ইচ্ছে কথন পর্ব-০৬

0
627

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_৬

তরু নাতাশার রুমে গিয়ে নাতাশার হাতে কফির মগটা বাড়িয়ে বলতে লাগলো,

সোনা আপু একজেটলি কি হয়েছে আমাকে একটু বলবে। কল্প ভাইয়ার সাথে তার উপর আবার কিডন্যাপ। এগুলো কি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

তরুর কথা শুনে নাতাশা পুরো ঘটনা তাকে খুলে বলে ঐ ইয়াফি নামক জানোয়ারের কথাসহ। সব শুনে তরু একটা কথা বুঝতে পারছে না এখানে বারবার প্রিয়কে টানা হচ্ছে কেন । আর ইয়াফি বা কেন প্রিয় দেশে আসায় কিডন্যাপ করে নেয় নাতাশাকে বিয়ের জন্য। সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তরু এবার নাতাশার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

সোনা আপু তুমি আমাকে একটা সত্যি কথা বলবে। আমি জানি তোমরা সবাই মিলে আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো । প্লিজ আমাকে বলো আসল সত্যিটা ঠিক কি??

নাতাশার ভেতর এক অজানা ভয়ের তীব্র ছুটে চলেছে। কেন মেয়েটাকে সে সব কিছু বলতে গেল। এখন যদি তাকে ভুল বুঝে কিংবা অন্যকিছু কিন্তু সত্যিটা তো একদিন না একদিন তার সামনে আসতো। তবে কি মেয়েটাকে সব কিছু বলে দেওয়াটাই ভালো হবে। সবার জীবনেই কিছু সুখ দুঃখ তাকে। কারো জীবন হয় সুখতারার মতো সুখে ভরা জীবন। আবার কারো জীবন হয় ধ্রবতারার মতো এক নির্যাসহীনতা জীবন। কেউ বা ছুটে চলে সুখ তারার পেছনে। আবার কেউ বা না চাইতেও ধ্রুবতারার সাথে সম্মুখীন হতে হয়। নাতাশার জীবনটাও ঠিক সেই রকম। ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের মন থেকে মুছে ফেলা যেমনটা কষ্টকর। ঠিক তেমনই তাকে নিয়ে শত অনুভূতির চিহ্নগুলো কে গ্রাস করাও কষ্টকর। নাতাশা তরুর দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলতে লাগলো,

হুম বল??

তরু যেন নাতাশার এই কথাটার অপেক্ষায় বসে ছিল।

আচ্ছা আপু প্রিয় ভাইয়ার সাথে তোমার সম্পর্কটা তো শুধু ফ্রেন্ড তাই না। তাহলে তোমার কিডন্যাপের সাথে প্রিয় ভাইয়া বার বার আসছে কেন।

নাতাশা তরু এক হাত ধরে বলতে লাগলো,

বিশ্বাস করিস তো আমাকে? কখনো ভুল বুঝবিনা তো?

তরু নাতাশার হাতের উপর নিজের হাতটা রাখলো। তারপর বলতে লাগলো,

সোনা আপু পৃথিবীতে আর যাই হোক না কেন। তোমাকে কখনো অবিশ্বাস করতে পারবো না। কারন তুমি শুধু সোনা আপু নয়। তুমি আমার আপু রুপই এক মা। যে আমাকে বুঝতে শিখিয়েছে। চলতে শিখিয়েছে। আমাকে এত বড় করেছে। নিজের পরিবারকে গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে গুরুত্ব দিয়েছে। তাকে কিভাবে আমি ভুল বুঝতে পারি।

তরুর চোখে নাতাশার জন্য আলাদা এক মায়া ফুটে উঠেছে। যেটা নাতাশা বুঝতে পেরেছে। তাই সে অভয় রেখে বলতে লাগলো,

তাহলে শুন প্রিয় আমার এক্স ছিলো।

তরু নাতাশার মুখে এমন কথা শুনে হাসতে লাগলো। নাতাশা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। মেয়েটা এভাবে হাসছে কেন। তরুকে দমক দিয়ে নাতাশা এবার সব খুলে বলল তাকে। ৫বছর আগের ঘটনা তাদের প্রেম আলাপ সবকিছু। সব কিছু শুনে তরুর চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো মাটিতে। এটা কি হলো। সোনা আপু প্রিয় ভাইয়াকে এত ভালোবাসতো আর প্রিয় ভাইয়াও আপুকে এত ভালোবাসতো। আর মাঝখান দিয়ে আমাকে টেনে তাদের ভালোবাসার এমন শিকল ঘটালো। এসব ভেবেই তরুর চোখের জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। নাতাশারও চোখে জল চলে এলো বলতে বলতে। হাজারও ভুলে থাকার চেষ্টা করলেও কিছু কিছু স্মৃতি যে তাকে এখনো কাঁদায়। নাতাশা তরুকে বলতে লাগলো,

জানিস তরু তর মা আমাকে খুব ভালোবাসতো। তকে যেমন আদর স্নেহ করতো আমাকেও ঠিক তেমন আদর স্নেহ করতো। যখনই এই বাড়িতে আসতাম। তুই হয়তো তর মায়ের মৃত্যুর রহস্য এখনো পর্যন্ত জানিস না। জানলে আমার থেকে বেশি অভাক হবি তুই। কেন প্রিয় তকে বিয়ে করলো। কি কারনে আমিও আমার ভালোবাসাকে হাসি মুখে তর কাছে যেতে দিলাম।

নাতাশার কথাগুলো শুনে তরুর এখনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। মায়ের মরে যাওয়ার সাথে তার আর প্রিয়র বিয়ের কি সম্পর্ক। সেটা ভেবেই তরু নাতাশাকে প্রশ্ন করলো,

আপু আমার আর প্রিয় ভাইয়ার বিয়ের সাথে মায়ের মৃত্যুর কি সম্পর্ক?

নাতাশা এবার বলতে লাগলো,

আজ থেকে ঠিক ৫,বছর আগে প্রিয় অনেক অনেক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। একদম মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে। ডাক্তার তাকে চেকআপ করে। রিপোর্ট হাতে আসার পরে ডাক্তার জানায় রোগীকে বাঁচানো সম্ভব নয়। কারন তার দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। সে কথা শুনে আমি ঠিক তিনদিন বেহুস ছিলাম। আংকেল তো আরো ভেঙ্গে পড়ে। আমি কত করে বলেছি আমার একটা কিডনি তাকে দিয়ে দিতে। কিন্তু আমার রক্তের গ্রুপের সাথে প্রিয়র রক্তের গ্রুপ মিলছিলো না। কারন প্রিয়র রক্তের গ্রুপ ছিলো এ পজেটিব। আর আমার বি পজেটিভ। কারও রক্তের সাথে প্রিয়র রক্ত মেচ হচ্ছিলো না। কারন প্রিয় তার মায়ের ব্লাড গ্রুপ পেয়েছে। পরে তর মা যখন প্রিয়র ব্লাড গ্রুপের কথা শুনে তখন তিনি জানা যে তার আর প্রিয়র রক্তের গ্রুপ একই। সে নাকি প্রিয়কে দুটো কিডনিই দেবে। কারন তর মায়ের রক্ত শূন্যতার রোগ ছিলো। হরমোন জনিত সমস্যা ছিল তার শরীরে৷ জোরে গেলে ৫বছর নয়তো আরো কয়েক বছর বাঁচতেন তিনি। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেয় যে প্রিয়কে তার দুটি কিডনি দিয়ে বাঁচাবে সে। এমন কথা শুনে আংকেল তর মাকে নিষেধ করেছিলো যে দুটো কিডনি না দিতে। কিন্তু তর মা আংকেলকে বলে যে, আমি হয়তো বেশিদিন বাঁচবো না সাময়িক সময়ের জন্য আছি। কিন্তু প্রিয়র তো সামনে কেরিয়ার সব কিছু পড়ে রয়ছে। সে যদি এখন পরপারে চলে যায় তাহলে কি করে হবে। তারপর আংকেল তর মাকে বলেছিলো তর কথা। তারপর তিনি হাসি মুখে বলে যে আপনাদের উপর আমার মেয়ের সব দায়িত্ব দিয়ে গেলাম। ওর ভালো মন্দ সব দেখার দায়িত্ব আপনাদের। তারপর অপারেশন হয় কিডনি দেওয়া হয় প্রিয়ও সব জানে। অপারেশনের ঠিক এক মাস পর তর মা মারা যায়। তখন অংকেল আর প্রিয় ভেঙ্গে পড়ে তকে নিয়ে।

এটুকু বলে নাতাশা থামলো। তরু কান্না জরিত কন্ঠে বলতে লাগলো

সোনা আপু থামলে কেন। তারপর কি হয়েছে বলো?
তারপর নাতাশা আবারো বলতে শুরু করলো,

আমাদের সমাজ বড্ড অসৎ জাতি কঠোর হয়ে আছে। যার কারনে আংকেল তকে ঠিক ঐ ১৩ বছর বয়সেই প্রিয় সাথে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়। কারন তকে যদি মেয়ের মতো বড় করতে চাইতো তাহলে সমাজ তর চোখে আঙ্গুল তুলতো যে তুই তো তাদের রক্তের কেউ নয়। তাহলে কেন তকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। তার উপর তর মা বলে গিয়েছে যে তর ভালো মন্দ দেখার সব দায়িত্ব আংকেলের। তবে কল্পের সাথেও তর বিয়ে হতে পারতো। কিন্তু প্রিয় আর কল্প জমজ হলেও কল্প কিন্তু ছোট তাই আংকেল সব কিছু মিলেই সিদ্ধান্ত নেয় যে তর সাথেই প্রিয়র বিয়ে হবে। প্রিয় তাতে অমত করে নি। কারন আজ তর মায়ের জন্যই সে বেঁচে আছে। তাই দুই বছরের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে তকে বিয়ে করে। তার দিক ৫দিন পর আমি শুনি প্রিয়র মুখ থেকে তদের বিয়ের কথা। যখন শুনি তকে বিয়ে করছে। তার উপর তর মাও মরে গেছে। তখন জানিস কেন তর মুখটা দেখে এক অজানা মায়া পড়ে যাই। যেই মায়ায় পড়ে তর এই ৫বছরের দায়িত্ব নেই আমি। প্রিয়কে দেশের বাহিরে পাঠাই আমি আর কল্প মিলে। তবে একটা কথা ঠিক যে প্রিয়কে আমি সত্যিই খুব ভালোবাসতাম। কিন্তু এখন আর তেমন কোনো ফিলিংস নেই ওকে নিয়ে। কল্প খুব ভালো ছেলে সেটা তো তুই দেখেই আসছিস। ওকে এত জ্বালাতন করি তবুও কোনো রিয়েকশন পাই না। এখন যা হয়ে গেছে সেটাকেই মেনে নিতে হবে। সব শেষে তর কাছে একটাই রিকোয়েস্ট আমার।

তরুর কান্নার গতি আরো বেড়ে গেল। নাতাশাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। নাতাশা তরুকে সামনের দিকে ফিরিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলতে লাগলো,

পাগল মেয়ে এভাবে কান্না করার কি আছে। আমার রিকোয়েস্টটা রাখবি না নাকি??

তরু কান্না জরিত কন্ঠেই বলতে লাগলো,

বলো,

প্রিয়কে তুই ভুল বুঝিস না। ওর কোনো দোষ নেই। তকে মেনে নিতে একটু কষ্ট হবে। তবে তুই তাকে কষ্ট দিস না। যে ভালোবাসাটা আমার থেকে পাওয়ার কথা। সেটা তুই তাকে দিয়ে আপন করে নিস।

কিন্তু সোনা আপু ওনি তো আমার মুখ কখনো দেখবে না বলেছে। যদি আমার মুখ দেখে তাহলে সেদিনই যেন তার মৃত্যু হয়। এমন কথা বলেছে।

নাতাশা এবার হাসতে লাগলো। তারপর বলল,

পাগলি মেয়ে সে যদি তর মুখটা নাই দেখতে চাইতো তাহলে কাল এভাবে রিকোয়েস্ট করলো কেন আমাকে তর ছবি দিতে?

তরু নাতাশার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তাহলে তার ধারনাটাই ঠিক। যে সোনা আপুই তার ছবি দেখিয়েছে। তবে এখন কিছু বলা যাবে না। । সুযোগ বুঝেই ছোবল মারতে হবে।

তরু ওঠে যেতে নিতেই নাতাশা তরুর হাত ধরে ফেলল।তারপর বলতে লাগলো, আমি তোকে সব সত্যিটা বল্লাম। এবার আমার জন্য কিছু একটা কর??

তরু বোকার মতো করে তাকিয়ে রইলো। কি করবে সে ভেবে পাচ্ছেনা। নাতাশা তরুর হাত ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলো,

কল্প তো আমার কাল রাত থেকে কোনো কথাই বলছে না। দেখ কিভাবে নাক টেনে ঘুমাচ্ছে সোফায়।

তরু সোফার উপর কল্পকে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে অভাক হয়ে বলতে লাগলো,

তার মানে কাল রাতে কল্প ভাইয়া বিছানায় ঘুমায় নি?

না।

ও এদিকে আমি তো তোমার ভেজা চুল দেখে কত কি ভেবে ফেল্লাম।

নাতাশা এবার লজ্জা পেয়ে তরুর একটা কান ধরে বলতে লাগলো,

পাজি মেয়ে আমার সাথে মজা করা হচ্ছে।

তরু নাতাশার হাত ছাড়িয়ে বলতে লাগলো,

ভুলে যাবেনা। সম্পর্কে কিন্তু আমি তোমার বড় জা হই।

নাতাশা তরুকে জরিয়ে আবারো বলতে লাগলো,

পাগলি কোথাকার। প্রিয়র দিকটা একটু ভাবিস।

ওকে। তোমাকে আর ভাবতে হবে না। ওনাকে এমন টাইট দেবো না। তুমি শুধু ভরসা রাখো আমার উপর।

নাতাশা হেসে তরুর গালে একটা চুমু দিল।

তরু এবার বলতে,

এটা কি হলো। আমার গালে তো আমার বর এখনো একটা কিসও করলো না। সেখানে তো দেখি তুমি একটু পরপর আমাকে চুমু দাও।

নাতাশা বলল,

যা দুষ্ট মেয়ে বাগ এখান থেকে। তরু এক দৌড়ে তার রুমে চলে গেল।

নাতাশা আর কল্পের কেসটার জামেলা তাকেই সারাতে হবে। কল্পের এক্সের ব্যাপারে নাতাশা সব কিছুই জানে। তরুও জানে। তাই তরু ভাবতে লাগলো,

কল্প ভাইয়া নাতাশা আপুকে মেনে নিতে একটু কষ্ট হবে। উফ খোদা এই দুই ভাই তো দেখি তাদের প্রাক্তনদের জন্য নিজের বৌদের দিকে ফিরেও তাকাবেনা । আল্লাহ আমাকে ধৈর্য্য দাও, জলদি দাও, এখনই দাও, কুইক।

দুপুরে তরু কলেজ থেকে ফিরে ওভেনে সব খাবার গরম করলো।নাতাশা তাকে সাহায্যে করলো। তরু নাতাশাকে প্রিয় ব্যাপারে সব কিছু খুরে বলেছে যে ৪টার দিকে ছাদে যেতে বলেছে তাকে প্রিয়।তার আগে সে প্রিয়কে তার ফেইস দেখাবে না।
তাই নাতাশা সব খাবার টেবিলে সার্ভ করে। কিছুক্ষন পর প্রিয় কল্প বাবা নিচে নামে খাবারের জন্য।

টেবিল ভর্তি খাবার দেখে প্রিয় তো অভাক। কারন বাড়িতে আসার পর এখনো পর্যন্ত ঘরে কোনো রান্না বান্না হয়নি। তাহলে কি নাতাশা সব রান্না করলো নাকি?

এসব ভেবে প্রিয় হাসির ছলে নাতাশাকে বলতে লাগলো,

আরে বউ মনি তুমি তো দেখি একাই বাবুর্চি হয়ে গেলে।

প্রিয়র মুখে এমন কথা শুনে আফজাল চৌধুরি আর কল্পের হেচকি উঠে গেল।
কি বলল বৌ মনি। আফজাল চৌধুরি হয়তো ভেবেছে নাতাশাকে প্রিয় নিজের ভাইয়ের বৌ হিসাবে মেনে নিতে কষ্ট হবে। এখানে তো দেখে তার উল্টোটা।

নাতাশা এবার একগাল হেসে বলে। বাসুর জি আমি তোমার ছোট তাই বৌ মনি বলতে হবে না। আর এগুলো আমি কিছুই রান্না করি নাই। তোমার বৌ রান্না করছে। আমি জাষ্ট একটু সার্ভ করছি।

প্রিয় এবার অভাক হয়ে রইলো খাবার টেবিলের উপর। এটুকু একটা মেয়ে এত কিছু রান্না করতে জানে। তাহলে কি আজ তরুর মনটা ভালো নাকি যার কারনে এত কিছু রান্না। এতদিন তো ঘরে কোনো রান্নাই হয় নাই।আজ তো পুরা জমিয়ে দিয়েছে। এসব ভেবে প্রিয় বিরিয়ানি খাওয়ায় জন্য প্রস্ততি নিল।
কারন বিরিয়ানির ফ্লেভারটা খুব ভালো বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু যেই সাহেবা রান্না করেছে তাকে তো দেখাই যাচ্ছেনা। সব বাদ দিয়ে প্লেটে বিরিয়ানি নিল।

মুখে দিয়ে তো আরো হা রইলো। কারন বিরিয়ানিটা অসাধারন হয়েছে। একদম রহিমা খালার হাতের রান্না। আজ অনেকদিন পর এমন খাবারের স্বাদ পেল।

ঐদিকে আফজাল চৌধুরি আর কল্পের তো এখনো বিষম খাওয়ার মতো অবস্থা নাতাশা আর প্রিয়র এমন হাব ভাব দেখে। এত সহজেই দুজন সবটা মেনে নিল। খাবার খাওয়ার শেষে দেখতে পেল নাতাশা আর তার ভাই এসেছে। কারন আফজাল চৌধুরি নিজেই সবটা তাকে খুলে বলেছেন। ওনি সবটাই মেনে নিয়েছেন। কারন বাপ মরা মেয়ের জন্য এত ভালো একটা পরিবার থেকে সম্মোধন এসেছে এটাই অনেক। তবে আফসোস একটাই যে মিসেস আমেনা খাতুনের একটাই মেয়ে। কোনো অনুষ্ঠান ছাড়াই তাকে শশুর বাড়িতে পা রাখতে হলো। আমেনা খাতুন পুরো বিষয়টাই জানে কিডন্যাপ বিয়ের ব্যপারে। সবটা শুনে তিনি আফজাল চৌধুরিকে কৃতজ্ঞতা জানায়।

আমেনা বেগম এসে নাতাশাকে জরিয়ে ধরে। কল্প উঠে চলে যায় এখান থেকে। এমন একটা ভাব দেখায় যেন কিছুই হয় নি। নাতাশা কল্প চলে যেতেই সেও পেছন পেছন চলে আসে। আমেনা খাতুনকে আফজাল চৌধুরির সাথে মিট করিয়ে দিয়ে। কল্প রুমের ভেতর গিয়ে দেখতে পেল। তুলি বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে চুল শুকাচ্ছে। কল্প তার দিকে তাকিয়ে আছে। দরজার পাশ থেকে নাতাশা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে তাদের এমন দৃশ্য। তারপর নাতাশা দৌড়ে এসে কল্পের গলায় জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো,

আরে কল্প মাই র্ডালিং তুমি খবার খাবেনা।

কল্প নাতাশার এমন কথা শুনে জোরে জোরে কাশতে লাগলো।মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেল নাকি।

পাশের বাসার বারান্দা থেকে তুলি হঠাৎ এমন কথা শুনে কল্পের রুমের দিকে তাকালো তাকিয়ে দেখতে পেল কল্পের গলায় একটা মেয়ের জরিয়ে ধরে আছে আর কি যেন ফিসফিস করে বলছে । তুলি দেখে। মাথায় পেচিয়ে রাখা তোয়ালেটা একটা জোরে ঝাড়া দিল।তারপর এগিয়ে এসে বারান্দার রেলিং গেসে দাড়িয়ে বলতে লাগলো,

কী বেয়াদপ মেয়ে রে বাবা রোমান্স করার আর জায়গা পায়না। বলেই হনহনিয়ে চলে গেল তুলি। তুলি যেতে যেতেই নাতাশা কল্পের গলা থেকে হাতটা ছাড়িয়ে বলতে লাগলো,

কি ব্যাপার আমার সাথে কোনো কথা বলছো না কেন?

তখনই তরু রুমে ডুকল । তারপর নাতাশার সাথে তাল মিলিয়ে বলতে লাগলো,

কি হলো কল্প ভাইয়া তুমি সোনা আপুর সাথে কথা বলছো না কেন। ওনার কি দোষ। তোমার বাবার সাথের জেদটা কি তুমি আমার সোনা আপুর উপর ঢালছো নাকি।

কল্প তরুর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

কই আমি তো নাতাশার সাথে কথা বলছিই। সে তো বলে না।

নাতাশা সাথো সাথে কল্পের শার্টের কলার ধরে বলতে লাগলো,

কি কইলা আমি আবার কখন তোমার সাথে কথা বলি নাই।

নাতাশার এমন বিহেপ দেখে কল্প ডোগ গিলতে থাকে। তরুর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

তরু এক গ্লাস পানি দে তো,,

তরু হাসতে হাসতে পানি এনে দিল। কল্প পুরো পানি এক টানে খেয়ে বলতে লাগলো,

মেয়ে মানুষের এত জোর আসে কোত্থেকে। বাপ রে বাপ। বলেই দৌড় দেয়।

______________________
বিকেল ৪টা বাজে । ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে আছে প্রিয়।অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। এক ক্লান্তি হতাশা নিয়ে দাড়িয়ে আছে সেই ৩টা থেকে। ৪টা পেরিয়ে ৫টা বাজতে চলল এখনো তরুর আসার কোনো নামই নেই।তবে কি মেয়েটা আসবেনা নাকি। অপেক্ষার ক্লান্তি শেষ করে ৫ঃ৩০ মিনিট বাজতে চলল।এখনও তরু আসলো না। তাহলে হয়তো আসবেই না। কারন আজ সারাটা দিনও মেয়েটাকে একবার দেখেনি। তাই প্রিয় ছাদ থেকে নামার জন্য পা বাড়ায়। হঠাৎ ছাদের সিড়ি বেয়ে উঠার নূপুরের শব্দ কানে বেজে উঠলো। প্রিয়র বুকের ভেতরটাতে কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো। আস্তে আস্তে নূপুরের ধ্বনিটা যতই বাড়তে লাগে ততোই যেন প্রিয়র বুকটা ধুকধুক করে উঠে। এ কেমন অনুভূতি তার। অনুভূতি নামক জিনিসটাকে তো সে পুতে ফেলেছে তাহলে এসব কি। এগুলো ভাবতে ভাবতে দরজার দিকে তাকালো সে। দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে তার চোখের পলক যেন সরতেই চাইছেনা। কারন দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে তরু।

সাদা রঙের একটা জর্জেট থ্রিপিছ। মেচিং করা চুড়ি। চোখে গাঢ় করে কাজল দেওয়া। চুলগুলো মাঝখানে সিঁথি কেটে হালকা ভাবে বেনী করে রাখা। মুখে নেই কোনো সাজ সজ্জা। হাতের একটা সাদা রঙের পায়রা। যেটাকে তরু খুব স্নেহ করে নিজের সাথে রাখে। গায়ের রংটাও তেমন ফর্সা না তবে এক হলুদ ছাটা ধারন করে আছে শরীরে।কপালে কারো একটা টিপ। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে তরু এখনো সামনের দিকে তাকাচ্ছে না। তাকাবেই বা কি করে এই প্রথম যে সে প্রিয়র সামনে এমন কি মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে। যেখানে তার পুরো ফেইজ দেখা যাচ্ছে। প্রিয় এক ধ্যানে তরুর দিকে তাকিয়ে আছে। এ যেন কোনো নব্বই দশকের প্রেম ভালোবাসার প্রেয়সী দাড়িয়ে আছে সামনে। সাজসজ্জাটা ঠিক এমনই বলে দিচ্ছে তাকে।

হঠাৎ তরুর হাত পা কাপতে লাগলো। তরুর এমন কাপাকাপি ব্যপারটা বুঝতে পেরে সে বলতে মনে মনে বলতে লাগলো,

তরু কন্ট্রোল বি ইউর্স সেল্ফ। এভাবে কাপলে কিভাবে হবে।
হঠাৎ পায়রাটা উরাল মারলো তার পর্বতের দিকে। পায়রার উরালের শব্দে প্রিয়র ধ্যান ভাঙ্গে। তারপর গলা খাকড়িয়ে বলতে লাগলো,

সেই তিনটা থেকে তর অপেক্ষায় বসে আছি। আর তর এখন আসার সময় হলো।

তরু প্রিয়র সামনে আসাতেই প্রিয়র হার্টবিট যেন আরো দ্রুতগতিতে বাড়তে লাগলো,

প্রিয়র দিকে তরু এবার চোখ তুলে তাকালো। সরাসরি এখনো প্রিয়কে তার দেখা হয়নি। তাই এবার মুখোমুখি তার দিকে চোখ তুলে তাকালো।

ফর্সা গালে বড় বড় দাড়ি । মাথায় টুপ পড়া গায়ে শাল দিয়ে মুড়িয়ে
আছে। ঠোঁটগুলো কেমন যেন লাল ও না আবার তেমন গোলাপিও না । এক সাদা রঙ ধারন করে আছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন কত রাত ঘুমায় নি।

তরু এবার সাহস নিয়ে বলতে লাগলো,

কেন আমি তোমাকে বলিনি।

তা তুই বলিসনি ঠিকই। তবে তর সাথে আমার অনেক কথা আছে। যেগুলো তকে আমার বলা খুবই জরুরি

#চলবে