উল্টোরথে পর্ব-১৩+১৪

0
179

উল্টোরথে-১৩

ডিকেন তিথিকে ফোন করেছিল কিছুক্ষণ আগে। একটু দেখা করতে বলেছে৷ কিছু কথা বলার ছিল। একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দুই নৌকায় পা দিয়ে কারো জীবনই চলতে পারে না। তিথিকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই কথা গুলো সামনাসামনি বলা প্রয়োজন। তিথি বলেছে আসবে। ডিকেন আবার শেষ মুহুর্তে আটকে গেল একটা কাজে। তিথি বোধহয় অপেক্ষা করছে। সামনে একটা ডে ট্যুর রেখেছে ইরিনের জন্য।ইরিনকে ওইদিন সব বলবে।

তিথি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। ডিকেন ডেকেছে। আজও না এসে পারে নি তিথি। তবে সময় বেশি নেই, ডিকেন এখনো আসছে না দেখে ভাবল চলে যাবে। কেন এসেছে সেটাও জানে না। নিজেই দায়িত্ব নিয়েছে ইশিতা ভাবীর বাচ্চাদের দেখে শুনে রাখবে। কিন্তু ডিকেন যখন ফোন করল, ঘন্টাখানেকের জন্য বের হতে হলো। ভাবী বের হবে তিথি ফিরলেই।

ডিকেন আসছে বোধ হয়। এই ছেলেটা দিনে দিনে সুদর্শন হয়ে যাচ্ছে। তিথি চোখ নামাতে পারে না।
পারভেজের সাথে বিয়ে হওয়ার আগ অবধি নিজেকে খুব অসহায় লাগত। আর ডিকেনের কথা ভাবতেই অসহ্য লাগত। কিন্তু এখন আর সেরকম লাগছে না। বরং পারভেজ এত কিছু করার পরেও ওকে ভালোবাসতে পারছে না তিথি। সমাজের দিকে তাকালে নিজের জীবনটাই কোরবানি করে দিতে হবে। এত এত জিনিসপত্র , স্বচ্ছলতা, প্রাচুর্য কিছুই তিথিকে সুখী করতে পারছে না।

কেমন আছ তিথি?

আছি।

তিথি আঁড়চোখে দেখল ডিকেনের হাত পা ঠিক হয়েছে। তার মানে ডিকেন নিজের খেয়াল রাখছিল না ওর সাথে কথা হওয়ার আগে। এখন ভালো আছে। হয়তো ওকে সত্যিই ভালোবাসে।
হতেও তো পারে বিয়েটা নিজের ইচ্ছেতে করে নি। হয়তো ডিকেনও সুখী নয়, সুখ খুঁজতে ওর কাছে আসত!

তুমি কেমন আছ, একটু থেমে তিথি জিজ্ঞেস করল।

ভালো।

ডেকেছ কেন?

একটা জরুরি বিষয়, আমি ঠিক করেছি ইরিনকে সব জানিয়ে ডিভোর্সের কথা বলব। তোমাকেও তো সেরকম প্রস্তুতি নিতে হবে। তোমার স্বামীকে জানাও সব কথা।

তিথি মনে মনে খুশী হলো।

ইরিন রিএ্যাক্ট করবে না?

করবে, কষ্ট পাবে।

তাহলে?

ডিকেন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। তিথির চোখ এড়াল না বিষয়টা।

কি ভাবছ?

ইরিন খুব ঘরোয়া মেয়ে, নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

তিথি খেয়াল করল, ইরিনের কথা বলতে ডিকেনের একটা নমনীয়তা আসছে।

ডিকেন, তুমি ইরিনকে ছাড়তে না চাইলে জোর করে ছাড়বে কেন!

আমি কি সেটা বললাম!

তাহলে?

তুমি জিজ্ঞেস করলে বলেই বলা। ওর জন্য তো আমি অসুখী নই, আমি তোমাকে ভালোবাসি।

বলতে গিয়ে ডিকেন একটু অস্বস্তিতে পড়ল। কই আগে তো এরকম হতো না। এখন এরকম লাগছে কেন!
ইরিন কি ওকে চিনি পড়া খাইয়ে দিলো! কার কাছে যেন শুনেছে, চিনি পড়া খাইয়ে স্বামী বশে রাখা যায়!
তার ইরিনকে মনে পড়ছে কেন, এমন তো কথা ছিল না। তিথিও জোর করছে না তো ইরিনকে ছাড়তে।
সেই তো ছাড়তে চাচ্ছে। তার ই তো ইরিনকে বিরক্ত লাগে!

ডিকেন আজ উঠি। তুমি ভালো করে ভাবো। হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় শেষ।

তিথিকে ডিকেন আটকালো না। কিন্তু আগে হলে ঠিকই আটকাত। ডিকেনের কি আরো ভাবা প্রয়োজন! এতদিন কি সব মোহ ছিল! এখন কেন দ্বিধাগ্রস্ত লাগছে!

চলবে

শানজানা আলম

উল্টো রথে-১৪

ইরিন সকাল থেকেই ব্যস্ত। একটু দাঁড়াতে পারছে না। বাবুকে রেডি করছে, খাবার বক্সে ভরছে, আরো কত জিনিসপত্র নিতে হয় একটা রাত বাইরে থাকতে। ইরিনের মা আর বোন তাম্মিমও সাথে যাচ্ছে, তবে তারা ইরিনকে খুব একটা সাহায্য করতে পারছে না। ডিকেন সকালে উঠে গরম পানি চেয়েছে, সেটা ইরিন করে দিয়েছে।

চেক শার্টটা ছিল আলমারিতেই, ডিকেন আবার ইরিনকে ডেকে বলল বের করে দিতে। ইরিন বের করে দিলো
একটা ড্রয়ারে সব আন্ডারওয়্যারগুলো থাকে, ডিকেন আবার ইরিনকে ডেকে বলল, কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। ইরিন আবার বিরক্ত না হয়ে বের করে দিলো। টাওয়েল বারান্দায়, ডিকেন সেটাও না এনে ইরিনকে দিতে বলল। ইরিন ব্যস্ততায় বিরক্ত হওয়ার সময় পাচ্ছে না।

টাওয়েল হাতে নেওয়ার পরে ডিকেনের বিরক্ত লাগল, কেন বিরক্ত লাগল সে বুঝতে পারছে না। এত কাজ করার কি আছে, বাচ্চার খাবার টা নিবে, সেরেলাক দুধ এসবই তো। শাওয়ার নিয়ে নিজে তৈরি হয়ে ড্রয়িংরুমে বসল।
ইরিন এখনো ড্রেস পরে নি।

ইরিন, তুমি এখনো তৈরি হতে পারো নি!

এই জামাটা পরেই যাব-ইরিন বলল।

একটা ঢোলাঢালা জামা মনে হচ্ছে আলমারিতে দলা মোচা করে রাখা ছিল, রঙটা ক্যাটক্যাটে গোলাপি।

এটা পরে যাবে?-ডিকেন জিজ্ঞেস করল।

হ্যা।

ডিকেন কিছু না বলে মোবাইল স্ক্রল করতে লাগল। আচ্ছা ইরিন কেন এই ড্রেস পরে যাচ্ছে! গত মাসেই তো দুটো সালোয়ার কামিজ কিনলো।

ইরিন, তুমি এই জামাটা কেন পরছ, নতুন জামা কোথায়?
-ইরিনকে জিজ্ঞেস করল ডিকেন।

বাবুকে ফিড করাতে সুবিধা হয়। তাই পরেছি। -ইরিন দেরী না করে উত্তর দিলো।

বাবুকে গাড়িতে কেন ব্রেস্ট ফিড করাতে হবে। ও তো এখন বাইরের খাবার খাচ্ছে। ফর্মূলা রেডি করে নাও।

ইরিনের মনে হলো, ঠিকই তো! এটা তো মাথায় আসে নি, মাও তো কিছু বলল না।

দুধটা রেডি করাই ছিল। ডিকেন উঠে ইরিনের রুমে গেল। ইরিনের মা আর তাম্মিম রুমে বসা। আচ্ছা, এরা এসে থাকে কেন, সকাল থেকে মেয়েটা একটা খাটতেছে, বোনটা দেখো মুখে এক পাল্লা মেকাপ দিয়ে রেডি। শাশুড়িও গুছিয়ে বসেছে। শুধু ইরিনের দিকে কারো খেয়াল নেই।

ডিকেন বলল, তাম্মিম, ব্যাগগুলো সামনে নাও তো।
ইরিনের মাও বেবিকে নিয়ে বের হলেন।

ডিকেন আলমারি খুলে একটা নেভীব্লু জামা বের করে ইরিনকে ডাকল, ইরিন!

ইরিন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। আবার কী হলো!

ইরিন, এই জামাটা পরো।

এটায় তো বুকে কাজ আছে। বাবুকে ধরব কিভাবে!

তোমার মা আর বোন কি করতে যাচ্ছে! তারা বাবুকে ধরতে পারবে না? না পারলে আমাকে দিও, আমি ধরব।

ইরিন বুঝল, ডিকেনের মাথা গরম হচ্ছে।

আস্তে বলো, আচ্ছা, চেইঞ্জ করে আসছি।

ডিকেন রুম থেকে বের হয়ে গেল না। ইরিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ডিকেন ড্রেসিংটেবিলের সামনে নীল পাথরের কানের দুলটা বের করেছে। কেন যেন ইরিনের মনটা ভালো হয়ে গেল।
নিজেই পরে নিলো।
ইরিনের বিস্ময় যেন কাটছে না।
ডিকেন পাঞ্চ করা চুলটা ছেড়ে আঁচড়ে দিলো।

এখন ঠিক আছে, চলো।

ডিকেন হঠাৎ ভাবল, এই ট্যুরে সে ইরিনকে বলবে, সে আর ইরিনের সাথে থাকতে চায় না। তাহলে এইসব কেন করল! কেউ তো জোর করে নি! নিজে থেকেই করে ফেলেছে।
সামনে বসে থাকলেই চলত!

ডিকেনের কেমন যেন অস্বস্তি হতে লাগল।

চলবে

শানজানা আলম