আয়নায় বন্দী পরী পর্ব-১৩

0
276

#আয়নায়_বন্দী_পরী
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১৩

–দ্বীপের মধ্যে থেকে মাঝারি সাইজের একটা পাথর কুড়িয়ে নিয়ে সজোড়ে সেই মেয়েটার শরীরে ফিক্কা মারলাম।যার ফলে পাথরটা গিয়ে সোজা তার শরীরে লাগলো।এবং পরক্ষণেই তার রূপটা পরিবর্তন হয়ে কুৎসিত একটা শয়তানের আকৃতি ধারণ করলো!যেটা দেখে আমি যেনো আর নিজের মধ্যে নেই!শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভয়ে কাঁপতে আরম্ভ করেছে!অনদিকে আনহা পিছন থেকে আমার শার্ট সজোড়ে খামচে ধরে আছে!আনহার এমন আচরণে ভয়ের মাত্রাটা আরো তীব্র হয়ে গেলো।তাই রোবটের মতন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।তখনি দেখি কুৎসিত শয়তানের আকৃতি ধারণ করা মেয়েটা চেঁচাচ্ছে।এই দৃশ্য পিছন থেকে আনহাও দেখছিলো।আনহা তার
চেঁচানো দেখে আমাকে বলে…

–আকাশ এই মেয়ে তোমার কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না।দেখো সে তোমার নিক্ষেপ করা পাথরে আঘাত পেয়ে ব্যথায় চেঁচাচ্ছে।তোমার জায়গায় যদি আমরা বা আমি তার শরীরে পাথর নিক্ষেপ করতাম,তাহলে কিন্তু হান্ড্রেড পারসেন্ট নিশ্চিত যে সে কোনো মায়া করে পাথরের আঘাত থেকে বেঁচে যেতো।কিন্তু সে তোমার নিক্ষেপ করা পাথরকে কোনো ধরনের মায়া করে আটকাতে পারেনি।তার উপরে তার অশুভ মায়াও তোমার উপরে কাজ করেনি।সো প্লিজ তুমি নিজের মনোবল হারিও না।আর ভয় পেয়ো না।কারন সে তোমায় উল্টো ভয় পাবে।তুমি তাঁকে নয়..

–আনহা কি বলো এসব সত্যিই নাকি।

–হুম সত্যি।তুমি বিশ্বাস না হলে তার শরীরে আরেকটা পাথর নিক্ষেপ করো।

–ওকেহ দাঁড়াও।
আনহার কথা শুনে মনোবল বেড়ে গেছে।
কিন্তু এখন মনোবল টা কতোটুকু বেড়েছে,সেটাই মাপবো।তাই আনহার কথা মতন আরেকটা পাথর কুড়িয়ে নিয়ে শয়তান আকৃতি ধারণ করা সুন্দরী মেয়েটার দিকে ছুঁড়ে মারলাম।যার ফলে সেই পাথরটা’ও গিয়ে তার শরীর লাগলো।পাথরটা তার শরীরে লাগার পর সে আরো জোরে চেঁচাতে শুরু করলো,এবং আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে সেখান থেকে উড়ে চলে গেলো।আমি”থ”হয়ে তার উড়ে চলে যাওয়া দেখছি!কিন্তু আবার মনের ভিতরে কেমন যেনো এক ধরনের কৌতূহল ও কাজ করছে সেই মেয়েটাকে নিয়ে,যে মেয়েটা কি জন্য আমাদের সামনে সুন্দরী নারীর রূপ ধরে এসেছিলো!
সে তো ভালো মতলব নিয়ে আসেনি,সেটা তো আনহা ক্লিয়ার করে দিয়েছি।কিন্তু তার তো কোনো খারাপ মতলব ও দেখতে পেলাম না!সে তো চাইলে আমাদের কিছু একটা করতে পারতো।অন্তত ক্ষতি করতে না পারলেও ভয় তো দেখাতে পারতো।কিন্তু সে তো এমন কিছুই করলো না!মনের কৌতূহলের মাত্রাটা আরো বেড়ে গেছে এসব বিষয় নিয়ে ভাবতেই।তখনি আনহা পিছন থেকে নাড়া দিয়ে বলে উঠলো…

–এই আকাশ তুমি এতোসব কি ভাবছো হ্যাঁ?
তুমি কি আমায় জমিনে নিয়ে যাবে না?

–কেন কি ভাবছি তুমি কি জানো না?
তুমি না সব সময় অলৌকিক শক্তির দ্বারা আমার মনের কথা জেনে যাও?আর তোমায় কি একবারো বলেছি,যে আমি তোমায় জমিনে নিয়ে যাবো না?
.
আনহা তার প্রশ্নের উত্তরে আকাশের মুখ থেকে এমনধারা কথা শুনে ভাবুক হয়ে যায়!কারন সত্যি বলতে এখন সে আর আকাশের মন সেভাবে পড়তে পারে না।আর পারবেই বা কি করে,কেউ তো কারোর মন এমনি এমনি পড়তে পারে না।মনের কথা কথা তো শুধু উপর ওয়ালাই গায়েবী ভাবে জানে।কিন্তু আনহা তো আকাশের উপরে এক ধরনের মায়া করেছিলো।যার দরুন আকাশ কোনো কথা মনে মনে চিন্তা করার বদলে বিড়বিড় করে বলতো।কিন্তু আকাশ ভাবতো আকাশ সমস্ত কিছুই মনে মনে ভাবছে বা চিন্তা করছে।কিন্তু সত্যিকাত্বে আনহার মায়ার কারনে আকাশ মনে মনে যাই কল্পনা করতো না কেন,সব কিছুই কিন্তু সে বিড়বিড় মুখে বলতো।কিন্তু ভাবতো যে সে মনে মনে কল্পনা করছে।আর তাছাড়া আকাশের আচার-আচরণের বিষয়ে আনহা অদ্ভুত ভাবে জেনে যাওয়ার কারন ছিলো আনহা মায়ার মাধ্যমে সব সময় আকাশের উপরে নজরদারি করতো।আর কখনো যদি আনহার অনুপস্থিতিতে আকাশ কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করতো বা ভাবতো,আনহা সেসব জমিনে আসার সাথে সাথেই মায়ার মাধ্যমে আকাশকে দিয়ে দ্বিতীয় বার ভাবাতো।তাই সে আকাশের আগে পরের সমস্ত বিষয়ে জেনে যেতো।কিন্তু যেদিন আনহা তার সোল আকাশের শরীরে প্রবেশ করিয়েছে,সেদিন থেকে আকাশের উপর থেকে তার মায়া ধীরে ধীরে কেটে যায়।আর বর্তমানে আনহা তার সাথে রিলেটেড কোনো বিষয় ছাড়া আকাশের মনের অন্য কোনো কথোপকথন সম্পর্কে কিছুই জানতে পারে না।তাই সে মনে মনে ভাবতে থাকে আকাশের কথার কি উত্তর দিবে…

–আকাশের কথার কি উত্তর দিব আমি এখন।
তার উপরে তো আমার কোনো মায়াই এখন সেই রকম ভাবে কাজ করে না..
.
আনহা আরো ভাবুক হয়ে যায়।তখনি আকাশ তাঁকে আবারো জিজ্ঞাস করে….

–কি হলো আনহা আমার কথার জওয়াব দিচ্ছো না যে?

–আসলে আকাশ আমার সাথে রিলেটেড কোনো বিষয় ছাড়া আমি এখন আর তোমার মনের খবর পড়তে বা জানতে পারি না।কারন আমার সোল তোমার শরীরে যাওয়ার পর অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে।আগের মতন অলৌকিক ক্ষমতা তোমার উপরে কাজ করে না আমার।

–বাহ সব কিছুই পরিশেষে গিয়ে দেখছি আমি মোটামুটি পাওয়ারফুল হয়ে গেছি।

–হুম তুমি পাওয়ারফুল হয়ে গেছো।এবার তুমি আমাকে জমিনে নিয়ে চলো।

–আচ্ছা ঠিক আছে চলো নিয়ে যাচ্ছি।
.
তারপর আকাশ আনহাকে জমিনে নিয়ে আসে।কিন্তু কিছুক্ষণ আগে আননা আকাশের প্রশ্নের উত্তর দিলেও আসল কাহিনী লুকিয়ে রাখে।যার কারনে আকাশের এখনো কোনো ধরনের আইডিয়া নেই যে আনহার মনের ভিতরে কি চলছে।সে তো আনহাকে খুশি মনে জমিনে প্রটেক্ট করে নামিয়ে নিয়ে এসে বিন্দাস ঘোরাঘুরি করছি।আনহাও আকাশের সমস্ত আচরণে সারা দিয়ে আগের ন্যায় চলাফেরা করছে।আকাশ আনহাকে জমিনে নামিয়ে নিয়ে এসে দুজন মিলে অনেক ঘুরাঘুরি করে।কিন্তু দুপুর হতেই আনহা আকাশকে বলে..

–আকাশ আমি পরী-পালকে যাবো,তুমি আমায় কষ্ট করে একটু সেখানে দিয়ে আসো।

–আনহা কি হয়েছে তোমার?হুট করেই চলে যেতে চাইছো যে?

–আসলে আকাশ পরী-পালকে এখন যাওয়া প্রয়োজন আমার।কারন দুপুর ঘনিয়ে এসেছে।আর সেখানকার লোকেরা হয়তো আমার তালাশ করছে।

–আচ্ছা ঠিক আছে দিয়ে আসবো।কিন্তু তার আগে আরো কিছুটা সময় আমার সাথে কাটিয়ে তারপর যাও।আমার একা একা ভালো লাগে না।আর তাছাড়া তুমি আমার সাথে সারাদিন কাটালেও তো তোমার সময়ে এর ফের হবে না।কারন পরী-পালকে অনেক লম্বা সময় কাটানোর পর জমিনে এসে দেখি আগের টাইমেই আঁটকে আছি আমি।সো তুমি জমিনে যতো সময় এই কাটাও না কেন,জমিনের সময়ের সাথে তো পরী-পালকের সময় কখনো মিশবে না।

–না আকাশ এমনটা নয়।তবে তুমি যেটা বলেছো সেটা ঠিক আছে।তুমি অনেক লম্বা সময় পরী-পালকে কাটিয়ে আসার পরেও জমিনে এসে দেখো যেই সময়ে তুমি জমিন থেকে পরী-পালকে গিয়েছো,আবার সেই সময়েই তুমি জমিনে ফিরে এসেছো।আসলে এটার কারন হচ্ছে মায়া।তুমি পরী-পালকে যতোই সময় কাটাও না কেন,তুমি জমিনে এসে দেখবে একই টাইমে রয়ে গেছো,বা কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের এর ফের হয়েছে।কারন তুমি পরী-পালকে গেলে তোমার উপরে মায়া ধরবে।আমি জমিনে আসলে আমার উপরে মায়া ধরবে না।কারন আমারটা মায়াবী দুনিয়া।আমার দুনিয়ায় অন্য কেউ গেলে হাজারো মায়ার সম্মুখীন হতে হবে তার।কিন্তু তোমারটা মায়াবী দুনিয়া না।তাই আমাদের কোনো মায়ার সম্মুখীন এই হতে হবে না।সেটা হোক জমিনে বা পরী-পালকে।পরী-পালকে তো হবেই না,কারন আমি সেখানের বাসিন্দা।আর জমিন তো মায়াবী না,তা তো জানোই।তাই আমার সময় ঠিকই কেটে যাবে।সো আমাকে তুমি দিয়ে এসো।না হয়তো বাবা খাওয়ার সময় ও আমার তালাশ করবে।আর সেখানে এখন খাওয়ার সময়…

–ওহ আচ্ছা বুঝেছি।
আচ্ছা চলো আমি তোমায় দিয়ে আসছি।

–হুম..
তারপর আনহাকে পরী-পালকে পৌঁছে দিয়ে জমিনে ফিরে এসেছি।মনটা কেমন যেনো আনছান করছে!
ইচ্ছে ছিলো আনহার সাথে আজ সারাটাদিন কাটাবো।কিন্তু সে সমস্যার কারনে চলে গেছে।ধুর ভালো লাগে না কিছু!কবে যে মেয়েটাকে বউ হিসেবে সব সময় নিজের কাছে পাবো তা আল্লাহ ভালো জানে!আনহার বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে সারাটা দুপুর কেটে গেছে।রাত হতেই আবার চলে গেলাম আনহাকে নিয়ে আসার জন্য।কিন্তু পরী-পালকের দারোয়ান আতাউর খবর দিলো রাজ দরবারে নাকি কিসের যেনো আলোচনা বৈঠক বসেছে।তাই আনহা এখন বের হতে পারবে না।
দারোয়ানের কথা শুনে বিষন্নতায় ভুগতে আরম্ভ করলাম।মন খারাপ করে পরী-পালক থেকে বেরিয়ে দ্বীপের মধ্যে চলে এসেছি।দ্বীপে এসে ভাবছি,নাহ এখন জমিনে নামবো না।কিছুটা সময় এই দ্বীপে কাটাবো।চিন্তা-ভাবনা মতন দ্বীপে বসে বসে বাতাস খাচ্ছি আর আনহার বিষয় নিয়ে মনের মধ্যে কল্পনা জল্পনা করছি।তখনি দেখি সকালের সেই শয়তান আকৃতি ধারণ করা সন্দরী মেয়েটা রূপ ধারণ করে আমার সামনে প্রকট হলো।যেই রূপটা নিয়ে সকাল বেলায় সে আমাদের সামনে এসেছিলো।মেয়েটাকে দেখে বিষন্নতাটা রাগে পরিণত হয়ে গেলো!কারন একে তো আনহা আজকে জমিনে নামবে না।তার উপরে এই শয়তান মেয়েটা আবারো সুন্দরী রমণীর রূপ ধরে আমার সামনে এসেছে।তাই পাশ থেকে একটা পাথর হাতে উঠিয়ে নিলাম তাঁকে ছুঁড়ে মারার জন্য।তখনি সেই মেয়েটা আমাকে বলে উঠলো…

–এই আকাশ প্লিজ আমায় মেরো না।আমি তোমার কোনো ক্ষতি করতে আসিনি।

–মেয়টার কথায় বেশ অবাক হলাম!
কারন সে আমার নাম ধরে ডেকেছে।তার উপরে আমার উত্তেজিত ভাবটাও চলে গিয়েছে।শুরুতে তাঁকে মারার জন্য পাথর নিয়েছিলাম।কিন্তু তার কথা শুনে পাথর টাকে ফেলে দিয়ে তাঁকে শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলাম,
তাহলে কি জন্য এসেছো?

–যাস্ট তোমার সাথে কথা বলতে।

–এই শয়তান মেয়ে কিসের কথা তোমার সাথে আমার হ্যাঁ?

–আকাশ আমাকে বিশ্বাস করো।আমি শয়তান হতে পারি।কিন্তু মনের ভিতরে কোনো ধরনের শয়তানি আমি পুষে রাখি না।সো তুমি আমার থেকে কখনোই প্রতারিত হবে না।

–তাহলে তোমার মোটিভ টা কি একটু বলো তো?
আমি তো মানুষ।ঘুরে ফিরে তুমি বারবার আমার সামনে কেন আসছো?

–আচ্ছা বলছি।কিন্তু তার আগে কি তুমি আমাকে তোমার পাশে বসার অনুমতি দিবে প্লিজ..

–আচ্ছা বসো।কিন্তু কোনো খারাপ মতলব যেনো না থাকে তোমার।

–নাহ এমন কোনো মতলব নেই।

–হুম ঠিক আছে…
.
আকাশের কাছে সম্মতি নিয়ে মেয়েটা তার পাশে বসে।
মেয়েটা আকাশের পাশে বসতেই আকাশ মাতাল হয়ে যায় মেয়েটার শরীর থেকে ছড়ানো স্মেলের কারনে।
যার কারনে সে ড্যাবড্যাব করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে!আকাশের এমন আচরণ দেখে মেয়েটা তাঁকে বলে…

–আকাশ এভাবে তাকিয়ে থেকো না।আমার মায়ায় আঁটকে গেলে সমস্যা হবে তোমার।
.
আকাশ থেবড়া খেয়ে যায় মেয়েটার কথা শুনে।আকাশের হুঁশ ফিরে এসেছে।তাই সে মেয়েটার কাছে লজ্জিত হয়।

–আসলে সরি।আমি নিজের হুঁশ হারিয়ে ফেলেছিলাম।

–আরেহ সমস্যা নেই।আচ্ছা আকাশ তোমার মন খারাপ কেন?আমি অনেকটা সময় ধরে লক্ষ্য করেছি,যে তুমি মন খারাপ করে দ্বীপে একা একা বসে আছো।কারনটা কি আমাকে বলা যাবে?

–আসলে তেমন কিছু না থাক বাদ দাও।

–আচ্ছা যাও বাদ করে দিলাম।

–ধন্যবাদ।

–ওয়েলকাম।

–আচ্ছা তুমি তো আমার নাম জানো।কিন্তু তোমার নামটা তো এখনো জানা হলো না আমার।তোমার নামটা কি একটু বলবে?

–আমার নাম রূপন্তী।

–বাহ বেশ সুন্দর নাম তো তোমার।কিন্তু তোমরা এমন খারাপ কেন বলো তো?তোমরা বেহুদা পরী-পালক টাকে কেন নিজের দখলে করতে চাইছো?

–আকাশ সবাই কিন্তু খারাপ হয়না এটা মাথা রেখো।হ্যাঁ আমার বংশ বা গোত্রের লোকের খারাপ।কিন্তু তার জন্য যে আমারো খারাপ হতে হবে,সেটার কিন্তু কোনো মানে নেই।

–মানে বুঝলাম না!তুমি না আজকে সকালে আনহার ক্ষতি করতে এসেছিলে?এবং তার শরীরে কিছু একটা ছুঁড়ে মেরেছিলে তাঁকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে?
তাহলে কি ভাবে বলছো যে তুমি খারাপ নও?

–আকাশ সেটা আমাকে করতে বলা হয়েছিলো।আমি যাস্ট আমার বাবার হুকুম পালন করেছি।আর আমি ইচ্ছা করেই সেটা তোমার দিকে ছুঁড়ে মেরেছি।আমি চাইলে সেটা আনহার শরীরে মেরে তাঁকে আঘাত করতে পারতাম।কিন্তু আমি সেটা না করে তোমার শরীরে ছুঁড়ে মেরেছি।যাতে করে ওর কিছু না হয়।এবং আমায় করা আদেশ ও যেনো পালন হয়।কারন আমি জানি যে তোমার শরীরে আমার বাবার পাঠানো কষ্ট দায়ক মায়াবী অস্ত্রটা লাগলে তোমার কিছুই হবে না।তাই এমনটা করেছি।এতে করে এক কাজে দুই কাজ হয়ে গেছে।দেখো আমার কাউকে কোনো ধরনের ক্ষতি করার ইচ্ছে নেই।তাই তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছি।এবং আমার উপরে করা বাবার আদেশ যেটা কিনা আমি পালন করেছি।তিনি আমায় বলেছি এটা পরী-পালকের ভবিষ্যৎ রানী মাসুদার উপরে মারতে।সো আমি মেরেছি।কিন্তু এতে করে তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা সেটা আমার বাবা জানতে পারবে না।মারার আদেশ ছিলো মেরেছি।কিন্তু আমার ভিতরে তাঁকে মারার আক্ষেপ ছিলো না দেখে সে বেঁচে গেছে।

–বাহ তোমার কথা শুনে তো ভালোই মনে হচ্ছে তোমাকে।আচ্ছা তোমার বাবা কি কোনো ভাবেই জানতে পারবে না,যে তুমি পরী-পালকের ভবিষ্যৎ রানীকে না মেরে বাচিয়ে দিয়েছো?

–জানতে পারবে,তবে তিনি ভুল জানবে।কারন তিনার পাঠানো অস্ত্র মাসুদার শরীর স্পর্শ করেছে ঠিক,কিন্তু তার কোনো ক্ষতি হয়নি।

–কই আনহা বা মাসুদার শরীরে তো তোমার বাবার অস্ত্র লাগেনি।সেটা লেগেছে তো আমার শরীরে।

–নাহ লেগেছে তবে সেটা অন্যভাবে।দেখো সে তোমায় স্পর্শ করে ছিলো।আর সেটা তোমার গায়ে গিয়ে লেগেছে।যার কারনে সেটা তোমার শরীর থেকে তার শরীর ট্রান্সপোর্ট হয়েছে।তবে তার কোনো ক্ষতিই হয়নি।সো আমার বাবা যখন অস্ত্রটা নিয়ে মন্ত্র পড়বে,তখন দেখতে পাবে মাসুদা সেই অস্ত্রে আঘাত পেয়েছে।কিন্তু বাস্তবে তো সে তোমার শরীরের সাথে লেগে থাকায় তার অস্তি সেটাতে মিশেছে।

–ওহ এবার বুঝেছি তোমার আসল কাহিনী।
মানে হলো একজন অন্যজনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট যেভাবে এটা সেটা দিয়ে কপি করে ব্যবহার করে,তুমিও তেমনটাই করেছো।তুমি আমার শরীরে সেটা নিক্ষেপ করে তার অস্তি টাকে যাস্ট অস্ত্রের মধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতন করে নিয়েছো।

–হুম…

–খুশি হলাম তোমার কথা শুনে।
তবে একটা কথা বলি,দেখো কখনো কারোর ক্ষতি করে সুখ মিলে না।সো প্লিজ এসব কখনো করিও না।

–আমার কারোর ক্ষতি করার মতন ইচ্ছেও নেই।
কারন পুরো গোত্র খারাপ দেখে কি নিজেরো খারাপ হতে হবে নাকি।নিজের সমাধি হওয়ার পর সৃষ্টিকর্তার আদেশে যখন প্রশ্ন করবে,যে কি করেছি বেঁচে থেকে,তখন উত্তর দেওয়ার মতন কিছুই বাকি থাকবে না আমার কাছে।

–রূপন্তী তুমি সত্যিই ভালো একটা মনের অধিকারী।

–ধন্যবাদ এভাবে ট্রিট করার জন্য।
আমার মনটাও তোমার খারাপ ছিলো।কিন্তু তুমি সেটাকে ভালো করে দিয়েছো।সো আমিও তোমার মন ভালো করতে চাই।

–কি ভাবে ভালো করবে?

–দেখো আমি উপলব্ধি করতে পারছি,যে তোমার মন হয়তো মাসুদার জন্য খারাপ হয়ে আছে।কারন সে এখন তোমার সাথে থাকার কথা ছিলো এখানে।কিন্তু তুমি পরী-পালকে একা গিয়ে একাই ফিরে এসেছো।যেটা কিনা আমি দেখেছি।সো আমার বুঝতে বাকি নেই যে কি হয়েছে।তাই আমি তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি।আর তুমি চাইলে তোমার মন ভালো করার জন্য একটা কাজ করতে পারো।

–কি কাজ?

–আমার রূপ পরিবর্তন করার ক্ষমতা আছে।আমি মাসুদার রূপ ধারণ করছি।তুমি কিছুটা সময় আমার কাঁধে নিজের মাথা রেখে মাসুদা ভেবে আমার সাথে বকবক করো।দেখবে মন ভালো হয়ে যাবে।

–রূপন্তীর কথা শুনে বিশাল বড় একটা শকট খেলাম!কারন এই মেয়ে শয়তান পূজারির গোত্রের সন্তান হওয়ার পরেও তার মনমানসিকতা এতোটা উদার কি করে!রূপন্তী তুমি কি সত্যিই সেই শয়তান পূজারি বংশের লোক?তোমার আচরণে তো মনে হচ্ছে আসমান জমিনের সমস্ত ভালোমানুষি তোমার মাঝে লুকিয়ে আছে।

–আরেহ এতোটা মহৎ করিও না আমায়।কারোর ভালো করলে এতে দোয়া মিলে।আর আমি শয়তান পূজারির বংশের হলেও আমি শয়তানের পূজা করি না।কারন আমি অন্য কাউকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করি।

–রূপন্তীর কথাবার্তার ধরন দেখে মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।তাই আর সময় নষ্ট না করে নিজের বিষন্নতা দূর করতে চাই।এই রূপন্তী তুমি আনহার রূপ ধারণ করো।আমি তোমার কাঁধে আনহা ভেবে মাথা রেখে নিজের বিষন্নতাকে দূর করবো।

–ঠিক আছে…
.
তারপর রূপন্তী আনহার রূপ ধরে।আর আকাশ রূপন্তীর কাঁধে মাথা রেখে আনহা ভেবে তার সাথে বকবক করছে।আকাশের এমন আচরণে রূপন্তীর অনেক ভালো লাগছে।কিন্তু সেটা সে আকাশের সামনে প্রকাশ করে না।সে শান্ত ভাবেই আকাশের সাথে কথা বলে।অন্যদিকে আনহা রাজ দরবারের আলোচনায় বসে দুইবার দুইটা জিনিস উপলব্ধি করে আকাশের বিষয়ে।কারন হলো সেই দুই বারেই আকাশ আনহার কথা চিন্তা করেছে।আর যেহেতু আনহার বিষয় নিয়ে কিছু ভাবলে বা আনহার সাথে জড়িত কিছু হলেই আনহা আকাশের মনের কথা জেনে যায়।তাই সে এই দুইবারেই আকাশের কথা জেনে ফেলে।যার মধ্যে
প্রথমটা হলো আকাশ পরী-পালকে এসে তাঁকে না পেয়ে মন খারাপ করে পরী-পালক থেকে বের হয়ে যায়।কিন্তু আনহা আকাশের মন খারাপ হয়েছে জেনেও রাজ দরবারে আলোচনা বৈঠক চলার কারনে বের হতে পারে না।আর দ্বিতীয় টা হলো আকাশ দ্বীপের মধ্যে বসে তাঁকে কল্পনা করে অন্য কারোর কাঁধে মাথা রেখেছে।প্রতম বার শান্ত থাকলেও দ্বিতীয় বারের বেলায় আনহা আর আ নিজেকেস্থির করে রাখতে পারে না।সে তেড়েফুঁড়ে রাজ দরবার থেকে কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে পরী-পালকের গেইটে চলে আসে।তারপর পরী-পালকের মেইন গেইট দিয়েও রাজ দরবারের মতন ক্রোধিত হয়ে বের হয়ে দ্বীপে চলে যায়।যেখানে গিয়ে দেখে আকাশ অন্য কারোর কাঁধে মাথা রেখে তার সাথে বকবক করছে।যেটা দেখে আনহার রাগ আরো কয়েকশত গুন বেড়ে যায়।যার ফলে সব সময় তার হাতে থাকা জাদুই লাঠিটা রূপন্তীর দিকে জাদু করে ছুঁড়ে মারে।যেটা কিনা ছুরির আকৃতি ধারণ করে তুফানের গতিতে গিয়ে রূপন্তীর হাতের এক প্রান্ত দিয়ে ঢুকে অন্যপ্রান্ত দিয়ে বের হয়ে আবার আনহার হাতে গিয়ে পৌঁছে।আনহার জাদুই লাঠির আঘাতে রূপন্তী ব্যথা পেয়ে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে আরম্ভ করে।রূপন্তীর কান্নার আওয়াজ শুনে আকাশ থতমত খেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়!তখনি সে দেখতে পায় আনহা হিংস্র পশুর মতন তাঁদের দুজনের দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে….

চলবে…..

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।