আড়ালে ভালোবাসা পর্ব-০৭

0
5253

#আড়ালে_ভালোবাসা
#পার্ট_সাত
#Mst_Liza

ঘন্টা খানেক পর যখন চোখ খুললাম দেখলাম প্রীয়মের বিছানায় আমি।আমি চিৎকার করে শোয়া থেকে উঠে বসতেই প্রীয়ম আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি শক্ত করে ধরে প্রীয়মকে ভুত আসছে বলে চিৎকার করতে লাগলে প্রীয়ম ধাক্কা দিয়ে আমাকে দূরে ঠেলে দিলো।আমাকে বললো নাটক না করতে।চোখ মেলে দেখতে আমি এখন ওর রুমে।আমি চোখ খুললাম আর রাগি দৃষ্টিতে প্রীয়মের মুখের দিকে তাকালাম। বিছানার উপর থেকে বালিশ তুলে প্রীয়মকে মারতে লাগলাম। প্রীয়ম আমার হাতদুটো ধরে বসলো।আমাকে বললো এরকম করলে আমার হাত পা বেঁধে রেখে দেবে।আমি শুনলাম না। প্রীয়মকে এক ধাক্কায় বিছানার থেকে নিচে ফেলে দিলাম।প্রীয়মের মাথায় পাশের পানির গ্লাস দেখতে পেয়ে সবটুকু পানি ঢেলে দিলাম।প্রীয়ম আহাম্মকের মতোন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি আজ প্রীয়মের চোখে আমার প্রতি ভালোবাসা দেখতে পারছি।এতোদিন শুধু প্রীয়মকে খারাপ ভেবে ঘৃণা করে এসেছি।আজ যেন প্রীয়মের প্রতি একটুও ঘৃণা হচ্ছে না।

আমি উঠে গিয়ে আলমারি থেকে তোয়ালে এনে প্রীয়মের মুখে ছুড়ে মারলাম। বললাম ভেজা শরীর মুছে নিতে।প্রীয়ম উঠে এসে আমার হাতটা মুচড়ে ঘুরিয়ে ধরলো।আমাকে বললো আমার এতো সাহস কিভাবে হলো।আবার আমি ব্যাথা পেয়ে আহ করে উঠতেই প্রীয়ম আমার হাতটা ছেড়ে দিলো।আমাকে বিছানায় বসিয়ে জিজ্ঞাসা করলো হাতে খুব জোরে লেগেছে নাকি।আমার জন্য অনেক চিন্তিত মনে হলো।আমি বুঝতে পারলাম প্রীয়ম আমাকে কতটা ভালোবাসে।আমি কস্ট পেলে হয়তো প্রীয়মও কস্ট পাবে।শুধু প্রতিশোধ নিতে আমাকে কস্ট দিতে চাই।

প্রীয়মকে আরেকটু বিরক্ত করতে আমি হাতের আঙুলগুলো বাকিয়ে আমার মুখের সামনে এনে খুব জোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলি আঙুল নড়ছে না আমার।

প্রীয়ম খুব চিন্তিত হয়ে আমার হাতটা ধরে নাড়িয়ে বললো চেস্টা করো অনু ঠিক হয়ে যাবে।আমি মাথা নাড়িয়ে আরও জোরে কেঁদে উঠলাম। প্রীয়মকে বললাম নাহ আর ঠিক হবে না।আমার হাত মুচড়ে ধরে আঙুল গুলো ভেঙে হাড্ডি গুড্ডি গুঁড়ি গুঁড়ি করে ফেলেছো তুমি।প্রীয়ম অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে আমার হাতে ফু দিয়ে বললো সেড়ে যাবে।এই শহরের সবথেকে বড় ডাক্তারকে দেখিয়ে আমার হাত ভালো করবে প্রীয়ম।

প্রীয়মের মুখে এমন কথা শুনে না হেসে পারলাম না আমি।আমার হাত নামিয়ে প্রীয়মের মুখের সামনে খুব সুন্দর করে ঘুরিয়ে থুতনিতে হাত রেখে বললাম কিছু হয়নি আমার হাত।প্রীয়ম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার চোখের দিকে।আমি বললাম চোখ দেখাচ্ছো কেন? তোমার ডায়েরিটা পরার পর থেকে তোমার ওই চোখে আমার প্রতি ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাই না আমি।

প্রীয়ম মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি বললাম দেখও তোমাকে আমি কখনো ভালোবাসি নি।এটা সত্যি তোমার ডায়েরিটা পরে আমার খুব কস্ট লেগেছে তোমার জন্য। কিন্তু তুমি আমাকে শাস্তি দিলে কি তোমার কস্ট কমে যাবে? তোমার বোন, ফুপ্পি এরা বেঁচে যাবে? বরংচ তুমি কস্ট পাবে।কারণ তুমি আমায় ভালোবাসো।আমার সাথে থাকলে।আমাকে দেখলে সারাক্ষণ আমার বাবার কথা তোমার মনে পরবে।তাই বলছি তুমি আমায় ডিভোর্স দিয়ে দাও।আমি আমার মায়ের কাছে চলে যায়। আমাকে মুক্তি দাও প্রীয়ম।আমিও ভালো থাকি আর তুমিও ভালো থাকো।আমরা দুজনেই শান্তিতে বাঁচি।

শেষের কথাটুকু শুনে প্রীয়ম খুব রেগে গেলো। আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল তোমার কোনো মুক্তি নেই অনু। তোমাকে আমি কস্ট দিয়ে শেষ করে দিবো।তিলে তিলে মারবো তোমাকে আমি।

আমাকে নাটক করতে নিষেধ করে বাইরে থেকে দরজাটা লক করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো প্রীয়ম।

দরজার ওপাশ থেকে প্রীয়ম বলল এর শাস্তি তোমাকে আমি অন্যভাবে দেবো।

রাতে ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলাম নাহিদ কারও সাথে ফোনে কথা বলছে।প্রীয়মকে মেরে ফেলবার প্ল্যান করছে।নাহিদ বলছে, যেভাবেই হোক প্রীয়মকে মেরে ফেলতে হবে।আজ রাতের মধ্যে প্রীয়মকে মেরে লাশ দাফন করে দিতে হবে।কারণ কাল সকালে প্রীয়ম নিজের আসল পরিচয়ে প্রেস, মিডিয়া সকলের সামনে আসবে।আমার জন্য নিজের পরিচয় গোপন রেখেছিলো প্রীয়ম।আমি যখন ডায়েরিটা পরে সত্যিটা জেনে গেছি তখন আর ছদ্মবেশে থেকে কি করবে? প্রীয়মের পরিচয় সকলের সামনে আসলে নাহিদ এইসব কিছু হারাবে।এতো নাম এতো সম্মান। যা নাহিদ হতে দেবে না।

দরজাটা বাইরে থেকে লক করে রেখে গিয়েছে প্রীয়ম।আমি ভেতর থেকে কিভাবে বাইরে যাওয়া যায় সেটা ভাবছি।প্রীয়ম নিশ্চয় এখন বাড়িতে আছে।তার মানে নাহিদ কোনো ক্ষতি করলে বাড়িতে করবে।

চলবে,,,