আয়নায় বন্দী পরী পর্ব-১২

0
294

#আয়নায়_বন্দী_পরী
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১২

আমি এতো লম্বা সফর করার পরেও যেই সময়ে পরী-পালকে গিয়েছি,আবার সফর শেষ করে ঠিক একই টাইমে ফিরে এসেছি কি করে!এক মিনিটের ও এদিক ওদিক দেখছি না।মাথা পুরো জ্যাম খেয়ে আছে সময়ের অবস্থা দেখে!এসব নিয়ে ভাবছিলাম,তখনি পাশের রুম থেকে কেউ একজনের গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম।যে কিনা আমার নাম ধরে ডকাছে।এবার থেবড়াটা আরো বড়সড় করে খেলাম!কারন আমার ঘরে আমি ছাড়া আর অন্য কেউ থাকে না।তার উপরে আনহা পরী-পালকে।তাহলে পাশের রুম থেকে আমার নাম ধরে কে ডাকছে আমায়!তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসে গেলাম।তখনি দেখি পাশের রুম থেকে আনহা বেরিয়ে আমার রুমে এলো।আনহাকে দেখে বড়সড় একটা শকট খেলাম!কারন আনহা হুট করে জমিনে প্রকট হয়েছে কোনো এশারা ইঙ্গিত ছাড়া।তার মধ্যে সে আমার রুমে প্রকট না হয়ে অন্য রুমে প্রকট হয়েছে।আবার তার উপরে সে আরেকটা চরম বড় ভুল করেছে।সে বিপদ’কে তোয়াক্কা না করে জমিনে নেমে এসেছে।তাই অবাক হয়ে তাঁকে জিজ্ঞাস করলাম,আনহা হটাৎ তুমি এভাবে জমিনে প্রকট হলে কেন?তোমার পিছনে না কাকাতুয়ার লোকেরা লেগে আছে?
.
আনহা আকাশের কথার মুখে উত্তর না দিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে চুপ হতে বললো।তারপর কুটকুট করে হেঁটে আকাশের কাছে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।আকাশ আনহার এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে একের পর এক খালি শকট খেয়েই যাচ্ছে!কিন্তু সে এবার আর আনহাকে কিছু জিজ্ঞাস করে না।এভাবেই আধঘন্টা কাটে।আধঘন্টা পর আকাশ নিজের নিরবতাকে ভেঙ্গে আনহাকে আবারো জিজ্ঞাস করে…

–আনহা কি হয়েছে বলবে তো নাকি?
তুমি সেই কখন থেকে অদ্ভুত ধরনের আচরণ করছো।কি হয়েছে এখন তো অন্তত বলো।না হয়তো কি করে বুঝবো আমি তোমার সমস্যার কথা।
.
আনহা এবারো আকাশের কথার কোনো উত্তর দেয় না।
কিন্তু সে আকাশের কথার কোনো উত্তর না দিলেও সে আকাশকে ছেড়ে দিয়ে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ায়।আর আকাশের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তারপর আবার পাশের রুমে চলে যায়।আনহার আচরণে আকাশ বুঝে নেয়,যে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে।তাই সে আনহার পিছু নিয়ে পাশের রুমে যায়।কিন্তু আনহা এর মধ্যেই গায়েব হয়ে গেছে।আনহার অদ্ভুত আচরণে আকাশের মাথায় বিশাল রকমের জটলা পাকে!কিন্তু সে এতো কিছুর পরেও নিজের মনকে স্থির করে রাখে এটা বলে,যে আনহার এমন অদ্ভুত আচরণের কথা আজ জানতে না পারলেও আগামীকাল তো ঠিক জানবে।তাই সে বেশি একটা হাইপার না হয়ে চুপচাপ বিছানায় এসে ঘুমের প্রয়াস করে।যার কিছুক্ষণ পরেই সে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়।এক ঘুমে রাত প্রহর কেটে সকাল হয়।সকালে সূর্য আকাশে চাড়ি দিতেই আকাশ ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নেয়।পরে হালকা পাতলা নাস্তা খেয়ে সোফায় বসে আনহার কাছে যাওয়ার জন্য পরী-পালকের কল্পনা করতে থাকে।কারন আজকে অফ ডে থাকায় কলেজ এবং অফিস দুটোই বন্ধ।আকাশ সোফায় বসে পরী-পালকের কল্পনা করছে।কিন্তু কল্পনা এবার কাজে আসে না।সে যেভাবে বসে ছিলো,সেভাবেই বসে আছে সোফার মধ্যে।সে পরী-পালকে যেতে পারে না।পরী-পালকে যেতে না পেয়ে আকাশের ভিতরে তুফান শুরু হয় এক ধরনের!কারনটা হলো সে একটা অলৌকিক শক্তি রপ্ত করে এখন সেটাকে কাজে খাটাতে পারছে না।যার দরুন তার ভিতরে মোচড় দিতে আরম্ভ করে।সে কোনো কিছু না ভেবে বিচক্ষণতার সহিত খাটে গিয়ে শুয়ে তারপর আবার কল্পনা করতে শুরু করে।এবার সে কল্পনা করতেই পরী-পালকের দ্বীপের মধ্যে গিয়ে পৌঁছায়।যেই দ্বীপটা রাতের মতন অন্ধকার ছেয়ে আছে।যেটা দেখে তার মনে মনে একটা প্রশ্ন আসে,যে জমিনে তো এখন দিন,কিন্তু এখানে কেন রাত হয়ে আছে এখনো!এসব নিয়ে কিছুটা সময় কল্পনা করে কাটিয়ে দেয়।কিন্তু সে তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না।যার কারনে সামনে হাঁটা দিয়ে পরী-পালকে চলে যায়।পরী-পালকের দারোয়ান আতাউর আকাশকে দেখতে পেয়েই একজন প্রহরীকে তৎক্ষনাৎ আনহাকে ডাকতে পাঠিয়ে দেয়।এবং আকাশকে নিয়ে গিয়ে আগের ন্যায় একটা কক্ষে বসায়।আকাশ মিনিট তিনেক অপেক্ষা করতেই আনহা আকাশের কাছে চলে আসে।আনহা আকাশকে দেখতে পেয়ে চরম খুশি হয়ে যায়।যার কারনে সে আকাশকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করে।আনহা চরম পরিমাণে খুশি হলেও আকাশের মনের মধ্যে রাতেই বিষয়টা নিয়ে খোট মারছে।তাই সে আনহাকে জিজ্ঞাস করে…

–আচ্ছা আনহা তুমি রাতের বেলায় এমনটা করলে কেন?

–কেমনটা করেছি আমি?

–কেমনটা করেছো তুমি জানো না তাই না?

–আরেহ অদ্ভুত,তুমি আমায় না বললে কি করে জানবো?

–আমি রাতের বেলায় জমিনে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তুমি জমিনে গেলে,কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না কেন?আবার তার উপরে অন্য রুমে প্রকট হয়েছো।কাহিনীটা কি ছিলো একটু বলবে?

–মানে কি আকাশ!
রাতে আমি কখন আবার জমিনে গেলাম?

–মানে টা আমিও জিজ্ঞেস করছি।
যে রাতে জমিনে গিয়ে এমন অদ্ভুত আচরণ করলে কেন?

–আকাশ তোমার কোথাও হয়তো ভুল হচ্ছে।কারন আমি আর রাতে জমিনে নামিনি।

–তাহলে কি ভুত নেমেছিলো নাকি?

–হতে পারে।
তবে বিশ্বাস করো আমি জমিনে নামিনি রাতে।তুমি দারোয়ান থেকে জিজ্ঞাস করো,যে আমি রাতে জমিনে নেমেছিলাম কিনা।

–নাহ আমার জিজ্ঞাস করার প্রয়োজন নেই।

–তাহলে তোমার বিশ্বাস করতে হবে,যে আমি রাতে জমিনে নামিনি।কারন আমার যদি নামার এই হতো,তাহলে তোমার সাথেই জনিনে নামতাম আমি।আর তাছাড়া আমার বিপদ আছে জানা সত্বেও জমিনে নামবো কোন দুঃখে বলো তো আকাশ?

–আনহার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম!কারন সত্যিই তো সে যদি নামার হতো,তাহলে আমি রাতে জমিনে যাওয়ার সময়ই সে আমার সাথে যেতো।কারন তার পিছনে তো শত্রু লেগেছে।সে তো একা একা জমিনে নামার কথা না।তাহলে কে ছিলো সেটা!বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম!তখনি আনহা আবার ডাক দিয়ে জিজ্ঞাস করলো…

–আকাশ কি হয়েছে কথা বলছো না যে?

–আনহা তুমি নামোনি সেই কথা আমি বিশ্বাস করেছি।কিন্তু সত্যি বলছি,রাতের বেলায় তোমাকে আমি জমিনে দেখেছি।তুমি আমার সাথে অদ্ভুত রকমের আচরণ করছিলে।তার উপরে আবার অন্য রুমেও প্রকট হয়েছো।যেটা দেখে বেশ অদ্ভুত লেগেছে আমার!

–আকাশ তোমার কথাবার্তা শুনে আমার বুঝতে বাকি নাই যে কি হয়েছে।কিন্তু তার পরেও আমি পুরোপুরি শিউর হওয়ার জন্য একটা কাজ করতে হবে আমাকে।

–কি কাজ আনহা?

–কি কাজ বলছি,তবে তুমি তার আগে এটা বলো,যে আমি তোমার সাথে কেমন ধরনের অদ্ভুত আচরণ করেছি?

–তুমি অন্য রুমে প্রকট হয়ে আমার রুমে এসেছো।পরে আমি তোমায় একটা প্রশ্ন করায় তুমি আমাকে ইশারা করে না করেছো।পরে এসে অদ্ভুত ভাবে আমায় জড়িয়ে ধরে আধঘন্টা খানিক শুয়ে ছিলে।আধঘন্টা পাড় হতেই যখন আমি আবার প্রশ্ন করি,তখন তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমায় ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াও।এবং অদ্ভুত ভাবে এক নজর আমার দিকে তাকিয়ে পাশের রুমে গিয়ে গায়েব হয়ে যাও।

–ওয়েট ওয়েট….

–কেন?

–চুপচাপ থাকো প্রশ্ন করিও না তুমি।
আমি আমার কাজ করে পরে বলছি।

–আচ্ছা..
তারপর আর কোনো প্রশ্ন করলাম না।
কিন্তু আনহা অদ্ভুত ভাবে আমায় জড়িয়ে ধরে শরীরের ঘ্রাণ নিতে আরম্ভ করলো।এভাবে মিনিট কয়েক যেতেই সে চোখ বড় বড় করে আমায় বললো…

–আকাশ গতকাল আমি জমিনে নামিনি।গতকাল যে জমিনে নেমেছে,সে কাকাতুয়া গোত্রের একটা শয়তান নারী ছিলো।যে কিনা আমার রূপ ধরে তোমার কাছে গিয়েছে।তাই তো তোমাকে সে হাত দিয়ে এশারা করেছে চুপ থাকতে বলেছে।কারন সে তোমার সাথে কথা বললেই ধরা খেয়ে যাবে।তাই সে কথা না বলে চুপচাপ নিজের কাজ চালিয়ে গেছে।

–কিহহহহ.
কাকাতুয়ার লোকরা তোমার রূপ ধরে আমার কাছে এসেছে মানে কি?

–হুম সত্যি বলছি কাকাতুয়ার একটা শয়তান নারীই তোমার কাছে গিয়েছিলো।

–আনহার কথা শুনে কলিজাটা নাড়া দিয়ে উঠলো!
কিন্তু একটা জিনিস আমার বুজে আসছে না,যে সে কি করতে আনহার রূপ ধরে আমার কাছে গিয়েছিলো!তার কাজ কি আমাকে দিয়ে!আর কি করেই বা আমার খবর পেয়েছে তারা!আচ্ছা আনহা আমাকে দিয়ে তার কাজ কি?আর কি করে জানতে পেরেছে সে আমার কথা?

–কাজ কি সেটা সঠিক বলতে পাররো না।তবে শিওর করে এটা বলতে পারি যে,তুমি পরী-পালক থেকে বের হয়ে দ্বীপে যাওয়ার পর সে তোমার বিষয়ে জেনেছে এবং তোমার পিছু নিয়েছে।কারন দ্বীপ থেকেই তারা আমার উপরে আক্রমণ করেছিলো।সো আমি তোমার পিছু নেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত।

–ওহহ আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে।
কিন্তু ওর চিন্তাধারা সম্পর্কে যে আমি জানতে পারলাম না?এবং সেও তার কাজে কর্মে আমাকে তেমন কিছু জানান দিলো না।খালি আমায় জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলো।পরে সে চলে গেছে।

–দেখো তার মোটিভ খারাপ সেটা আমি নিশ্চিত করেই তো বললাম।কারন ভালো হলে তো তারা আমাদের পিছনে লাগতো না,এবং পরী-পালক’কে নিজের দখলে করে নিতে চাইতো না।তাঁদের পুরো গোত্র টাই খারাপ।তাহলে তাঁদের মোটিভ কি করে ভালো থাকবে?আর সে খারাপ মোটিভ নিয়ে গেলেও তোমার কিছু করতে পারেনি,কারন তারা জমিনে গিয়ে কোনো মানুষকে ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না।এবং কোনো মানুষকে ক্ষতি করতে পারবেও না।আর তোমার তো ভুলেও না।কারন তমার শরীরে আমার অলৌকিক শক্তির অনেকখানি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।তাই তারা কখনোই তোমার ক্ষতি করতে পারবে না।

–বাহ তোমার সোল আমার শরীরে প্রবেশ করানোর ফলে দেখি অনেক পাওয়ায়ফুল হয়ে গেছি আমি..

–হুম অনেক পাওয়ারফুল হয়ে গেছো তুমি।

–আচ্ছা শোনো তুমি কোনো চিন্তা করিও না।কারন তোমার বিপদে আপদে ঢাল স্বরূপ আমি তোমার সাথে আছি সর্বক্ষন।সো এবার চলো জমিনে নিয়ে যাবো তোমাকে।

–হুম চলো…

–তারপর আনহাকে সাথে নিয়ে পরী-পালক থেকে বের হয়ে দ্বীপে চলে আসলাম।দ্বীপে আসতেই আমাদের সামনে ভয়ংকর রমকের এক সুন্দরী নারী প্রকট হলো।
যাকে দেখে আমার খেয়াল কয়েক সেকেন্ডের জন্য হারিয়ে গেছে।কিন্তু আমি কিছুক্ষণ যেতেই নিজেকে সামলে নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাস করলাম,কে আপনি?
কিন্তু সে আমার কথার কোনো উত্তর না দিকে কিছু একটা আমাদের দিকে সজোড়ে ফিক্কা মেরেছে।আমার পাশেই আনহা ছিলো।সে সাথে সাথে আমার পিছনে গিয়ে নিজেকে আত্নগোপন করে।আর সামনের সুন্দরী মেয়েটার ফিক্কা দেওয়া জিনিসটা আমার শরীরে এসে লেগেছে।কিন্তু তাতে আমার কিছুই হয়নি।বরং ফিক্কা দেওয়া জিনিসটা আমার শরীরে লেগে সেটা ধোঁয়ায় পরিণত হয়ে নিমিষেই হাওয়ার সাথে মিশে গেছে।তখনি আনহা পিছন থেকে আমাকে বলে…

–আকাশ এই মেয়েটা কাকাতুয়ার লোক।সে সুন্দরী নারীর ভেস ধরে তোমায় গোমড়া করে আমার ক্ষতি করতে চেয়েছে।

–আনহার মুখে এমনধারা কথা শুনতেই মাথার রক্ত টগবগ করে ফুটতে আরম্ভ করলো!কিহহ তুই আমার প্রেয়সীর ক্ষতি করবি!ওয়েট তোর ষোলকলা পূর্ণ করছি।এটা বলেই দ্বীপের মধ্যে থেকে মাঝারি সাইজের একটা পাথর কুড়িয়ে নিয়ে সজোড়ে সেই মেয়েটার শরীরে ফিক্কা মারলাম।যার ফলে পাথরটা গিয়ে সোজা তার শরীরে লাগলো।এবং পরক্ষণেই তার রূপটা পরিবর্তন হয়ে কুৎসিত একটা শয়তানের আকৃতি ধারণ করলো!যেটা দেখে আমি যেনো আর নিজের মধ্যে নেই!শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভয়ে কাঁপতে আরম্ভ করেছে!অনদিকে আনহা পিছন থেকে আমার শার্ট সজোড়ে খামচে ধরে আছে…

চলবে….

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।