ইচ্ছে কথন পর্ব-০৫

0
583

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_৫

প্রিয় ফোনের স্কেনে দিকে তাকিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা তরু নাকি অন্য কেউ।

তরু একটা ব্লু কালারের ভেতর সাদা পাড়ের জামদানি শাড়ি পড়ে আছে। সাথে মেচিং করা চুড়ি আর কানের দোল।ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। যা হাটু অব্দি পরে আছে। সামনে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো এঁকেবেকে পড়ে আছে কপালের ভাজে। তরুর ঠোঁটের কোনে রয়েছে এক প্রসারিত প্রান বান্ত মনকারা হাসি। যেই হাসির মাঝে ফুটে আছে টোল পড়া এক অজানা ভালো লাগার নিরাশ।

প্রিয় তরুকে দেখে এক অদ্ভুত রকমের ফিলিংস নিজের ভেতর অনুভব ফিল করছে। সেটা সে বুঝে তাড়াতাড়ি ফোনের স্কিনটাকে লক করে ফেলে। কারন এই অদ্ভুত রকমের ফিলিংস যে তাকে মানায় না। প্রিয় দুটো চোখ বন্ধ করে নেয় সাথে সাথেই। তারপর ওঠে তরুর রুমের দিকে যায়। তরু কি ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি সজাগ সেটা বুঝার জন্য দরজায় কয়েকটা টোকা দেয়। দরজার টোকার আওয়াজ পেয়ে তরু ঘুম ঘুম চোখে বলতে লাগলো,,

কোন এলিয়েনের নাতি রে এত রাতে আমার দরজায় কড়া নাড়াচ্ছে। যদি সামনে পাই না কাচা গিলে খাব।

প্রিয় তরুর এমন ঘুম জরাগ্রস্ত কথা শুনে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে পুনরায় রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে আবারো তরুর ছবিটাকে ওপেন করে দেখতে লাগলো। ছবিটাতে যেই জিনিসটা প্রিয়কে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট দুর্বল করছে সেটা হলো তরুর দীগর কালো ঘন রেশমি চুল গুলো। মেয়েটার চুলগুলো ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে একটি বার।
____________

নাতাশা বিছানার একপাশে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। পরনে তার এখনো সেই শাড়ি। শাড়ির ভাজ ভেদ করে দেখা যাচ্ছে গোলাপি মৃসরীত উন্মুক্ত পেটের কিছু অংশ। যার দিকে কল্পের চোখ বার বার আকৃষ্ট হচ্ছে। নাতাশার সামনের সোফায় শুয়ে আছে কল্প। নাতাশা ঘুমে মগ্ন । কিন্তু কল্পের চোখে কোনো ঘুম নেই। আছে শুধু এক বিশালহীন পাহাড় সমান জেদ। যা এখনো শরীরে বৃদ্ধ মান সচলায়তনের মূল কারন হয়ে গেথে আছে।

কল্প নাতাশার দিকে নিক্ষেপ করে আছে। আজ নাতাশা যেই জায়গায় রয়েছে সেখানে তুলি থাকার কথা।

তুলি কল্পের এক্স। বড্ড ভালোবাসতো মেয়েটাকে। কিন্তু মেয়েটা ছিলো লোভী যার কারনে কল্পের ভালোবাসা প্রত্যক্ষান করে। অন্য কোনো বড় লোক বাবার বড় লোক ছেলেকে বিয়ে করে৷ নেয়।তবে সে ছেলেটা আর কেউ না পাশের বাসার আদি।

কল্প আর তুলি ছিল একই ডিপার্টমেন্ট স্টুডেন্ট। যেখান থেকেই তাদের পরিচয় আলাপ। কল্প সব সময় ভার্সিটি সাধারন ছেলের মতো চলাফেরা করতো সেটা তুলির ভালো লাগতো না। তুলি জানতো কল্পের বাবা একজন দিনমজুর। একজন দিনমজুরের ছেলের সাথে আর যাই করা যায় না কেন সংসার করা যায় না। কারন তাদের সংসারে অভাব অনাটন সব সময়ই লেগে থাকে। এসব ভেবে তুলি আদির সাথে আবার সম্পর্কে জড়ায়। তারপর বিয়ে। বিয়ের পর যখন কল্পকে তাদের সামনের বাসায় দেখে তখন তুলি নিজেকে বড় রাখার জন্য আদির সাথে রোমান্স করে কল্পকে দেখিয়ে দেখিয়ে। যেন সে জেলাস ফিল করে। কল্প তাদের এমন রোমান্স দেখলে বারান্দার দরজা লক করে ঘরে বসে থাকতো।

আজ সারারাত প্রিয় দুটো চোখের পাতা এক করেনি। কোনো এক অচেতন মায়ার সাথে আসক্ত হয়ে গিয়েছে। যে আসক্ত থেকে বের হওয়া মুশকিল। ফজরের আযান দিতেই প্রিয় ঘুম থেকে উঠে কাবার্ড থেকে পাঞ্জাবি পায়জমা বের করে। তারপর সোজা মসজিদে চলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। তরুর রুম পেরিয়ে প্রিয়র রুম। তরুও ঘুম থেকে উঠে নামাযের জন্য। ভোর ৫টার দিকে আবছা আলোয় কনকনে শীতের সকালে কয়াশা বধ্য শিশির জমিয়ে থাকার জন্য বাহিরের পরিবেশটা দেখা খুবই ডিফিকাল্ট। তরু ঘুম থেকে ওঠে সবার প্রথমে দরজা খুলে। তারপর ওযু করার জন্য রেড়ি হতে যাবে তখনই দেখতে পেল কারো ছায়া দেখা যাচ্ছে । তরু মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ে নিজের শরীরে ফু দিল। তারপর এক বুক সাহজ নিয়ে বের হলো। দরজার সামনে গিয়ে আস্তে আস্তে বলতে লাগলো,

ভূত আমার পুত পেতনি আমার জ্বী। আল্লাহ আমার সাথে আছে ভূতে করবে কি

এসব মন্ত্র পড়ে সামনে দিকে যেতে লাগলো। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখতে পেল ভূত না কোনো মানুষের প্রতিচ্ছবি। তাহলে কি চোর ডাকাতের আগমন ঘটলো নাকি। এসব ভেবে প্রিয়র কাছে যেতে লাগলো। প্রিয় উল্টো দিক ফিরে জুতা পড়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তরু গিয়ে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো প্রিয়র গলায়। তারপর চোর চোর বলে চিৎকার করতে লাগলো। তরুর এমন কান্ডে প্রিয় বিরক্তিবোধ করছে। কারন এত শক্ত করে ধরছে এখান থেকে ছুটে যাওয়া বড় কষ্টকর। একহাত দিয়ে প্রিয়র মুখ ধরে আছে যার জন্য কিছু বলতে পারছেনা। অন্যহাত দিয়ে গলা। প্রিয় তরুর সাথে জোরাজুরি করে ছুটছে পারছেনা। তাদের এমন জোরাজুরিতে তরুর মাথার ক্লিপ খুলে গেল সাথে সাথেই চুলগুলো কমোড় পেরিয়ে হাটু অব্দি ছিটিয়ে আছে। তরু পড়লো মহা বিপদে এখন কি সে চুল সামলাবে নাকি চুরকে। তরুর চুল খোলে যাওয়াতে প্রিয় ভেতর একটা অচেনা ঢেউয়ের তালে স্রোত বইতে লাগলো। যেই স্রোতের নির্যাস গিয়ে বারি মারছে প্রিয়র নাকের ডগায়। তরুর চুল থেকে এক মন মাতালো ঘ্রান ভেসে আসছে প্রিয় নাকের ধারে। এটা হয়তো কোনো শ্যম্পুর ঘ্রান হবে। কিন্তু এমন আসক্তি করছে কেন তাকে এই চুল। প্রিয় এসব ভেবেই তরুর হাতে কামড় দিয়ে বলতে লাগলো আমি প্রিয়।

তরু সাথে সাথে প্রিয়র গলা ছেড়ে দিয়ে পেছনের দিক ফিরে যেন তাকে না দেখা যায়।

প্রিয় নিজের পাঞ্জাবি ঝারতে ঝারতে বলতে লাগলো।

কোন হারবাল খাস রে। এত শক্তি আসে কই থেকে।

প্রিয় কথা শুনে তরু এবার লজ্জা পেল। কি করতে গেল সে। এসব ভেবে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে তার। প্রিয় এবার চোখ তুলে তরুর দিকে তাকালো।তাকিয়ে তো অভাক হয়ে রইলো। কারন তরুর পরনে তার টিশার্ট যেগুলো ৫বছর আগে তার কাবার্ডে রেখে গিয়েছিলো। তরুর চুলের জন্য কিছু দেখা যাচ্ছে না। আবছা আলোয় যেটা দেখেছে। সেটাই অনেক। প্রিয় এবার তরু কাধে হাত দিয়ে বলতে লাগলো,

মুখ ঢেকে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি তে অলরেডি দেখে নিয়েছি।

তরুর ভেতরটা এক ভূমিকম্প সংঘটিত হতে লাগলো। কি বলে ওনি। সে নিজেই তো বলেছে আমার চেহারা নাকি কখনো দেখবে না। তাহলে দেখলো কিভাবে। আর আমি তো এদিন যাবতো ওনাকে এড়িয়ে চলেছি তাহলে??

এসব ভাবতে লাগলো তরু । প্রিয়র কথা এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা তরুর । তাই প্রিয় আবারো বলতে লাগলো,

আমার কথা বিম্বাস করছিস না তো তাহলে শুন।তোর একটা গেজ দাঁত আছে সেটা হাসি দিলে দেখা যায়।

তরু প্রিয়র কথা শুনে অভাক হয়ে রইলো সত্যিই তো। তার ডান দিকে উপরের দাতের মারিতে একটা ছোট্ট গেজ দাঁত আছে। যেটা কেবল হাসি দিলেই দেখা যায়। তরু এখনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সত্যিই কি সে সব শুনছে নাকি ঘুমের ঘোরে শয়তান তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যেটা সে এতদিন ধরে দেখে আসতো। প্রিয় বুঝতে পেরেছে তরু হয়তো বিশ্বাস করতে পারছে না তাই সে আবারো বলতে লাগলো,

তুই যদি বিশ্বাস না করে থাকিস আমাকে। তাহলে তোকে তর একটা গোপন সিক্রেটের কথা বলি ।

তরুর এবার সারা শরীর কাপতে লাগলো কুয়াশা কনকনে ঠান্ডার প্রকোপের মাঝেও সারা শরীর ঘামতে লাগলো যেন এই বুঝি বেহুশ হয়ে পড়ে যাবে। এক হাতে মাথায় ঝরে পড়া ঘামগুলো মুছতে ব্যস্ত অন্য হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করতে ব্যস্ত।প্রিয় তরুর এমন হাবভাব দেখে বুঝতে পেরেছে ঠিকই তবুও তরুকে আরো ভয়নপাওয়ার জন্য বলতে লাগলো,

আরে এত ভয় পাওয়ার কি আছে। তুই তো দেখি এখনই পড়ে যাবি।

তরু কিছু বলল না চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।এখন কথার বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে। এক অচাল্য ঢেউ বয়ে যাচ্ছে তার হৃদয় জুরে যেখানে রয়েছে হাজারো ভয়ের নিরাশতলী।

প্রিয় তরুর কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলল,

থাক এখন আর কিছু বলব না, মসজিদে যাব।বিকেল ৪টার দিকে ছাদে যাবি। তর সাথে আমার অনেক বুঝাপড়া বাকি আছে।
বলেই হনহনিয়ে চলে গেল রুম থেকে। তরু সেখানেই দাড়িয়ে রইলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো প্রিয় তাকে কোথায় দেখেছে।

সোনা আপু দেখায় নি তো। আমি শিউর তারই এ কাজ। বলে তরু সেখান থেকে রুমে চলে গেল।ওযু করে নামাজ পরে কিচেনে চলে গেল। প্রিয়র বাড়িতে রান্না বান্না সব কিছুর দায়িত্ব তরু একাই সামলায়। এ কয়দিন কিচেনের দারেও আসেনি প্রিয়র কথা ভেবে। তাই সব কিছু ফুডপ্যান্ডা থেকে অর্ডার করা হয়েছে। কিন্তু আজ যখন দেখেই ফেলল বলেছে তখন আর এত লুকিয়ে থাকার কি দরকার।

তবে হে আমাকে যখন বলেছে বিকেল ৪টায় ছাদে থাকতাম। তাহলে ঐ ৪টায় তার সামনে হাজির হব তার আগে নয়।

বলেই তরু ব্রেকফাস্ট রান্না বান্না সব কিছু করে নিল। পরে ওভেনে গরম করে সার্ভ করবে।

কিন্তু সোনা আপুর কেসটা কি এখনো তো জানা হলো না। পুরোপুরি তো জানতেও পারলাম না যাই কল্প ভাইকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসি। বলেই তরু কল্পের ঘরের দিকে রওনা দিল কফি নিয়ে।

কল্পের রুমের দরজার সামনে এসে দেখতে পেল নাতাশা চুল মুছতে ব্যস্ত।ডেসিন টেবিলের সামনে বসে। তরুর কফির মগটা নিয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করে।

#চলবে