#আয়নায়_বন্দী_পরী
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পব_১১
আলোকরশ্মিটা আমার চোখে এসে পড়তেই আমি সাথে সাথে চোখের জ্যোতি হারিয়ে ফেললাম!আর যন্ত্রণায় বিকট আওয়াজে চিৎকার করে উঠলাম!মনে হচ্ছে যেনো কেউ আমার চোখের মধ্যে ফুটন্ত আগুনের লাভা ঢেলে দিয়েছে!এতো পরিমাণে যন্ত্রণা হচ্ছে আমার।এরপর আর কিছু মনে নেই…
.
আকাশ যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে যায়।আনহা আকাশের এই করুন অবস্থা দেখে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে আকাশের কাছে আসে।সবাই তো অবাক আকাশের অবস্থা দেখে!তখনি আনহার বাবা আনহাকে বলে উঠে…
–মাসুদা এই মাহরুমার কি হয়েছে।কিছুক্ষন আগেও তো সুস্থ সবল ছিলো।কিন্তু হুট করেই চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে গেলো কেন?
.
আনহা আকাশের অবস্থা দেখে বুঝে যায়,যে তার কি হয়েছে।তাই সে তার বাবাকে বলে…
–বাবা তোমরা সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যাও।আমি দেখছি উনার কি হয়েছে।আই হোপ কি আমি মাহরুমাকে ঠিক করতে পারবো।
–আরেহ মাসুদা কি বলছিস তুই এসব!তুই কি করে মাহরুমাকে ঠিক করবি?
–আরে বাবা তোমরা যাও না প্লিজ।এখন খালি খালি প্রশ্ন করো না।আমি বনলাম তো যে আমি ঠিক করতে পারবো মাহরুমাকে।তোমরা কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখো মাহরুমাকে।দেখবে তখন সে ঠিক হয়ে গেছে।
–আচ্ছা ঠিক আছে যা আমরা বেরিয়ে গেলাম।এই বাকি সবাই বের হয়ে যাও মাসুদাকে রুমের মধ্যে একা ছেড়ে দিয়ে।
.
আনহার বাবার আদেশে সবাই ঘর থেকে বের হয়ে যায়।এবং আনহার বাবাও নিজে বের হয়ে যায়।
সবাই রুম বের হয়ে যেতেই আনহা রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে আকাশের কাছে আসে।তারপর আকাশের মাথা মাটি থেকে তুলে আনহা তার নিজের কোলের মধ্যে রাখে।পরে আকাশের কনিষ্ঠা আঙ্গুল চেপে ধরে তাঁকে নিয়ে তার তৈরী করা কল্পনার জগতে পাড়ি জমায়।এবং কল্পনার জগতে পাড়ি জমানোর পূর্ব মুহূর্তে আনহা তার সোল আকাশের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয়।আকাশ আবারো আনহার কল্পনার দুনিয়ায় চলে যায়।যেখানে যাওয়ার পর সে ভিশন দেখতে শুরু করে।সে আগের বারের ন্যায় অনেক অদ্ভুত ধরনের প্রাণীকে দেখতে পায়।তখনি আনহা আকাশের ভিশনে বাঁধা দিয়ে তার কানে কানে বলে….
–আকাশ আমার সোল তোমার শরীরে।যার ফলে বাস্তব জীবনে তুমি ঠিক হয়ে গেছো।কিন্তু আমার দেহ মৃত লাশের মতন মাটিতে পড়ে আছে।
সো তুমি তাড়াতাড়ি আমার তৈরী করা ময়ায়ী দুনিয়া থেকে বের হয়ে আমার কনিষ্ঠা আঙ্গুল চেপে এগারোবার জোদনাম শব্দটা পাঠ করো।তাহলে সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে।
–আনহার কথা মতন তার তৈরী করা মায়ায়ী দুনিয়া থেকে বেরিয়ে এসে তার হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল চেপে ধরে এগারোবার জোদনাম শব্দটা পাঠ করতেই আমার শরীর থেকে আনহার সোল তার শরীরে প্রবেশ করলো।তার মিনিট দুয়েক পরেই আনহা ঠিক হয়ে গেছে।এবং সে নড়াচড়া ও করছে।আর আমিও সব কিছু ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছি।মাথায় আর কোনো ধরনের যন্ত্রণাও করছে না।কিন্তু তখন হটাৎ কি হয়েছিলো,যার দরুন এতো ভয়ংকর আলোকরশ্মির উৎপত্তি হয়েছে!নাহ আনহার থেকে জিগ্যেস করি।আচ্ছা আনহা তখন কি হয়েছিলো বলো তো?হটাৎ করে এমন আলোকরশ্মির উৎপত্তি কেন হয়েছে?
–তুমি আমার পরী-পালকের রূপ দেখেছো দেখে এমনটা হয়েছে।
–মানে কি আনহা!
–মানে হলো তোমার মধ্যে আমার সোল কনভার্ট করার কারনে অনেক সুপারন্যাচারাল পাওয়ার আমার শরীর থেকে তোমার শরীরে কনভার্ট হয়েছে।তাই বলে জমিনে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।যেমন ধরো তোমার শরীরে সুপারন্যাচারাল পাওয়ার কনভার্ট হওয়ার পরে তোমায় স্পর্শ করলেও কিন্তু পরী-পালকে কম্পন হতো না।তাছাড়া তোমার সামনে রাতের বেলায় প্রকট হলেও আলোকরশ্মির উৎপত্তি হতো না।কারন জমিনে সব কিছু সয়ে গেছে তোমার সাথে আমার।কিন্তু তুমি আমার পরী-পালকের অন্য রূপ কখনোই দেখো নি।তাই আমি তোমার দিকে চোখ মেলে তাকাতেই তোমার সাথে এমনটা ঘটেছে।
–বুঝলাম,কিন্তু তোমার রূপ তো আমি আগের মতোই দেখতে পাচ্ছি।তোমার রূপের তো কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
–আকাশ সেটা তুমি হয়তো দেখতে পাচ্ছো,কিন্তু সত্যিকারত্বে বাকিরা আমায় অন্য রূপে দেখছে।আর তুমিও কিছু সময়ের মাঝে আমাকে অন্যরূপে দেখতে পাবে।
–তার মানে আবারো আমার সাথে অদ্ভুত কিছু ঘটবে?
–নাহ আর অদ্ভুত কিছুই ঘটবে না তোমার সাথে।
কারন জমিনে আমার সোল তোমার শরীর প্রবেশ করানোর পর যেমন কোনো সমস্যা হয়নি।তুমি সব কিছুই তখন সয়ে গিয়েছিলো।এখনো তুমি সব কিছু সয়ে যাবে।কারন কিছুক্ষণ আগে আমার সোল তোমার শরীরে কনভার্ট করেছি।যার দরুন পরী-পালকে ঘটা সমস্ত অদ্ভুত কিছুকেই তুমি স্বাভাবিক ভাবে সহ্য করতে পারবে।আশা করি আর কোনো সমস্যাই হবে না তোমার সাথে।
–তার মানে তুমি আমাকে পরী-পালকে টিকিয়ে রাখার জন্য তোমার সোল আবার আমার শরীরে প্রবেশ করিয়ে তোমার আরো কিছু সুপারন্যাচারাল পাওয়ার আমার শরীরে কনভার্ট করেছো?যাতে করে আমি সব কিছুই সহ্য করতে পারি?
–হুম….
–আচ্ছা তুমি এখন না হয় আমাকে উপযুক্ত বানিয়েছো।কিন্তু কিছুক্ষণ আগে যে আমি পরী-পালকের অনেকের সাথেই দেখাসাক্ষাৎ করেছি,তাহলে তখন তাঁদের রূপ দেখে যে আমার কিছু হয়নি?
–তখন তোমার কিছু না হওয়ার কারন হচ্ছে,তুমি পরী-পালকের কোনো পরীকেই জমিনে মানুষের রূপে দেখোনি।তাই তোমার কোনো সমস্যা হয়নি।যদি কোনো পরীর সাথে জমিনে মানুষের রূপে দেখা হতো তোমার,তাহলে পরী-পালকে সে তোমার দিকে দৃষ্টি ফেলতেই তুমি সেই অদ্ভুত ধরনের আলোকরশ্মিকে দেখতে পেতে।এক কথায় বলতে গেলে কোনো পরীকে তুমি দুই রকম রূপে দেখলে তোমার সাথে এমনটা ঘটবে।
–হুম এবার সমস্তটাই বুঝলাম।
যাক শুকরিয়া এই বিষয়ে সব কিছুই ক্লিয়ারলি বুঝলাম।আচ্ছা তুমি এখন এটা বলো,যে তুমি এতোদিন জমিনে আসো নি কেন?আর তোমার এমন ভয়ংকর অসুখ হয়েছে কি করে?
–আমি এতোদিন জমিনে আসিনি কেন সেটা তো জেনেই গেছো যে আমি অসুস্থ ছিলাম।তবে আমার এই অসুস্থতার কারন বলতে গেলে অনেক রহস্যের খোলাসা করতে হবে তোমার কাছে।
–রহস্যের উদঘাটন করলে করো সমস্যা কোথায়?
–সমস্যা নেই,তবে তোমায় তো বলেছিলাম যে উপযুক্ত সময় এসে সব কিছুই তুমি জেনে যাবে।তাই ভাবছি,যে উপযুক্ত সময় টা এসেছে কিনা!
–আনহা উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করলে তোমাকে আমার হারাতে হবে।সো তুমি আমায় বললে তোমার জন্য কিছু অন্তত আমি করতে পারবো সময় থাকতে থাকতে।
–আচ্ছা ঠিক আছে বলছি।তবে যেটুকু এখন তোমার জানা দরকার সেটাই বলছি।
–হুম বলো…
–আকাশ তুমি আসার সময় যেই দ্বীপ অতিক্রম করে এসেছো,সেটা আমাদের পরী-পালকের অন্তর্ভুক্ত।আর এই দ্বীপের একটা অংশেই আমাদের পরী-পালক।কিন্তু আমাদের এই দ্বীপ ছাড়া অন্য আরেকটা দ্বীপ আছে।যার নাম কাকাতুয়া।যেই কাকাতুয়া দ্বীপোর সঠিক লোকেশন আমি জানি না।তবে সেই দ্বীপে অনেক ভয়ংকর একটা গোত্র বসবাস করে।যারা কিনা শয়তান পূজারি।তাঁদের শক্তি আমাদের পরী-পালকের পরী থেকে হাজার গুন বেশি।সেই গোত্রটা আমাদের পরী-পালক দখল করতে চায়।কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষরা পরী-পালকের চতুর্পাশে সাধনা করে একটা আয়না দেওয়াল বানিয়ে রেখেছে।যার কারনে তারা আমাদের পরী-পালকে ঢুকে হামলা করতে পারে না।না হয়তো বহু আগেই আমাদের পরী-পালককে তারা ধ্বংস করে দিতো।এবং তারা আমাদের পরী-পালকে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে তাঁদের নিজেদর সামরাজ্য নির্মান করতো।কিন্তু আমাদের পূর্ব পুরুষের বানানো মায়ায়ী আয়না,যার কারনে তারা পরী-পালকে হামলা করতে পারে না।কিন্তু তারা সব সময়ই চেষ্টা করে আমাদের ক্ষতি করতে,এবং আমাদের পরী-পালক তাঁদের দখলে নিতে।আমি সেদিন রাতে তোমার সাথে কথা শেষ করে যখন পরী-পালকে ফিরে আসি,তখন দেখি তারা আমাদের পরী-পালকের দ্বীপের মধ্যে বসে আছে।আমার যেহেতু জমিন থেকে পরী-পালকে ফিরে আসার জন্য সর্ব প্রথম এই দ্বীপে আসতে হয়।তাই আমি জমিন থেকে প্রকট হয়ে এই দ্বীপে ফিরে আসি।কিন্তু এখানে এসে দেখি শয়তান পূজারিরা আমার আগেই এখানে এসে বসে আছে।আর এই দ্বীপের পুরোটা অংশে কিন্তু মায়ায়ী আয়না নেই।মায়ায়ী আয়নার সীমারেখা হচ্ছে আমাদের পরী-পালকের গেইট থেকে নিয়ে শুরু করে একদম পরী-পালকের শেষসীমা পর্যন্ত।যার দরুন তারা এখানে এসে বসে ছিলো।আর আমি এখানে আসতেই তারা আমাকে দেখে ফেলে,এবং আমার উপরে মায়া করে বসে।আমি তাঁদের মায়া থেকে বাঁচতে জানপ্রাণ নিয়ে দৌড় দিয়েছি ঠিক,পরী-পালকের দরজার সামনে যেতেই তাঁদের মায়া আমার উপরে লেগে যায়।আর আমি পরী-পালকের দরজার সামনেই বেহুঁশ হয়ে যাই।যেটা পরী-পালকের মেইন দারোয়ান আতাউর দেখে ফেলে।তাই সে আমাকে তাড়াতাড়ি উঠিয়ে নিয়ে রাজ দরবারে চলে আসে।
–কিহহহ এতসব ঘটেছে তোমার সাথে!
–হুম…
আমি তো ভেবেছি সেদিন এই আমি শেষ।কিন্তু উপর ওয়ালা আমায় বাঁচিয়ে দিয়েছে।
–যাক শুকরিয়া।
কিন্তু তুমি আমায় এটা বলো তো,যে আতাউর নামক দারোয়ান তোমায় পরী-পালকে প্রবেশ করতে দেখার পরেও কিছু বলেনি কেন?কারন তোমার কথা অনুযায়ী তো কোনো পরীকে জমিন থেকে পরী-পালকে প্রবেশ করতে দেখলে তার থেকে শুরার পানি নিয়ে নেওয়া হয়।তাহলে সে তোমায় কিছু বলে নাই কেন?
আর তাছাড়া তুমি আমায় কল্পনার দুনিয়ায় ভিজন দেখিয়ে ড্রাগন ফলের কথা কেনই বা বললে?আর তুমি কি করেই বা জানো,যে ড্রাগন ফল এই তোমার অসুখ নিধন করবে?
–আকাশ দেখো আমি রাজার মেয়ে।পরী-পালকের সবার জন্য সব কিছু নিয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমাদের জন্য কড়া ভাবে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।তবে হ্যাঁ নিয়ম সবার জন্য সমান।কিন্তু ঐ যে বললাম আমি রাজার মেয়ে।যার কারনে কেউ কোনো কিছু দেখলেও তেমন ভাবে কোনো রিয়েক্ট করেন না।কারন রাজ দরবারের মানুষকে নিয়ে রিয়েক্ট করলে তাঁদের উপরেই সেটা ভারী পড়বে।আর তাছাড়া দারোয়ানের সাথে আমার অনেক খাতির।তাই সে কাউকে কিছু না বলে আমায় রাজ দরবারে পৌঁছে দিয়েছে।এবং সবাইকে বলেছে আমি হুট করেই বেহুঁশ হয়ে গেছি।আর ড্রাগন ফলের কথা এজন্যই জানি,কারন শয়তান পূজারি গুলা যখন আমার উপরে মায়া করে,তখন আমি একটা স্মেল পাই।যেই স্মেলটা ছিলো ড্রাগন ফলের।তাই আমি বুঝে যাই,যে ড্রাগন ফল দ্বারাই আমার উপরে মায়া করেছে।এবং সেই ড্রাগন ফল দ্বারাই আমাকে সুস্থ করা যাবে।তাই তোমাকে ভিজন দেখিয়ে ড্রাগন ফল আনতে বলেছি।
–ও আচ্ছা এই ব্যাপার।
যাক ভবিষ্যতে আমি তোমার জামাই হয়ে যেমন ইচ্ছে তেমনটাই করবো।তখন দারোয়ান থেকে নিয়ে শুরু করে সবাই আমাকে ভয় পাবে।এবং কেউ কিছু বলার মতন সাহস ও করতে পারবে না।
–এই আকাশ একদম ভালো হচ্ছে না কিন্তু।তুমি আমাকে নিয়ে মজা কেনো করছো?
–আরেহ বউয়ের সাথে মজা করবো না তো কার সাথে করবো।আচ্ছা থাক ছাড়ো এখন এসব বিষয়।শোনো আমি চলে যাবো।তুমি আতাউর নামক দারোয়ানকে দিয়ে আমাকে জমিনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করো।
–দারোয়ানের প্রয়োজন নেই।আমিই তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো গেইট পর্যন্ত।তবে তুমি তার আগে আমার বাবার সাথে সাথে বলে নাও।কিন্তু হ্যাঁ নিজের আসল পরিচয় কারোর কাছে দিও না কিন্তু।আমি জানি প্রধান প্রহরী তোমার রূপ পরিবর্তন করে দিয়ে এখানে পাঠিয়েছে।সো প্রধান প্রহরী যেই ভেসে তোমায় রাজ দরবারে পাঠিয়েছে,তুমি আগামীতে পরী-পালকে আসলে সেই ভেসেই আসবে।না হয় তো অনেক বড় সমস্যা হবে।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
–হুম ওয়েট আমি রুমের দরজা খুলে সবাইকে আসতে বলছি।
–আচ্ছা…
তারপর আনহা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
আনহা দরজা খুলতেই তার মা,বাবা এবং অনেক কয়জন আমাদের কক্ষে প্রবেশ করলো।সবাই কক্ষে প্রবেশ করতেই আনহার বাবা আমাকে জিগ্যেস করলো,আমি কেমন আছি এবং আমার কি চাই।আমি তার উত্তরে বললাম ভালো আছি।আর আমার কিছুই চাই না এখন।পরবর্তীতে যদি কিছুর প্রয়োজন হয়,তখন এসে তাঁকে জানাবো।আমার মুখে এমন কথা শুনে আনহার বাবা খুশিতে স্বর্নের একটা ঘড়ি আমার হাতে পড়িয়ে দিলো।আমি অনেক কয়বার আনহার বাবাকে না করেছি,কিন্তু তিনি জোর করেই আমাকে এটা দিয়েছে।আর দেওয়ার সময় বলেছে আমি তিনার খুশি হয়ে দেওয়া জিনিসটা না নিলে তিনি নাকি অনেক কষ্ট পাবেন।তাই বাধ্য হয়ে সেটা নিয়েছি।এরপর সবার সাথে কথা বলে রাজ দরবার থেকে বেরিয়ে এসেছি।আর আমার সাথে আনহাও বেরিয়ে এসেছে আমাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য।তারপর দুজন মিলে সফর করে পরী-পালকের মেইন দরজায় চলে এসেছি।মাঝপথে কোনো মায়াঝাড়িই কাজ করেনি আমার উপরে।আমি এই বিষয়ে আনহাকে জিগ্যেস করলে সে আমায় বলে,রাজ দরবারের কোনো মানুষ চলাচল করার সময় নাকি এই মায়াঝাড়ি কাজ করে না।রাজ দরবারের সম্মানে নাকি তারা শান্ত হয়ে যায়।
তাই নাকি তারা শান্ত হয়ে ছিলো।আনহার সাথে গল্পগুজব শেষ করতে করতে মেইন দরজায় চলে এসেছি।এবার বিদায় নেওয়ার পালা।বিদায় নেওয়ার একদম শেষ মুহূর্ত আনহাকে জিগ্যেস করলাম,আনহা তুমি আবার কখন জমিনে নামবে?
–আকাশ তার কোনো ঠিক নেই।কারন শয়তান পূজারিরা যে কোনো সময় আমার ক্ষতি করতে পারে।আর তারা যদি একবার আমার ক্ষতি করে দেয়,তাহলে আমার বাবা,মা সিংহাসন হারাবে।এবং সিংহাসনে অন্য কেউ বসবে।সো আমার কেয়ারফুল থাকতে হবে এখন।তাই আমি আপাতত জামিনে নামবো না।
–তার মানে তোমার সাথে আমার আর জমিনে দেখা হবে না?
–দেখা হবে,কিন্তু তার জন্য তুমি পরী-পালকে এসে আমায় সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে।এবং সঙ্গে করেই এনে এখানে পৌঁছে দিতে হবে।কারন তুমি আমার সাহস।আর শয়তান পূজারিরা তুমি সাথে থাকলে কোনো ধরনের ক্ষতিই করতে পারবে না।
–ঠিক আছে যাও আগামীকাল আমি এসে তোমায় জমিনে নিয়ে যাবো।তবে হ্যাঁ আমি আর রাজ দরবারে যাবো না।কারন সেখানে যেতে হলে মায়াঝাড়ির মোকাবেলা করতে হয় আমার।তাই আমি এখানে এসে প্রধান প্রহরীকে বলবো।তিনি গিয়ে তোমায় খবর দিবে।
–ঠিক আছে এতে আরো ভালো হবে।
কারন প্রহরী তিন মিনিটেই সেই রাস্তা অতিক্রম করতে পারে।কিন্তু কোনো মানুষ যদি সেই রাস্তা অতিক্রম করে,তাহলে অনেক লম্বা সময় লাগে।কারন সেই রাস্তার মধ্যে মায়াঝাড়ির হাজারো ট্রাপ লাগানো।তাই তুমি আতাউর নামক প্রহরীকেই খবর দিও।
–ঠিক আছে।
আচ্ছা এবার আমি চললাম।
তারপর আনহা থেকে বিদায় নিয়ে দ্বীপে চলে আসলাম।দ্বীপে আসতেই আমার গায়ের রং পরিবর্তন হয়ে গেছে।যেটা হওয়ার এই কথা ছিলো।তারপর চোখ বুঝে নিজের ঘরের কথা কল্পনা করতেই নিজের রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে চোখ খুলতেই সর্বপ্রথম নজর গেলো দেওয়াল ঘড়ির দিকে।দেওয়াল ঘড়ির দিকে নজর যেতেই থেবড়া খেয়ে উঠলাম!কারন ঘড়ির কাটা এগারোটায় গিয়ে আঁটকে গেছে!তাড়াতাড়ি বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে ফোন দিয়েও ঘড়ির টাইম দেখলাম।কারন আমি অনেক লম্বা সফর করে এসেছি পরী-পালক থেকে।তাই কয়টা বাজছে সেটা দেখছি।কিন্তু ফোনের টাইম ও দেখি এগারোটায় লক হয়ে আছে!তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে আছি ফোনের দিকে!আরে ভাই ঘড়ি না হয় নষ্ট হয়ে ভুলভাল টাইম দেখাচ্ছে।কিন্তু মোবাইল তো উল্টো পাল্টা কিছু খায়নি,যে ঘড়ির মতন ভুলভাল টাইম দেখাবে!ঘড়ি এবং ফোনের কাহিনী মিলাইতেই আসল ঘটনা কি ঘটেছে সেটা আমার বুঝে গেছে।কিন্তু আমার মাথায় এটাই ধরছে না,যে আমি এতো লম্বা সফর করার পরেও যেই সময়ে পরী-পালকে গিয়েছি,আবার সফর শেষ করে ঠিক একই টাইমে ফিরে এসেছি কি করে!এক মিনিটের ও এদিক ওদিক দেখছি না।মাথা পুরো জ্যাম খেয়ে আছে সময়ের অবস্থা দেখে!এসব নিয়ে ভাবছিলাম,তখনি পাশের রুম থেকে কেউ একজনের গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম।যে কিনা আমার নাম ধরে ডকাছে।এবার থেবড়াটা আরো বড়সড় করে খেলাম!কারন আমার ঘরে আমি ছাড়া আর অন্য কেউ থাকে না।তার উপরে আনহা পরী-পালকে।তাহলে পাশের রুম থেকে আমার নাম ধরে কে ডাকছে আমায়…..
চলবে…..
গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।