একটি জটিল প্রেমের গল্প পর্ব-১০

0
276

#একটি_জটিল_প্রেমের_গল্প
ভাগ-১০

কয়েকদিন ব্যস্ততায় আর আফ্রিতার সাথে দেখা হয়নি। পরীক্ষা সবগুলো দিয়ে ফেললাম ভালোভাবে। যেদিন পরীক্ষা শেষ হলো সেদিন বাড়ি ফিরে টানা ঘুম। উঠলাম পরদিন সকালে। উঠেই মনে হলো পৃথিবীটা অদ্ভূত রকমের শূন্য। বাসায় সবাই আছে, বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে, তবু সব ফাঁকা কেন লাগছে? আমি ফেসবুকে আফ্রিতার আইডি সার্চ করে দেখলাম। হাসিমুখের ছবি৷ কিছুক্ষন ঘাটাঘাটি করে অনেকগুলো ছবি দেখার পর নিজের ওপরেই মহাবিরক্ত হলাম। এই মেয়ের পেছনে সময় নষ্ট করছি কেন?

কয়েকদিন ছুটি পেয়েছি ভাবলাম কোথাও ট্যুর দিয়ে আসি। ইউনিভার্সিটি থেকে একটা ট্যুর গ্রুপ দেখলাম কক্সবাজার যাচ্ছে। আমি রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। কক্সবাজার আগে বহুবার যাওয়া হলেও কেন যেন জায়গাটার ওপর টান কমে না। মনে আরেকটা ক্ষীণ আশা আছে, যদি সেখানে কোনো সুন্দরীর দেখা পাই তো তবে আফ্রিতা নামক আপদকে পুরোপুরি ঘাড় থেকে নামানো সহজ হবে।

দিনক্ষণ ঠিক হলো। আমি গোছগাছ করে বের হবার প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম। প্রতিবারের মতো মা এবারও হাতে একটা খাবারের বক্স ধরিয়ে দিলেন রাস্তায় যেতে যেতে খেতে। তিন্নি কিছুদিন গাঁইগুঁই করেছে তাকেও নিতে, নেইনি বলে রাগ করে ছিল, আজ নিজেই এসে গলা ধরে বলল তার জন্য আচার আনতে। আর তৌহিদ বলেছে সুন্দর করে কিছু ছবি তুলে নিতে। তার আবার ঘুরতে ভালো লাগে না৷ ভ্রমণ নিয়ে একটা এসাইনমেন্ট বানাতে হবে, ছবিও নাকি লাগবে। আমি সবার থেকে বিদায় নিয়ে খুশি মনে বের হলাম।

গিয়ে দেখি অনেকেই চলে এসেছে। সিট নাম্বার জেনে বাসে উঠে একটা ধাক্কা খেলাম। আমার পাশের সিটে আফ্রিতা। আরামসে বসে কানে ইয়ারফোন গুঁজে গুনগুন করছে। আমি আসার পর চোখ মেলে তাকাল। একটা লম্বা হাই তুলল যেন আমার চেহারার মতো একঘেয়ে জিনিস পৃথিবীতে নেই যা দেখে তার ঘুমে চোখ ধরে আসছে। আমি দাঁড়িয়েই রইলাম। আফ্রিতা বলল, “সব সিট বুকড। তুই যদি আমার সাথে যেতে না চাস তাহলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।”

আমি বললাম, “তোমার সাথে বসার চেয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া ভালো।”

আফ্রিতা আরও একটা হাই তুলে বলল, “তাহলে তোর সিটটা আমি ইউজ করি হু? শান্তিমতো ঘুমানো যাবে।” বলে সে আমার সিটে পা তুলে দিল। মাথার নিচে একটা হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল।

আমি দাঁড়িয়েই রইলাম। কয়েকজন আমাকে জিজ্ঞেস করল, “বসবি না? ডাক ওকে।”

আমি বললাম, “থাক।”

কয়েকজন আমার আর আফ্রিতার জটিল সম্পর্কের কথা মোটামুটি জানে। তারা মুখে কুটিল হাসি নিয়ে আমার দিকে চেয়ে রইল। সিট বদলের চেষ্টা করেও লাভ হলো না। কেউ নিজের সিট ছাড়তে রাজি না। ওরা মজা দেখতে চায়। বন্ধুরাও বিপদের সময় শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়ে যায়!

বাস ছাড়ল। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার হাত, পা ব্যথা হয়ে গেল। প্রায় ঘন্টাখানেক পর আর পারলাম না। আফ্রিতাকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বললাম, “ওঠো! আমি বসব। টাকা দিয়ে সিট বুক করেছি। তোমার জন্য দাঁড়িয়ে যাব নাকি?”

আফ্রিতা হাই তুলতে তুলতে উঠে বসল। পা নামিয়ে জায়গা করে দিয়ে বলল, “আমি তো তোকে বসতে মানা করিনি।”

আমি আফ্রিতার পাশে বসলাম। সাথে সাথে ওর শরীর থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ ভেসে এলো। কী সুন্দর ঘ্রাণ! বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। এতক্ষণের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। কয়েকজন গান ধরেছে গিটার বাজিয়ে। বাকিরাও তাল দিচ্ছে। আফ্রিতার গলা শুনতে পেলাম সবার মাঝেও আলাদা করে।

….তোমার জন্য নীলচে তারার একটু খানি আলো
ভোরের রঙ রাতে মিশকালো
কাঠগোলাপের সাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবি
আবছা নীল তোমার লাগে ভালো….

কী যে ভালো লাগল! আমি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙল আফ্রিতার ধাক্কাধাক্কিতে। দেখি বাস থেমেছে। সবাই বের হচ্ছে। আফ্রিতা নিচু গলায় বলল, “অ্যাই, আমি ওয়াশরুমে যাব। নিয়ে যাবি তুই।”

আমি শুকনো মুখে বললাম, “কোনো মেয়ের সাথে যাও।”

ও আমার ওপর কঠিন দৃষ্টি ফেলে বলল, “কোনো মেয়েকে চিনি না।”

অগত্যা আমাকেই ওর সাথে যেতে হলো। আমি কিছু খেলাম না। মা কী দিয়েছে কে জানে! না খেলে আবার নষ্ট হয়ে যায় যদি। আমি ফিরে এলাম বাসে। আফ্রিতাও পিছু পিছু ফিরল। বাক্স খুলে দেখি পাটিসাপটা পিঠা৷ আমার প্রিয় জিনিস। গপাগপ তিনটে খাওয়ার পর মনে হলো আফ্রিতাকে কি সাধব? একা একা খাওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। বললাম, “খাবা?”

আফ্রিতা ভেঙচি কেটে বলল, “আমি খেলে তোর কম পড়ে যাবে।”

“আরে না, খাও।”

আফ্রিতা খেল না। নিজের ব্যাগ থেকে একটা বাক্স বের করল। খোলার পর চমৎকার ঘ্রাণ বের হলো। হটপটে করে ও নিয়ে এসেছে বিরিয়ানি। আমি ঢোক গিললাম। আফ্রিতা আমাকে সাধার চেষ্টাও করল না। দেখিয়ে দেখিয়ে পুরোটা সাবাড় করে দিল।

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু