একটি জটিল প্রেমের গল্প পর্ব-০৯

0
257

#একটি_জটিল_প্রেমের_গল্প
ভাগ-৯

মাথার চু্ল কামিয়ে নিজের মধ্যে একটা বৈরাগ্য ভাব আসল। একটা গেরুয়া কাপড় হলে ধ্যান করতে বসে যেতে পারতাম কোনো নির্জন গাছের তলায়! কিন্তু ঢাকা শহরে নির্জন জায়গা নেই বলে আমার আর সাধু হওয়া হলো না। গেলাম বাসায়। আমাদের ফ্ল্যাটের সামনে ছোট ছোট টবে লতানো গাছ লাগিয়েছে তিন্নি। দেখে ভারি ভালো লাগল। একটু আদর করে দিলাম গাছগুলোকে। আগে তো এমন হয়নি!

দরজা খুলল তিন্নি। খুলেই এমন একটা চিৎকার দিল যে মনে হলো ডাকাত সর্দার সদলবলে তাকে হামলা করতে এসেছে। একছুটে মাকে নিয়ে হাজির হলো সে। মা আরও জোরে চিৎকার দিলেন। আমার মধ্যকার বৈরাগ্য ভাব আরেকটু বাড়ল। অতি নির্বিকার হয়ে আমি নিজের ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম। গা চুলকাচ্ছে, গোসল করলে ভালো লাগবে।

সন্ধ্যার পর চা দিতে এলো মা। দেখি তার চোখদুটো ফোলা ফোলা। পাশে বসে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলল, “তোর কী হইছে বাবা বল তো?”

“কিছু হয় নাই মা।”

“আমি অনেকদিন ধরে খেয়াল করছি তুই আগের মতো স্বাভাবিক না। কিছু হইলে বলে দে না মাকে।”

আমি কিছুই বলতে পারলাম না।

মা প্রথমটায় আরও কিছুক্ষণ বোঝানোর চেষ্টা করে শেষে কান্নাকাটি শুরু করলেন৷ সবার শেষে বকতে বকতে চলে গেলেন। তার ভাষ্যমতে, বাড়ির কেউ তাকে দাম দেয় না৷ তার দাম একটা পাপোশের চেয়েও কম।”

এরকম কথা শুনেও আমি চুপচাপ বসে রইলাম৷ উদাস হয়ে ভেতর থেকে গান চলে এলো, “জলে ভাসা পদ্ম আমি…শুধুই পেলাম ছলনা…”

দু’দিন পর দ্বিতীয় পরীক্ষা। ওইযে আমি বৈরাগী হয়েছি, তাই তো ন্যাড়া মাথা নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে চলে গেছি নির্বিকারভাবে। তিন্নি কয়েকবার বলেছিল একটা ক্যাপ পরে নিতে, আমার রুচি হয়নি। কয়েকজন খুব হাসাহাসি করল, পাত্তা দিলাম না। পরীক্ষা দিলাম ভালোই। এক স্যার এসে মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে বললেন, “কী মাসুদ! গরম লাগে বেশি?”

বললাম, “জি স্যার।”

স্যার বললেন, “আমার প্রতিদিন ইচ্ছে করে চুল কামিয়ে ফেলতে। শুধু বউ এর ভয়ে করি না।”

আমি ফিসফিস করে বললাম, “স্যার একবার চুল কামিয়ে ফেললে দেখবেন বউ এর কথা এত খারাপ লাগবে না।”

বলেই মনে হলো, যা! স্যারকে উপদেশ দিয়ে দিলাম! উন্নতি তো ভালোই হয়েছে।

স্যারও কিছু মনে করেনি। পরদিন দেখি স্যারের মাথা পরিষ্কার করে কামানো। আমাকে দূর থেকে দেখে হাত ইশারায় ডাকলেন। কাছে যেতেই একগাল হেসে বললেন, “তোমার কথা সত্যি। আমার বউ যেসব কথা শুনিয়েছে একটাও গায়ে লাগে নাই। গায়ের পাশ দিয়ে চলে গেছে।”

আমি হেসে ফেললাম৷ আয়না দেখলে বোঝা যেত হাসিটা ক্যাবলাকান্তের মতো হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে সেই হাসির সাথে সাথে আমার বৈরাগ্য ভাব চলে গেল। বোধহয় স্যারের কাছেই গেল। আমি দুঃখী মন নিয়ে ক্যান্টিনে খেতে গেলাম। বসেছি এক কাপ চা আর দুটো পুরি নিয়ে, দেখি আফ্রিতা ঢুকল। আমি ওর দিকে না তাকিয়ে খাওয়ায় মন দিলাম৷ তারপর মনে হলো ওকে তো মন থেকে বাদই দিয়েছি, এখন আর লুকিয়ে থাকার মানে নেই। সামনাসামনি থাকি। খেয়াল করলাম আফ্রিতা জ্বলন্ত চোখে কাকে যেন খুঁজছে। আমার দিক থেকে দৃষ্টি ঘুরে গেল একবার, পরক্ষণেই ফিরে তাকাল। তাকিয়েই রইল। এগিয়ে এসে মুখোমুখি বসল। ওর জ্বলন্ত চোখদুটো নিভে গেল, আর আমার দিয়ে চেয়ে ফিক করে হেসে ফেলল। আমি নির্বিকার থাকার চেষ্টা করলাম৷ কিন্তু বৈরাগ্য ভাব মনে হচ্ছে পুরোটা স্যার শুষে নিয়েছেন।

আফ্রিতা বলল, “কী ভেবেছিলি? মাথা ন্যাড়া করলে তোকে আমি চিনব না?”

আমার রাগ তখনও পুরোপুরি বজায় আছে৷ বিরক্ত মুখ করে খেতে থাকলাম। জবাব দিলাম না। আফ্রিতা বলল, “আজকে দেখা করতে পারবি বিকালে? টিএসসিতে?”

প্রথমে জবাব না দিয়ে উঠে যাচ্ছিলাম। পরে আবার বসলাম৷ সোজা জিজ্ঞেস করলাম, “কেন? আজকে কী করতে হবে? তোমার আকিব ভাইয়ের প্রেমিকাকে ধরে চুমু খেতে হবে?”

আফ্রিতা থতমত খেয়ে চুপ হয়ে গেল। আমি উঠে চলে গেলাম৷ ভেতরে ভেতরে কেমন যেন খুশি লাগছে। গ্রীলের ফাঁকে হাত বাড়িয়ে একটা ফুটন্ত জবা ছিঁড়ে নিলাম। সামনেই ক্লাসের একটা মেয়ে ছিল। ওর হাতে দিয়ে বললাম, “নাও ধরো।”

মেয়েটা কিছু না ভেবে নিয়ে নিল। এমনকি মাথায় গুঁজেও ফেলল৷ আমি পেছনে চেয়ে দেখি আফ্রিতা দাঁড়িয়ে আছে। জ্বলন্ত দৃষ্টিতে আগুন ঝরিয়ে দিচ্ছে৷ এই মেয়ের আগুনে আমি আর পুড়ছি না। ওর আগুনে ও নিজেই পুড়ে যাক!

(চলবে)