উল্টোরথে পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
311

উল্টোরথে
অন্তিম পর্ব

ডিকেন অনেকক্ষণ বসে আছে ইরিনের ঘরে। ইরিনকে সামনে বসিয়ে রেখেছে। ইরিন বসে থাকতেও চাইছে না৷
ইরিন চলে যাবে, ডিকেনের সাথে কিছুতেই থাকবে না৷

ইরিন, আমার ভুল হইছে, বললাম তো৷।

ইরিন কোনো উত্তর দিচ্ছে না৷

ইরিন প্লিজ। আমি এক্ষনি তোমার সামনে তিথিকে ফোন করে বলে দিব, আমার জীবনে আর কারো কোনো প্রয়োজন নেই।

ইরিন একটু তাচ্ছিল্য করে হেসে বলল, বলে দিলে। আমার সামনে বলে দিলে কী হবে! আমি কি সারাক্ষণ তোমার পেছন পেছন পাহারা দিয়ে রাখব! আমাকে বিয়ে করার পরে তো এই মেয়েটার সাথে সম্পর্ক রেখেছ। রাতে আমার সাথে থেকে সকালে এই মেয়েটাকে চুমু খেয়েছ! এমন কি ওকে বিয়েও করে নিতে, যদি কক্সবাজারে ওই মেয়ে রাজী হতো! গা ঘিনঘিন করে আমার, আমি থাকতে পারব না এসব মনে রেখে! তোমার ঘর আমি সামলাব, তুমি ফুর্তি করে বেড়াবে! ওকে, ফাইন, আমি তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি তো, যা খুশি করো এখন। আমাকে এখন আর কিছুই তুমি বোঝাতে পারবে না৷ তোমার মনটাকে তো আমি বেঁধে রাখতে পারব না!

ডিকেন বলল, তোমার কসম, আমার বাচ্চার কসম, আমি কারো সাথে কোনো যোগাযোগ রাখব না।

ইরিন বলল, মিথ্যেবাদীরা খুব সহজে কসম কাটতে পারে।

ঠিক আছে, তাহলে আমার আম্মা আব্বার সাথে তোমার আব্বা আম্মা বসুক, একটা সিদ্ধান্ত তারা দিক।

না, তাদের সিদ্ধান্ত মানে আমাকে থাকতে হবে, আমি তো থাকব না! কিছুতেই থাকব না।

ডিকেন বলল, তুমি আমাকেও চেনো না ইরিন। আমি তোমাকে এই ঘর থেকেই বের হতে দিব না!

ইরিন বলল, কিন্তু কতদিন! ছাড়তে তো তোমাকে হবেই!

ডিকেন আর কথা বাড়ালো না। রুমের বাইরে নিজের ঘরে গিয়ে তিথিকে ফোন করল। তিথি আকাশ পাতাল ভাবছিল তখন।

তিথি, একটু কথা ছিল, জরুরি।

তিথি ভাবল হয়তো বিয়ের কথা বা ডিভোর্সের কথা কিছু বলবে ডিকেন।

হ্যা বলো, আজ দেখা করতে পারবে?

না। দেখা করতে পারব না তিথি। আজ নয় শুধু, আর কোনোদিনই আমাদের দেখা হবে না।

তিথি বুঝতে পারল না ডিকেন কি বলছে!

আমি বুঝতে পারছি না ডিকেন।

আমি বলছি, আমার একটা বাচ্চা আছে। বউ আছে। আমি ইরিনকে কিছুতেই ছাড়তে পারব না। ইরিন চলে যেতে রাজী হলেও ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারছি না। দম বন্ধ লাগে আমার!

তিথি বলল, এসব কথা আগে মনে ছিল না? মনে হয় নি কখনো?

না মনে হয় নি। এখন মনে হচ্ছে যখন ইরিন চলে যেতে চাইছে, ওকে যেতে দিতে পারছি না।

তাহলে আমার সাথে নাটক করলে কেন?

সরি বললে সব শেষ হয় না তিথি। সরি বলব না। তুমি তোমার সংসারে বাঁচতে চেয়েছিলে, সেখানে নিজের মত করে নতুন ভাবে শুরু করো। আমি রাখছি। আমার নম্বরে আর কখনো চেষ্টা করো না!

তিথির উত্তর না শুনেই ডিকেন ফোনটা কেটে দিলো। অপরাধ বোধ চেপে ধরেছে। জীবন মাঝে মাঝে খুব বেশি জটিল হয়ে যায়।

বাইরে দাঁড়িয়ে ডিকেনের কথাগুলো ইরিন শুনেছে। আড়িপাতে নি কখনো, আজ ঢুকতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল।

ইরিন দরজা নক করল, আসব?

হ্যা আসো, আমার ঘরে আসতে তোমার নক করতে হয়।

হ্যা হয়। তুমিই বলেছ।

এতদিন যা বলেছি ভুল বলেছি ইরিন! আমাকে একটা সুযোগ দাও প্লিজ! একটাবার! তারপর তোমার যদি মনে হয় আমি ভালো না, আমার সাথে থাকবে না, চলে যেও!

ইরিন একটু সময় চুপ করে থেকে বলল, ঠিক আছে।

ডিকেন ইরিনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। ইরিনের চোখে পানি এলে ইরিন কাঁদল না। সে কাঁদবে না৷ কান্না তাকে ভাসিয়ে নেয় শুধু! তাকে শক্ত হতে হবে। অনেকটা শক্ত। যেন কেউ তাকে কখনো ভাঙতে না পারে!

★★★

ডিকেনের সাথে কথা বলার পরে তিথির কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। ইরিনকে তো ডিকেন ভালোবাসত না, তাহলে কি এমন হলো, যে ইরিনকে ডিকেন ভালোবাসতে শুরু করল! কি এমন জাদু আছে, যেটা তিথি জানে না! তিথির দোষটা কোথায়! তিথি কিভাবে বাঁচবে!
পারভেজের সাথে মিথ্যে ভালোবাসার কথা বলে নিজেকে প্রতারণা করবে প্রতিদিন, শুধু সামাজিক ভাবে ভালো থাকার জন্য!
এটা খুবই কষ্টের কাজ, মনের বিপরীতে অভিনয় করে যাওয়া! সেটা আর সম্ভব নয়। পারভেজকে আর ঠকানো উচিৎ হবে না। জীবনে ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। সবই মায়া, প্রতারণা, সাময়িক মোহ! এই মোহ থেকে নির্মোহ হতে হবে তিথিকে। জীবন এত বার বার তাকে ধাক্কা দিয়েছে, ভেঙে দিয়েছে!
তিথি আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবল, আর সে ভাঙবে না।
তিথির চোখে কান্না আটকে আছে, তিথি আর কাঁদবে না।
এবারে সে একা বাঁচতে শিখবে! কারো উপর ভর করে নয়।

শেষ

শানজানা আলম