর আগেই আহনাফ গিয়ে আটকে ফেলল। অবিশ্বাস্য স্বরে বলল,

“পাগল হয়েছেন আপনি?”

অর্ষা হাত ছাড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি করছে। উন্মাদের মতো আচরণ করছে। ওর এই অবস্থা দেখে অর্থির কান্নার গতি বেড়ে গেছে আরও। উপায় না পেয়ে ব্লে’ডটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে অর্ষাকে আহনাফ শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বেশ কিছুক্ষণ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও এক সময় শান্ত হয়ে গেল অর্ষা। ক্লান্ত কণ্ঠে বলতে লাগল,

“ক্ষমা করব না, কখনোই ক্ষমা করব না!”

আহনাফ ছাড়ল না অর্ষাকে। অর্থিও এসে ওদের দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আহনাফ এক হাতে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে রেখে অন্য হাত অর্থির মাথায় রাখল।

চলবে…