এক আকাশ অভিমান পর্ব-০২

0
139

#এক_আকাশ_অভিমান
#মার্জিয়া_জাহান_চাঁদনী
#পর্ব : ২

রাত্রি প্রায় দ্বিতীয় প্রহর কেটে গেছে। মেয়েকে নিয়ে শুয়ে আছে তরী। মেয়ে ঘুমালেও তরীর রাত্রি কাটে নির্ঘুম।দুচোখের পাতায় ঘুম ধরা দিবে না পন করেছে।
বন্ধ ঘরে নিঃশ্বাস আটকে আসছে।মেয়েকে রেখে পা বাড়ালো রুমের লাগোয়া ব্যালকানির দিকে।
ফুরফুরে হাওয়া বইছে। অশান্ত মন তবুও শান্ত হচ্ছে না। এই ব্যালকনিতে আসলে অনিকের কমতি অনুভব করে তরী। কত শত স্মৃতি জুড়ে আছে এই জায়গাটায়। কত অনুভূতি কত আবেগ অমূল্য কিছু সময় পার করেছে দুজন।বর্তমানে সেগুলো শুধু স্মৃতি মাত্র। যা চাইলেও আর কোনদিন ফিরে পাওয়া যাবে না।

কয়েক হাত দূরত্বে অবস্থান করছে শ্রাবণ দের টিন শেডের বাড়িটা।অনিকের বাড়ি দুইতলা বিশিষ্ট। নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের পর শ্রাবণের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তরীর। তবে সিরাজুল সাহেবর আদেশ তরী এই বাড়িতেই থাকবে শ্রাবণ এখানে শিফট হবে।
কবুল বলেই শ্রাবণ কোথাও একটা চলে গেছে হয়তো এখনো বাড়ি ফিরে নি।
দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক ছিঁড়ে। জীবনটা এরকম না হলেও পারতো। পৃথিবীতে মানুষ চাইলেই সব কিছু করতে পারে না কোনো এক অদৃশ্য শিকল আটকে রাখে। কিছু শিকল সার্থের আর কিছু শিকল মায়ার।
” তুমি আমি দুজনেই হারিয়ে গেছি অনিক, তুমি হারিয়ে গেছো মেঘের আড়ালে চিরতরে আর আমি হারিয়ে গেছি কিছু সার্থের ভিড়ে”যেখানে আর পাওয়ার আশা একেবারেই থাকে না, নির্দিষ্ট মানুষটির অপেক্ষা থাকে না , সেটার মতো ভয়াবহ আর কিছু হয় না।তুমি তো ফাঁকি দিয়ে হারিয়ে গেলে কিন্তু আমাকে রেখে গেলে এই নিষ্টুর কিছু মানুষের ভিড়ে। রেখে গেলে আমার বেচেঁ থাকার শেষ প্রদীপ।
তুমি তো চলে গেলে দায় সারা হয়ে ওর মুখটা ও দেখো নি।তবে আমাকে দিয়ে গেলে গুরু দায়িত্ব। আমি ওকে মানুষ করবো কি করে অনিক। তুমি ছাড়া যে আমি অসহায়,আমি বড্ডো একা। তোমার চাঁদ কে আমি একা কি করে বড় করবো, ওকে জীবনের পথ চলতে শিখাবো। জানো অনিক তোমার চাঁদ কে নিজের কাছে আগলে রাখতে গিয়ে আমি যে নতুন কাঁটায় পা দিয়েছি। কি করতাম বলো আমার যে কিছু করার ছিল না। তুমিই তো বলেছিলে যেকোনো মূল্যে চাঁদ কে আটকে রাখতে হবে। চাঁদ কে মানুষ করতে হবে। আমি জানি সামনের পথ আমার জন্য আরো দুর্গম হবে কত শত কাঁটায় পা দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের চাঁদের জন্য। আমি যদি এই পথ টা বেছে না নিতাম তাহলে ওরা আমার থেকে আমার চাঁদ কে কেড়ে নিতো।বাবা মা হারিয়ে তোমাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমিও ফাঁকি দিয়ে চলে গেলে। সৎ মার অত্যাচার সহ্য করে বড় হয়েছি প্রাণ প্রিয় বন্ধু এখন চিরশত্রু। আমার জীবন টা এমন কেনো হলো ? এই জীবনের প্রতি #এক_আকাশ_অভিমান আমার। কেনো আমার একটা সুস্থ জীবন হলো না। কেনো তোমাকে নিয়ে একটা সুন্দর সংসার হলো না……।

আজানের মিষ্টি সুরে ঘুম ভেংগে গেল নদীর। নামাজ শেষ করে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো অচেনা নাম্বার থেকে কেউ একজন কিছু ছবি পাঠিয়েছে।

ছবি গুলো দেখেই হাত থেকে মোবাইল টা ফ্লোরে পরে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না নদী। শ্রাবণ তরীকে বিয়ে করেছে। যেই কাটা তিন বছর আগেই উপড়ে ফেলেছিল সেই কাঁটাই আজ এত বছর পর গলায় বিধলো।
” নাহ এই ভাবে আমি হেরে যেতে পারি না।তিন বছর আগে তুমি হেরে গিয়েও জিতে গেলে তরী। তবে এই হার আমি মেনেনিবো না। শ্রাবণ আমার , শুধুই আমার। ”
মাথা কাজ করছে না নদীর। কল লাগলো শ্রাবণের নাম্বারে কিন্তু শ্রাবণের ফোন বন্ধ বলছে।
” তুমি আমার সাথে এটা করতে পারো না শ্রাবণ।আমাকে না জানিয়ে ওই তরী কে বিয়ে করার দুঃসাহস তুমি দেখিয়েছো।আমি কিছুতেই ওই তরীকে শান্তিতে থাকতে দিবো না।”
আমি আসছি তরী। তুই আমার চিরশত্রু ছিলি আর থাকবি ও। বন্ধুত্ব তো শুধু নামেই ছিল।এই ভাবে জিততে পারবি না তুই।


সারা রাত বাইরে কাটিয়ে সকাল বেলা বাড়ি ফিরেছে শ্রাবণ।বন্ধুর বাড়িতেই রজনী পার করেছে।বাড়িতে আসতেই তাহেরা বেগম বিচলিত হয়ে পড়েন ছেলে কে নিয়ে।
” সারা রাইত কই আছিলি বাপ, তোর চিন্তায় আমি ঘুমাইতে পারি নাই।এই ভাবে কাওরে কিছু না কইয়া চইলা যাস কেনো। বাপ মায়ে কি চিন্তা করে না ?”

” আমার চিন্তা যে তোমরা করো না সেটা আমি ভালো করেই জানি মা। তুমি আর বাবা মিলে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে।এখন আর আমার ভালো বুঝতে এসো না।”

” তোর বাপ যা করছে তোর ভালোর লাইগ্গাই করছে।কোনো বাপ মায় চায় না তার সন্তান অসুখী হোক। আমরা যা করছি তোর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা কইরা করছি”।

” তোমাদের তো বলি নি আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে। আমার ভবিষ্যৎ আমি আমি নিজেই গড়তে পারতাম।”

এরই মধ্যে শ্রাবণের ছোট বোন রিনি এসে বলে ” ভাইয়া বড়বাবা তোমারে ওই বাড়িতে যেতে বলেছে এক্ষুনি”
শ্রাবণ কিছু না বলে গট গট করে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে উদ্দেশ্য ওই বাড়িতে।

মেয়ে কে রাবেয়া বেগমের কাছে দিয়ে সবার জন্য প্রতিদিনের মতো নাস্তা বানাচ্ছে তরী। বসার ঘরে খবরের কাগজ পড়ছেন সিরাজুল সাহেব। রমিজুল সাহেব বসে আছেন চুপ করে ভাইয়ের পাশেই।একটু পরে চা দিয়ে গেলো তরী। কিছুক্ষনের মধ্যেই শ্রাবণ উপস্থিত হয়।
” আমাকে ডেকেছেন বড় বাবা?”

শ্রাবণের কথা কানে যেতেই খবরের কাগজ থেকে মুখ তুললেন সিরাজুল সাহেব। চোখের চশমা টা আরেকটু ঠিক করে শ্রাবণের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ” কাল রাতে কোথায় ছিলে?”

” একটা বন্ধুর বাড়িতে ছিলাম।”

” কি কারণে বন্ধুর বাড়িতে রাত্রি যাপন করতে হলো?”

” সেটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার বড় বাবা। আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি। কোথায় রাত্রি কাটিয়েছি কি কারণে কাটিয়েছি সেটা আমি সবাই কে বলতে বাধ্য নই ”

শ্রাবণের কথা শেষ হবার আগেই ছেলের গালে ঠাস করে চর বসিয়ে দিলেন রমিজুল।
” বড় হয়েছো বলে বড়দের মুখে মুখে তর্ক করার সাহস তুমি পাও কোথা থেকে? তোমার স্বাধীনতা আছে মানে এই না তুমি সেচ্ছাচারিতা করবে। আমরা তোমার গুরুজন, তুমি কোথায় কি করেছো সেটা আমাদর বলতে তুমি বাদ্য। আমার অবাধ্য হলে তোমারে তেজ্য করতে সময় লাগবে না ”

” আহ রমিজ! এত কথা বাড়াচ্ছো কেনো। তুমি চুপ করো আমি কথা বলছি শ্রাবণের সাথে।”

বড় ভাইয়ের কথায় চুপ করে গেলেন রমীজুল।

” শোনো শ্রাবণ! যেভাবেই হোক যে পরিস্থিতিতেই হোক বিয়েটা তুমি করেছো। তার দায় তুমি এড়াতে পারবে না।বৌমা আর চাঁদের দায়িত্ব এখন তোমার।ওদের একা ফেলে এই ভাবে তুমি বাইরে ঘুরতে পারো না। শরীয়ত মোতাবেক তরী এখন তোমার স্ত্রী, ইসলাম অমান্য করার অধিকার তোমার নেই।এখন থেকে তুমি এই বাড়িতেই থাকবে। চাঁদের বাবা হয়ে উঠার চেষ্টা করো। মূলত চাঁদের জন্যই তোমার সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।অনিকের অভাবটা তুমিই পূরণ করবে। আমার কথার অন্যথা যেনো না হয়। যাও তরীর রুমে যাও।”

শ্রাবণ কিছু না বলে তরীর রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। পথিমধ্যেই তরীর সাথে দেখা হয়ে গেলো।
” এটাই তো তুমি চেয়েছিলে তরী। নাও তোমার এই শখটা ও পূরণ হয়ে গেলো।একটা মানুষ কিভাবে এতটা সার্থপর হয় তোমাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আমার অবিশ্বাস্য লাগে একটা সময় তোমার মতো মেয়ে কে আমি ভা _
বলতে গিয়েও থেমে গেল শ্রাবণ।
” আমি তোমাকে ঘৃ*ণা করি তরী, এই জাস্ট হেইট ইউ……..

#চলবে ইনশা আল্লাহ