এক আকাশ অভিমান পর্ব-০৩

0
136

#এক_আকাশ_অভিমান
#মার্জিয়া_জাহান_চাঁদনী
#পর্ব : ৩

ক্লান্ত দুপুর!! সূর্য ছড়িয়েছে কড়া রোদ্দুর।।
চারিদিকে মানুষ আনাগুনা খুব কম। দুপুর হওয়াতে বিশ্রাম নিচ্ছেন কেউ। কেউ আবার আহার গ্রহণ করছেন। গ্রামের সরু রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছেন কিছু পথিক। কেউ বা মাঠে কাজ করছেন।

বাড়ির আঙিনায় দাড়িয়ে সেদিক পানে থাকিয়ে আছে তরী। নির্লিপ্ত তার ভঙ্গি। কোনো এক দিন এই রাস্তা ধরেই টুকটুকে লাল শাড়ি পরে বউ হয়ে এসেছিলো এই বাড়িতে।অনিক চলে গেলো সাথে নিয়ে গেলো জীবনের সব রঙ,সব বসন্ত, সোনালী আলো,রঙিন প্রজাপতি।।শুভ্র রঙে রাঙিয়ে নিয়েছিল নিজেকে। নিয়তির খেলায় আবার রঙ এলো, তবে সেটা ভালোবাসার নয় বরং এক ঘৃণার রঙ।।

” একি বৌমা তুমি এখানে দাড়িয়ে আছো ? আমি সারাবাড়ি খুঁজে এলাম। ধরো দাদুমনি কাদঁছে। অনেকক্ষণ খায় নি মেয়েটা।”

শাশুড়ির কথায় ধ্যান ভাঙলো তরীর।মেয়ে কে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। নিজের রুমে না গিয়ে অন্য রুমে গেলো। সেখানে শ্রাবণ ঘুমুচ্ছে।

বেশ কিছু সময় ধরে নদীকে ফোনে পাচ্ছে না শ্রাবণ।বার বার ফোন বন্ধ বলছে।চিন্তা হলো শ্রাবণের।
নদী তো কখনো ফোন বন্ধ রাখে না। নাকি বিয়ের ব্যাপার টা যেনো গেলো কোনো ভাবে।
কি জবাব দিবে নদীকে,মেয়েটা তো প্রতারণার অভিযোগ জানাবে।অভিমানে দূরে সরে যাবে।

।।
।।

কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলেন রাবেয়া বেগম।দরজার ওপাশে দাড়িয়ে আছে এক সুন্দরী রমণী।মেয়েটা কে পরিচিত মনে হলেও ঠিক ভাবে মনে করতে পারছেন না তিনি।

” আস্সালামু আলাইকুম অ্যান্টি, আমি নদী, শ্রাবণের বন্ধু। শ্রাবণ কি এই বাসায় আছে? অ্যান্টি বললেন এই বাসায় শ্রাবণ।”

নদীকে শ্রাবণের বাড়িতে আসতে দেখেছেন বেশ কয়েকবার।বিগত কয়েক বছরে আসা যাওয়া হয় নি বলেই চিনতে পারেন নি রাবেয়া বেগম।তাছাড়া আগে ছিল অষ্টাদশী কিশোরী আর এখন এক পূর্ণাঙ্গ নারীতে পরিণত হয়েছে নদী। এক অজানা বিপদের আশঙ্কা বুকের ভেতর দানা বেঁধেছে নিমিষেই। শ্রাবণ নদীর সম্পর্ক নিয়ে তিনি কিছুটা হলেও অবগত। নদী যে কিছু একটা ভেবেই এসেছে সেটা তিনি আঁচ করতে পারলেন।

” হ্যা মা। এসো ভিতরে এসো।”

মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে বসার ঘরে রাখতেই চোখ গেলো সোফায় বসে থাকা রমণীর দিকে। বহু প্রহরের পর এই রমণী কে দেখে চোখ জ্বলে উঠলো তরীর।একটা সময় প্রিয় মানুষ গুলোই বর্তমান সময়ে অপ্রিয়। সময়ের স্রোতে বদলে দিয়েছে সম্পর্কের সমীকরণ।কাছের মানুষ আজ বহু দূরে। জানা অজানা কিছু দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছে জীবন।

তরীকে দেখেই মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো নদীর।উঠে গিয়ে ঠাস করে চর বসিয়ে দিলো তরীর গালে।

” সার্থপর চ*রি*ত্র*হী*ন মেয়ে,তোর লজ্জা করলো না শ্রাবণ কে বিয়ে করতে। তুই তো খুব ভালো করেই জানতিস শ্রাবণ ও আমি একে অপরকে ভালোবাসি।তারপরেও বেহায়ার মতো ওকে বিয়ে করে নিলি? তুই না বিবাহিত? তোর মেয়ে আছে। তাও কি করে অন্যের জিনিসের দিকে হাত বাড়াস।অবশ্য তোকে বলে কি লাভ তোর তো অন্যের জিনিসের প্রতি একটু বেশীই আগ্রহ। সম্পত্তির জন্য এখন আবার বিয়ে করে নিলি। এতই লোভ তোর ? আমার কি মনে হয় জানিস অনিক ভাই কে তুই খু*ন করিয়েছিস না তো? পরে এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দিয়েছিস।”

সহ্য করতে না পেরে নদীর গালে সপাটে চর বসিয়ে দিলো তরী।
” অনেক বলেছিস তুই। তোর মুখ দেখে অন্তত এই কথা গুলো আশা করা যায় না।তোর মুখে তো এসব মানায় না নদী।কি বললি তুই অন্যের জিনিসের প্রতি আমার আগ্রহ ? সেটা আমার কোনো দিনই ছিল না।উল্টো আমি মানুষকে দান করে দেই সব কিছু। তোকেও কিছু প্রিয় জিনিস ভিক্ষা দিয়েছিলাম। হয়তো তুই ভুলে গেছিস কিন্তু আমি ভুলিনি।নিজে খারাপ সেজে তোকে মহান বানিয়েছি।বার বার হেরে গিয়ে তোকে জিতিয়ে দিয়েছি। আর সম্পত্তির প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। আমার লোভ আমার মেয়ের প্রতি।লোভ যদি কারো থেকে থাকে তাহলে সেটা তোর শ্রাবণের আছে। যে আমাকে বিয়ে করেছে সম্পত্তির জন্য। ”

চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে নিচে নেমে এলো শ্রাবণ। বসার ঘরে নদীকে দেখে অবাক হলো। এই ভয়টাই সে পাচ্ছিল।
শ্রাবণকে দেখেই নদী ন্যাকা কান্না জুড়ে দিল।

” শ্রাবণ তুমি আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিলে? আমার সাথে এই ভাবে প্রতারণা করলে? তোমার কাছে জবাব চাইতে এসে তোমার বউয়ের হাতে মার খেতে হবে ভাবি নি।ভালোই তো করেছো সেই তো আম দুধে মিশে গেলে আর আমি আটি হয়েই পরে রইলাম। আমাকে কেনো ঠকালে উত্তর দাও!! ”

” তরী তোমার গায়ে হাত তুলেছে ? ”

” শুধু হাত না , আমাকে যা নয় তাই বলে অপমান করেছে ।তুমি নাকি ওকে সার্থের জন্য বিয়ে করেছো। সম্পত্তির জন্য বিয়ে করেছো।”

রাগ মাথায় চড়ে বসলো শ্রাবণের।এগিয়ে গেলো তরীর দিকে।
” কোন সাহসে তুমি নদীকে প্রহার করেছো।কেনো ওকে অপমান করেছো। কে দিয়েছে তোমাকে এই অধিকার। একে তো একের পর এক অন্যায় করেছো। আবার আমাকে বলো আমি এই সম্পত্তির জন্য তোমার মতো মেয়ে কে বিয়ে করেছি?

বলেই তরীকে প্রহার করতে যাবে তখনই শ্রাবণের হাত ধরে ফেলেন রাবেয়া বেগম।

” আমার মেয়েকে আঘাত করার অনুমতি আমি তোমায় দেই নি শ্রাবণ। হতে পারো তুমি ওর স্বামী তার আগে সে আমার মেয়ে। আমি মা হয়ে মেয়ের সাথে অন্যায় মেনে নিবো না। তুমি কার কথায় আমার মেয়েকে প্রহার করতে যাচ্ছিলে? ওই মেয়েটির কথায়? তার আগে কি সত্যতা যাচাই করে নিবে না? ওই মেয়েটিই এসে তরী কে প্রহার করেছে। আমার ছেলের হত্যাকারী বানিয়ে দিয়েছে,লোভী বানিয়ে দিয়েছে, তরী সেসব সহ্য করতে না পেরে পাল্টা প্রহার করতে বাধ্য হয়েছে। আশা করি ওই মেয়ের কথায় আমাকেও মিথ্যে প্রমাণিত করবে না।”

” বড় মা যা বললেন টা কি সত্যি নদী?”

” তখন আমি নিজেকে সংযত করতে পারি নি শ্রাবণ। তুমি তো জানোই তোমার পাশে আমি কাউকেই সহ্য করতে পারি না । তোমার ছায়া কেও না।”
বলেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে। শ্রাবণ ও ছুটে গেলো নদীর পিছনে।
____________

রাত্রি প্রায় একটা বেজে গেছে।। মেয়েকে নিয়ে শুয়ে আছে তরী। শ্রাবণ আজও আসে নি। হয়তো প্রেয়সীর অভিমান ভাঙাতে ব্যাস্ত।
পা বাড়ালো ব্যালকনির উদ্দেশে।রোজ নিয়ম করে ব্যালকনিতে বসে অনিকের সৃতি চারণ করে তরী। দুরের ওই আকাশ পানে তাকিয়ে অভিযোগ জানায়।
তারা দের সাথে কথা বলে, চাঁদের সাথে দুঃখ প্রকাশ করে।
” আমি ভালো নেই অনিক, তোমাকে ছাড়া আমি একবিন্দু ও ভালো নেই।তুমি ভালো আছো তো ? আমাকে ছাড়া পরপারে কতটা ভালো আছো? আমাকে ছাড়াই তোমার রাত দিন কেটে যায় তাই না? কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমার রাত কাটে না , সকাল হয় না, প্রহর যায় ঠিকই তবে সেই প্রহর বিষাক্ত প্রহর। আমার জীবনে সকাল আসে ঠিকই কিন্তু ভোরের সেই মায়াবী আলো আমাকে আর গ্রাস করে না। রাত্রি গুলো নির্ঘুম কেটে যায়। তোমাকে হারিয়েছি আজ ছয় মাস ২৩ দিন হলো। বিগত দিন গুলোতে এক মুহুর্তে জন্য আমি তোমাকে ভুলতে পারি নি। রাত গুলো বসে বসেই কাটিয়ে দিয়েছি। ভালোবাসার চুক্তির সংসার ছিল আমাদের। সেখানে শুধু ভালোবাসাই বিরাজমান ছিল। আমাকে বুকে জড়িয়ে না ঘুমালে নাকি তোমার ঘুম হতো না, এখন কি করে ঘুমিয়ে আছো একা একা? কি করে ঘুম আসে তোমার? তোমার প্রতি মনের কোণে #এক_আকাশ_অভিমান জমে আছে।মেঘ জমে কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে মনের আকাশ।আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়ে তুমিই হারিয়ে গেলে। ফিরে এসো না একবার।আমি যে তুমি হীনা অসহায়। লড়াই করতে করতে বড্ডো ক্লান্ত আমি।দুর করে দাও আমার এই ক্লান্তি। মুছে দাও আমার এই #এক_আকাশ_অভিমান……

#চলবে ইনশা আল্লাহ্………!!