আয়নায় বন্দী পরী পর্ব-১৫

0
238

#আয়নায়_বন্দী_পরী
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১৫

–ক্লাস শেষ করে কলেজ থেকে বের হবো,তখনি দেখি কলেজের গেইটের সামনে কেউ একজন মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে!যাকে দেখে কিনা কলিজাটা ভয়ংকর ভাবে মোচড় দিয়ে উঠলো!অবাক চোখে তাকিয়ে আছি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে!কারন সেই মানুষটা যে আমার প্রাণ প্রিয় ছোট বোন সাবিহা।কিন্তু তার কাছে আমার গুরুত্ব বিন্দু পরিমাণ ও নেই।বাবা যেই রেষ নিয়ে আমার সাথে কথা বলে,সাবিহা তিনার চাইতেও আরো দ্বিগুন রেষ নিয়ে আমায় সম্মোধন করে।সে আমায় মোটেও দেখতে পারে না।মনে হয় যেনো আমি তারা বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি।তাই সে আমার উপরে প্রচন্ড ক্রোধিত হয়ে আছে।সর্বক্ষণ সে ক্রোধ নিয়েই আমার সাথে কথাবার্তা বলে।কিন্তু আজ সেই মেয়ে কিনা আমার কলেজের সামনে এসে মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে!ব্যাপার’টা বেশ অদ্ভুত লাগছে নিজের কাছে!তাই অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে সাবিহাকে জিজ্ঞেস করলাম,সাবিহা হটাৎ তুই এখানে?

–ভাইয়া তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

–হুম বল কিন্তু মাথা নুইয়ে রেখেছিস কেন?

–কারন তোর সামনে মাথা তোলার মতন যোগ্যতা আমার নেই।তাই মাথা নুইয়ে রেখেছি।

–কেন নাই যোগ্যতা?কি করেছিস তুই আমার সাথে,যে কথা বলার মতন যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছিস?

–ভাইয়া সেই ছোট থেকে তোকে এটা সেটা বলে ছোট করেছি।এবং সব সময় তোকে ছোট করার চিন্তাই মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করতো।কারন আমার বুঝ হওয়ার পরেই বাবা আমায় বলে দিয়েছে যে তুই আমার আপন ভাই না।কারন মা আমায় তোর মতন ভালোবাসে না দেখে আমার অনেক হিংসা লাগতো।তাই আমি বাবার কাছে এটা নিয়ে নালিশ করি।তখন বাবা আমায় তোর বিষয়ে বলে।তাই তোকে সব সময় ছোট করে কথা বলতাম।কিন্তু আজ এই করুন পরিস্থিতিতে তোর কাছেই আসতে হলো সাহায্যের জন্য।তাই ভিশন লজ্জা লাগছে ভাইয়া।

–সাবিহা দেখ তোকে আমি একটা কথা বলি।
হ্যাঁ আমি তোর আপন ভাই নই।কিন্তু তাই বলে অসময়ে তোর সঙ্গ দিব না এমন খারাপ মানুষ নই আমি।হ্যাঁ তুই হয়তো ভুল করেছিস।তবে সেসব আমার মাথায় নেই।কারন ছোট মানুষ এই ভুল করে।সো এবার লজ্জার বাঁধ ভেঙ্গে বল কি হয়েছে…

–ভাইয়া বাবার হার্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
যার কারনে বাবাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু হসপিটালের ডক্টর বাবার অনেক কয়টা টেস্ট করাতে বলে।যেসব করাতে প্রায় হাজার পঁচিশেক টাকা লাগবে।কিন্তু সেই টাকা আমাদের কাছে নেই।তুই কি একটু দিতে পারবি সেই টাকা?দিলে খুব ভালো হতো।
ভাইয়া আমি জানি তুই বাবার আচরণে অনেক কষ্ট পেয়েছিস।কিন্তু প্লিজ মুখ ফিরিয়ে নিস না।কারন তুই ছেলে।তুই যে কোনো ভাবে দুনিয়ায় টিকে থাকতে পারবি,কিন্তু আমি কি ভাবে টিকে থাকবো বাবা ছাড়া বলতো ভাইয়া?

–সাবিহা রাগ অভিমান যাই থাকুক,আমি কখনো আমার পরিবারকে পিছু দিব না।সো তুই বাবাকে টেস্ট করা।আমি টেস্টের টাকা দিব।

–ধন্যবাদ ভাইয়া…

–ধন্যবাদ দিয়ে আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছিস যে আমি পরের ঘরের সন্তান?এবং বাবা আমায় পথের ধারে কুড়িয়ে পেয়েছে?

–না ভাইয়া আসলে এমনটা না..

–থাক বাদ দে।
আচ্ছা তুই একা এতো দূর আসলি কি করে?
তোর স্কুল আর বাসা তো অনেক দূরে।তুই সেখান থেকে একা একা কি করে আমার কলেজে এসেছিস?

–ভাইয়া আমি একা আসিনি।সাথে মাও এসেছে।

–ওহ আচ্ছা..
কিন্তু মা কোথায়?আর উনি আসে নাই কেন এখানে?

–ভাইয়া মা কলেজের অপজিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।আর তিনি না আসার কারন হচ্ছে তোর কাছে স্বার্থপর হতে চায় না তিনি।তাই তিনি আসে নাই।

–মানে বুঝলাম না!

–মানে হলো বাবা তোকে তার ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলেছে।কিন্তু মা তখন তোর জন্য কিছুই করতে পারে নাই।আর পারবেই বা কি করে।তোর বিষয়ে তো অনেক পরে জেনেছে মা।কিন্তু তখন জানলেও কিছুর করার ছিলো না।আর যেই মানুষটা তোকে ঘর থেকে বের করেছে,সেই মানুষটার জন্য কি করে সাহায্য চাইতে আসবে মা তোর কাছে।তাই তিনি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে তোর কাছে পাঠিয়েছে।

–সাবিহা তুই যেমন বাবাকে ভালোবাসিস,আমিও ঠিক তেমনি ভাবে মা’কে ভালোবাসি।আর আমার সেই ভালোবাসার মা যদি নিজের হাজারটা স্বার্থের চাহিদাও এসে আমার সামনে করে,তখনো মায়ের জন্য আমার ভিন্ন ধারণা আসবে না।কারন পথের কুড়ানো ছেলেকে তিনি নিজের আপন সন্তানের মতন কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে।সো আমাকে নিয়ে চল মায়ের কাছে।

–ঠিক আছে ভাইয়া চল আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।

–সাবিহার সাথে হেঁটে মায়ের কাছে গেলাম।মায়ের কাছে যেতেই তিনি আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।মায়ের এমন আচরণে বেশ অদ্ভুত লাগলো!তবে অদ্ভুত লাগার কারনটা আমার অজানা নয়।তাই কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়া মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম।মা তুমি খামোখা লজ্জা পাচ্ছো কেন বলো তো?আমি তো তোমারই সন্তান নাকি?তুমি বিপদে পড়লে সন্তানের কাছে আসবে না তো কার কাছে আসবে বলো?
সো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।আর কোনো মা তার সন্তানের কাছে লজ্জা পাওয়াটা শোভা দেয় না।

–নারে আকাশ আমি তোর মা নই।যদি আমি তোর মা হতাম,তাহলে তুই আজকে ঘর ছাড়া হতি না।

–আরে মা ছাড়ো তো ওসব কথা।কারন এমনটা আমার ভাগ্যে লিখা ছিলো।সো লজ্জা পাওয়ায় কোনো কিছুই নেই।আর যেখানে তুমি আমায় কোলে পিঠে করে সন্তানের মতন মানুষ করেছো,সেখানে লজ্জা টজ্জা মানায় না।

–আকাশ তুই যাই বলিস না কেন,আমি এক কথায় বলতে গেলে নিজের স্বার্থে তোর কাছে এসেছি।আর বাকি রইলো লালন পালনের কথা,দেখ আমি তোকে লালন পালন করেছি ঠিক,কিন্তু মা হিসেবে সমস্ত কর্তব্য পালন করতে পারিনি।তো নিজেকে ছোট করবো না তো কাকে ছোট করবো বল?

–মা তুমি বারবার একই কথা বলছো।আমি তো বললাম যে ভাগ্যে ছিলো ওসব আমার।কিন্তু তুমি তার পরেও খামোখা নিজেকে কেন জড়াচ্ছে এসবের মধ্যে?তুমি তো আমায় ঘর ছাড়তে বলো নি।সো তুমি লজ্জা পাওয়া বা নিজেকে ছোট করার কোনো কারন এই দেখছি না।আর তাছাড়া আমার ইনকামের সমস্ত টাকা আমার প্রয়োজন ও নেই।কারন এতো টাকা খরচ করার জন্য অনেক মানুষের দরকার।কিন্তু আমি তো একা।তাই আমার কিছু টাকা বাদে সব টাকাই রয়ে যায়।সো তুমি সঠিক সময়ে এসেই বাবার কথা জানিয়েছো।
আমি টেস্ট করানোর জন্য যতো টাকা লাগে দিব।আপাতত এই নাও পঁচিশ হাজাট টাকা।মানিব্যাগ বের করে মায়ের হাতে পঁচিশ হাজার টাকা দিলাম।মা এখানে পঁচিশ হাজার পুরোটা আছে।এরপর আর প্রয়োজন হলে আমায় জানিও।আর শোনো মোটেও নিজেকে ছোট করবে না তুমি।কারন আমি এখনো মনে প্রাণে তোমায় মা বলে বিশ্বাস করি এবং মানি।
.
আকাশের কথা শুনে আকাশের মা কান্না করে দেয়।যেটা দেখে আকাশের ও চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।তখনি আকাশের মা তার শাড়ির আঁচল দিয়ে আকাশের চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলে..

–তুই আমার সোনার টুকরা ছেলে।
তোকে আমি আবারো বাসায় নিয়ে যাবো।এতে যদি তোর বাবা আপত্তি করে,তাহলে তোর বাবার সংসার সেখানেই ইতি টানবো।কারন আমার ছেলেসন্তান পথেঘাটে ঘুরে ঘুরে বেড়াবে,আর আমি মা হয়ে চুপচাপ সেসব দেখবো,এমন পাষাণ আমি নই।

–আচ্ছা যা করার করিও,তবে এখন আগে নিজের চোখের পানি মুছো।এবং বাবার দেখাশোনা করো।
আর আমাকে নিয়ে চিন্তাধান্তা একদম বাদ দাও।কারন আমি অনেক ভালো আছি।

–আকাশ টাকায় সব কিছু মিললেও সুখ মিলে না।
তোর চেহারায় পরিবার হারানোর কষ্টটা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছি আমি।

–মা হয়েছে তো,
এবার থামো না প্লিজ।

–যা থামলাম।আচ্ছা শোন আমাদের এখন চলে যেতে হবে।কারন তোর বাবা বাসায় একা।

–আচ্ছা চলো তোমাদেরকে গাড়ি ঠিক করে দেই।
তারপর মা আর ছোটবোন সাবিহার জন্য গাড়ি ঠিক করতে তাঁদের সাথে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।ঠিক তখনি হুট করে মনের ভিতরে একটা কথা নাড়া দিয়ে উঠলো!তবে মনের কথাটা মনে রেখে দিলাম।কারন সাবিহা মায়ের সাথেই আছে।সো এখন বলা যাবে না।আগে সিএনজি ঠিক করি,এরমধ্যে সুযোগ পেলে মা’কে জিজ্ঞেস করবো।তারপর সিএনজি স্টেশনে গিয়ে সিএনজি ঠিক করে দিলাম মা এবং সাবিহার জন্য।মা আর সাবিহা সিএনজিতে উঠে বসেছে।কিন্তু আমার কথাটা জিজ্ঞেস করার আর সময় সুযোগ হয়নি।তাই দু’জনকে সিএনজিতে উঠিয়ে দু’জন থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটা ধরলাম।কিন্তু সিএনজিতে থাকা অবস্থায় পিছন থেকে মা আমায় ডাক ছিলো..

–এই আকাশ এদিকে আয়..

–মায়ের ডাকে পিছনে সিএনজির দিকে এগিয়ে গেলাম।সিএনজি এখনো ছাড়েনি।তবে আর এক মিনিট গেলেই হয়তো ছাড়তো।মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,হুম মা বলো…

–আকাশ তুই মনে হয় আমায় কিছু বলতে চাইছিস?

–মায়ের কথা শুনে চমকে উঠলাম!কারন মা আমার মনের কথা বুঝে গেছে।তবে নিজেকে শান্ত করে নিয়ে বললাম,না মা কিছু একটা বলার ছিলো তবে পরে উঠবো।তোমরা এখন চলে যাও।

–নাহ এখন এই বল।এই যে ড্রাইভার আমি একটু নামছি গাড়ি থেকে।আপনি দুই মিনিট পর গাড়ি স্টার্ট করেন।আমি আগে আমার ছেলের কথা শুনি।
.
তারপর আকাশের আম্মু আকাশের সাথে কথা বলার জন্য গাড়ি থেকে নেমে গেলো।যেটা দেখে আকাশ বলে…

–আরে মা পরেও তো বলতে পারতাম কথাটা।তুমি এখন নামতে গেলে কেন।

–না তুই এখুনি বল।
আমি তোর কথা শুনেই এখান থেকে যাবো।

–আচ্ছা ঠিক আছে।
আসলে মা তুমি একটু সাইডে আসো।তোমার থেকে একটা জিনিস জানার আছে আমার।
.
আকাশের কথায় আকাশের মা সিএনজি থেকে কিছুটা সাইড হয়ে আকাশকে বলে…

–হুম সাইডে এসেছি এবার বল..

–মা,আমার ছোট বেলার তোলা যেই ছবিটা এলবামে আছে।যেটা তুমি আমায় দেখিয়ে বলেছিলে এটা আমার ছোট বেলার ছবি।আমি এমন একটা পিক আমার বাড়ি ওয়ালার বাসায় দেখেছি।তবে ছবিটা একই পজিশনে তোলা নয়।কিন্তু চেহারার হুবহু মিল আছে।যেটা দেখে আমি কনফিউজড যে আমার মতন দেখতে একই চেহারার ছবি আমার বাড়ি ওয়ালার বাসায় কেন।
.
আকাশের মা আকাশের কথা শুনে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে!কারন তিনি আকাশের কথা শুনে চরম বড় শকট খেয়েছে!যার ফলে তিনার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না!তখনি আকাশ তার মা’কে বলে..

–আরে মা,তুমি এমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে?

–আকাশ অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকার কারনটা তোকে না হয় নাই বললাম,কিন্তু একটা কথা অবশ্যই বলবো।আর সেই কথাটার অন্তিমটা তোকেই খুঁজে বের করতে হবে।এবং তোকেই রহস্যের উদঘাটন করতে হবে।
দেখ উপর ওয়ালা কখনো কাউকে পিষে মারে না।তুই ঘর ছাড়া হয়ে কষ্টে আছিস,কিন্তু উপর ওয়ালা তোর জন্য অন্যদিকের রাস্তা খুলে দিয়েছে।যেই রাস্তাটা তোর মনের সমস্ত কষ্ট দূর করে দিবে।

–মা তোমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতেছি না আমি!একটু ক্লিয়ার করে বলো না।

–এর থেকে ভালো করে বুঝিয়ে বললে তুই জীবনের মাইনে টাই হারিয়ে ফেলবি।সো তুই নিজেই বাকি রহস্যের উদঘাটন কর।দেখবি তখন আনন্দটা অনেক বেশি করে উপভোগ করতে পারবি।আর আমি বললে তখন তোর কাছে সব কিছুই পানসে লাগবে।

–ঠিক আছে মা আমিই রহস্যের উদঘাটন করার ট্রাই করছি।

–হুম এবার আমি সিএনজিতে উঠলাম।

–হুম..
তারপর মা সিএনজিতে উঠে গেলো।আর আমি একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।বাসায় আসতে আসতে মায়ের বলা কথাটা নিয়ে নিজের মাইন্ডে খেলাচ্ছি।তখনি আমার সামনে একটা রাস্তা খুলে গেলো।তাড়াতাড়ি বাসায় পৌঁছে বাড়ি ওয়ালার আন্টির কাছে চলে গেলাম।বাড়ি ওয়ালা আন্টির কাছে গিয়ে সোজা জিগ্যেস করলাম,যে আন্টি দেওয়ালো টাঙিয়ে রাখা ছবিটা কার?তিনি আমার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলো..

–এই ছবিটা আমার ছেলের।

–ওহহ..
কিন্তু আপনার ছেলে এখন কোথায়?

–জানি না সে কোথায়!কারন আমার স্বামী বহুকাল আগে আমার ছেলেকে আমার থেকে চুরি করে নিয়ে গিয়ে কোথায় যেনো ফেলে দিয়ে এসেছে।কারন তার কন্যা সন্তান পছন্দের ছিলো।কিন্তু আমার প্রথম সন্তান ছেলে হওয়ার কারনে সে তাঁকে নিয়ে গিয়ে রাস্তার ধারে কোথাও ফেলে দিয়ে আসে।আমি পরে অনেক তালাশ করেছি আমার ছেলের,কিন্তু কোথাও তাঁকে আর খুঁজে পাইনি।

–বাড়ি ওয়ালা আন্টির কথা শুনে এবার আমারো চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে।কারন তিনার কথা শুনে আমার যা বুঝার আমি বুঝে গেছি।তাও নিজেকে কিছুটা শান্ত করে নিয়ে আবার তিনাকে প্রশ্ন করলাম।
আচ্ছা আপনার স্বামী এমনটা করার পরেও আপনার থেকে আলাদা হয়ে গেলো কেন?

–সে আলাদা হয়নি।বরং আমিই আলাদা হয়েছি।কারন আমার ছেলেকে সে আমার থেকে দূরে সরানোর পরেও আমি তার সাথে সংসার করি।কিন্তু পরবর্তীতে তার জঘন্য রূপ আমার সামনে আসে।আমার অগোচরে সে অনেক মেয়ের সাথে অবৈধ মেলামেশা করে।যার কারনে শেষমেশ তাঁকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।এবং পরিশেষে আমি আমার ছেলের সৃতি কে নিয়েই আমার অর্ধেক জীবন পাড় করে দিয়েছি।কিন্তু তুমি হটাৎ এসব প্রশ্ন করছো কেন?

–সেসবের উত্তর একটু পর জেনে যাবেন।তবে তার আগে আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দেন আমার।

–কি প্রশ্ন?

–মা তোমার ছেলে যদি আবারো তোমার কাছে ফিরে আসে,তখন কি তুমি তাঁকে আপন করে নিবে?
.
আকাশের কথার ধরন দেখে আকাশের বাড়ি ওয়ালা আন্টির ও এবার বুঝতে বাকি নাই,যে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা কে।এবং কেনই বা তাঁকে এসব উদ্ভট প্রশ্ন করছে।তবে তিনি এখনো পুরোপুরি শিওর নয়।তাই
তিনি আকাশকে বলে আকাশের শার্টের হাতাটা একটু উপরে তুলতে।আকাশ তাই করে।সে শার্টের হাতাটা একটু উপরে তুলে।আকাশ শার্টের হাতাটা উপরে তুলতেই বাড়ি ওয়ালা আন্টি আকাশের হাতে ছোট তিল’টা দেখে দৌড়ে এসে আকাশকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে আরম্ভ করে।এবং কান্না করতে করতে আকাশকে বলে..

–এই পাগল ছেলে।তুই এতোদিন আমায় ফেলে রেখে কোথায় ছিলি?তুই জানিস আমি তোকে কোথায় কোথায় না খুঁজেছি।আমার সাধ্যের মধ্যে থাকা এমন কোনো জায়গা বাকি নেই যে আমি তোর খোঁজ করিনি।কিন্তু কোথাও তোকে খুঁজে পাইনি।

–মা,খুঁজে পাবা কি করে বলো।তোমার সেই পাষাণ হাসবেন্ড আমায় ময়লার স্তুপের মধ্যে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলো।যেখান থেকে কেউ আমায় কুড়িয়ে নিয়ে গিয়ে সন্তানের মতন লালন পালন করেছে।কিন্তু কিছুদিন আগে সেই ঘরের কর্তাও আমায় ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।তাই তোমার বাসায় এসে ভাড়ায় উঠেছি।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,যে আমি আবার তোমার বাড়িতে এসেই আশ্রয় নিয়েছি।

–বাবা খোদার কাছে লাখো খুঁটি শুকরিয়া,যে তিনি আমার সন্তানকে আবার আমার কোলেই ফিরিয়ে দিয়েছে।
.
মা-ছেলে দুজনের মধ্যে আনন্দের কোনো সীমা নাই।ছেলে মাকে পেয়ে,মা ছেলেকে পেয়ে খুশীতে আত্মহারা হয়ে গেছে।তখনি পরী-পালকের দারোয়ান আতাউর জমিনে প্রকট হয়ে আকাশের কাছে আসে।তারপর অদৃশ্য থেকে আওয়াজ দিয়ে আকাশের কানে কানে বলে…

–হে পরী-পালকের ভবিষ্যৎ নক্ষত্র,পরী-পালক পুরো ধ্বংসের পথে।তুমি তাড়াতাড়ি পরী-পালকে এসে পরী-পালককে বাঁচিয়ে নাও।না হয় পুরো পরী-পালক ধোঁয়ার সাথে মিশে যাবে।
.
আতাউর আকাশকে এমন বার্তা দিয়ে সে চলে যায়।
অন্যদিকে আকাশের কলিজা ধুপধুপ করে কাঁপতে আরম্ভ করে আতাউরের এমন বার্তা পেয়ে!তাই সে দড়ি ছেঁড়া গরুর মতন এদিক সেদিক দৌড়াতে থাকে….

চলবে….

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।