ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-৩+৪

0
8131

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩

-“ডক্টর… ডক্টর পেশেন্ট এর রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে । এক জন নার্স ছুটতে ছুটতে ডক্টর কে ডেকে ওঠে।

কিছুক্ষণ পরে ডক্টর আর সাথে দুজন নার্স এসে রুমে ঢোকে। ডক্টর তাড়াতাড়ি করে চেক করতে থাকে। পাশের মেশিনে সিম্বল উঠছে। হাতের কিছু অংশ নড়ছে। কিছুক্ষণ চেক করার পর ডক্টর যেনো একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলে। যেনো এতক্ষণ এটা আটকে ছিল। তার পরেই দুজন নার্স কে সব কিছু রুম থেকে বেরোতে সামনে এসে দাঁড়ায় একটি মেয়ে।

-“ডক্টর আমার দিদিয়া কেমন আছে এখন। উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে।

-“এখন কেমন আছে আমার মেয়ে বলুন না ডক্টর চুপ করে আছেন কেনো বলুন না। পাশের থেকে একজন ভদ্রমহিলা হাফাতে হাফাতে বলে ওঠে।

-“সি ইজ আউট ডেন্জার রেসপন্স করছে কিছুক্ষণ এর মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে। ডক্টর হালকা হেসে বলে ওঠে।

-“আমরা কি এখন ওর সাথে দেখা করতে পারি?

-” হ্যাঁ তবে দেখবেন বেশি কথা বলবেন না।

-” ওকে ডক্টর।

ডক্টর চলে যেতেই ওই মেয়েটা আর ভদ্রমহিলা রুমে ঢোকে। ভিতরে যেতেই দেখতে পায় একজন নার্স স্যালাইন চেঞ্জ করছে আর একজন মেশিন এর কাছে দাঁড়িয়ে থেকে কিছু করছে। বেডের দিকে দেখতে যেনো বুকের মধ্যে হাজারো যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায় দুজনের। চোখ দিয়ে তাদের আপনাআপনি পানি পড়ে যাচ্ছে। নার্স দুটো ওদের কাজ করে বেরিয়ে যায়। এদিকে দুজন আসতে আসতে বেড এর কাছে এগিয়ে যায়।

বেড এর ওপরে পড়ে আছে একটা বডি যদিও বেঁচে আছে কিন্তু এই মুহূর্তে দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই যে এটা মৃত না জীবিত। যদি না মেশিনে তার বেঁচে থাকার সিম্বল উঠত। পুরো বডিতে ব্যান্ডেজ করা। কোথাও এক চুল পরিমাণ ফাঁকা নেই। ব্যান্ডেজ এর ওপরে কোথাও কোথাও চাপ চাপ রক্ত ফুটে আছে। একটা হাতে স্যালাইন ও অন্য হাতে রক্ত দেয়া আছে। নাকে দুটো নল লাগানো। যাতে করে নিঃশ্বাস টা নিতে পারে সেই ব্যাবস্থা করানো আছে। পুরো বডিতে দেখা যাচ্ছে বলতে গেলে শুধু চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তাও আবার ভ্রু এর ওপরে ব্যান্ডেড লাগানো।

ভদ্রমহিলা টা পাশের টুল এর ওপরে বসে আলতো করে হাত টা ধরে যাতে আবার না লাগে তাই। চোখে থেকে অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছে।

-“মম প্লিজ কান্না করো না দেখো ডক্টর তো বললো দিদিয়া এখন বিপদ মুক্ত এর তাছাড়া দিদিয়া যদি উঠে দেখে তুমি এই ভাবে কান্না করছো তাহলে কিন্তু খুব কষ্ট পাবে। তুমি তো জানো দিদিয়া তোমার চোখে পানি দেখতে পারে না। মেয়েটি কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে ওঠে।

-” দেখ না লেখা ও কেমন ভাবে পড়ে আছে ওকে দেখেই আমার বুকটা যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে আজ তিনদিন হয়ে গেছে দুদিন হয়ে গেলো ওর কোনও জ্ঞান নেই। ওকে কি এই ভাবে দেখতে ভালো লাগে আমার। অস্পষ্ট ভাবে বলে ওঠে ভদ্রমহিলা।

-“মম শান্ত হয়ে যাও ডক্টর তো বললো ওর যেকোনো মুহূর্তেই ওর জ্ঞান ফিরে আসতে পারে। লেখা বলে ওঠে।

-” ও কেনো করলো এটা। একবারও আমাদের কথা ভাবলো না।

বলেই দুজনই কান্নায় ভেঙে পড়ে। দুজন দুজন কে জড়িয়ে বেড এর পাশে বসে আছে।

—————

মানান ম্যানসনে এখন পরিবেশ পুরোই শান্ত। বাড়িতে শোক সভা চলছে বলতে গেলে। আজ দুদিন হয়ে গেছে তাথই এর মৃত্যুর । সেদিন এর পর থেকে তাথই এর দাদু আর মা নিজেকে প্রায় ঘর বন্দি করে ফেলেছে। তাথই এর বাবা যেনো নীরব হয়ে গেছে। বাড়ির পরিবেশ পুরো পরিবর্তন হয়ে গেছে।

তবে এই সবের মাঝে ও নিজেকে সবার সামনে অসহায় দেখালো ও নিজের মনের মধ্যে বেশ খুশি হয়ে আছে। এখন যেনো তার আনন্দের শেষ নেই। বাড়িতে কারোর কাজ করা খাওয়ার মন নেই আর এদিকে রেস্টুরেন্টে একটা প্রাইভেট কেবিনে বসে একের পর এক আইটেম খেয়ে যাচ্ছে আর তার সাথে ওয়াইন এর গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে তানিয়া । আর তোর পাশেই তার কোমরে হাত রেখে ঘনিষ্ট হয়ে বসে আছে অভি। দুজন কে এই মুহূর্তে দেখলে মনে হবে তারা তাদের নেশায় ডুবে আছে।

অভি হাতের গ্লাস টেবিলে রেখে তানিয়া কে নিজের দিকে টেনে নিয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস এর ওয়াইন তানিয়ার ঠোঁটের ওপরে ফেলতে থাকে। এর তারপরে নেশাতুর চোখে তাকিয়ে থেকে ঠোঁটে ডুব দেয়। দুজন এই মুহূর্ত কে কিছুক্ষণ মজা নেওয়ার পরে একে অপরকে ছেড়ে বসে।

-“সো ফাইনালি তানিয়া এখন আর আমাদের মাঝে কোনো বাঁধা নেই। নেক্সট উইক ফিল্ম এর প্রোডাকশন এর কাজ শুরু হয়ে যাবে। আর এর সাথে তোমার অ্যাকটিং ক্যারিয়ার এর শুরু হবে। এতদিন তুমি টপ মডেল ছিলে আর এখন হিরোইন। অভি তানিয়ার গলায় হাত রেখে বলে ওঠে।

-” ইয়েস এতদিনে আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমার জীবনের কাঁটা দূর হয়ে গেছে। তানিয়া বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

-” আচ্ছা ওদিকে কি অবস্থা হ্যাঁ। সব ঠিক আছে তো? অভি বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ একদম বাড়িটা দেখলেই মনে হয় কোনো শোক বসে গেছে। তানিয়া বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

-” আমি এখনও তাথই এর মৃত্যু টা মেনে নিতে পারছি না। অভি উদাস হয়ে হাতে গ্লাস তুলে নিয়ে বলে ওঠে।

-“মানে কি বলতে চাইছ তুমি? তুমি ওর সাথে অভিনয় করতে করতে ওকে আবার ভালোবেসে ফেলনিতো তানিয়া বেশ হকচকিয়ে গিয়ে ওঠে।

-“আরে না। দেখো আমরা ওর সাথে অভিনয় করেছি ঠিক কথা কিন্তু আমি কখনো ওর মৃত্যু চাইনি। হ্যাঁ এটা ঠিক আমি স্বার্থের জন্য ওকে এক রাতের জন্য বেঁচে দিয়েছিলাম কিন্তু স্টিল আমি ওর মৃত্যু চাইনি। ওর মৃত্যু টা আমাকে এখনও ভাবাচ্ছে। আমি এখনও বুঝতে পারছি না কেনো ঝাঁপ দিলো। আনমনে বলে ওঠে অভি।

এদিকে অভি এর কথা শুনে তানিয়া ঘামতে শুরু করেছে। অভি যে মৃত্যু টা স্বাভাবিক নেই নি এটা ভেবে ঘাবড়ে যাচ্ছে। যদি এখন এটা ইনভেস্টিকেট করা তাহলে হোক না হোক যদি ও ধরা খেয়ে যায়। কারণ অভি তাথই এর মৃত্যুর ব্যাপার কিছুই জানে না। এটা শুধু মাত্র তানিয়া জানে। আর হোটেল এর কর্নার এর সিসি টিভি ফুটেজ। টাকা খাইয়ে হোটেল এর লোক কে মুখ বন্ধ করে রেখেছে। না না কিছু একটা করতে হবে। এটা ভাবতে থাকে তানিয়া।

-“কি হয়েছে বেবি। তুমি এত ঘামছো কেন এনি প্রবলেম। অভি হন্তদন্ত হয়ে বলে ওঠে।

-” নো নো আই এম ফাইন। শরীর টা একটু খারাপ লাগছে।

-“ওকে চলো এখন যাওয়া যাক এত কিছু নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। বলেই অভি তানিয়া কে ধরে নিয়ে বেরিয়ে যায় হোটেল থেকে।

—————-

মুম্বাই এয়ারপোর্ট চারিদিকে ভিড়ে ভোরে আছে প্রেস মিডিয়া আর পাবলিক দিয়ে। এয়ারপোর্ট এর ভিতরে চারিদিকে বডি গার্ড দিয়ে ভরা। ভিতরে বডি গার্ড ছাড়া আর কোনো পাবলিক নেই। বাইরে আর ভিতরের এই অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কোনও নামি দামি মানুষ আসতে চলেছে। তার জন্য হয়তো আজ এয়ারপোর্ট এত ভিড় জমে আছে। কিছু ক্ষণ পর প্লেন ল্যান্ড করতে বাইরে থেকে হালকা একটা স্লোগান শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কারোর নাম ধরে সব চিৎকার দিচ্ছে. বাইরের এই পরিবেশ পুরোটাই কভার করছে মিডিয়ার লোকেরা। আসতে আসতে টার্মিনাল ক্রস করে আসতে দেখা যায়। পুরো দেখতে গেলে বডি গার্ড দিয়ে মোড়া চারিদিকে থেকে। আর তার মাঝে থেকেই দেখে যায় কাউকে বেরিয়ে আসতে।

চারিদিকে থেকে আসতে আসতে বডিগার্ড গুলো সরে দাঁড়ায় আর তার পরেই বেরিয়ে আসে একজন সুদর্শন পুরুষ যাকে এক নজর দেখার সাথে সাথে বেহুস হওয়ার জোগাড় হয়ে যায়। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা।জিম করা বডি দেখলে মনে হয়। ব্ল্যাক কম্পিলিট স্যুট যেনো আরো গায়ে ফুটে উঠছে সৌন্দর্য যেনো ফুটে ফুটে বেরিয়ে আসছে। হাঁটার স্টাইল আর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ যেনো সবার দৃষ্টি একসাথে আকর্ষণ করে নেয়। চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস। চুল গুলো স্পাইক করা। হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ। দুধ সাদা গায়ের রং এর সাথে কালো ড্রেস দেখে মনে হচ্ছে যেনো রাজার আগমন ঘটেছে। মুখে ট্রিম করা দাড়ি। হালকা পিঙ্ক ঠোঁট আর বাম গালে একটা কালো তিল যেনো এটা এই রূপ কে আরো বেশি বেশি করে সবার সামনে তুলে ধরছে। দেখে কোনো ব্রিটিশদের কম লাগছে না।

এয়ারপোর্ট এর বাইরে আসতে চারিদিকে যেনো এবার কান ফাটানো চিৎকার ভেসে আসে। চারিদিকে থেকে ফুলে এসে পড়ছে গায়ে। কিন্তু কেউ সামনে এগোতে পারছে না কারণ চারিদিকে থেকে বডিগার্ড দিয়ে ঘেরা তাই কেউ চেষ্টা করলেও কাছে আসতে পারবে না। কিন্তু যার জন্য এইসব সেই এক নজর সবার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। তার এইসব কোনো মাথা ব্যথা নেই। এইসব দেখে দেখে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তাই এইসব তার কাছে কিছুই মনে হয়না। তার কাছে কোনো মেয়ে আসার আগে তাকে আটকে দেয়া হয়। তার নামে কোনো স্ক্যান্ডেল নেই এই আটাশ বছরের জীবনে আর এই অ্যাটিটিউড এর জন্য মেয়েরা আরো বেশি বেশি মরে।

বাইরে এখন একটাই নাম ধরে চিৎকার চলছে আর তার সাথে মিডিয়া পুরো টা কভার করছে তাদের কাছে এই নিউজ কোনো খাজনার থেকেও কম কিছু না। “রেয়ান্স” এই একটাই নাম। ইন্টারন্যাশনাল বিসনেজম্যান এর টপ ওয়ানে যার নাম এখন। সেই আর আর ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিস এর বস “রেয়ান্স রাওয়াত” বস অফ দ্য বসেস পুরো এই ইন্ডাস্ট্রি ও বিজনেস জগতের একমাত্র রাজা। তার আগমনে তো এটা ঘটবে এটা অস্বাভাবিক কিছু না বরং এখন যদি এয়ারপোর্ট এর বাইরে এই ঘটনা না হতো তাহলে এটা অস্বাভাবিক কিছু হতো। চারিদিকে বডিগার্ড দিয়ে মোড়া থাকলে ও তার মাঝে থেকেই তার গায়ের ওপরে তার জন্য এখানে থাকা ভিড় এর মানুষ জন তার ওপর ফুল ছুড়ছে।এটা প্রতিবারই হয়। আর এখন এটা হওয়া আরো বেশি স্বাভাবিক কারণ আজ দু বছর পর মুম্বাই ব্যাক করেছে আর সেই জন্য আজ এত ঘটা। সবার মাঝে থেকেই নিজের সারা শরীরে ফুল নিয়ে গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যায়। এতক্ষণ এর মধ্যে শুধু তার মুখ দিয়ে একটা কথা বের হয়।

-“হসপিটাল চলো।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৪

-“ডক্টর মম দিদিয়ার জ্ঞান ফিরছে। লেখা রুম থেকে বেরিয়ে চিৎকার করে ডেকে ওঠে। মুখে রয়েছে প্রশান্তির এক হাসি আর চোখে পানি চিক চিক করছে।

লেখার হাঁক ডাক এর জন্য ডক্টর নার্স কেবিনে এসে ঢোকে। ডক্টর খানিকক্ষণ চেক করে দেখে নেয়।

-” মিসেস দেওয়ান আপনার মেয়ে এখন একদম ঠিক আছে। ডক্টর বলেই বেরিয়ে যায়।

লেখা আর মিসেস দেওয়ান মুখে হাসি আর চোখে পানি নিয়ে এগিয়ে যায় বেড এর দিকে। বেড এর পাশে বসে হাত উঠিয়ে আসতে আসতে মাথায় বুলিয়ে দিতে থাকে। চোখের থেকে পানি গড়িয়ে মুখের ওপরে পড়তে আসতে আসতে চোখ খুলে পিট পিট করে তাকায়।

পিট পিট করে তাকাতেই দেখে চোখের সামনে দেখতে দুটো মুখ চোখে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু ক্ষণ চুপ করে থাকার পর মুখ থেকে কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না সারা মুখে ব্যান্ডেজ থাকার জন্য। চোখের ইশারায় কাঁদতে বারণ করে নিজের হাত সর্ব শক্তি দিয়ে উঠিয়ে চোখের পানি মুছে দেয় মিসেস দেওয়ান এর।

-“আ..দ..র মা আমার । কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে মিসেস দেওয়ান।

-” দিদিয়া ।লেখা ও অন্য দিকে থেকে গিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে।

আদর কাঁপা কাঁপা হাতে দু হাত উঠিয়ে দুজন কে আলতো করে দু দিকে থেকে জড়িয়ে নেয়। মাথা নাড়িয়ে কাঁদতে বারণ করে। তাদের এই কান্না দেখে তার চোখে ও পানি চলে এসেছে। শুধু মুখে কিছু বলতে পারছে না। কিছুক্ষণ ওরা এভাবে থাকার রুমে নার্স আসে। আদর কে দেখে মুখের থেকে ব্যান্ডেজ কেটে দেয় শুধু ঠোঁটের কাছের জায়গা টা যাতে কথা বলতে ও খেতে পারে। তাছাড়া এখনও সেই আগের মত ব্যান্ডেজ করা আছে। নার্স চলে যেতেই মিসেস দেওয়ান আবারো এসে বসে পড়ে।

-“ম..ম কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে আদর।

-” হ্যাঁ মা এই তো আমি তোর কাছেই আছি। কেনো এমন করলি মা? আমাদের কথা একবারও ভাবলি না? মিসেস দেওয়ান কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।

-“আআই এম সরি মম। আবারও বলে ওঠে আদর।

-” ঠিক আছে এবার একটু খেয়ে নে মা দুদিন তোর পেটে কিছু যায়নি। মিসেস দেওয়ান বলে ওঠে।

-” কেনো স্যালাইন খেলো রক্ত খেলো আর কি চাই। ওর তো এই গুলোই প্রিয় তাইতো এই কাজ করল। লেখা রুমে ঢুকে বলে ওঠে।

-” মম । আদর কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে ওঠে।

-” থাক আর মম বলতে হবে না। খেয়ে নে। লেখা মুচকি হেসে বলে ওঠে।

লেখা এসে একসাথে মম আর তার দিদিয়া কে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে।

————–

মুম্বাই সিটি হসপিটাল এর সামনে গাড়ি থামতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে রেয়ান্স আর তার সাথে আছে চার জন গার্ড শুধু তার কাছে আসা পাবলিক সামলানোর জন্য। গাড়ি থেকে নেমে গটগটিয়ে হেঁটে ভিতরে চলে যায়। ভিতরে ঢুকতেই সবাই যেনো একদম হা করে গিলে নিচ্ছে পুরো। সব কিছু থেমে গেছে সাথে চারিদিকে মানুষ গুলো ও যেনো স্টাচু হয়ে গেছে। কিন্তু এদিকে কোনো রকম তোয়াক্কা না করে নিজের অ্যাটিটিউড বজায় রেখে ফোর্থ ফ্লোরে এসে একটা প্রাইভেট কেবিনে ঢুকে যায়। সামনের দিকে তাকাতেই যেনো এত ক্ষণ এর অ্যাটিটিউড নিয়ে থাকা মুখ গম্ভীর আকার ধারণ করে।

সামনে হসপিটাল এর বিছানায় শুয়ে আছে এক বয়স্ক লোক। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হাতে স্যালাইন চলছে। পাশেই ডক্টর দাঁড়ানো আছে। রেয়ান্স চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে ভিতরে গিয়ে বেড এর পাশে থাকা টুল এর ওপর বসে পড়ে। হাতের ওপর হাত রাখতে আসতে আসতে চোখ খুলে তাকায়।

-“এখন কেমন আছো। রেয়ান্স শান্ত ভাবে বলে ওঠে।

মুখের থেকে মাস্ক খুলে আস্তে আস্তে উঠে বসার চেষ্টা করে। এটা দেখেই রেয়ান্স ধরে আলতো করে বসিয়ে দেয় হেলান দিয়ে।

-“ডক্টর ওনার রিপোর্টে কি আছে? রেয়ান্স জিজ্ঞেস করে।

-“দেখো রেয়ান্স বেটা তোমার দাদুর হার্ট ব্লক ধরা পড়েছে সাথে এই নিয়ে দুবার ওনার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে। ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস তাই এটা কে ঠিক ভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে। এখন ওনার কোনো কাজ বা কথা ফেলা যাবে না এতে ওনার মনের ওপর জোর পড়ে। নাহলে এবার হার্ট অ্যাটাক আসলে রিস্ক হয়ে যাবে ওনার জন্য। বলে ওঠে ডক্টর।

-“তুই এসেছিস? আমার একটা কথা রাখবি রিস আমি যাওয়ার আগে নাতবউয়ের মুখ দেখে যেতে চাই। দাদু বলে ওঠে।

-” হোয়াট? খানিকটা চেঁচিয়ে বলে ওঠে রেয়ান্স।

-“হ্যাঁ দেখ তোর আটাশ বছর বয়স হয়ে গেছে। আর আমি আজ আছি কাল নেই তাই যাওয়ার আগে এইটা তোর কাছে শেষ ইচ্ছা আমার। তুই দেখ তোর দাদুর শেষ ইচ্ছা পূরণ করবি কিনা।

-“দাদু হঠাৎ বিয়ে কেনো? আর কে বললো তুমি এখনই চলে যাবে। তোমাকে আমি বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাব। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-” দেখো বেটা এই অবস্থায় ওনাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া একদম সেফ না যা কিছু হয়ে যেতে পারে আর তাছাড়া ওনার মনের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। ডক্টর সিরিয়াস মুখ করে বলে ওঠে।

-” তুই আমার এই একটা ইচ্ছা পূরণ করবি না তাহলে যে আমি মরে ও শান্তি পাব না। দাদু ইমোশনাল ভাবে বলে ওঠে।

এদিকে বেচারা রেয়ান্স পড়েছে মহা জ্বালায়। কি করবে বুঝতেও পারছে না তার ওপর তার দাদুর এই অবস্থা। তাই বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে। চুপচাপ করে বসে থাকতে দেখে রেয়ান্স এর দাদু ডক্টর এর দিকে তাকিয়ে দেখে দুজন ইশারায় কথা বলে। রেয়ান্স এর দাদু এবার রেয়ান্স এর হাতের ওপর হাত রাখে।

-“রিস তুই আমার ইচ্ছা টা পূরণ করবি না? দাদু বলে ওঠে।

-” আচ্ছা ঠিক আছে আমি বিয়ে করব। তার আগে তুমি আগে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে চলো। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-“না বাড়ি না আজকে তোর বিয়ে হবে। দাদু বলে ওঠে।

-” হোয়াট? আজকে? কি ভাবে মেয়ে কোথায় পাবো? রেয়ান্স যেনো এবার আকাশ থেকে পড়েছে।

-” সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না আমি মেয়ে দেখে রেখেছি। দাদু বলে ওঠে।

-” বাহ মেয়ে দেখে রেখেছ তো ভালো কথা তাহলে অপেক্ষা কিসের ছিল তুমিই বিয়ে করে নিতে পারতে। রেয়ান্স দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

-“মানে? আমি কি আমার জন্য মেয়ে দেখেছি নাকি? যদিও মেয়ে দেখেই আমার বেশ পছন্দ হয়েছে আর যদি আমার সময় থাকতো তাহলে তোকে বলতে হতো না আমি nijei বিয়ে করে নিতাম। দাদু বলে ওঠে।

রেয়ান্স অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দাদুর দিকে আর এদিকে ডক্টর ও অন্য দিকে মুখ লুকিয়ে হাসতে থাকে দাদু নাতির কথা শুনে যেমন দাদু তার তেমন নাতি ভেবেই ডক্টর হাসছে। এদিকে রেয়ান্স কিছুক্ষণ হতভম্বের মত তাকিয়ে থেকে গলা ঝেড়ে ওঠে।

-“দেখো দাদু আমি আজকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি বিয়ে করব বলেছি মানে আজকে নয়। যদি তুমি এমন করো তাহলে আমি আবার পালিয়ে যাব। রেয়ান্স গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।

দাদু রেয়ান্স এর কথা শুনে আবারো ডক্টর এর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে আবারও দুজন ইশারায় কথা বলে।

-” আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে এক সপ্তাহ টাইম দিলাম। আর এক সপ্তাহ পরেই তোমার বিয়ে হবে এটা মাথায় রেখো আর এটাই আমার শেষ কথা। এবার দাদু একটু রুড হয়ে বলে ওঠে।

-” ওকে । বলে উঠে বেরিয়ে যায় রেয়ান্স।

রেয়ান্স বেরিয়ে যেতে দুজন একে অপরের দিকে ইশারা করে। ডক্টর রুমের বাইরে এসে উকি দিয়ে দেখে রেয়ান্স চলে গেছে। এটা দেখেই রুমে ঢুকে মাথা নাড়িয়ে ওঠে। দুজন দুজন এর দিকে দেখে হাই ফাইভ করে হেসে ওঠে। রেয়ান্স এর দাদু হাতের থেকে স্যালাইন সূচ খুলে ফেলে। হাতে স্যালাইন টা এমন ভাবে লাগানো ছিল যাতে কেউ দেখলে বুঝতে পারবে না। বেড এর ভালো ভাবে বসে পাশের টেবিল এর ওপর রাখা ঝুড়ি থেকে আপেল তুলে খেতে শুরু করে।

-“বেটা তুমি যদি রেয়ান্স রাওয়াত হও তো আমিও রাগিব রাওয়াত। তোমাকে কিভাবে সোজা করতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি। বেটা বিদেশে বসে থাকা আর মেয়েদের থেকে দূরে থেকে সন্ন্যাসী হওয়া আমি বের করছি। এমন ব্যবস্থা করেছি না বাছাধন তুমি পালাতে পারবে না হুম। রেয়ান্স এর দাদু বলে ওঠে।

-“যায় বল আমি তো ভয়ে ভয়ে ছিলাম এ যা ছেলে এই না ধরে ফেলে এখুনি। ডক্টর হাসতে হাসতে বলে ওঠে।

-” তুই ও কিন্তু ভালোই অ্যাকটিং করতে পারিস। আরে বিয়ে করবে না মানে ও করবে ওর বাপ করবে ওর দাদু ও করবে। রেয়ান্স এর দাদু বলে ওঠে।

-“মানে তুই ও আবার বিয়ে করবি নাকি? ডক্টর টা আতকে উঠে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ না করার কি আছে। আমি এখনও ইয়ং আছি। রেয়ান্স এর দাদু জামার কলার উঁচু করে বলে ওঠে।

আর এটা দেখেই ডক্টর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।

————
মানান ম্যানসনে এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে শুধু মাত্র তাথই এর মা আর দাদু ছাড়া। বাড়ির পরিবেশ আবারো একটু একটু করে ঠিক হচ্ছে। তানিয়া এখন এই সুযোগে বাড়ির সর্বেসর্বা হয়ে গেছে। সব কিছু সেই তদারকি করে। তাথই ছোটো বোন ও ভাই নিজেদের মতো করে আবার গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে। শুধু স্বাভাবিক নয় তাথই এর মা দাদু। ডাইনিং রুমে বসে আছে সবাই সামনে রাখা খাবার সবাই খেয়ে উঠে গেছে। শুধু তাথই এর মা বসে আছে।

-“মম খাচ্ছো না কেনো? খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি? তানিয়া ঝুঁকে বলে ওঠে।

-” কষ্ট পেয়েও না কি আর করা যাবে বল ওর মৃত্যু লেখা ছিল তাইতো চলে গেছে। তানিয়া অসহায় এর মত মুখ করে বলে ওঠে।

-“একটা কথা আছে কি জানো তো তানিয়া পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। তো সেটা মাথায় রেখো। বলেই উঠে যায় মিসেস মানান।

তানিয়া কোনো কথা না বলে দাঁত পিষতে থাকে। চলে যাওয়ার দিকে চোখ রেখে বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

-” কার কখন মরার পাখা গজিয়েছে সেটা সময় আসলে বোঝা যাবে। তোমার মেয়ের পাখা গজিয়েছে ছিল সেটা আমি একদম সারাজীবন এর জন্য ছিটে দিয়েছি। আর আগে আগে দেখো কি হতে থাকে। তানিয়া বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

—————

জানালার দিকে মুখ করে বেডের ওপর হেলান দিয়ে বসে আছে আদর। বুক অব্দি চাদরে মোড়া আছে। এর সেই এখনও ব্যান্ডেজ করা। আনমনে জানালার বাইরে দেখে যাচ্ছে সে চোখের পাতায় এক এক করে স্মৃতি ভেসে উঠছে। চোখের কোণে পানি চিক চিক করছে কিন্ত না পানি গুলো চোখ থেকে গড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে না আদর। চোখের পানি চোখের মধ্যে বন্দি করে রাখছে। কিছুক্ষণ পর নিজের কাঁধে হাতের স্পর্শ পেতেই চমকে ওঠে পাশে ফিরে দেখতে দেখে লেখা দাঁড়িয়ে আছে।

-“দিদিয়া । লেখা বলে ওঠে।

-” আমি ঠিক আছি। আদর কাঁপা কাঁপা ভাবে বলে ওঠে।

-“তোর খুব কষ্ট হচ্ছে না রে? লেখা চোখ ছলছল করে বলে ওঠে।

-” কষ্ট সেটা কি জিনিষ। আমার পৃথিবীতে কষ্ট বলে আর কোনো জিনিষ নেই পাথর মানুষের কখনো কষ্ট হয় নাকি । কষ্ট তো তারাই পাবে যাদের জীবনে এটা দরকার যারা রক্ত মাংসের গড়া মানুষ। রূঢ় ভাবে বলে ওঠে আদর।

-“একদম তাই আর এই কষ্টটা তোর নিজের হাতেই দিতে হবে সব কিছুর হিসেব ও তোকে করতে হবে। লেখা বলে ওঠে।

-” হিসেব? হুম হিসেব এবার তো সেটা করতেই হবে। আর কোনো হিসেবে ছাড় দেয়া হবে না। এবার সব হিসেব কড়াই গন্ডাই বুঝে নেবার সময় এসেছে। ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে।

লেখা আদর এর মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেখতে পায় আর এটা দেখেই তার মুখে ও হাসি ফুটে ওঠে। সে জানে এবার কি হতে চলেছে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন।