এক টুকরো মেঘ পর্ব-০৭

0
514

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৭

— একি এরা কারা ,, মা ,,মামনি তোমরা এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন ?? এই চোর ২ টোকে ধরো।। আমি এখনি পুলিশকে ফোন করছি ।। ওয়েট !! ( রুমে ঢুকতে ঢুকতে অরিশ )

অরিশ ভাইয়ার গলা শুনে পেছনে তাকিয়ে আমি থ হয়ে দাড়িয়ে আছি ।। ভাইয়ার কথা শুনে যতটা অবাক হয়েছি তার চেয়ে বেশী অবাক হয়েছি তাকে দেখে।।ভাইয়া মুখে বানরের মাস্ক পড়েছে।।

— মামনি তুমি পুলিশকে ফোন না করে বরন ,, বন্য বিভাগের মানুষকে ফোন করো ।।তারা এসে এই বানর 🐒 টাকে নিয়ে যাক।। আর কিছু না হোক ,, কিছু টাকা তো ইনকাম হবে।। (দাঁত কেলিয়ে আমি)

আমার কথা শুনে সবাই হা হা করে হেসেই দিলো শুধু অরিশ ভাইয়া ছাড়া ।। তিনি আমার দিকে রাগি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।।মামনি হাসি থামিয়ে অরিশ ভাইয়াকে বললো….

— কি হয়েছে অরিশ তোর ।। এই পড়ন্ত বিকেলে বানরের মাস্ক পড়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?? তোকে না বললাম ওদের পৌঁছে দিতে।।( অরনিমা)

— আমি তো ওদের পৌঁছে দিতেই এসেছি!!!( অরিশ)

— তুই কি এখন এই অবস্থায় ওদের পৌঁছে দিতে যাবি?? (কৌতূহল নিয়ে তামান্না)

— তো কি করবো ।। তোমার মেয়েই তো আমাকে বলেছে ,, যাতে আমি ওকে আমার মুখ না দেখাই ।। আবার তুমি বললে ,, ওদের পৌঁছে দিতে ।। তাই দুজনের কথা রাখতেই এই ব্যবস্থা অবলম্বন করেছি!! (ভাব নিয়ে অরিশ)

মাম্মাম এবার অরিশ ভাইয়াকে রেখে আমার দিকে তাকালো ।। আমি ভালোভাবেই বুজে গেছি,,এখন মাম্মাম আমাকে ওয়াং মেশিনে কাচবে।। তাই দাঁত কেলিয়ে শাড়ির কুচিগুলো একহাতে নিয়ে অন্য হাতে পার্স ব্যাগটা নিয়ে এক দৌড় দিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে এলাম।। আর একবার পেছনে না তাকিয়ে অরিশ ভাইয়ার গাড়ির দরজা খুলে সিটে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।। দৌড়ে আসতে আসতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।।
হঠাৎ লক খোলার শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া দরজা খুলে ভেতরে ঢুকছে।। এতোক্ষণে খেয়াল করলাম আমি ফন্ট সিটে বসেছি।। আসলে ফন্ট সিটে বসতে বসতে আমার অভ্যস হয়ে গেছে।। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম ,, আরশি বসা ।। তাই আর দেরি না করে পেছনে যাওয়ার জন্য দরজা খুলতেই আমার হাত ধরে ফেললো ,, অরিশ ভাইয়া ।। আমি একহাত দিয়ে ভাইয়ার হাত জোটানোর চেষ্টা করছি ,, কিন্তু পারছি না।। তিনি আমার থেকে তার চোখ জোড়া সরিয়ে পেছনে আরশিকে উদ্দেশ্য করে বললেন…

— সামনের দিকে না তাকিয়ে বাহিরে তাকা,,নয়তো চোখজোড়া বন্ধ করে নে!!

বলতেই আরশি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করে সিটে গা হেলিয়ে দিলো।। ভাইয়া আরশির দিকে একবার তাকিয়ে আর খুব কাছে চলে এলো।। তার প্রতিটি নিঃশ্বাসের শব্দ আমি গুনতে পারছি।।

— এখান থেকে নামার চেষ্টা করলে তোর ঠোঁটের লিপস্টিকের কি অবস্থা করবো আমি নিজেও জানিনা।। তাহলে তোর কলেজে যাওয়া হবে না ।। তখন আবার আমার দোষ দিস না ।।

ভাইয়া কথার মানেটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম ,,, তাই চুপ করে নিচের নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।।আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কথাগুলো বলে দরজা লক করে।। সিট বেল্টটা লাগিয়ে,, আমার এক হাতের বাজে তার আরেকহাত ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে ড্রাইভ করতে মন দিলেন। কলেজে পৌছে দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমার হাত শক্ত করে ধরে ছিলো আর ড্রাইভ করতে করতে আঢ় চোখে আমাকে দেখছিলো।।।
কলেজের গেটে গাড়ি এসে থামতেই আমি গাড়ি থেকে নেমে পেছনের দিকে না তাকিয়েই ভেতরে চলে গেলাম।।

সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই কলেজের সব কাজ শেষ হয়ে গেছে ।। এবার আমাদের বাড়ি পৌঁছানোর পালা ।। আজ সবাই তার প্রিয় শিক্ষককে কিছু না কিছু দিচ্ছে ।। আমরা দিতে পারছি না ।। দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো ,, কিন্তু ভাইয়ার সাথে রাগ করে কিছু কেনা হয়নি ।। তাই অনলাইন থেকে একটা দামী ব্রান্ডের ওয়াচ আর পারফিউম অর্ডার করলাম।। কাছাকাছি হওয়াতে আধ ঘন্টার মধ্যে ডেরিভারী দিয়ে যাবে।। ঠিক আধ ঘন্টার মধ্যে ডেলিভারি বয় এসে দিয়ে গেল।। আর আরশি সেটা রিসিভ করে বিল পে করে দিলো।। ইতিমধ্যে আমার সব ফ্রেন্ডরা চলে গেছে ।।কলেজে শুধু এখন শিক্ষকদের আনা গোনা।। চারদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে ।। আমাদের কলেজের ফাংশন কেন যে বিকালে করে বুঝতে পারি না।। অনেক খুঁজে অবশেষে আমার প্রিয় শিক্ষকের দেখা মিললো।। রেপিং করা ওয়াচটা স্যারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফিরে আসবো তার কোনো উপায় নেই,, স্যার পুরো এলাকার কথা আমার সাথে জুড়ে দিয়েছে।। আর আমি দাঁতে দাঁত চেপে জোর পূর্বক হাসি দিয়ে সব সহ্য করছি।। আর তার তালে তাল মেলাচ্ছি।। আমার একটু দূরে আরশি দাঁড়িয়ে আছে।। একটু আগে সে তার প্রিয় শিক্ষককে গিফ্ট দিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে।। বেচারি না পারছে আমার কাছে আসতে না পারছে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ।।
আমি আরশির মুখের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি হবে বলে স্যারকে বুঝিয়ে চলে এলাম।।অরিশ ভাই আসবে কিনা ,, তা কিছুই বলে নি।। তাই তাড়াতাড়ি কোনো দিকে না তাকিয়ে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে হেঁটে চলেছি।। একটু আগে ঝড়ো হাওয়াতে ,, মনে হয়েছিলো বৃষ্টি হবে।। তাই রাস্তায় কোনো গাড়ি পাচ্ছি না।।

— দেখেছিস কতোটা রাত হয়ে গেছে।। তার উপরে একটাও গাড়ি পাচ্ছি না আর ভাইয়াটারো কোনো দেখা নেই ।। আরো কথা বল স্যারের সাথে ।।( হাঁটতে হাঁটতে রাগ দেখিয়ে আরশি)

— দেখ আরু সোনা । আমি কি করেছি তুই বল।। তূই তো জানিস স্যার বেশী কথা বলে তাই দেরী হয়ে গেছে ।। প্লিজ রাগ করে না।। (বলেই আরশির গালে একটা চুমু খেলাম)

— হয়েছে হয়েছে আর চুমু খেতে হবে না।। ভাইয়ার গালে খাস।। এটা ভাইয়ার নিজের ফিক্সটি পজিট যা ভাঙানোর অধিকার আমার নেই,, বুঝলি!!এবার চল!!! (আমার গাল টেনে আরশি)

তারপর আমি আর আরশি পা চালিয়ে হাঁটতে লাগলাম।। আমাদের বাড়ি থেকে রাস্তার দূরত্ব অনেকটা।। অন্যরাস্তা দিয়ে গেলে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছানো যায় ।। কিন্তু রাস্তাটা খুব নিরিবিলি।। কিন্তু কিছু করার নেই যখন তখন বৃষ্টি হতে পারে তাই নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছি ।। কিছুদূর যেতেই কিছু ছেলেদের দেখতে পেলাম।। ছেলেগুলো স্মোকিং করছে আর কিসব বাজে বাজে কথা বলছে ।। আরশি আঁচল টাকে শক্ত করে চেপে ধরে আছে।। আমরা মাথা নিচু করে এগিয়ে যেতেই ৩ টা ছেলে এগিয়ে এলো আমাদের দিকে ।।

— কিরে মামনিরা কোথায় যাচ্ছ।।( এদের মধ্যে একজন)

— আআমরা বাবাড়ি যাচ্ছি!!( কাঁপা কাঁপা গলায় আরশি)

— আজ যে তোমাদের বাড়ি যাওয়া হবে না।। সোনামনিরা!!!(সিগারেটে একটা টান দিয়ে )

সিগারেটে টান দিয়ে নিঃশ্বাসটা আরশির মুখের সামনে ফেললো!! আরশি তো কাশতে কাশতে শেষ ।। আমাদের ফ্যামিলিতে এমন সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস কারো নেই ,, চাই সেই বাজে স্মেলটা সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের নেই ।।।

— আরে আপনারা এইসব অসভ্যের মতো কি করছেন।। দেখতে পারছেন না আরশির কষ্ট হচ্ছে।।( আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম আমি)

— আমরা অসভ্যা তাই না ।। তাহলে একটু অসভ্যতামি করেই ফেলি কি বলিস তোরা ।। ( আমার হাত ধরে টান দিয়ে )

আমি আমার হাতটা সরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।। আর মাঝেই ওদের মধ্যে একজন সিগারেটে একটা টান দিয়ে সিগারেটটা আমার পেটের চেপে ধরলো ।।উপর থেকে শাড়িটা পুড়ে নিচে পেটের সাথে লেগে যায়।। আমি জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলাম ‌।।ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আরশির হাত ধরে জোরে একটা দৌড় দিলাম।।পেছনে ছেলেগুলো আসতে লাগলো।। নিজের করা কাজের জন্য বারবার লজ্জিত হতে লাগলাম।।যদি স্যারের সাথে কথা না বলতে যেতাম তাহলে আজ এতোবড় বিপদে আমাদের কাউকে পড়তে হতো না।। আজ আরশি কিছু হলে নিজেকে জীবনো ক্ষমা করতে পারবো না।। মনে মনে শেষ্ঠাকে ডাকছি ,, কাউকে পাঠিয়ে দাও।। আমার জন্য না হোক,, অন্তত আরশির জন্য।। ভেবেছিলাম কেউ আসবে না আমাদের বাঁচাতে কিন্তু না এলো।। অরিশ ভাইয়া।।
আরশি অরিশ ভাইয়াকে দেখে ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো।। ভাইয়া আরশিকে এতো করে জিজ্ঞাসা করেছে কি হয়েছে ।। কিন্তু তার মুখ থেকে কিছুই বের হচ্ছেনা।। শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।। ভাইয়া আরশিকে ছেড়ে দিয়ে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে চেঁচিয়ে বললো,, “”কি হয়েছে””??
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় সবটা ভাইয়াকে বললাম ।। বলতেই ঠাস করে একটা চড় পড়লো আমার গালে।। গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি আমি!!!

চলবে…💞💞