ইচ্ছে কথন পর্ব-০৭

0
607

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_৭

প্রিয় তরুর দিকে এক উদাসহীন হয়ে তাকিয়ে আছে। যেন এই চাওয়ার ভেতর লুকিয়ে আছে গভীরতা মায়ার চাদর। যেই মায়ার গভীরে পড়েছিল একদিন নাতাশার প্রেমে। তবে আজ আর প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুধু এই মায়াবতীকে দেখে যেতে।

তরু প্রিয়র দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

প্রিয় ভাইয়া আমাকে কিছু বলবে বলেছিলে।

প্রিয় তরুর থেকে চোখ ফিরিয়ে বলতে লাগলো,

তরু তুই কি আমাকে এখনো ভয় পাস?

প্রিয়র মুখে এমন বিচলিত কথা শুনে তরুর ঠোঁটের কোনে না চাইতেও হাসি চলে আসলো। এই হাসির মায়ায় শুধু প্রিয় নয় যে কেউই পড়তে বাধ্য। প্রিয় তরুর হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। কি মায়া ভরা ফুটন্ত হাসি। তরুর হাসির ছলে পাশ দিয়ে গেজ দাঁতটা ফুটে রয়েছে। যেটা হাসির সুন্দরের মাত্রাটা দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। চোখ মুখে ভেসে রয়েছে মায়া ভরা এক আবিজাক্তের ছোয়া। তরুর প্রান খোলা হাসি দেখে প্রিয়ও হাসতে লাগলো।তরু হাসতে হাসতে বলল,

তুমি কি এ কথাটা বলার জন্য আমাকে ছাদে ডেকেছো।

না। তবে তর সাথে আমার কিছু ইম্পর্টেন্ট কথা আছে।

তাহলে বলে ফেলো।জানই তো আমার আবার ধৈর্য্য নেই।

প্রিয় তরুর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

সত্যিই কি তর ধৈর্য্য নেই?

তরু প্রিয়র দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয় ঠিক কি বুঝাতে চাইছে সেটাই তরু মিন করে উঠতে পারছে না। তরু প্রিয়র দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

তোমার কি মনে হয়?

প্রিয় তরুর কথার প্রসঙ্গে বলতে লাগলো,

আমার তো অনেক কিছুই মনে হয়।এই যে রাতে আমার টির্শাট পড়ে ঘুমানো। তারপর আমার নামের প্রথম অক্ষর গলার চেইনের সাথে ঝুলে রাখানো। আবার আমার নাম দিয়ে নিজের ফোনের পাসর্ওয়াড ছেইব করে রাখা। আরো কত কিছুই।

তরু প্রিয়র দিকে অভাক হয়ে তাকিয়ে আছে। প্রিয়র টিশার্ট পড়ে ঘুমায় সেটা দেখেছে সকালে। কিন্তু তার নামের প্রথম অক্ষর গলার চেইনের সাথে রকেট বানানো সেটা দেখলো কিভাবে। আবার ফোনের পাসওয়ার্ড ও তো তাই সেটা জানলো কিভাবে।

তরু আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,

তুমি জানলে কিভাবে?

সিক্রেট। অ তুই বুঝবি না।

ও।

প্রিয় এবার তরুর থেকে হালকা দূরে গিয়ে দাড়ালো। ছাড়ের রেলিং গেসে উল্টোপিট দাড়িয়ে বলতে লাগলো,

তরু একটা কথা বলব। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস,

তরু প্রিয়র কথা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না৷ কি বলবে সে?

প্রিয় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কারন আকাশের মাঝে হালকা একটা চাঁদের আভা লুকিয়ে আছে যেটা রাত যত গভীর হবে ততো আলো ছড়াবে। প্রিয় সেটার দিকে তাকিয়ে তরুকে বলতে লাগলো,

তরু এদিকে আয়।

প্রিয়র ডাকে তরু গিয়ে তার পাশে দাড়ালো।তারপর প্রিয় বলতে শুরু করলো,

ঐ দুর্বিহীন আকাশটাকে দেখছিস।

তরু মাথা নাড়ালো। যার অর্থ হে।

প্রিয় আবারও বলতে শুরু করলো,

আকাশের ভেতর লুকিয়ে থাকা চাঁদের আভাটা দেখতে পাচ্ছিস।

তরু আবারো মাথা নাড়ালো।

প্রিয় আবারো বলতে শুরু করলো,

এমন একটা আভা আমার ভেতরও লুকিয়ে আছে। তফাৎটা শুধু একটাই সে রাত যত গভীর হবে সে আলো ছড়াবে। আর আমারটা হলো রাত যত গভীর হবে ততো তার স্মৃতি মুছে যাবে। অলরেডি অনেকটাই মুছে নিয়েছি। কিন্তু এখনো কিছু কিছু স্মৃতি আছে যেটা মুছে ফেলতে চাইলেও পারছি না।

তরু এবার বুঝতে পেরেছে। প্রিয় ঠিক কিসের ইঙ্গিত তাকে দিচ্ছে। তাই তরু নিজেই বলতে লাগলো,

আমি জানি তুমি সোনা আপুর কথা বলছো। তাই না?

প্রিয় তরুর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ স্টাচু হয়ে। আর ভাবতে লাগলো, তাহলে কি মেয়েটা সব জানে।

প্রিয় কিছুই বলল না। শুধু মাথা নাড়ালো। তরু প্রিয়র কাঁদে হাত রেখে বলতে লাগলো,

জানো তো প্রিয় ভাইয়া। তোমার কাছ থেকে আমি কম কষ্ট পাইনি। আমি জানি আমি খুব ছোট। আমার মাত্র ১৮ বয়স। আর তোমার ত্রিশ।আমার আঠারো বছর হয়েও আমার কথাগুলো বলা ঠিক না। তবে বলছি। আমার যখন বিয়ে হয়। তখন কিন্তু প্রেম ভালোবাসা এসব কি তা জানতাম না। তবে স্বামী কি সে বিষয়ে তোমাকে একটা এক্সামপল দিয়েছিলাম যেদিন তুমি চলে যাবে তার আগের দিন রাতে। কিন্তু যখন তোমার মুখ থেকে আমি শুনেছিলাম। তুমি নাকি আমার ফেইস কোনোদিন দেখবে না। যদি দেখো তাহলে সেদিনই যেন তোমার মৃত্যু হয়। এ কথাটা আমি ঠিক সে সময় বুঝতাম না। যখন আস্তে আস্তে বড় হতে লাগি তখন তোমার কথার মানেটা আমি বুঝতে পারি। তখন আমার মনে হয়েছিলো যে আমিই হয়তো প্রথম ব্যক্তি। যাকে কিনা তোমার ঘারে জোর করে চাপিয়ে দিয়ে সবাই সার্কাসের রঙ তামাশা দেখছে। আর তুমি সেই সার্কাসের ঝাল মেটাচ্ছো আমার সাথে। আমি তো তোমাকে একবারের জন্যও বলিনি আমাকে স্ত্রীর অধিকার দাও। আমাকে আরো ৫টা মেয়ের মতো বাচ্চা দাও সংসার দাও। এটা দাও সেটা দাও। কিন্তু তুমি কি করলে এই ৫টা বছর বিদেশ চলে গেলে। পরিবারের সবার সাথে যোগাযোগ রেখেছো ঠিকই কিন্তু আমার কথাটা একটা বারও জিজ্ঞেস করো নাই।যে আমি কেমন আছি খেয়েছি কিনা । মানছি বিয়েটা জোর করেই হয়েছে। কিন্তু মানুষ হিসাবে একটিবার তো মানুষের খবর নিতে পারতে। জানো তো তখন আমার খুব কষ্ট হতো। ভাবতাম আমি কি এতটাই পর তোমার। যে কিনা সম্পর্কে এতটা আপন হয়েও। ব্যক্তিগত জীবনে পর।

প্রিয় তরুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যিই সে অনেক বড় ভুল করেছে। এই বাচ্চা মেয়েটার ভেতরও যে এতটা কষ্ট যন্ত্রণা জমে আছে। সেটা তো সে বুঝতেই পারে নি। যদি আজ না বলতো। তরুকে থামিয়ে প্রিয় বলতে লাগলো,

তরু আমার বয়স আর তর বয়সটা মিন করতে পাচ্ছিস। যেখানে আমি একটা ৩০বছরের বুড়ো সেখানে তর মতো ১৮বছর বয়সের কিশোরী মেয়েকে কিভাবে নিজের করে ভাববো তুই বল।

তরু প্রিয়র দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলতে লাগলো,

আমি তো তোমার বয়সকে যাচাই করিনি। আমি তোমাকে যাচাই করেছি। হও না তুমি আমার বুড়ো বর সমস্যা কী। ভালো তো তোমাকেই বাসি।

প্রিয় তরুর মুখে এমন কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল তাহলে কি সত্যিই মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। যার জন্য এত বড় বড় কথা বলছে।

প্রিয় তরুর কথা শুনে কিছুই বলল না। শুধু একটা কথাই বলল,

এসব পাগলামি করিস না তরু তরই বিপদ। আমার সাথে নিজের জীবনটা জড়াস না। তাহলে যে তুই নিজেই ছাড় খার হয়ে যাবি।

তর প্রিয়র দিকে তাকিয়ে একটা মৃদু হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,

আমি তো সেই কবেই ছাড় কার হয়ে গেছি। যখন বুঝতে শিখেছি প্রেম কি?

প্রিয় বুঝতে পেরেছে মেয়েটা বেশ গভীরে চলে গেছে। তার ভেতর এখন অনুভূতির প্রকৌপ বয়ে যাচ্ছে। যেটা থেকে বের করা বড্ড মুশকিল।

_______________

রাত নয়টা বাজে নাতাশা বসে বসে ওয়েট করছে কল্পের কারন কল্প এখনো বাসায় ফেরেনি। তাই নাতাশা রুম থেকে বের হয়ে নিচে যেতে নেয়।নিচে যেতেই দেখতে পায়।প্রিয় তার রুমের ভেতর ডুকছে হাতে পানির জগ নিয়ে। নাতাশা প্রিয়কে ফলো করতে করতে তরুর রুমের সামনে যায়।তরুর রুমের সামনে গিয়ে দেখতে পায়।তরু বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে। নাতাশা পুনরায় আবার তার রুমে চলে গেল।গিয়ে দেখতে পেল কল্প কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। এটা কি হলো। সে তো দেখেছে কল্প এখনো বাড়ি ফিরে নি তাহলে এখন আবার এভাবে কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে রইলো কিভাবে। নাতাশা চোখ দুটো ডলে আবার সামনের দিকে তাকালো। তাকিয়ে একই দৃশ্য দেখতে পেল।নাতাশা কল্পের গা থেকে কাথাটা টান মেরে নিয়ে জেদি গলায় বলতে লাগলো,

রাত ৯টা বাজতে চলল।এখনো কোনো দানা পেটে পড়ে নি। আর মহাশয় কখন হসপিটাল থেকে ফিরে আবার ঘুমের রাজ্যেও চলে যাচ্ছে। ব্যপারটা কি ভাবা যায়?

কল্প এবার বিরক্ত নিয়ে শুয়া থেকে উঠে বলতে লাগলো,
কাল রাতে সোফায় ঘুমাইছি। আর পারুম না । বাপরে বাপ কি এসিড মশা আমারে ইঞ্জেকশন মারছে তুমি বুঝবা ক্যালা । মাফও চাই দোয়া চাই আমার খাট আমারে ফিরাই দেও।

কল্পের কথা শুনে নাতাশা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কল্প নাতাশার হাসির কারন বুঝতে পারছে না।এভাবে হাসার কি আছে।

নাতাশা এবার হাসি বন্ধ করে কল্পকে বলতে লাগলো,

কল্প তোমাদের গ্রামের বাড়ি যেন কোথায়?

কেন?বরিশাল।

ও এজন্যই তো এত সুন্দর ভাষা ইউস করছো।

কল্প এবার বুঝতে পেরেছে নাতাশার এভাবে হাসার কারন। তাই কল্প নাতাশাকে বলল,

রাগ উঠলে নিজের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করি। এহন যাও সামনে থেইক্কা হরো কইছি। নই তো তোমারে গারাই ফেলুম।

নাতাশা আবারো হাসতে লাগলো।কল্প নাতাশাকে এভাবে হাসতে দেখে বলতে লাগলো,

মশা খা মশা খা। হুনো মাইয়া আমি যেরুম তোমারে হাসাতে পারি সেরুম কাদাইতেও পারি। সো নেক্সটাইম আমার থেকে দূরে দূরে থাকবা। কারন আমার আবার নজর ভালা না।

নাতাশা হাসতে হাসতে কখন যে তার গায়ের উরনা কাদের এক সাইটে চলে এসেছে যেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। খেয়াল থাকবেই বা কিভাবে সে তো কল্পের কথাগুলো শুনে হাসায় ব্যস্ত।

কল্প আবারো বিরক্ত হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে চোখগুলো নিচে নামিয়ে ফেলল সাথে সাথে। নাতাশা এখনো হাসতে ব্যস্ত।
কল্প এবার উপরের দিকে তাকিয়ে নাতাশার গালে একটা কিস করে। তারপর উরনাটা ভালো করে গায়ের সাথে পেচিয়ে বলতে লাগলো,

বল ছিলাম না নেক্সটাইম আমার থেইক্কা দূরে থাকবা। আমার নজর ভালা না। শুনলা না তো। বলেই বেরিয়ে গেল নিচে খাবার খেতে। নাতাশা সোজা হয়ে উল্লুক বিড়ালের মতো করে তাকিয়ে আছে কল্পের চলে যাওয়ার দিকে। এটা কি হলো সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।

নাতাশা আস্তে আস্তে বিড়ালের মতো করে নিচে গেল গিয়ে দেখতে পেল সবাই ডিনারের জন্য বসে আছে। আজ তরু প্রিয়র পাশে বসে আছে। আফজাল চৌধুরি মাঝখানে। তারপর কল্প কল্পের পাশের সিটে গিয়ে মিনি বিড়ালের মতো করে বসে পড়লো চুপচাপ। এদিকে তরু প্রিয়র দিকে এক ধ্যানে তাকিয়েই আছে। লোকটা একবারও তাকাচ্ছে না। এটা ভেবেই জোরে নিজের পা টাকে আছাড় মারলো।ভাগ্যবশত সে আছাড়ের বারি গিয়ে লাগলো প্রিয়র পায়ে। বেচারা তো আহ,, করে উঠলো। কল্প আর আফজাল চৌধুরি বুঝতে পারছে না প্রিয় এভাবে আহ,, কেন করলো। তাই কল্প বলতে লাগলো,

কি হলো ভাইয়া এভাবে আহ করছো কেন।

প্রিয় তরুর কেসটা বুঝতে পেরেছে। কারন তরু এখন খাবারের প্লেট ঘাটছে আর অনাবরতো কেপেই যাচ্ছে।

তাই প্রিয় বলতে লাগলো,

এখন তো শীতকাল আসতে চলেছে। বাহিরে তো বিড়াল কুকুরের আমদানির প্রকৌপটা দেখাচ্ছে বেশি।হয়তো কোনো বিড়াল ভুলে চলে এসেছে আমাদের বাসায়। তাই কামড় দিয়ে আমাকে সজাগ করলো এই আরকি।

প্রিয়র এমন কথা শুনে তরু রাগী মোড নিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আফজাল চৌধুরিকে বলতে লাগলো,

বাবা কোন দিক থেকে আমাকে বিড়াল মনে হয় বলো তো।

তরুর কথা শুনে নাতাশা কল্প প্রিয় আফজাল চৌধুরি সবাই তাকিয়ে তার দিকে আছে। কেউ কিছু বুঝতে পারছেনা এখানে একজেটলি হচ্ছেটা কি।
তরু নিজের জিহ্বা কামড় দিয়ে আস্তে করে সরি বলে দিল দৌড়।

#চলবে