আড়ালে ভালোবাসা পর্ব-০৬

0
5374

#আড়ালে_ভালোবাসা
#পার্ট_০৬
#Mst_Liza

আমি ছেলেটাকে পুলিশে দিয়েছি কিন্তু অনুর বাবা পালিয়েছে।ছেলেটা শিকার করেছে অনুর বাবা জানতো আমার বাবার অনেক টাকা তাই আমার বোনের সাথে এমনটা করতে বলেছে।ছেলেটা এখন যতো শাস্তি পাবে খুব কম হয়ে যাবে। কিন্তু অনুর বাবার শাস্তি এখনো বাকি।তার শরীরের রক্ত অনুর শরীরে বইছে। আমি কিভাবে অনুকে ভালোবাসবো? ওকে আমি শাস্তি দেবো এটা ভাবলেও খুব কস্ট হয়।কিন্তু আমার বোনের আর ফুপ্পির মুখটা যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে তখন খুব ঘৃণা হয় অনুকে দেখলে।

এটুকু পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি।আর কিছু লেখা পেলাম না ডায়েরিটাতে।

ডায়েরিটা বুজিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছি আমি।আমার চোখ বেয়ে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।আমি বুঝতে পারছি না। প্রীয়ম এতোটা কস্ট পেয়েছে? কিন্তু আমাকেই কেন ভালোবাসলো প্রীয়ম? কেন আমার জীবনটা নস্ট করল? আমারতো কোনো দোষ নেই।বাবার ভুলের শাস্তি আমি কেন পাবো? প্রীয়মকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করিনি।আমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছে প্রীয়ম।কিন্তু এখন? প্রীয়মের আরেকজন শত্রু ওরই বেস্ট ফ্রেন্ড নাহিদ।যে ওকে মেরে ফেলতে চাই।আমি সুস্থ করবো প্রীয়মকে।ওকে বলবো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড এখন ওর সবচেয়ে বড় শত্রু। যাকে প্রীয়ম বিশ্বাস করছে।

গোংরানির শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখলাম প্রীয়ম শীতে কাঁপছে। মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছে। আমি প্রীয়মের মুখটা মুছিয়ে দিয়ে ওর গায়ে কম্বলটা টেনে দিলাম।দেখলাম মাথাটা চেপে ধরে বিরবির করে বলছে তোমাকে আমি ছাড়বো না অনু।আমি তোমার সাথে সেটাই করবো যেটা তোমার বাবা আমার ফুপ্পির সাথে আর আমার আদরের বোনের সাথে করেছে।এতে আমার যত কস্টই হোক না কেন।

আমি নিশ্চুপ হয়ে রইলাম। প্রীয়মের মুখটার দিকে তাকিয়ে ভাবছি।এতোটা ভালোবাসে প্রীয়ম আমাকে? তাহলে বাবার ভুলের শাস্তি আমায় কেন দিতে চাই? প্রীয়মকে জানতে হবে বাবা কখনো আমায় ভালোবাসে নি।প্রীয়ম শুনছো!উঠো! আমার কথা শোনো।

প্রীয়মের কোনো সাড়া নেই।আমি নাহিদের দেওয়া ওষুধগুলো জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে শিশির মধ্যে কিছু গ্যাস্টিকের ওষুধ ভরে রাখলাম।

দুইদিন প্রীয়মের সেবা করলাম আমি।এখন প্রীয়ম অনেকটা সুস্থ।কপালের ব্যান্ডেজটা খুলে দিয়ে প্রীয়মের পাশে বসলাম। প্রীয়মকে বললাম আমি কিছু বলতে চাই আপনাকে।প্রীয়ম আমার কোনো কথা শুনতে চাইলো না।আমার সাথে আগের মতোই খারাপ ভাবে কথা বলতে লাগলো।আমার হাত টেনে ধরে খারাপ নজরে তাকালো আমার দিকে।আমি সাহস করে বললাম বাবার কথা।শুনতে না চাইলেও জোর করে শুনালাম। প্রীয়মকে বললাম আমার নতুন মা মারা যাবার পর থেকে বাবার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। ওই দিনটার পর থেকে আমি আমার মায়ের কাছে থাকি।বাবা কোথায় থেকেছে কি করেছে আমি জানি না।

প্রীয়ম আমাকে জিজ্ঞাসা করল এসব ওকে কেন বলছি? আমি বললাম ওর ডায়েরিটা পরে ফেলেছি আমি। যা শুনে প্রীয়ম খুব রেগে গেলো।আমি প্রীয়মকে শান্ত হতে বললাম। আমি বোঝালাম ডায়েরিটা না পড়লে সত্যিটা আমি জানতাম না।আর বোঝাতেও পারতাম না।বরংচ আপনি খুব কস্ট পেতেন।যখন জানতেন যাকে ভালোবাসেন তাকে বিনা অপরাধে কস্ট দিয়েছেন।

এটুকু বলতেই দরজা খুলে নাহিদ রুমের মধ্যে চলে আসলো।প্রীয়মকে বললো ভালোবাসাতে অন্ধ না হতে।এটা নাকি আমার নাটক।

আমি প্রীয়মকে তখনই নাহিদের কথা বললাম।নাহিদ কিভাবে প্রীয়মকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছিলো।সবটা বললাম।কিন্তু নাহিদের কথাটা শোনার পর প্রীয়ম উল্টো আমার উপরে রেগে গেলো।প্রীয়ম ভাবলো আমি নাটক করছি।নাহিদ এমন কিছু করতেই পারে না।যে তার এক কথায় ছুটে এসেছে তার উপকার করতে।আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু শুনলোই না।আমি সব সত্যিটা জেনে গিয়েছি বলে আমাকেই মারলো।প্রীয়ম রেগে আমার গালে একটা চড় মেরে বললো ওর ডায়েরিটা পড়ে আমি ঠিক করি নি।

আমাকে এবার অন্য শাস্তি দেবে প্রীয়ম।আমার হাত ধরে টেনে স্টোর রুমে নিয়ে আসলো।আর বললো এইখানে সারাদিন থাকতে হবে।প্রীয়ম জানে আমি অন্ধকারে থাকলে খুব ভয় পাই।তারপরও আমাকে এমন একটা নোংরা, ময়লা আর ঘুটঘুটে অন্ধকার রুমে ফেলে রেখে যাবে? আমি প্রীয়মের পায়ের কাছে বসে পরলাম। দু’হাত জোর করে বললাম আমি মরে যাবো প্রীয়ম।অন্ধকারকে আমি খুব ভয় পাই।প্রীয়ম একবার নাহিদের দিকে তাকালো নাহিদ চোখের ইশারায় চলে যেতে বললো।

প্রীয়ম আমাকে সরিয়ে দিয়ে নাহিদের সাথে স্টোর রুমের থেকে বেড়িয়ে গেলো।আমি ভেতরের থেকে চিৎকার করতে লাগলাম। প্রীয়মের নাম ধরে ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়া নেই।ভয়ে আমার শরীরের ঘাম ছুটছে।কিছুক্ষণ চিৎকার করার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম আমি।

ঘন্টা খানেক পর যখন চোখ খুললাম দেখলাম প্রীয়মের বিছানায় আমি।আমি চিৎকার করে শোয়া থেকে উঠে বসতেই প্রীয়ম আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি শক্ত করে ধরে প্রীয়মকে ভুত আসছে বলে চিৎকার করতে লাগলে প্রীয়ম ধাক্কা দিয়ে আমাকে দূরে ঠেলে দিলো।আমাকে বললো নাটক না করতে।চোখ মেলে দেখতে আমি এখন ওর রুমে।
_________

চলবে,