একটি জটিল প্রেমের গল্প পর্ব-০৭

0
250

#একটি_জটিল_প্রেমের_গল্প
ভাগ-৭

লেকের ওপাড়ে সিমেন্টের বেঞ্চিতে বসে আছে আফ্রিতা। তার হাতে একটা চিপসের প্যাকেট। থেমে থেমে চোখ মুছছে, আর একটু পরপর প্যাকেট থেকে চিপস বের করে মুখে পুরছে। ওর আশেপাশে মানুষজন তেমন নেই, শুধু একটা কুকুর ঘুরে ঘুরে যেন পাহারা দিচ্ছে৷

আমার মনে হলো ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, কী হয়েছে? কান্নারত মুখটা দেখে কেমন রাগ গলে পানি হয়ে যেতে লাগল। কী হলো ওর? সারাক্ষণ পড়াশুনা নিয়ে থাকা মেয়ের আবার কষ্ট কী? কিন্তু যেতে মন সায় দিল না। এত কষ্টে এই মেয়ের মোহ থেকে বের হচ্ছি, সেসব কষ্ট বিফল করে দিয়ে নতুন করে জড়িয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না৷ ওর কাছে যেতে না পারলেও চলে যেতে পারলাম না। হাঁটাহাঁটি করতে থাকলাম, শেষ পর্যন্ত কী হয় দেখার জন্য।

আমার উদ্দেশ্যহীনভাবে একই জায়গায় চক্কর খাওয়াটাই বোধহয় আফ্রিতার দৃষ্টি আকর্ষন করল। খেয়াল করলাম ও চশমার কাচটা মুছে নিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখল এটা আমিই কি না। তারপর হাত ইশারায় ডাকল। আমি তো অবাক! আমায় কেন ডাকছে? অগত্যা আর বাঁধা মানল না মন। চলে গেলাম ওর কাছে।

পাশে বসে জিজ্ঞেস করলাম, “কাঁদছ কেন? কী হয়েছে?”

আফ্রিতা ঢোক গিলে বলল, “তোর সাথে যা হয়েছে তাই।”

অবাক হয়ে বললাম, “আমার সাথে আবার কী হয়েছে?”

“তুই আমার থেকে রিজেক্টেড হইছিস, আমি অন্য কারো থেকে।”

আমার মুখটা বিরাট হা হয়ে গেল। লেকের পাশে প্রচুর মশা। একটা ঢুকেও গেল ভেতরে। কাশতে কাশতে গলা ব্যথা করে জিনিসটা বের করা গেল। আফ্রিতা দেখি আগুন হয়ে যাবে অবস্থা। বিড়বিড় করে বলল, “গাধা!” বলেই আবার ডুকরে কেঁদে উঠল।

বললাম, “আহা বলো না কার থেকে রিজেক্ট হয়েছ? শুধু কাঁদলেই হবে?”

সে চোখের জল হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিয়ে বলল, “আকিব ভাই।”

আমি একেবারে হা হা করে উঠলাম, “সে কী! উনি না তোমার ফুপাতো ভাই?”

আফ্রিতা সরু চোখে চেয়ে বলল, “তোকে কে বলল?”

বুঝলাম আকিব ভাইয়ের কাছে আমার যাওয়ার কথা এখনো আফ্রিতার কাছে গোপন আছে। বললাম, “সেটা যেভাবেই হোক, জানি।”

“তো ফুপাতো ভাইকে পছন্দ করা যায় না? ওকে আমি ছোটবেলা থেকে পছন্দ করি। কিন্তু ও আমাকে পছন্দ করে না৷ অন্য কাউকে ভালোবাসে।”

আফ্রিতা এবার ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে নাক মুছল।

আমার মনে হলো, বাহ! বেশ তো! এবার আকিব ভাই যাকে ভালোবাসে সে তাকে রিজেক্ট করে আমার পেছনে ঘুরলে একেবারে চেইন কমপ্লেক্স রিলেশনের ষোলো কলা পূর্ণ হতো!

আফ্রিতা বলতে থাকল, “অনুষ্ঠানের দিন সেজেছিলাম, আকিব ভাই দেখে বলল, তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে আফু৷ আমার মনে হলো এটাই পারফেক্ট সময় প্রপোজ করে দেয়ার। করলামও, কিন্তু আমাকে হেসে উড়িয়ে দিল। তারপর যা করল!” বলে আবার কান্না!

“কী করল?”

“সবার কাছে আমাকে বোন বলে পরিচয় করিয়ে দিল।”

আমি খিক করে হেসে ফেলতে গিয়ে বহুকষ্টে নিজেকে সংবরণ করে নিলাম।

“তাই জন্য পড়াশুনা বাদ দিয়ে কাঁদছ? কাল না পরীক্ষা?”

“আমাদের পরীক্ষা শুরু এক সপ্তাহ পর। কিন্তু আমি কিছু পারি না। রেজাল্ট খারাপ হবে।”

“হায় হায়! কেন?”

“কিছু পড়তে পারিনি এই ক’দিন।”

“আকিব ভাইয়ের শোকে?”

আফ্রিতা উত্তর দিল না। আমি বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, “তোমার আর আমার উল্টো ফল হয়েছে। আমি এই ক’দিন তোমাকে ভুলে যেতে পড়াশুনায় ডুবে থেকেছি। আমার প্রিপারেশন খুবই ভালো।”

আফ্রিতা দেখি বেশ অবাক হলো। বলল, “তাই নাকি?”

“হ্যাঁ।”

“পড়াশুনা নিয়ে থাকলে ভুলে থাকা যায়?”

“সেটা আমার চেয়ে তোমার ভালো বোঝার কথা।”

“আমার পড়তে বসতেই ইচ্ছে করে না। শুধু মনে হয় আকিব ভাই কেমন করে আমাকে নিয়ে জোক করতে পারল!”

“ওইটা তুমিও আমাকে নিয়ে করেছ আফ্রিতা।” আমি গম্ভীর হয়ে বললাম।

আফ্রিতা সমবেদনার চোখে চেয়ে বলল, “স্যরি মাসুদ। তোর সাথে যা করেছি সেটা ইচ্ছে করে করেছি যাতে তুই আমার পেছনে ঘোরা ছেড়ে দিস।”

“তোমার প্ল্যান সাকসেসফুল। আর আকিব ভাইও সেজন্য তোমাকে নিয়ে মজা করেছে।”

“আমি এখন কী করব মাসুদ?”

“পড়ে পরীক্ষা ভালো দাও। আকিবের চেয়েও ভালো ছেলে পাবা, চিন্তা করো না।”

আফ্রিতা চোখ-নাক মুছে থিতু হয়ে বলল, “তাই করব। সপ্তাহখানেক সময় আছে, হয়ে যাবে বল? আগের পড়াও আছে অনেক কিছু৷ থ্যাংস মাসুদ। তোর জন্য নতুন করে মোটিভেট হলাম।”

আমি মজা করে বললাম, “তাহলে মোটিভেশন দেবার গুণ আমার আছে?”

আফ্রিতা উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে যেতে বলল, “একেবারেই না।”

আমিও উঠে উল্টোদিকে হাঁটা ধরলাম। মনের বোঝা অনেকটা হালকা লাগছে। মনে নানা সম্ভাবনা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। গুনগুন করে গাইতে গাইতে বাসায় পৌঁছে গেলাম।

পরদিন পরীক্ষা দিতে গেছি, হঠাৎ সেখানে আফ্রিতার আগমন। আমার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এটা রাখ। খবরদার পরীক্ষা দেবার আগে খুলবি না।”

আমি দাঁড়িয়ে রইলাম বোকার মতো। এ যেন থ্রিলার গল্পের রহস্যভেদের সময় বলে দেয়া, আগে পরীক্ষা দে, শেষ হলে বাকিটা জানতে পারবি।

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু