আড়ালে আবডালে পর্ব-০৬

0
5404

#আড়ালে_আবডালে
#পর্ব_৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_____________________

নিহি চলে যাওয়ার প্রায় কিছুক্ষণ পরই অনল কলেজে আসে। কাল গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ থাকায় সরাসরি কলেজ থেকেই সেখানে চলে গেছিল। এরপর বিকেলে বাড়িতে ফিরে ঘুমিয়েছে। উঠেছে একদম রাত আটটার দিকে। পরে রাতে আর ঘুম আসেনি। ভোরের দিকে ঘুম এসেছিল বিধায় আজ কলেজে আসতে দেরি হয়ে গেছে। কলেজে এসে সরাসরি ক্লাসে চলে যায় অনল। ক্লাস শেষ হওয়ার পরে মাঠে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। চোখ রাখে ক্যাম্পাসের দিকেই। হাত ঘড়িতে সময়টা একবার দেখে নেয়। আর কিছুক্ষণ পরেই টিফিন দেবে। তখন নিহিকে দেখতে পাবে এই আশায় বসে আছে। টিফিনের ঘণ্টা বাজে। সবাই ক্যান্টিনে যাচ্ছে খেতে। কিন্তু নিহি বের হয়নি। উপমাকেও দেখা যাচ্ছে না। অনল আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন নিহিকে দেখতে পেল না তখন অস্পষ্টভাবে বলেই ফেলল,
“নিহি কি আসেনি আজ!”

অস্পষ্টভাবে বললেও লিসা ঠিকই অনলের কথা শুনে নিয়েছে। বিরক্ত হয়ে লিসা বলে,
“সারাক্ষণ এত নিহি নিহি করো কেন?”
“আরে ইয়ার! কখন সারাক্ষণ নিহি নিহি করলাম? আজ দেখতে পেলাম না বলেই তো বললাম।”
“ও’কে দেখতে পেয়েই বা লাভ কী?”
“উম! কিছু না। বাদ দে।”

অনল সাকিবকে নিয়ে চার তলায় চলে যায়। নিহিদের ক্লাস চার তলায়। বারান্দায় দীপ্তকে দেখে অনল ডাকে।
“দীপ্ত।”
দীপ্ত এগিয়ে এসে বলে,
“জি ভাইয়া?”
“নিহিকে একটু ডেকে আনো তো।”
“নিহি তো নেই।”
“ওহ! কলেজে আসেনি তাহলে।”
“না। এসেছিল। ব্যাগ তো ক্লাসেই আছে। কিন্তু সকাল থেকেই নিহিকে ক্লাসে দেখিনি।”
অনল চুপ থেকে কিছুক্ষণ ভাবে। ব্যাগ ক্লাসে আছে অথচ নিহি ক্লাসে নেই। তাহলে নিহি গেল কোথায়? দীপ্তকে প্রশ্ন করে লাভ নেই। নিহি নিশ্চয়ই দীপ্তকে বলে কোথাও যাবে না। অনল জিজ্ঞেস করে,
“উপমা এসেছে?”
“হ্যাঁ।”
“আচ্ছা ও’কে গিয়ে বলো অনল ভাইয়া ডেকেছে।”
“ঠিকাছে।”

দীপ্ত গিয়ে উপমাকে ডেকে আনে। থমথমা মুখ নিয়ে উপমা অনলের সামনে দাঁড়ায়।
“নিহি কোথায় উপমা?” জিজ্ঞেস করে অনল।
“বাড়িতে চলে গেছে।”
“শুনলাম ব্যাগ নাকি ক্লাসেই। তাহলে বাড়িতে চলে গেছে মানে? কিছু হয়েছে কী?”
উপমা লিসার উপর খুব রেগে আছে। অনলই পারবে লিসাকে শায়েস্তা করতে। তাই গড়গড় করে সব বলে দেয় অনলকে। অনল নিশ্চুপ হয়ে সব শুনে বলে,
“ক্লাসে যাও।”

এরপর উল্টোপথে হাঁটা শুরু করে। পেছন পেছন সাকিবও আসে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সাকিব বলে,
“মামা মাথা গরম করিস না। লিসার ওপর আবার রাগ দেখাইস না।”
সাকিবের কথার কোনো উত্তর দেয় না অনল। মাঠে গিয়ে সাকিবকে অবাক করে দিয়ে বাইক নিয়ে চলে যায় অনল। অনলের এমন আচরণে ভারী অবাক হয় সাকিব। ও তো ভেবেছিল না জানি কী বলে ফেলে লিসাকে! ‘আজকাল ছেলেটাকে একদমই বুঝতে পারি না। অদ্ভুত!’ বলে বন্ধুদের কাছে এগিয়ে যায়।
.
বিকেলে প্রাইভেট পড়তেও আসেনি নিহি। বাড়িতে একা রুমে চুপচাপ বসে আছে। উপমা বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল। ফোনও ধরেনি। কলেজ ছুটির পর নিহির ব্যাগ নিজের সাথে বাসায় নিয়ে গেছে উপমা। ফোন করেছিল প্রাইভেটে আসবে নাকি তা জিজ্ঞেস করার জন্য। কিন্তু নিহি ফোন তোলেনি। ম্যাসেজও করে দিয়েছিল যেন প্রাইভেটে আসে। উপমা ভেবেছিল ম্যাসেজ দেখে হয়তো প্রাইভেটে আসবে। তাই নিহির ব্যাগটা সাথে করে নিয়ে এসেছিল। প্রাইভেটে এসে হতাশ হয় উপমা। অনামিকা ম্যাম একবার নিহির কথা জিজ্ঞেস করেছিল। উপমা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কিছু বলে দিয়েছে। প্রাইভেট শেষ করে নিচে নেমে দেখে অনল দাঁড়িয়ে আছে। উপমাকে দেখে এগিয়ে আসে। বোঝাই যাচ্ছে এতক্ষণ উপমার জন্যই অপেক্ষা করছিল। উপমা জিজ্ঞেস করে,
“কিছু বলবেন ভাইয়া?”
“নিহির বাড়ি চেনো?”
“জি।”
“আচ্ছা চলো। ওর বাসায় যাব।”
উপমা অবাক হয়ে বলে,
“আপনি ওর বাসায় যাবেন?”
“হ্যাঁ, যাব।” বলে বাইকে উঠে অনল। উপমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“বাইকে যেতে সমস্যা নেই তো?”
“না।”
“উঠো তাহলে।”

উপমার নির্দেশনা মোতাবেক অনল নিহির বাড়ির নিচে গিয়ে বাইক থামায়। কী ভেবে যেন উপমাকে বলে,
“আমি বাড়ির ভেতর যাব না। তুমি যাও। আর নিহিকে বলবে ব্যলকোনিতে আসতে।”
“ঠিকাছে।”
নিহির সাথে এর আগে দু’বার নিহির বাসায় এসেছিল উপমা। তাই বাড়ির সবাইও উপমাকে চেনে। কলিংবেল বাজানোর পর দরজা খুলে দেয় তমা। মাত্র দু’দিন এই বাসায় আসলেও তমার সঙ্গে ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে উপমার। উপমাকে দেখেই তমা বলে,
“তুমি এসেছ! আমি কতবার নিহির কাছে তোমার নাম্বার চাইলাম। দিলোই না।”
উপমা ভেতরে যেতে যেতে বলে,
“কেন?”
“হুট করেই ক্লাস না করে বাড়িতে চলে এসেছে নিহি। কতবার জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে। মুখই খুলল না। ভাবলাম তুমি হয়তো জানবে। তাই নাম্বার চেয়েছিলাম।”

কলেজের এসব ঝামেলা বাড়িতে জানালে সমস্যা হবে ভেবে মিথ্যে কথা বলে উপমা।
“আসলে ভাবি, আমাদের দুজনের একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল। তাই রাগ করে চলে এসেছে। ব্যাগও আনেনি।”
“এই সামান্য কারণে? মেয়েটা এত অভিমানী যে কী বলব! আচ্ছা তুমি নিহির কাছে যাও। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।”
“আচ্ছা।” বলে উপমা নিহির রুমে যায়। সন্ধ্যার সময়ে উপমাকে দেখে নিহি চমকে যায়। নিহিকে কিছু বলতে না দিয়েই উপমা নিহির গলা চেপে ধরে বলে,
“ফাজিল মাইয়্যা, হারামী মাইয়্যা কতগুলা ফোন দিছি? ফোন ধরলি না ক্যান?”

উপমার কথা শুনে হাসে নিহি। এই প্রথম উপমা রাগ দেখাল আর তুই, তুই করে বলল। ভালোই লাগল নিহির। উপমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“এই সন্ধ্যার সময় আসতে ভয় করল না?”
উপমা ভাব নিয়ে বলে,
“ক্রাশের সাথে এসেছি। ভয় করবে কেন?”
“কোন ক্রাশ?” ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে নিহি। উপমা একগাল হেসে বলে,
“তুমি যার কথা ভাবছ আমিও তার কথাই বলছি।”
নিহি অস্পষ্টভাবে বলে,
“অনল!”
“জি ম্যাম। ব্যলকোনিতে যান। আমার ক্রাশ আপনার জন্য অপেক্ষা করিতেছে। আমি ঘরে আছি। ভাবি আসলে ম্যানেজ করে নেব।”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও কৌতুহল নিয়ে বারান্দায় যায় নিহি। উপমা কি মজাই করল নাকি কে জানে! ব্যলকোনিতে গিয়ে রীতিমতো অবাক নিহি। সন্ধ্যার মৃদু আলো, মৃদু অন্ধকারে নিয়ন বাতির আলোতে অনলের মুখটা স্পষ্ট ভেসে উঠছে। নিহিকে দেখে মৃদু হেসে হাত নাড়িয়ে হাই বলে। নিহি নিশ্চুপ হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকে। যাকে এক পলক দেখার জন্য কাল থেকে শুধু ছটফট ছটফট করেছে সেই মানুষটা এখন চোখের সামনে। পরক্ষণেই মনটা অভিমানে ছেঁয়ে যায়। কেন এত সময় পর দেখা দিল? অভিমান আরো এক ধাপ এগিয়ে মন খারাপে পরিণত হয়। মনে পড়ে যায় লিসার বলা কথাগুলো। গা গুলিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যলকোনি থেকে রুমে চলে আসে নিহি। ভাবি তখন রুমেই ছিল। উপমা বিস্কুট খাচ্ছিল। নিহিকে থমথমা মুখে ফিরে আসতে দেখে বিস্কুট মুখে নিয়েই তাকিয়ে থাকে। ভাবি হেসে বলে,
“দু বান্ধবীর মান-অভিমান কমেনি?”
নিহি ভ্রু কুঁচকে ভাবির দিকে তাকায়। উপমা বিস্কুট খেতে খেতে বলে,
“ও আমার ওপর রাগ করে থাকতে পারলে তো!”
“আচ্ছা তোমরা কথা বলো। আমার কাজ আছে।”বলে হেসে চলে যায় ভাবি। উপমা নিহির হাত ধরে টেনে খাটে বসিয়ে বলে,
“কী হলো?”
“কিছু হয়নি।”

তিতির তখন রুমে প্রবেশ করে। লাফিয়ে লাফিয়ে নিহির কোলে গিয়ে বসে। উপমা গাল টেনে তিতিরের গালে চুমু খায়। কিছুক্ষণ কোলে বসেই ব্যলকোনিতে যায় তিতির। ও চলে যাওয়ার পর উপমা আবার প্রশ্ন করে,
“অনল ভাইয়া নিচে না?”
“হু।”
“তাহলে এভাবে চলে আসলে কেন?”
“লিসা আপুর কথাগুলো মনে পড়ে গেছে।”
উপমা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“আমার তো ইচ্ছে করে ঐ ডাইনীকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে।”
তিতির ব্যলকোনি থেকে দৌঁড়ে আসতে আসতে বলে,
“ফুপি, ফুপি ঐ পঁচা লোকটা বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে।”
নিহি তিতিরের মুখ চেপে ধরে বলে,
“আস্তে বলো মা! ভাবি শুনে ফেলবে। তোমাকে না বলেছি বাড়ির কাউকে না বলতে?”
“আমি তো বলিনি।”
“গুড। এখন তোমার দাদুর কাছে যাও। একটুপর কার্টুন দেখব আমরা।”
“আচ্ছা।” বলে তিতির চলে যায়। তিতির যাওয়ার পর উপমা জিজ্ঞেস করে,
“ও কার কথা বলল?”
“অনলের কথা।”
“তিতির অনলকে চেনে কীভাবে?”

নিহি সবকিছু বলল উপমাকে। সব শুনে উপমা বললে,
“সাংঘাতিক ব্যাপার! আমি তো বলিনি কিছু। তাহলে জানল কীভাবে?”
“জানিনা।”
“বোঝাই যায়, সে তোমার জন্য পাক্কা দিওয়ানা।”
বলে একা একাই হাসে উপমা। আর কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে উপমা চলে যায়। রাত হয়ে যাওয়ায় অনল নিজেই উপমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয় আর ওদের কী কী কথা হয়েছে সব শুনে উপমার থেকে।
______________________

পরেরদিন সকালে একসাথেই কলেজে আসে নিহি আর উপমা। ক্লাস শুরু হওয়ার দশ মিনিট আগে আসে। অনল ও ওর বন্ধুরা আগেই এসেছে। নিহিকে আসতে দেখে অনল নিহির দিকে এগিয়ে যায়। নিহির হাত ধরে ওর বন্ধুদের কাছে নিয়ে আসে। নিহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
“কী করছেন? হাত ছাড়েন আমার।”
অনল কোনো উত্তর করেনি। নিহিকে লিসার সামনে নিয়ে দাঁড় করায়। লিসা একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায়। মিলন, সাকিব আর সুমাইয়াও লিসার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। রাগে কথাই বলতে পারছে না অনল। সুমাইয়া জিজ্ঞেস করে,
“কীরে কী হয়েছে?”
“সেটা লিসাকে জিজ্ঞেস কর।” মেজাজ দেখিয়ে বলে অনল। নিহি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। নিহির নিরবতা অনলের রাগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনল নিহিকে ধমক দিয়ে বলে,
“মাথা নিচু করে রাখছ কেন? তুমি কোনো অন্যায় করছ? মাথা উঁচু করো বলছি।”

নিহি একবার অনলের দিকে তাকিয়ে আবারও মাথা নিচু করে রাখে। আরো রেগে যায় অনল। পূণরায় ধমক দিয়ে বলে,
“আমি কি ধরে মাথা উঁচু করাব?”
“আচ্ছা তোদের সমস্যাটা কী বলতো আমায়।” বলে সুমাইয়া।
অনল সরাসরি এবার লিসাকে প্রশ্ন করে,
“তুই নিহিকে কী বলেছিস?”
লিসার উত্তর,
“যা সত্যি তাই বলেছি।”
“কোন সত্যি বলেছিস?”

লিসা কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়। অনল আবার বলে,
“এখন চুপ করে আছিস কেন? বল।”
লিসার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে অনল নিহিকে বলে,
“তুমি কি সেই নিহি যে আমার গালে থাপ্পড় মেরেছিলে? সেদিন এত সাহস কোথায় ছিল তোমার? একটা ছেলেকে থাপ্পড় মারতেও দু’বার ভাবোনি। আর সেখানে একটা মেয়ে বিনা অপরাধে তোমায় যা তা বলে অপমান করে গেল সেখানে তুমি চুপচাপ শুনে গেলে? ক্লাস না করে কলেজ থেকে পালিয়ে গেলে? উত্তর দাও নিহি। তুমি কেন প্রতিবাদ করোনি?”

নিহি নিরুত্তর। লিসা বলে,
“তুমি ওর সাপোর্ট নিয়ে কথা বলছো অনল? তাও আমার বিপক্ষে! কী আছে এই মেয়েটার মাঝে? ওর চেয়ে কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে তোমার পেছনে ঘোরে। তাদেরও তো তুমি পাত্তা দাও না।”
“ফিলিংস সবার প্রতি আসে না লিসা। তুই নিহির সাথে এমন ব্যবহার করে একদম ঠিক করিসনি। এখন যদি সবার সামনে তোকে থাপ্রাতে পারতাম তাহলে আমার শান্তি লাগত। তুই নিহিকে ওয়ার্নিং দিয়েছিলি না? এখন আমি তোকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি। তুই নিহির আশেপাশেও ঘেষার চেষ্টা করবি না। ও’কে অপমান করা তো দূরে থাক। নয়তো যেই থাপ্পড়টা তুই ও’কে দিতে চেয়েছিস সেটা আমি তোকে দেবো। আর হ্যাঁ, বন্ধু বন্ধুর মতো থাক। চলো নিহি।”
অনল নিহিকে ক্লাসে পাঠিয়ে দিয়ে ক্যান্টিনে চলে যায়। ক্লাসে গিয়ে থম মেরে বসে থাকে নিহি। বিশ্বাসই হচ্ছে না অনল ওর সাপোর্ট নিয়ে লিসাকে এতগুলো কথা শুনাল। নিহিকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে উপমা প্রশ্ন করে,
“কী হয়েছে?”
“বিশ্বাসই করতে পারছি না।” ঘোর নিয়ে বলে নিহি। উপমা নিহির হাতে চিমটি কেটে বলে,
“বিশ্বাস করো।”
“আউচ!”
.
টিফিন টাইমে লাইব্রেরীতে বসে পড়ছিল নিহি। উপমা পাশেই বসে ছিল। তখন আগমন ঘটে লিসার। একটা চেয়ার টেনে নিহির মুখোমুখি বসে। বইয়ের থেকে চোখ তুলে একবার লিসার দিকে তাকিয়ে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয় নিহি। লিসা বইটা টেনে নিয়ে বলে,
“এটিটিউড আমায় দেখিও না।”
“দেখালাম না।” নিহির ভাবলেশহীন উত্তর।
“তুমি কি ভেবেছ অনলকে আমার নামে বিচার দিয়ে পার পেয়ে যাবে?”
নিহি লিসার সম্মুখে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে বলে,
“আপনার কি মনে হয় আপু আমি প্লে, নার্সারির বাচ্চা? যখন প্লে, নার্সারিতে পড়তাম তখন পান থেকে চুন খসলেই স্যার-ম্যামের কাছে বিচার দিতাম। বাড়িতে কেউ বকলেই বাবাকে নয়তো দাদুর কাছে বিচার দিতাম। কিন্তু এখন তো আমি বাচ্চা নই। যথেষ্ট বড় হয়েছি। তাহলে এই বিচার দেওয়ার স্বভাবটা কি আমায় মানায়?”
“তুমি কি মশকরা করতেছ আমার সাথে? তুমি না বললে হাওয়ায় ভেসে অনলের কাছে গেছে কথাগুলো?”
“আপনি কি আমার বেয়াইন লাগেন যে মশকরা করব? আমি তাকে কিছুই বলিনি।”
তখন উপমা বলে,
“আমি বলেছি। অনল ভাইয়া আমায় নিহির কথা জিজ্ঞেস করেছিল। তখন আমিই বলেছি সব।”
“ওহ গিরিঙ্গি তাহলে তুমি লাগিয়েছ? চামচামি করার জন্য মাসে কত করে পাও?”
নিহি এবার ধমক দিয়ে বলে,
“এতক্ষণ সীমার মধ্যে থেকে কথা বললেও আপনার ব্যবহার আমার সীমা অতিক্রম করাতে বাধ্য করেছে। আপনি আমাকে তো কালকে এতগুলো কথা বললেনই আবার আজও এসেছেন বেহায়ার মতো। আমায় নিয়ে আপনার এত সমস্যা। যা বলার আমার সাথে বলেন। আমার ফ্রেন্ডকে অপমান করার সাহস কোথায় পেয়েছেন আপনি? ভার্সিটির সিনিয়র আপু হয়েছেন বলে কি মাথা কিনে নিয়েছেন? উপমাকে যদি কখনো আর কটু কথা বলেছেন তাহলে আপনার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলব আমি অসভ্য মেয়ে। আমায় বিরক্ত করলে ফল ভালো হবে না বলে দিলাম।”

বলে চেয়ার ছেড়ে উপমার হাত ধরে চলে আসে। পেছন থেকে লিসা অনেককিছু বললেও আমলে নেয় না নিহি। শুধু আসার আগে বলে আসে,
“আপনার মুখে পোকা হবে কুটনীবুড়ি।”

উপমা হাসে নিহির বকা শুনে। জুনিয়র একটা মেয়ে এতগুলো কথা বলে গেল ভাবতেই রাগে ফেটে পড়ছে লিসা। সুমাইয়া লাইব্রেরীতে এসে বলে,
“এত বছরেও তো দেখলাম না লাইব্রেরীতে এসে তোকে পড়তে।তুই এখানে কী করছিস?”
লিসা রাগে কাঁপছে। সুমাইয়া আবার জিজ্ঞেস করে,
“কী হইছে বল।”
“ঐ অসভ্য মেয়েটা আমায় কতকিছু বলে গেল। আমি তো ও’কে খুনই করে ফেলব।”
“কোন মেয়েটা? নিহি?”
“হু।”
“বাচ্চা একটা মেয়ের পিছনে হুদাই লাগছিস। একজন তো প্রথমে লেগে প্রেমেই পড়ে গেল শেষমেশ। এখন তুইও আবার পরে প্রেম পড়বি নাকি?” বলে ফিক করে হেসে ফেলে সুমাইয়া। লিসা আরো রেগে বলে,
“তুই মজা নিচ্ছিস?”
“না তো! আচ্ছা চল এখন। পরে দেখা যাবে কী করা যায়।”

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]