এক টুকরো মেঘ পর্ব-০৬

0
494

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৬

— আগে রোমান্স কেমন হলো সেটা বল ।। প্রায় আড়াই ঘন্টার বেশি ,, ভাইয়ার সাথে একসাথে।। আমি তো পুরাই এক্সাইটেড সব শোনার জন্য ।। তাড়াতাড়ি বল !!( আগ্ৰহ নিয়ে আরশি)

আরশিকে কি বলবো সেটাই ভেবে পারছি না।। বেচারী শোনাই জন্য হা করে আছে।। তার কথার উওর না দিয়ে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নিলাম।। এখন দীর্ঘশ্বাস নেওয়া যেনো আমার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে।।এই দীর্ঘশ্বাস নিলে নিজেকে অনেক হালকা মনে হয়।। মনে হয় একটু হলেও নিজের কষ্টটাকে মুক্তি দিতে পেরেছি।। আমার কোনো রিসপনস না পেয়ে আরশি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো…

— আমার সোনা তরিন প্লিজ এভাবে চুপ থাকিস না।। আমি আর নিতে পারছি না বলে দে!! আমি আলাদা হয়ে তোদের সুযোগ দিলাম।।আর এখন যদি তুই চুপ করে থাকিস ,, তাহলে কিন্তু সেটা চিটিং হয়।।প্লিজ আমার সোনা ভাবী বলো না …।। ( করুন সুরে আরশি)

— ভাবী !!( একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে আমি) কি শুনবি বল ।। শপিং মলের ভেতরে এক্সজেকলি কি হয়েছিলো সেটা ।। নাকি তোর ভাইয়ের সামনে ,, একটা মেয়ে আমার গায়ে হাত তুলেছে সেটা ।। নাকি তোর ভাই অন্যকাউকে জরিয়ে ধরে লাভ ইউ বলেছে সেটা ।।নাকি আমি কতোটা আঘাত পেয়েছি সেটা ।। ( বাহিরের দিকে তাকিয়ে চোখের অশ্রু আড়াল করে )

আমার কথা শুনে আরশি স্তব্দ হয়ে ,, এক ধ্যানে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। হয়তো এটা বিশ্বাস করতে পারছে না।

— কি বলছিসটা কি ।। মাথা ঠিক আছে তোর ।। ভাইয়া তোকে ভালোবাসে ,, আমি নিজের চোখে দেখেছি ।। ভাইয়া তোর প্রতি কতোটা কেয়ারিং।। তাছাড়া সেদিন তো দেখালাম তুই আর ভাই একে অপরকে জরিয়ে ধরে ছিলি!!( আমার মুখটা আরশির দিকে ফিরিয়ে)

তারপর আমি শপিং মলের সব ঘটনা একে একে সব খুলে বললাম আরশিকে।। আরশি যেন আমার কথা শুনে অবাকের সপ্তম আকাশে উঠে গেছে।।

— এবারো কি বলবি ।। তোর ভাই আমাকে ভালোবাসে ।। জানিস আরু যখন তোর ভাই অন্যকে লাভ ইউ বলেছে ,, তখন বুকের ভেতরের শ্বাস যেন আমার আটকে গিয়েছিলো।। অনেক কষ্ট করে নিজের চোখের অশ্রু আটকে রেখেছিলাম ।। আচ্ছা বাদ দে ,,, আগে বল তোর শপিং কোথায়।। আমি তো কিছুই কিনিনি ।। তুই কি কি কিনলি ।। ( কৌতূহল নিয়ে আমি)

— ভাইয়া বিল পে করে নিয়ে আসছে।।

বলতে না বলতেই অরিশ ভাইয়া চলে এলো ।। হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ নিয়ে ।। ফন্ট সিটে রেখে ব্যাগগুলো রেখে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে মন দিলো। আমি আর আরশি যে যার মত ব্যস্ত হয়ে গেলাম।। একবারও অরিশ ভাইয়ার দিকে তাকাই অবধি নি।। পুরো সময় জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিলাম।।
গাড়ি বাড়ির সামনে থামতেই তাড়াতাড়ি দৌড় দিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে গেলাম।।

____________

সারাদিন কেদে নিজেকে শান্ত করেছি।। ভেবেছি যেটা আমার নয় ,, সেটা কেন আমি নিজের কাছে বেধে রাখবো।। তাই ছেড়ে দিয়েছি ।। আর কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চাই না।। তাই হাতের ব্যান্ডজগুলো খুলে ফেলেছি।। নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টায় বিভোর হয়ে পড়েছি।। রুম বসে থাকতে কেমন যানো দম বন্ধ লাগছে আমার।। তাই ছাদের দোলনায় বসে বসে কফি খাচ্ছি আর বই পড়ছি ।। এটা আমার হবি ।। সময় পেলেই আমি কফি খাই আর রাতের আকাশ দেখি ।।
আমি বইটা দোলনা উপরে রেখে একটু হেঁটে ছাদের অন্যপান্তে গিয়ে রেলিং ধরে পা ঝুলিয়ে বসলাম ।।

— আচ্ছা অরিশ ভাইয়া আমার সাথে কেন এমন করো তুমি ।। আমার ফিলিং গুলো কি একবারও তোমার চোখে পড়ে না ।।ছোটবেলা থেকে কেউ কখনো তোমার হাত ধরতে পারতো না ,, আমি তাকে কি মারটাই না মারতাম।। আর বলতাম,, এই হাত দুটো ধরার অধিকার শুধু আমার।।আর আজ আমার সামনে কেউ তোমাকে জরিয়ে ধরেছে,, তাও কিছু করতে পারলাম না।। কারন এই অধিকার টা তুমি তাকে দিয়েছো।। আমি জোর করে তোমার উপর অধিকার খাটাতাম কিন্তু তুমি তো নিজেই অধিকার দিয়েছো।। তাই কিছু করতে পারলাম না।।।বুঝতে পারো না কতোটা চাই তোমাকে।আমাকে শত আঘাত করো আমি কোনো ব্যাথা পাই না ।। তোমার দেওয়া কালকের আঘাত গুলোও আমি ভুলে গিয়েছিলাম।। আজকে যখন তুমি আমাকে শাড়িটা জরিয়ে পেছন থেকে জরিয়ে ধরেছিলে,,এক মুহুর্তের জন্য হলেও তোমার উপর সব অভিমান দূর হয়ে গিয়েছিল।। আজকের পর থেকে তোমাকে এড়িয়ে চলাই আমার একমাএ লক্ষ্য।।

কথাগুলো বলে চোখ দুটো বন্ধ করে আরো একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম।। হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ জোড়া খুলে অরিশ ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।। কিন্তু আমি তো ছাদের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়েছি।। তাহলে এলো কোথা থেকে।। একবার ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি,, দরজাটা এখনো বন্ধই আছে।। হয়তো অরিশ ভাইয়া এখানে আছে সেটা আমার কল্পনা।। তাই আবার দোলনার উপর বসে কফির কাপে চুমুক দিলাম।। ভাইয়া আমার হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে পাশে রেখে দিলো।। এবার বুঝতে পারলাম এটা আমার কল্পনা নয় বাস্তব।।

— তুমি এখানে কি করে এলে !!( কৌতূহল নিয়ে আমি)

— একটু আগে ছাদে এসে দেখি তুই একা একা বসে আছিস।। এতোবার ডাকলাম একবারও সাড়া দিলি না।। তা তো বাধ্য হয়ে রুমের থেকে দড়ি এনে তোদের ছাদের রেলিং এর সাথে আমাদের ছাদের রেলিং বেঁধে ।।চলে এলাম।।( আমার পাশে বসে অরিশ)

— ও আচ্ছা।। কিন্তু এতো রাতে এখানে আসার কারন কি ,, তাও আবার দড়ি দিয়ে।।(কৌতূহল নিয়ে আমি)

— শাড়িটা দিতে এসেছি ।। তুই তো কিছুই কিনিস নি।। তাছাড়া কথা দিলো ,, আমি নিজে তোকে শাড়ি চুজ করে দিবো ।। তাই এটা নিয়ে এসেছি !! নে ধর ( শাড়িটা এগিয়ে দিয়ে )

একটু হলেও ভেবেছিলাম,,, ভাইয়া আমার একাকিত্বের সাথি হতে এসেছে।। কিন্তু না শাড়িটা দিতে এসেছে ।। তাই আর কথা না বাড়িয়ে শাড়িটা নিয়ে ,, রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।। পেছন থেকে আমার হাতটা ধরে ফেললো ।। আমি আর না তাকিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে বললাম…

— ভাইয়া তুমি তো আগে সবসময় আমার কথা রাখতে ।। শেষ বার একটা কিছু চাইলে দেবে না।।

— তোর কি মনে হয় তরী তুই চাইবি আর আমি তোকে এনে দিবো না।।
অনেকদিন পর ভাইয়ার মুখ থেকে তরী ডাকটা শুনলাম ।। অন্যকোনো সময় হলে বলতাম ,, একেকবার ডাকো।। কিন্তু আজ আর চাই না।।

— ভাইয়া আজকে পর থেকে তুমি প্লিজ আমার সামনে এসোনা ।। আমার তোমার পাশে থাকতে একদম ভালো লাগে না।। আমি ভেঙে পড়েছি নিজেকে ঠিক গুছিয়ে নিবো।।কারো সাহায্য লাগবে না।।(অন্যদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে আমি)

— আমি জানি এটা তোর অভিমানী কথা ।। আমাকে ছাড়া তুই এক মুহুর্তও থাকতে পারিস না।। আর পারবিও না।। ( একটু থেমে আবার) বিশ্বাস কর ,, তৃনাকে আমি ভালোবাসি না।। ( আমাকে টান দিয়ে তার উপরে ফেলে কোমর আঁকড়ে ধরে)

— প্লিজ ভাইয়া মিথ্যা বলো না।। আমি মিথ্যা একদম সহ্য করতে পারি না।। যা জানার,,যা বোঝার অলরেডি আমি বুঝে গেছি ।। আর বুঝতে চাই না।।আমাকে যেতে দাও ( অরিশকে থাকিয়ে দিয়ে আমি)

— আমি না চাইলে তুই এখান থেকে একপাও মেতে পারবি না।। তাই বলছি ,, শুধু শুধু বৃথা চেষ্টা করিস না।। ( আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে)

আমি জানি ,,আমি কখনোই ভাইয়ার শক্তির সাথে পেরে উঠবো না।। কারন ,, এর আগেও অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম ,, সব বৃথা গিয়েছিলো।।

— তাহলে শুরু করো ,, তোমার সাজানো মিথ্যা নাটক গুলো।।

ভাইয়া কিছু বলতে যাবে ,,তার আগেই দরজায় কেউ নক করলো ।। তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে এক দৌড় দিয়ে দড়ি বেয়ে তাদের ছাদে চলে গেল।। সেখানে দাঁড়িয়ে আমাকে একটা ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিয়ে একবারে নিচে চলে গেল।। আমিও গিয়ে দরজা খুলে দিলাম,, মাম্মাম এসেছে ।। আমাকে ডাকতে ।।। তাই নিচে চলে গেলাম।।

ঘুমের মধ্যেই শান্তি নেই ।। কেউ যেনো আমার পায়ে শুরশুরি দিচ্ছে।। পা দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছে ,, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।। কিছুক্ষণ থেমে আমার শুরশুরি দিচ্ছে।। ঘুম এতোটাই গভীর যে দেখার ইচ্ছেটুকু নেই।। হঠাৎ মনে হচ্ছে ,,কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।।যাতে আমার ঘুম আরো গভীর হচ্ছে।। হঠাৎ কপাল বেয়ে কোনো তরল জিনিস চোখে পড়লেই চোখ খুলে ফেললাম লাফিয়ে উঠে বসলাম আমি ।। দৌড়ে গিয়ে লাইট অন করে দেখলাম,, কেউ নেই ।। কপাল থেকে তরল জিনিসটা এনে বুজতে পারলাম তেল ।। যেটা আমার চুল থেকে ঝড়ছে।। এতোক্ষণে পায়ের কথা মনে পড়তেই খেয়াল করার ।। একটা নতুন কালেকশনের পায়েল।। কে এলো আমার রুমে এটা ভাবতে ভাবতে চোখ গেলো টেবিলের উপর রাখা শাড়ির প্যাকেটকার দিকে ।। যেটা আমি ছাদে ফেলে এসেছি ।। আসার সময় নিয়ে আসতে ভুলে গিয়েছিলাম।। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না কে এসেছিলো।। তাই কপালে থাকা তেলগুলো মুছে আমার শুয়ে পড়লাম।। একটু পরেই তলিয়ে গেলাম ঘুমের অতল তলে।।

🍁🍁🍁

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি পড়ছি আমি আর আরশি ।। মাম্মাম আর মামনি দুজনে আমাদের দুজনকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি ।। শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে লাল রঙের গাঢ় লিপস্টিক।। তেলের কারনে চুলগুলো বেনী করা।। হাতে নীল রঙের চুরি।। কানে একজোড়া ঝুমকো।। আর হিল জুতো।। আর আরশি আমার সাথে সেইম সাজ দিয়েছে।।

চলবে…💞💞

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,, ধন্যবাদ)